পারফর্মেন্সের ভিত্তিতে দুনিয়ার সবচাইতে সেরা ট্রেডার কারা, তা নিচের ছবিতে দেখা যাবে
কোন ট্রেডার যদি এক বছর খুব সেরা পারফর্ম করেন কিন্তু পরবর্তীতে এর ধারে কাছেও যেতে পারেন না, তাহলে তার এই এক বছরের পারফর্মেন্সকে লাক বা সৌভাগ্য হিসেবে ধরা হয়। ট্রেডিং পারফর্মেন্সের হিশাবে দেখতে হলে দেখতে হয় তিনি বছর বছর এটা ধরে রাখতে পারেন কি না। ক বছরের হিশাবে ল্যারি উইলিয়ামস এর রিটার্ন সবার সেরা ছিল, ১১৩৭৬%। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি এই পারফর্মেন্স এর ধারে কাছেও যেতে পারেন নি ফলে সেরাদের লিস্টে টাকে দেখা যাচ্ছে না।
উপরে রিচার্ড ডেনিসের রিটার্ন ১২০% , সেই হিশাবে ১ ডলার ১৯ বছরে $3,206,497.72 তে পরিণত হয়। ইনফ্ল্যাশন এডজাস্টেড না। কিন্তু সংখ্যার বৃদ্ধিটা দেখলে বুঝতে পারা যাবে, তার এই ১২০% কত অবিশ্বাস্য কিছু। কম্পাউন্ড ইন্টারেস্ট এই ক্যালকুলেটর থেকে দেখতে পারবেন।
রিচার্ড ড্যানিস আর উইলিয়াম একার্ড দুই বন্ধু ছিলেন। একসময় তাদের তর্ক হল, ড্যানিস বললেন অন্য সব স্কিলের মত ট্রেডিং শেখানো যাবে মানুষকে, একার্ড বললেন এটা সম্ভব না।
তারা কে সঠিক এটা দেখতে পরীক্ষায় নামলেন।
১৪ জন লোককে তারা প্রফেশনাল ট্রেডিং এর ট্রেইনিং দিলেন। ট্রেন্ড ফলোইং নামে ট্রেডিং এর একটা স্টাইল আছে, সেইটা তারা শেখালেন। এটা এক ধরণের টেকনিক্যাল এনালাইসিসের ধরণ।
পরে সেখান থেকে সেরা ১০ জন নিয়ে শুরু করলেন মূল ট্রেডিং। দেখা গেল পর পর ৪ বছর তারা ৮০% রিটার্ন আনতে স্বক্ষম হলেন।
ডেনিস ও একার্ড প্রতিষ্ঠা করলেন বিখ্যাত টার্টল ট্রেডার ট্রেডিং গ্রুপ। সেই গ্রুপই ১৯ বছর ১২০% রিটার্ন এনেছিল।
তারা যে পদ্বতি ফলো করেছিলেন তা এখন আগের মত কাজ করে না কারণ যেহেতু বেশি মানুষ এটা সম্পর্কে জেনে গেছে, মার্কেট আরও জটিল হয়ে উঠেছে, এবং আরও ভিন্ন ভিন্ন সিস্টেম চলে এসেছে ট্রেন্ড ফলোইং এর ভেতরেই।
লিস্টের দ্বিতীয়তে থাকা মাইকেল মার্কাস তার ৩০ হাজারের ইনভেস্টমেন্টকে ২০ বছরে ৮০ মিলিয়ন ডলারে পরিণত করেছিলেন, এবং তিনি তার এই সাফল্যকে তার গুরু এড সেকয়েটা থেকে প্রাপ্ত জ্ঞানের জন্য সম্ভব হয়েছে বলতেন। এড সেকয়েটাও এই তালিকায় আছেন, তার রিটার্ন ৬০%, ৩০ বছর!
