ইনভেস্টিং, স্টক মার্কেট, মানি ও সম্পদ নিয়ে লেখাগুলি এইখানে রাখতে মনস্থ করলাম। যেসব লেখা এডিট, নতুন কিছু যুক্ত হয়েছে সেগুলার সাথে, অন্যান্য লেখা লিংক আকারে যুক্ত আছে। প্রতিটা একেক অধ্যায়। এক জায়গায় রাখার সুবিধা হলো, একসাথে পড়লে বেসিক আইডিয়া বুঝতে সুবিধা হবে।
শেষে রিসার্চ টুলগুলা যুক্ত আছে। আপডেট হবে সময়ের সাথে।
-----
টাকা পয়সা
স্টক ও স্টক মার্কেট কী?
ধরা যাক আমার সাইট এর উপর নির্ভর করে আমি একটা মিডিয়া বিজনেস শুরু করলাম। বিজ্ঞাপন থেকে কোম্পানির বছরে আয় হতে থাকলো ১ লাখ ডলার। তখন আমি ভেবে দেখলাম যদি ব্যবসাটিকে আরো বড় করতে পারি তাহলে আমার প্রফিট বাড়বে। আমি প্রাইভেট ইনভেস্টরদের কাছে গেলাম।
আমি ৫০% অংশ তিনজন ইনভেস্টরের কাছে বিক্রি করলাম ৩ মিলিয়ন ডলারে। অর্থাৎ তারা আমার কোম্পানিতে ইনভেস্ট করলেন, এর বিনিময়ে পেলেন ৫০ ভাগ মালিকানা।
আমি কোম্পানি বড় করলাম। অনেক লোক হায়ার করলাম। নানা সেক্টরে মিডিয়া বিজনেস শুরু করলাম ডিজিটাল প্লাটফর্মে, ওটিটি এপ আনলাম। আরেকটি নতুন একটি এপ আনলাম। যেখানে কন্টেন্টের সাথে সাথে কম্যুনিটি তৈরীরও সুযোগ আছে, ইউজাররাও কনটেন্ট পাবলিশ করতে পারেন। মার্কেটার, এঞ্জিনিয়ার, হিউম্যান রিসোর্স ইত্যাদি জায়গায় ভালো লোকদের হায়ার করলাম।
এসবে টাকা খরচ করার ফলে কোম্পানির ইউজার, সাবস্ক্রাইবার বাড়ল। আয় বেড়ে দাঁড়াল ৩ মিলিয়ন ডলার বছরে।
এখানে যদিও আমি ৫০% এর মালিক এখন, কিন্তু আমার আয় অনেক বেড়ে গেছে। আগে ছিল ১ লাখ ডলার, এবং এখন ১.৫ মিলিয়ন বছরে।
কিন্তু এখনো আমার কোম্পানি প্রাইভেট কোম্পানি। যে কেউ এসে আমার কোম্পানির শেয়ার কিনতে পারবে না।
প্রাইভেট কোম্পানির ক্ষেত্রে ইনভেস্টর পাওয়া সহজ না। টেক বিজনেসে খুব সলিড প্রডাক্ট থাকতে হয়, ভালো প্রফিট জেনারেট করছে, এবং ভবিষ্যতে গ্রোথের সম্ভাবনা আছে এমন কোম্পানিতেই সাধারণত ইনভেস্টররা ইনভেস্ট করে থাকেন।
কয়েক বছর গেল ধরা যাক আমার মিডিয়া কোম্পানির। এবং আমি বুঝতে পারলাম যে এটিকে আরো বড় করা যায়। বিভিন্ন ভাষায় বিভিন্ন দেশে এর কার্যক্রম শুরু করা যায়, নানা ধরনের নতুন সেবা যুক্ত করা যায়।
এসব করতে গেলে আমার টাকার দরকার।
তখন আমি ঠিক করলাম কোম্পানিকে পাবলিক করব। ধরা যাক, এর এক অংশ, চার ভাগের এক ভাগ পাবলিক মার্কেটে বিক্রি করব। এর বিনিময়ে টাকা তুলব।
