ন্যাটো, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ
জুনের ২৯ তারিখ, ২০২২, মাদ্রিদ সম্মেলনে ন্যাটো তার স্ট্র্যাটেজিক কনসেপ্ট আপডেট করেছে। আগে আপডেট করা হয়েছিল ২০১০ সালে।
দেখা যাক, এই ১২ বছর পরে ন্যাটো স্ট্র্যাটেজিক ভাবে কীভাবে তাদের থ্রেটগুলাকে ডিফাইন করছে।
২০১০ সালে ছিল রাশিয়া পার্টনার হিসেবে উল্লেখিত, বলা হয়েছিল রাশিয়ার সাথে স্ট্র্যাটেজিক সম্পর্ক নির্মানের কথা। ২০২২ সালে রাশিয়াকে বলা হয়েছে সবচাইতে বড় এবং সরাসরি শত্রু, ইউরো-আটলান্টিক এলাকার নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার প্রধান শত্রু। এবং এও উল্লেখ করা আছে এখন ন্যাটো আর রাশিয়াকে "পার্টনার" হিসেবে ধরতে পারে না।
২০১০ সালে চীনের কোন উল্লেখ ছিল না। ২০২২ সালে চীনকে বলা হয়েছে ইউরো-আটলান্টিক এলাকার নিরাপত্তার জন্য সিস্টেমিক চ্যালেঞ্জ। চীনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা, এবং জবরদস্তিমূল্ক পলিসি ইউরো-আটলান্টিক এলাকার নিরাপত্তা, স্বার্থ ও আদর্শকে চ্যালেঞ্জ করছে।
২০১০ সালে সাইবার এটাকের সংক্ষিপ্ত উল্লেখ ছিল। বলা হয়েছিল ন্যাটো সাইবার এটাক ধরা, প্রতিরোধ এবং রিকভারীতে আরও দক্ষ হতে কাজ করবে। ২০২২ সালে বলা হয়েছে, সাইবার স্পেইস নিয়ত এক যুদ্ধক্ষেত্রের মত। বলা হয়েছে সাইবার এটাক ন্যাটোর আর্টিকেল ৫ ট্রিগার করতে পারে। বলা হয়েছে কীভাবে কতৃত্ববাদী দেশের শাসকেরা সাইবার স্পেইসকে ব্যবহার করছে।
২০১০ সালে স্পেইসের সামান্য উল্লেখ ছিল। ২০২২ সালে বলা হয়েছে, প্রতিদ্বন্ধীরা, বিশেষ করে রাশিয়া ও চীন এমন সব প্রযুক্তি বানাচ্ছে যা স্পেইসে ন্যাটোর কাজ ও স্বাধীনতা ব্যাহত করতে পারে। ন্যাটো স্পেইসে তাদের শক্তি বাড়াবে। এবং স্পেইসে তাদের উপর কোন আক্রমণ, আর্টিকেল ৫ ট্রিগার করবে।
২০১০ সালে সন্ত্রাসবাদের উল্লেখ ছিল। বলা হয়েছিল সন্ত্রাসবাদ ধরে ফেলা ও প্রতিরোধে ন্যাটো দেশগুলি ও ন্যাটো একসাথে কাজ করবে, স্বক্ষমতা বাড়াবে। ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদকে বলা হয়েছে ন্যাটো কান্ট্রিগুলার জন্য সবচাইতে সরাসরি আরেক থ্রেট হিসেবে। ন্যাটো আন্তর্জাতিক ভাবে বিভিন্ন সংস্থা, ও দেশের সাথে সন্ত্রাসবাদ উৎখাতে, ধরে ফেলা ও প্রতিরোধে কাজ করবে।
২০১০ সালে বলা হয়েছিল ক্লাইমেট চেইঞ্জ ভবিষ্যতের নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে অনেক প্রভাব ফেলবে। ২০২২ সালে চীন, রাশিয়া, সাইবার স্পেইস, সন্ত্রাসবাদের চাইতে বেশিবার ক্লাইমেট চেইঞ্জের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, নিরাপত্তার জন্য ক্লাইমেট চেইঞ্জ যেসব চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসবে তা ট্যাকল দিতে ন্যাটোকে এই বিষয়ে সবচাইতে দক্ষ আন্তর্জাতিক সংস্থায় পরিণত হতে হবে।
