স্টোয়িক চিন্তা - মুসোনিয়াস রুফুজের লেকচার থেকে
নানা যুক্তি দিয়ে কোন পয়েন্ট বুঝানোর অসারতা বিষয়ে
এই লেকচারে রোমান স্টয়িক দার্শনিক মুসোনিয়াস রুফুজ (জন্ম ২৫ এডি - মৃত্যু ৯৫ এডি) বুঝাতে চান যে, কোন জিনিশ নানা দিকের যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করার কিছু নেই। কথা উঠেছিল যুবকেরা আসলে দার্শনিকদের কাছে কী ধরনের যুক্তি শুনবে তাদের শিক্ষাগুলি নিজেদের জীবনে প্রয়োগ করার জন্য।
মুসোনিয়াস বললেন নানাযুক্তি নয়, আমাদের খুঁজতে হবে স্পষ্ট ও বাস্তবিক যুক্তি।
তিনি রূপক উদাহরণ দিয়ে বলেন, যে ডাক্তার অনেক ওষুধ নিয়ে আসেন এক রোগের জন্য, তার এই অনেক ওষুধ আনার জন্য তিনি প্রশংসা পান না। বরং যে ডাক্তার রোগের জন্য কার্যকরি অল্প কয়টা ওষুধ আনতে পারেন, তিনিই ভালো ডাক্তার।
অনুরূপ ভাবে যে দার্শনিক শিক্ষা দেবার বেলায় নানা প্রমাণ হাজির করেন যুক্তি দিয়ে তিনি প্রশংসার যোগ্য নন। বরং যিনি অল্প যুক্তিতেই তার শ্রোতাদের বুঝাতে পারেন তিনিই প্রশংসার দাবীদার।
শ্রোতারা যত বুদ্ধিমান হবে তত তাড়াতাড়ি তারা অল্প কথায় বুঝে যাবে, যদি যুক্তিটি শক্ত হয়।
যে ব্যক্তির সামনে স্পষ্ট প্রমাণ দেখানোর পরও নানা যুক্তি দিয়ে তাকে আরও দেখাতে হয়, বা যেখানে অল্প কথায় মূল জায়গাটি দেখানো হলেও আরও বেশি যুক্তি দাবী করে সে আসলে অল্পবুদ্ধি এবং অযৌক্তিক।
---
তর্ক বিষয়ে
আপনি যদি কোন মানুষের বিশ্বাসে আঘাত করেন তাহলে সে আরো শক্তভাবে তার বিশ্বাস আঁকড়ে ধরবে, আপনার যুক্তি যত ভালো হোক না কেন।
---
সিক্রেট রুল
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট জর্ডান পিটারসন একবার হকি খেলা দেখতে গিয়েছিলেন, তার ছেলের টিমের খেলা। ছেলের বয়স তখন ১২।
তার ছেলে ভালো খেলত কিন্তু দলে আরেকজন ছিল যে ছিল বেশি ভালো হকিতে। কিন্তু সে অন্যান্যদের সাহায্য করত না।
সেই ম্যাচে পিটারসনের ছেলের দল হারে। যদিও ওই ভালো খেলতে পারা ছেলেটি স্কোর করেছিল।
খেলা শেষে ছেলেটি হকি স্টিক দিয়ে ফিল্ডে আঘাত করতে করতে বলছিল যে রেফারিং কত বাজে হয়েছে, খেলা কত আনফেয়ার হয়েছে।
ছেলেটির বাবা এগিয়ে গেলেন। তিনি গিয়ে ছেলেটির সাথে যোগ দিলেন। বলতে থাকলেন খেলা কত আনফেয়ার হয়েছে।
পিটারসনের ভাষ্যে এর চাইতে খারাপ প্যারেন্টিং আর হয় না।