এটি করার জন্য প্রচলিত পদ্বতি হল, আমাকে একটি আন্ডাররাইটিং ফার্মের কাছে যেতে হবে। আমি বলব কত টাকা তুলতে চাই। তারা তাদের এনালাইসিস করে দেখবে এই ব্যবসার সাপেক্ষে ওই টাকা তোলা যাবে কি না।
তারা তাদের এনালাইসিস করে বলল, ১০০ মিলিয়ন ডলার তারা তুলে দিতে পারবে। ১৮ ডলার পার শেয়ার হিসেবে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ শেয়ার বিক্রি করে।
আমি রাজী হলাম।
ওই ফার্ম তার সেরা ক্লায়েন্টদের সাথে যোগাযোগ করল। সাধারণত বড় ব্রোকার, ব্যাংক, ইনস্যুরেন্স কোম্পানি ইত্যাদি। এবং তাদের বলল এই কোম্পানিটির এই এই অবস্থা, সম্ভাবনাময়, এর ১ লাখ শেয়ার আছে আমার কাছে আপনার জন্য, আপনি কি কিনতে চান।
এভাবে বিক্রি করে আমাকে টাকা তুলে দিল।
এরপরে এক নির্দিষ্ট দিনে শেয়ার মার্কেটে আমার কোম্পানির শেয়ার চলে আসবে, ওই বিগ ক্লায়েন্টদের যারা শেয়ার কিনেছিলেন তাদের হাত ঘুরে।
ইতিমধ্যে হাইপ তৈরি হয়েছে, মার্কেটিং এর মাধ্যমেও হাইপ তৈরির চেষ্টা হয়েছে। পত্রিকা-টিভিতে নিউজ হয়েছে। রোড শো হয়েছে যে অমুক দিনে আমার কোম্পানির স্টক বা শেয়ার বাজারে আসছে।
মানুষ কেনার জন্য রেডি ছিল, অনেক ছোট বড় ইনভেস্টর রেডি ছিল। দেখা গেল প্রথম দিনেই স্টকের দাম ২০ ডলার থেকে বিক্রি হতে শুরু করল।
আমি আপনি যখন স্টক মার্কেট থেকে কোন স্টক কিনি, তখন এটা সেকেন্ডারি মার্কেট। এবং এই স্টক হল কোম্পানিটির একটি ক্ষুদ্র মালিকানা।
আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে কীভাবে স্টক মার্কেটে স্টকের দাম বাড়ে কমে?
চাহিদা ও জোগানে।
ধরা যাক আপনি বাজার করতে গেলেন কোন দোকানে। সেখানে এক কেজি আলুর দাম টাকায় নির্দিষ্ট। আপনি মানলে কিনেন, নাহলে না কিনেন। এটা এক ধরনের মার্কেট।
আরেক ধরনের মার্কেট আমরা অনেকে জুম্মার নামাযের পর মসজিদে দেখি গ্রামাঞ্চলে। মসজিদের বাগানের আলু হয়েছে। নিয়োজিত একজন একটা দাম ধরে নিলামে হাঁকলেন ৮ টাকা। মুসল্লিদের একজন বললেন ১০ টাকা। আরেকজন ১৫ টাকা। আরেক ধনী ব্যক্তির ইগোতে লাগল তিনি হাঁকলেন ৫০ টাকা। চেয়ারম্যান সাহেবের কানে যেতেই তিনি হাঁক দিলেন ৫০০ টাকা।
এটাও এক ধরনের মার্কেট। নিলাম মার্কেট বা অকশন মার্কেট।
স্টক মার্কেট হল অকশন মার্কেট। তবে জুম্মার নামাযের নিলামের সাথে এর পার্থক্য হলো এখানে ক্রেতা অনেক, বিক্রেতাও অনেক।
স্টক মার্কেটের ব্যবস্থাটা হলো, ধরা যাক ৩০ জন লোক আছে। একজন বলতেছে আমি আলু বেঁচব ৫ টাকা কেজি, আরেকজন বলতেছে ১৫ টাকা কেজি, আরেকজন ১০ টাকা কেজি…
