১।
আপনি কীভাবে খরচ কমাইতে পারেন, এটা নিয়া আলাপ হয়। কীভাবে খরচ কমাইয়া বেশি সেইভ করতে পারবেন, ইত্যাদি। কিন্তু, এই ইনভেস্টমেন্টের ক্ষেত্রে এই অবস্থানের সীমাবদ্বতা হল, আপনি খরচ কমাইতে কমাইতে এক জায়গায় গিয়া থামতে হবে। তখন আপনি সেইভিং বা ইনভেস্টমেন্ট বাড়াবেন কেমনে? সেইভিং বা ইনভেস্টমেন্ট বাড়াতে হলে আপনার আয় বাড়াতে হবে। খরচ কমানো, ভালো ভাবে বললে অহেতুক খরচ কমানো সাথের বিষয়, মূল বিষয় আয় বাড়ানো।
একজনের ফাইনানশিয়াল ফ্রিডমের জন্য দরকার তার আয়ের উৎস বাড়ানো। যেখান থেকে সে বেশি আয় করতে পারে।
এরপরে আসে ইনভেস্টমেন্ট।
২।
মানুষের মিনিংফুল হ্যাপি লাইফ কাটাইতে হলে বিগার পারপাজ লাগে। সে একটা বড় উদ্দেশ্যে কাজ করছে। পৃথিবীর সব মিথের গল্প এই আর্কিটাইপই তুলে ধরা হইছে। হিরো একটা বড় জিনিশকে উদ্দেশ্য করে ছোটে। এই হিরোর রূপকে এখানে মানুষরেই বলা হইছে, তার এক বিগার পারপাজ দরকার।
মানুষের বিগার পারপাজ না থাকলে তা প্রতিস্থাপিত হয় বিনোদন, কনজিউম, অতিভোগে। সে এটারেই পারপাজ ধরে নেয়। পৃথিবীর ইতিহাসে, এমন কোন মিথের গল্প সম্ভবত নাই যেখানে হিরো সেলফিশ।
ডেরেক সিভার্স যখন তার ২২ মিলিয়ন ডলারের ব্যবসা চ্যারিটিতে দিয়া দিলেন, তখন তার বক্তব্য ছিল আমি মহান হতে এটা করি নাই, আমি কেবল ওইটা করেছি যা আমারে হ্যাপি করে।
যারা অন্যরে সাহায্য (যেটাকে দান বলা হয়) করে ও যারা করে না, এদের মধ্যে টাকা কত আছে এর চাইতে বেশি হল, তাদের এম্প্যাথি কেমন, এবং তাদের ইচ্ছা আছে কি না। যার দেয়ার ইচ্ছা নাই তার শত চাহিদা ও কারণ থাকবে না দেয়ার। যার দেয়ার ইচ্ছা আছে, সে নিজে না খাইয়াও দিতে পারে। একজন চা দোকানদারের নিউজ ভাইরাল হয়েছিল, যিনি সপ্তাহে একবার মানুষদের খাওয়ান।
৩।
বেশীরভাগ ফাইনানশিয়াল এক্সপার্ট ইনডেক্সকে বিট করতে পারে না। কারণ, ১৯২৬ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত মাত্র ৪% ইউ এস স্টক ইউ এস ট্রেজারি বিলরে রিটার্নে হারাতে পেরেছে।
অনেক কোম্পানি ১০ বছর রাজত্ব করে পরে হারিয়ে যেতে পারে।
সুতরাং, ইন্ডিভিজুয়াল ইনভেস্টর, যার লক্ষ্য হলো তার মানির ভ্যালু ধরে রাখা ও যখন তার কাজের এবিলিটি এখনকার মত থাকবে না তখন, এখনকার অর্জিত টাকারে কাজে লাগিয়ে ফাইনানশিয়াল ফ্রিডম উপভোগ করা, তার জন্য ইন্ডিভিজুয়াল ষ্টকে ইনভেস্ট রিস্কি।
৪।
মার্কেট ক্র্যাশ করবে আর কিনব এমন চিন্তা বাজে কারণ যে আজকে কিনছে না সে মার্কেট ক্র্যাশ হলে কিনবে, এমন হয় না। প্রথম কথা মার্কেটে সে বিশ্বাস করে না বা মার্কেট বুঝে না। যখন আপ হচ্ছে তখন ভয় পায়, আপ হওয়া বুঝি শেষ হয়ে যাবে। আর যখন ক্র্যাশ করে তখন আরও ভয় পায়। এই মার্কেট আর উঠবে না।