মানুষ তার ছেলেমেয়েদের ভালো করতে বলে, "তুমি জিতলে না হারলে সেটা বড় কথা নয়, বড় কথা হল তুমি কীভাবে খেললে।"
কিন্তু এই কথার অর্থ কি তা যেমন বাচ্চারাও বুঝে না, বাবা মাও বুঝেন না। কারণ জিতার জন্যই তো খেলে তারা।
জর্ডান পিটারসন অন্যভাবে বিষয়টাকে দেখতে বলেন, আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য একটা খেলায় জিতা না, বরং সম্ভাব্য সব খেলার সেট এ জিতা।
সম্ভাব্য সব খেলার সেটে জিততে হলে আপনাকে একটা খেলায় জিতলেই হবে না। এমনভাবে খেলতে হবে যাতে আপনি আরও বেশি বেশি খেলার সুযোগ পান, আমন্ত্রিত হন।
তাই যখন কেউ বলেন তার বাচ্চাকে, তুমি জিতলে না হারলে তা নয়, কীভাবে খেললে তা বড় কথা, এর অর্থ হল, এমনভাবে তুমি খেলবে যাতে জিতো, কিন্তু এমনভাবে জিতবে যেখানে তোমার দলের সদস্যরা তোমার সাথে আরো খেলতে চাইবে, তোমার বিরুদ্ধ দল তোমার সাথে আরও খেলতে চাইবে, আর এভাবেই তুমি আরো বেশি বেশি খেলায় আমন্ত্রিত হবে।
পিটারসনের এই চিন্তাটি জীবনের একটা সিক্রেট রুল দেখিয়ে দেয়।
মানুষের লাইফ কোন পার্টিকুলার গেইম হয় না, অনেক অনেক গেইমের সেট থাকে। একজনকে ব্যবসায় টাকা উপার্জন করলেই হয় না, তার ব্যক্তিগত হ্যাপিনেস থেকে শুরু করে আরো অনেক গেইম থাকে, টাকা উপার্জনের গেইমের সাথে। এবং বেশি গেইমে জিততে হলে সে কিভাবে খেলছে তা গুরুত্ব বহন করে।
---
প্রাচ্যের রহস্য নগরী
এক
রাজা বল্লাল সেন একবার ঠিক একরলেন মানুষের উপকারের জন্য দীঘি খনন করাবেন। সেই দীঘির আকার কেমন হবে তা ঠিক করতে তিনি এক অদ্ভুত উপায়ের সাহায্য নেন। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন তার মা না থেমে একনাগারে হেঁটে যতদূর যেতে পারবেন, সে সমস্ত অঞ্চল নিয়েই খনন করা হবে দীঘি। তিনি প্রতীজ্ঞা করলেন এক রাতের মধ্যেই সেই দীঘি খনন করা হবে।
রাজার মা ছিলেন বৃদ্ধ। রাজা ভেবেছিলেন মা সারাজীবনে খুব অল্প পথই হেঁটেছেন, হয়ত তিনি বেশীদূর যেতে পারবেন না।
এদিকে রাজার মা কীভাবে যেন জানলেন তিনি যত বেশী হাঁটবেন তত প্রজাদের মঙ্গল হবে, তারা সাহায্য পাবে। রাজমাতার দয়ার হৃদয়। তিনি হাঁটা শুরু করলেন। সেই হাঁটা আর থামে না। তিনি চলতেই থাকলেন।
রাজমাতার এই চলা দেখে বল্লাল সেন চিন্তিত হয়ে পড়লেন। এভাবে যদি তিনি চলতেই থাকেন ও না থামেন, তাহলে তো সেই দীঘি খনন করতে মহাসমস্যায় পড়তে হবে। একরাতের মধ্যে অত বড় দীঘি খনন সম্ভব কী করে?