আর ক্রেতাদের মধ্যে একজন বলতেছে আমি এক কেজি আলু কিনব ৩ টাকা কেজি, আরেকজন বলতেছে ৭ টাকা কেজিতে কিনব, আরেকজন ৯ টাকা কেজি …
এভাবে ট্রেডিং দিনের পুরা সময় এটা চলতে থাকে। এবং এর উপরই ভিত্তি করে স্টকের দাম বাড়ে কমে। নিচের ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন একটি স্টকের বিড এবং আস্কিং এর রিয়াল টাইম চিত্র।
যদি ক্রেতা বেশি থাকে তাহলে ক্রেতাদের ভেতর প্রতিযোগিতা থাকে বেশি। একেকজন বেশি দামে কিনতে আগ্রহী হয়। ফলে দাম বেড়ে যায় চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে।
আবার যদি বিক্রেতা বেশি থাকে মার্কেটে, এবং বিক্রির হার বেশি হয়, তাহলে বিক্রেতারা কম দামে ছাড়তে থাকেন। ধরা যাক, কোন কোম্পানির সিইও অর্থ কেলেঙ্কারিতে ধরা খেয়েছেন খবর এলো। সাথে সাথেই বিক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়বেন বিক্রি করতে। তখন জোগান বেড়ে যাবে মার্কেটে। স্টকের দাম কমে যাবে।
চাহিদা ও জোগানের উপর নির্ভর করে যেহেতু মার্কেটে দাম বাড়ে কমে, তাই মানুষের সাইকোলজি বুঝা ট্রেডিং এর অপরিহার্য। একইভাবে আইডিয়া রাখতে হয় ব্যবসা, রাজনীতি ও বিশ্বরাজনীতি, ম্যাক্রো ইকোনমিক গুরুত্বপূর্ন ইস্যুগুলি সম্পর্কে।
এখানে প্রাসঙ্গিক এক জরুরী তথ্য জানিয়ে রাখি, প্রায় যেকোন ট্রেডিং প্লাটফর্মে আপনি দুইভাবে কোন স্টক কেনা বা বেচার অর্ডার দিতে পারেন।
এক, কোন নির্দিষ্ট প্রাইস সেট করে। যেমন, আমার এক্স স্টক ১০ টাকা হলে বিক্রি করে দাও। যখন ওই স্টকের দাম ১০ টাকা হবে তখনই সেল হবে। প্লাটফর্ম নিশ্চিত করবে যেন ১০ টাকাতেই বিক্রি হয়।
দুই, আরেক ধরণের অর্ডার হলো মার্কেট অর্ডার। এখানে আপনি সরাসরি সেল অর্ডার দিয়ে দিতে পারেন। ধরা যাক আপনি দেখলেন স্টকের দাম ১০ টাকায় চলে গেছে, তাই সরাসরি সেল দিয়ে দিলেন। এক্ষেত্রে, প্লাটফর্ম নিশ্চিত করে না আপনার স্টক ১০ টাকাতেই বিক্রি হবে। দেখা যেতে পারে, ৯.৯০ টাকাতে বিক্রি হয়েছে। কারণ যেহেতু আপনি মার্কেট অর্ডার দিয়েছেন তাই উপস্থিত সময়ে বিড এবং আস্কের উপর নির্ভর করে প্লাটফর্ম আপনার সেল অর্ডার আরেকজনের বাই অর্ডারের সাথে মেলাবে। এই প্রক্রিয়ায় প্রাইসের উঠানামা হতে পারে।
একই কথা বাই অর্ডারের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আপনি কিনতে চাইলেন সরাসরি মার্কেট অর্ডার দিয়ে, সেক্ষেত্রে হয়ত যে দাম আপনি দেখেছিলেন তার চাইতে অল্প বেশী পে করতে হবে, বা কখনো কম।