মার্কেট টাইমিং বোকাদের গেইম।
ঐতিহাসিক ডেটা বলে, প্রায় ৩৯ টা উন্নয়নশীল দেশের হিশাবে ৮৮% চান্স যে মার্কেট কেবল উপরেই যায়। খালি আপনার টাইম ফ্রেমটা কী তা বিবেচনা করতে হবে। ৫ বা ১০ বা আরও বেশি সময়ের ফ্রেইমে, মার্কেট কেবল উপরেই যায়। এর মানে এই না যে এটা গ্যারান্টেড, লাইফের কোন কিছুই গ্যারান্টেড না, কিন্তু ৮৮% চান্স, বিগ।
ঐতিহাসিক ভাবে ফাইনানশিয়াল এসেটদের মধ্যে ইউ এস স্টক মার্কেটই সবচাইতে ভালো জায়গা।
মার্কেটে ইনভেস্ট করার সবচাইতে ভালো সময় আজকে। এবং ভালো স্ট্র্যাটেজি, নিক ম্যাজ্জিওলি তার বইয়ের নামে যেভাবে বলেন, জাস্ট কিপ বায়িং।
ধরা যাক, কেউ যেতে চাচ্ছে আম্বরখানা থেকে জিন্দাবাজার। এখন সে রাস্তায় জ্যামে পড়তে পারে, থামতে পারে, গাড়ি নষ্ট হতে পারে, কিন্তু রাস্তা ঠিক থাকলে পৌঁছাবে জিন্দাবাজারে। স্টক মার্কেটের ব্যাপারটা একই।
৫।
যেহেতু ষ্টক মার্কেটে অনিশ্চয়তার জায়গা বেশি, তাই, এখানে লাক বা ভাগ্যের ভূমিকা থাকে বেশি। ধরা যাক আপনি ইনভেস্ট করে গেলেন, কিন্তু শেষ বয়েসে মার্কেট ক্র্যাশের সম্মুখীন হলেন, এতে আপনার লস হবে বেশি টাকা, কারণ তখন আপনার ইনভেস্টমেন্ট বেড়ে অনেক টাকাতে পরিণত হয়েছিল। এমন হওয়া একেবারে অসম্ভব না।
এটাকে পাশ কাটিয়ে যাবার উপায় নাই।
যখন ইনভেস্টমেন্ট এমাউন্ট কম থাকে, তখন উচিত লাক পজেটিভলি কাজ করতে পারে, এমন সম্ভাব্যতা তৈরি করা, এখানে রিস্ক বেশি থাকলেও। যেমন স্মল ক্যাপ স্টক, ডিসরাপ্টিং স্টক যেখানে আপসাইড অনেক বেশি।
কারণ ইনভেস্টমেন্টের প্রথম কথা টাকা বেশি হতে হবে।
১ মিলিয়ন ডলারের ৫% রিটার্ন ৫০ হাজার ডলার। ১০ হাজার ডলারের ৫% রিটার্ন ৫০০ ডলার। এই হিসাবটা বুঝতে হবে।
পক্ষান্তরে, ইনভেস্টমেন্ট এমাউন্ট কম হলে রিস্ক কমানোটাই প্রাধান্যে থাকা উচিত। সেক্ষেত্রে মডারেট রিটার্নই অনেক ভালো রিটার্ন হবে।
৬। কোন বিষয়ে একটা ন্যারেটিভ যখন প্রচার হতে থাকে তখন তা কিছুটা সত্য, কিছু ইমোশন, বিভিন্ন ধরণের মনুষ্য স্বার্থ, অসম্পর্কিত অনেক বর্ননার মিলমিশ এবং মানুষের ক্রিয়েটিভিটির সমন্বয়ে হয়ে থাকে। ইকোনমিক ক্ষেত্রে এইরকম কিছু গল্প বিভিন্ন সময়ে জনপ্রিয়তা পায়। যেমন মার্কেট ক্র্যাশ করবে, বা কোন এসেট বিষয়ে, বা কোন প্রযুক্তি বিষয়ে, ইন্টারেস্ট রেইট বিষয়ে, ইনফ্ল্যাশন বিষয়ে ইত্যাদি। এইসব ন্যারেটিভ আগে মুখে মুখে, পত্রিকা টিভির মাধ্যমে প্রচারিত হত। এখন সামাজিক মাধ্যমের কারণে আরও দ্রুত বিস্তার লাভ করে। এইসব গল্প বা ন্যারেটিভ মার্কেটে মারাত্মক প্রভাব ফেলে বলে দাবী করেছেন ইকোনমিস্ট রবার্ট শিলার তার ন্যারেটিভ ইকোনমিক্স বইতে। যেকোন ইকোনমিক ন্যারেটিভ যখন প্রচার পাচ্ছে, তখন এর মার্কেট প্রভাব পড়বে।