২০১০ সালে বলা হয়েছিল ন্যাটো দেশগুলির নিরাপত্তা বাজেট পর্যাপ্ত, বাহিনীতে পর্যাপ্ত রিসোর্স রয়েছে। ২০২২ সালে বলা হচ্ছে, ডিফেন্স ইনভেস্টমেন্ট প্লেজ অনুযায়ী ন্যাটো দেশগুলা যাতে ডিফেন্সে প্রয়োজনীয় খরচ করে, তা নিশ্চিত করা হবে।
২০১০ সালে সাপ্লাই চেইনের কথা বলা হয়েছিল সাইবার এটাক, এবং বিদেশী এনার্জি সাপ্লাই লাইনের প্রসঙ্গে। ২০২২ সালে স্বাভাবিক ভাবেই সাপ্লাই চেইন গুরুত্ব পেয়েছে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে। বলা হয়েছে, ন্যাটো স্ট্র্যাটেজিক সাপ্লাই চেইন, হেলথ সিস্টেম, ইনফাস্ট্র্যাকোচার বিষয়ক লাইনের নির্ভরতা ও দূর্বলতার জায়গা খুঁজে বের করা এবং সেগুলি দূর করার লক্ষ্যে কাজ করবে।
নিউক্লিয়ার অস্ত্র এবং আর্মস কন্ট্রোল নিয়ে ২০১০ সালে ন্যাটোর অবস্থান ছিল, আর্মস কন্ট্রোলে তারা আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী দেশগুলার সাথে সমঝোতার সাপেক্ষে কাজ করবে। ২০২২ সালেও আর্মস কনট্রোলে জোর দেয়া হয়েছে, বলা হয়েছে এ সংশ্লিষ্ট আর্কিটেকচারের দূর্বলতা নিরাপত্তা হুমকি বাড়িয়ে তুলেছে।
ব্রিফ>
ন্যাটো সরাসরি শত্রু হিশাবে মনে করছে রাশিয়াকে এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদকে। এই নতুন স্ট্র্যাটেজিক কনসেপ্ট কেবল কাগজে না, তারা কাজও শুরু করেছে। রাশিয়ান বর্ডারে তাদের র্যাপিড একশন ফোর্স ছিল ৩০ হাজার, বাড়িয়ে ৩০০ হাজার করা হবে আগামী বছরের মধ্যে, এমন পরিকল্পণা করা হয়েছে।
অন্যদিকে আমেরিকা তাদের সেনা বাড়াচ্ছে ইউরোপে। জুনের ২৯ তারিখ প্রেসিডেন্ট বাইডেন ঘোষণা দিলেন, পোল্যান্ডে স্থায়ী হেড কোয়ার্টার স্থাপন করা হবে ৫ম আর্মি কর্পসের জন্য। ৫০০০ নতুন সেনা পাঠানো হবে রোমানিয়ায়। বল্টিক এলাকায় সেনা বাড়ানো হবে। এফ ৩৫ ফাইটার এয়ারক্রাফটের দুইটা স্কোয়াড্রন পাঠানো হবে যুক্তরাজ্যে। অতিরিক্ত বিমান নিরাপত্তা স্থাপন করা হবে ইতালি ও জর্মনীতে। স্পেনে নেভাল ডেস্ট্রয়ার ৪ টা থেকে ৬ টায় উন্নীত করা হবে।
২০১০ সালে ন্যাটো রাশিয়াকে পার্টনার হিসেবে দেখেছিল, এবং ১৯৯৮ সালের ন্যাটো-রাশিয়া ফাউন্ডিং এক্ট এর উল্লেখ ছিল। কিন্তু ২০২২ সালে এই এক্টের কোন উল্লেখ করা হয় নি। কিন্তু উল্লেখ করা হয়েছে, মস্কোর সাথে আলোচনার দ্বার উন্মুক্ত। বলা যায় ন্যাটোর ইচ্ছা এই ফাউন্ডিং এক্ট সমুন্নত রাখা, জর্মনী, ফ্রান্সেরও একই অবস্থান, কিন্তু আমেরিকা এবং পূর্ব ইউরোপ এই এক্ট তুলে ফেলার পক্ষে।