এই তালিকার একেকজন ট্রেডার একেক পদ্বতিতে ট্রেডিং করে এই সব অসাধারণ রিটার্ন আনতে স্বক্ষম হয়েছেন। ওয়ারেন বাফেট চার্লি মাঙ্গার যেখানে ফান্ডামেন্টাল বিজনেস এনালাইসিসকে গুরুত্ব দেন, সেখানে অন্য একজন হয়ত শুধুমাত্র মার্কেট প্রাইসকে গুরুত্ব দেন। এই তালিকা দেখিয়ে দেয়, ট্রেডিং এ সফল হতে কোন একমাত্র বেস্ট পন্থা নেই।
তবে, এদের মধ্যে কিছু জায়গায় অবশ্যই মিল থাকবে, হতে পারে টেম্পারমেন্টে, দুনিয়া দেখার ভঙ্গিতে বা অন্য কোন জায়গায়। সেটা কোন জায়গায়, এবং কী একজন লোককে বেস্ট ট্রেডারে পরিণত করে, তা আগ্রহীদের রিসার্চের বিষয়।
ইনভেস্টরের জন্য আইকিউ মূল না, আরও কিছু ব্যাপার জরুরী।
“Investing,” says legendary investor Warren Buffett, “is not a game where the guy with the 160 IQ beats the guy with a 130 IQ… You need to be smart, but not a genius.” In his usual plainspoken way, he adds, “If you have a 150 IQ, sell 30 points to someone else.”
১। নলেজ। ইতিহাস সম্পর্কে। আগে মার্কেট কীরকম আচরণ করেছে। বলা হয়, মার্কেট আগে যেভাবে আচরণ করেছে ভবিষ্যতে এভাবে করবে না। এই কথা সত্যি। ইতিহাস জানতে হয় মার্কেট এর ন্যাচার বুঝতে, ভবিষ্যতেও একইরকম হবে এই আশায় না।
যেমন এমনিতে জেনারালাইজ করে যখন বলা হবে, ঐতিহাসিক ভাবে মার্কেত ১০% হারে রিটার্ন দেয়। মনে হবে দুনিয়ার সবচাইতে সহজ কাজ ইনভেস্টিং। কিন্তু ইতিহাস দেখলে দেখা যাবে, কিছু বছরে ৫০% মাইনাস রিটার্ন হয়েছিল। সেই বছর একজন ইনভেস্টর কী করবেন যদি তার ইতিহাস জ্ঞান না থাকে?
২। অভিজ্ঞতা। কিছু জিনিশ বই পড়ে শেখা যায় না। এক্সপেরিয়েন্স করতে হয়। ট্রেডিং সেইরকম একটা জিনিশ, ফলে টাইম লাগে। এই ক্ষেত্রে একটা সুবিধা আছে, অভিজ্ঞ ইনভেস্টরদের অনেকে তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। যেমন অয়ারেন বাফেটের বা হাওয়ার্ড মার্কসের লেটারগুলা। এসব অনুসরণ করলে একজন ট্রেডার মার্কেটের ন্যাচার ও ঐতিহাসিক ফ্রেমে চিন্তা করার নানা পদ্বতি শিখতে পারবেন।
৩। সাইকোলজি। ট্রেডিং একটা সাইকোলজিক্যাল জার্নি। মানুষের চিন্তার বায়াসগুলি সম্পর্কে সচেতন না থাকলে ও নিজের বায়াসগুলি অতিক্রম করে না গেলে এখানে সফল হওয়া কঠিন।
৪। ভাগ্য। ট্রেডিং অনিশ্চয়তার টেরিটোরিতে কাজ করা। ফলে এখানে ভাগ্যের ভূমিকা বেশি থাকে। এখন একজন কি তার ভাগ্য বদলাতে পারে? কিছু ভাগ্য বদলাতে পারে না, কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে সে সৌভাগ্যকে তার পক্ষে কাজ করার জায়গা দিতে পারে অর্থাৎ সম্ভাব্যতা বাড়াতে পারে। অন্যভাবে বললে, একটা খালি চেয়ার সে তার পাশে রেখে দিতে পারে যাতে এখানে সৌভাগ্য আসলে বসতে পারে। অন্যথায় সৌভাগ্য আসলেও বসার জায়গা পাবে না, চলে যাবে। এটা নিয়ে আমি ব্লগে লিখেছিলাম, দেখতে পারেন, ভাগ্যবান হওয়া কী স্কিল?।
“The secret to being successful from a trading perspective is to have an indefatigable and an undying and unquenchable thirst for information and knowledge.” – Paul Tudor Jones