মরিয়া হয়ে রাজা এক ফন্দি আঁটলেন। তিনি একজন কর্মচারীকে বললেন, যাও রাজমাতার পায়ে এক ফোঁটা সিঁদুর কৌশলে দিসে আসো গিয়ে।
কর্মচারীটি কুর্নিশ করে বলল, যথাহুকুম মহারাজ।
কর্মচারীটি রাজার আদেশ পেয়ে লাল সিঁদুর নিয়ে গেল, এবং রাজমাতা যখন হাঁটছেন তখন সুকৌশলে তার পায়ে সিঁদুর ফেলে দিল।
রাজমাতা লাল রঙ দেখে ভাবলেন হয়ত জোঁকে ধরেছে পায়ে। তিনি নিচু হয়ে দেখতে লাগলেন, আর সেই সময়ে থেমেও গেলেন। সুতরাং, এই পর্যন্ত নির্ধারীত হলো দীঘির সীমানা।
বিপুল জনবল নিয়োগ করলেন বল্লাল সেন, একরাতের মধ্যে দীঘি খননের জন্য। যে পর্যন্ত রাজমাতা হেঁটেছিলেন তাও বিশাল। এক মাইল দীর্ঘ। রাজার লোকেরা এক রাতের মধ্যেই খনন করে ফেললো দীঘি।
দীঘি খনন সমাপ্ত হলে বল্লাল সেন লোকদের বললেন একটা জায়গা থেকে এক কোদাল করে মাটি তুলতে। খনন কাজে নিয়োজিত সব লোক এক কোদাল করে মাটি তুললো। এত লোক খনন কাজে যুক্ত ছিল যে সেই এক কোদাল করে মাটি তোলা আরেকটি ছোট দীঘির তৈরী করল। সেই দীঘির নাম হলো কোদাল ধোওয়া দীঘি।
এখন, প্রথম খনন হওয়া বিশাল দীঘিতে একটি সমস্যা দেখা দিল। খনন হলেও পানি উঠছে না। বল্লাল সেন মহাচিন্তিত হলেন। তিনি তার বিদ্বান, পরম ধার্মিক বন্ধু রামপালকে জিজ্ঞেস করলেন, কী বিত্তান্ত রামপাল?
রামপাল স্বপ্নযোগে জানতে পারলেন বল্লাল সেনের চালাকি দেবতারা পছন্দ করেন নি। তাই পানি উঠছে না। রাজার প্রিয় বন্ধু রামপাল যদি দীঘিতে নামেন তাহলে তার আত্মাহুতির মাধ্যমে দীঘিতে পানি আসবে।
রামপাল বন্ধুকে সব বললেন, এবং কাউকে আপত্তি জানানোর সুযোগ না দিয়ে, নেমে গেলেন দীঘিতে। মাটি ফুঁড়ে কলকল শব্দে পানি এলো, ভরে গেল দীঘি। সেই থেকে দীঘিটির নাম হলো রামপালের দীঘি।
এই গল্পটি একটি প্রচলিত লোকমুখের গল্প। এটিসহ প্রাচীন সমৃদ্ধশালী ঢাকা শহরের তথা পূর্ববঙ্গের অনেক চমৎকার লোকমুখের গল্প, ও ইতিহাস রয়েছে প্রাচ্যের রহস্য নগরী বইতে।
দুই
ঢাকার সাথে যে একজন শাসনকর্তার নাম খুবই ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে তিনি হলেন শায়েস্তা খাঁ। ঢাকা নগরীর প্রতিষ্ঠাতা ইসলাম খাঁ এর নামও ঢাকার সাথে এরূপ ঘনিষ্ঠ নয়। সে সময়ে মোগল সাম্রাজ্যের এই প্রদেশটি সমৃদ্ধির শিখড়ে অবস্থান করছিল।
শায়েস্তা খাঁ বিচক্ষণতার সাথে প্রায় নিরুপদ্রব পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। অনেক বয়েসকালে এবং অপরিসীম মর্যাদার সাথে তিনি একসময় সুবেদারী থেকে অবসর নেন। এমন গৌরবজনক ভাবে শাসনকার্য পরিচালনা ও অবসর নেবার ভাগ্য খুব কম সুবাদারের হয়েছে।