চীনকে প্রথমবারের মত স্ট্র্যাটেজিক চ্যালেঞ্জ হিশাবে উল্লেখ করা হয়েছে, কারণ এশিয়া অঞ্চলে চীনের প্রভাব বাড়ছে। কোন অঞ্চলে একক দেশ অতিরিক্ত পাওয়ারফুল হয়ে যাওয়া নিরাপত্তার জন্য হুমকি। চীনের সাথেও সুস্থ আলোচনার পথ খোলা বলে উল্লেখ রয়েছে।
২০২২ সালের স্ট্র্যাটেজিতে ১১ বার ক্লাইমেট চেইঞ্জের উল্লেখ আছে। এবং ন্যাটো এই বিষয়ের নিরাপত্তা সমস্যা ট্যাকল দিতে সবার সেরা হতে চায়, এই এম্বিশন ব্যক্ত আছে। ক্লাইমেট চেইঞ্জের প্রভাব, সাইবার সিক্যুরিটি, অথোরিটারিয়ান সরকারের সাইবার স্পেইস ব্যবহার করে নিয়ন্ত্রণ, ইত্যাদি যেহেতু গুরুত্ব পেয়েছে, ন্যাটো ও ইউরোপের কর্মকাণ্ডে এর প্রভাব পরিলক্ষিত হবে সামনে।
—
রাশিয়ার এনার্জি অস্ত্র >
রাশিয়া ন্যাচারাল গ্যাস সাপ্লাই বন্ধ করে ইউরোপকে শায়েস্তা করার চেষ্টা করতে পারে।
২০২১ সালে জর্মনী ৫৫% গ্যাস কিনেছিল রাশিয়া থেকে। নর্ড স্ট্রিম ১ পাইপলাইন বল্টিক সী দিয়ে রাশিয়ান গ্যাস জর্মনীতে সাপ্লাই করে। রাশিয়া এই পাইপলাইন বাৎসরিক মেইন্টিনেন্সের জন্য ১০ দিন বন্ধ রাখছে, জুলাই ১১ তারিখ থেকে। এবং বলেছে, জর্মনীর সিমেন্স কোম্পানির একটা টারবাইন, যেটা কানাডাতে মেইন্টিনেন্সে আছে, এটা টেকনিক্যাল সমস্যার একটা অংশ, ফেরত না দিলে সমস্যা সমাধান হবে না।
জুনের ১৪ তারিখে টেকনিক্যাল কারণ দেখিয়ে রাশিয়ান জায়ান্ট গিজপ্রম ৪০% ফ্ল কমিয়ে দিয়েছিল।
রাশিয়ার ক্লাইমেট মন্ত্রী রবার্ট হাবেক বলেছেন, পরিকল্পিত মেইন্টিনেন্স শেষ হলেও রাশিয়া হয়ত নর্ড স্ট্রিম ১ পাইপলাইন দিয়ে ইউরোপে গ্যাস সাপ্লাই শুরু করবে না। জুলাইয়ের ১০ তারিখ ফ্রান্সের অর্থমন্ত্রী ব্রুনো লে মায়্যার একই কথা বলেছেন, যে খুব সম্ভবত এটাই হতে যাচ্ছে।
জুনে রাশিয়ান গ্যাস সাপ্লাই ইউরোপে ৬০% কমে গেছে। এতে গ্যাসের দাম চলে গেছে রেকর্ড হাই লেভেলে। জর্মনী ও ইতালিতে ঘোষণা করা হয়েছে এনার্জি ইমারজেন্সি। ইউক্রেনের আপত্তি স্বত্বেও, জর্মনী কানাডাকে অনুরোধ করেছে সিমেন্সের টারবাইন রাশিয়াকে ফেরত দিতে, যেটা নর্ড স্ট্রিম ১ পাইপ লাইনের জন্য দরকারী। এই পার্টসের অজুহাত দেখিয়ে রাশিয়া গ্যাস ফ্লো কমিয়ে রাখতে পারবে, এবং ইউরোপে রিসেশন ত্বরান্বিত করতে পারবে।
রাশিয়া মনে করে গ্যাস সাপ্লাই কমিয়ে দিলে গ্যাসের দাম বাড়বে, গ্যাস ও খাদ্যের দাম বাড়লে ইউরোপ রিসেশনে পড়বে, এবং এতে রাশিয়াকে অর্থনৈতিক অবরোধ দেয়ার ক্ষেত্রে তাদের সমর্থন কমবে। ইউক্রেনের প্রতিও তাদের সমর্থন কমবে। ফলে ইউক্রেন বাধ্য হবে অস্ত্র বিরতিতে আসতে রাশিয়ার শর্ত মেনে।
নাইজেরিয়ায় এনার্জি ক্রাইসিস >
রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্ব বাজারে এনার্জি ক্রাইসিস তৈরি হয়েছে, তার ধাক্কায় বেহাল দশা সাব সাহারান আফ্রিকার সবচাইতে বড় ক্রুড ওয়েল রপ্তানী কারক দেশ নাইজেরিয়ার। নাইজেরিয়া ক্রুড ওয়েল রপ্তানী করলেও রিফাইন করতে পারে না ফলে রিফাইন্ড ওয়েলের জন্য আমদানী নির্ভর। বৈশ্বিক অবস্থা অপরিবর্তীত থাকলে নাইজেরিয়ায় নৈরাজ্যের আশংকা ব্যাপক।
---
ডব্লিউ এল গোর কোম্পানি এই প্রিন্সিপল ব্যবহার বের করে, যার নাম ওয়াটার লাইন প্রিন্সিপল।
কোম্পানিকে ধরেন একটা জাহাজ বা নৌকা। কোন নতুন পণ্য নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা দরকার ইনোভেশনের জন্য, এসোসিয়েটদের এটা করতে উৎসাহ দেয়া হয়, যতক্ষণ এটি ব্যর্থ হলে কেবল ওই পন্যেরই ক্ষতি। কিন্তু এমন যদি হয়, এমন কোন জিনিশ নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা, যেটি ব্যর্থ হলে কোম্পানির মূলনীতি বা মূল প্রিন্সিপল ক্ষতির মুখে পড়বে, তাহলে আলোচনা করতে হবে করার আগে। জেফ বেজোস এমাজনের জন্য, কোন নতুন পণ্য বা সেবার ক্ষেত্রে ব্যর্থতা উৎসাহিত করেন, কারণ এখানে ব্যর্থতা স্বাভাবিক। কিন্তু, যদি দেখা যায় ফুলফিলমেন্ট সেন্টার তৈরিতে ব্যর্থ, তখন বুঝতে হবে প্ল্যানিং কোন মূল জায়গাতেই সমস্যা, এবং এর ফাইনানশিয়াল ইমপ্যাক্ট বেশি।
একটা জাহাজ বা নৌকা, পানির উপরের অংশে ছিদ্র হলে বড় সমস্যা নেই, কিন্তু পানির নিচে ছিদ্র হলে বড় সমস্যা। সব ব্যর্থতা সমান হয় না। রিস্কের পরিমাণ বা সম্ভাব্যতা বিবেচনায় এর মাপ হবে। ম্যানেজমেন্টে এই মডেল এপ্লাই করতে পারেন।
—
গুগল স্কলার ইফেক্ট
সাইন্টিফিক রিসার্চে অন্য রিসার্চ পেপার সাইট করতে হয়। যে রিসার্চ পেপার বেশি সাইটেশন ঐটা ঐ ফিল্ডে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ধরা হয়।
এখন ধরা যাক, কেউ কোন বিষয়ে রিসার্চ করতে গেছেন। গুগল স্কলারে ঐ বিষয়ে সার্চ দিলেন। যেসব পেপার প্রথমে আসবে, ঐগুলাই পড়বেন। নিজের পেপারে ওইগুলাই সাইট করবেন।
ফলে, ঐসব পেপারের সাইটেশন বাড়বে। এবং এই কারণে এরা আরও বেশি সাইটেশন পাবে।
অতএব, ফিল্ডে কী কন্ট্রিবিউট করল, তার চাইতেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায় গুগল স্কলার সার্চ এঞ্জিনের টপ রেজাল্টে আসে কি না।