তার বিদায় মিছিলে সমস্ত শহর যেন ভেঙে পড়েছিল। জনতার মিছিল পিছনে নিয়ে তিনি শহরের পশ্চিম ফটকের সামনে গিয়ে উপস্থিত হন। তিনি নগরীর কাছ থেকে বিদায় নেন সেখানে দাঁড়িয়ে। তখন বাজারে চালের দাম টাকায় আট মণে নেমেছিল। পশ্চিম তোরণ দিয়ে বেরিয়ে যাবার সময় কর্মচারীদের নির্দেশ দেন, এই তোরণের ফলকে লিখে রাখো পুণরায় চালের দাম আবার এই পর্যায়ে না আসা পর্যন্ত কেউ যেন এই তোরণ না খোলেন।
শায়েস্তা খাঁয়ের নির্দেশে ফলকে লেখা হলো কথাটি।
চল্লিশ বৎসর পর্যন্ত তোরণ বন্ধ ছিল। পরে আবার সরফরাজ খানের আমলে বাংলার সুদিন ফেরে। চালের দাম আবার সে পর্যায়ে নেমে যায়। তখন খোলা হয়েছিল পশ্চিম তোরণটি।
প্রাচ্যের রহস্য নগরী বইটির মূল নাম The Romance of an Eastern Capital লেখক Francis Bradley Bradley-Birt। বাংলা অনুবাদ রহীম উদ্দিন সিদ্দিকী, বাংলায় ১৬৬ পৃষ্ঠা, প্রকাশক বাংলা একাডেমী। ঢাকার ইতিহাস, তৎকালীন রাজনীতি, ইংরাজদের ব্যবসাবিস্তার এবং তৎপরবর্তী সময়ে শাসন ক্ষমতা নেয়া ও শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, এবং অসাধারণ কিছু লোকমুখে প্রচলিত গল্পকথার সুন্দর সম্মিলন হয়েছে এখানে। ইতিহাসে আগ্রহীদের জন্য বইটি হতে পারে একটি চমৎকার পাঠ।
ক্রিপ্টোকারেন্সি পরিচিতি
কারদানোর টেকনোলজি, ভিশন, এবং অগ্রগতি নিয়ে নিয়ে কথা বলছেন সিইও চার্লস হস্কিনসন, মার্ক কিউবানের এক প্রশ্নের উত্তরে।
কারদানোর কারেন্সির নাম এডা (ADA বা বাংলায় আদা বলতে পারেন।)
এই নামটি কারদানোর ফাউন্ডার নিয়েছেন লর্ড বায়রনের মেয়ে এডা লাভলেইসের নাম থেকে। এডা ছিলেন একজন গণিতজ্ঞ। চার্লস ব্যাবেজ কম্পুটারের হিসাব নিকাশের বাইরে আরও কাজের ক্ষেত্র আছে তা তিনি বুঝতে পারেন। এবং সেইসব কাজের জন্য প্রথম এলগরিদম তিনি প্রকাশ করেন। এজন্য প্রায়ই বলা হয়ে থাকে তিনিই ছিলেন প্রথম প্রোগ্রামার। এ বিষয়ে বিতর্ক বিদ্যমান।
লর্ড বায়রন ও লেডি বায়রন দম্পত্তির একমাত্র সন্তান ছিলেন এডা। তার জন্মের দুই মাসের মাথায় বায়রন লেডি বায়রনকে ছেড়ে চলে যান। এবং চার মাসের মধ্যে চিরতরে ইংল্যান্ড ত্যাগ করেন। মেয়েকে ছেড়ে যাবার স্মৃতিতে তিনি লিখেছিলেন,
“Is thy face like thy mother’s, my fair child!
Ada! sole daughter of my house and heart?”
এডার বয়স যখন আট তখন বায়রন গ্রীসে মারা যান।
বাপের পাগলামি মেয়ের মধ্যে যাতে না আসতে পারে এজন্য লেডি বায়রন শুরু থেকেই মেয়েকে গণিত ও লজিকের দিকে আকৃষ্ট করেছিলেন।
কিন্তু বাপ জর্জ গর্ডন বায়রনের প্রতি এডার আগ্রহ কমে নি। নিজের দুই ছেলের নাম রাখেন গর্ডন এবং বায়রন।
বলে গিয়েছিলেন তার মৃত্যুর পরে যেন বাপের পাশে সমাহিত করা হয়। সেটা করা হয়েছে।
কিন্তু "টাকায় আট মণ চাল" এটা কি কৃষকদের আর্থিক দুরবস্থার দিকে ইঙ্গিত করে না?