তাই, যদি চান নির্দিষ্ট দামে কিনবেন বা বিক্রি করবেন তাহলে সরাসরি মার্কেট অর্ডার না দিয়ে প্রাইস ঠিক করে দিতে হবে।
আবার যদি অবস্থা এমন হয় যে, এই মুহুর্তেই আপনার বাই বা সেল করতেই হবে, তাহলে সরাসরি মার্কেট অর্ডার দিতে হবে।
চাহিদা ও জোগান - মার্কেটে যেভাবে কাজ করে
“there is nothing new in Wall Street. There can't be because speculation is as old as the hills. Whatever happens in the stock market today has happened before and will happen again” - Jesse Livermore, Reminiscences of a Stock Operator, Edwin Lefevre
অনেক অনেক আগে থমাস সাহেব নামে একজন লোক ছিলেন। থমাস এন্ড রক নামে এক কোম্পানি ছিল তার। এই কোম্পানি এক ধরণের ইউনিক পাথর কেনা বেচা করত মানুষের কাছে।
অনেকদিন ধরে ব্যবসায় ছিলেন থমাস সাহেব। প্রায় ত্রিশ বছর ব্যবসার পর তার মাথায় এক বুদ্ধি আসলো। পাথর কেনা বেচাতে লাভ সীমিত হয়ে পড়েছে, লাভ বাড়াতে হবে। তিনি তার এক প্রতিবেশীকে নিয়ে একরাতে বারে গেলেন। মদ খেতে খেতে থাকে বললেন, এই কথাটা আমি তোমাকে বিশ্বাস করে বলছি ভাই, কাউরে বইলো না। আমার ইউনিক পাথরগুলা আগামী মাস থেকে অনেক শর্ট পড়বে। এখন খুব কম নতুন পাথর পাওয়া যায়। জানোই তো এইগুলা কত সুন্দর পাথর। তাই আমি চিন্তিত আছি।
এক সপ্তাহের মধ্যে সারা শহরে এই খবর চাউড় হয়ে গেল। থমাস সাহেব এটিই চেয়েছিলেন।
পাথর শর্ট পড়বে জেনে মানুষেরা বেশি আসতে লাগলো পাথর কিনতে, থমাস সাহেব দাম বাড়িয়ে দিলেন চাহিদা বেশি দেখে।
এতে বিক্রি আরও বাড়লো। মানুষ আরও বিশ্বাস করল যে আসলেই পাথর শর্ট পড়তে যাচ্ছে।
থমাস সাহেব চাহিদা বাড়ছে দেখে আরো দাম বাড়ালেন।
এভাবে কয়েকবার বাড়ানোর পর থমাস সাহেব খেয়াল করলেন কিছু বুদ্ধিমান ক্রেতা তাদের আগে কম দামে কেনা পাথর তার কাছে বেশি দামে বিক্রি করে দিচ্ছে। থমাস সাহেব এটাকে স্বাভাবিক ভাবেই নিলেন। কারণ তার লাভ হচ্ছে বেশি।
কিন্তু বুদ্ধিমান থমাস সাহেব বিপদ বুঝতে পারলেন। তিনি বুঝলেন এভাবে আজীবন দাম বাড়ানো যাবে না। এবং তিনি খেয়াল করলেন তার ফ্যাক্টরিতে থাকা পাথরগুলা কমে আসছে।
সাথে সাথে পাথরের বিক্রিও কমে আসছে। তিনি যদিও অবস্থা একইরকম আছে বুঝাতে দাম বাড়িয়ে চলেছেন কিন্তু পাথর কেনা পড়তির দিকে।
এরই মধ্যে একদিন রাস্তায় থমাস সাহেবের সাথে দেখা হয়ে গেল তার ওই প্রতিবেশীর। প্রতিবেশী তাকে একটু অন্যদিকে সরিয়ে নিয়ে নিচু স্বরে বলল, একই শুনছি থমাস, আরেকটা কোম্পানি নাকি নতুন তৈরি হচ্ছে, তোমার পাথরের মত ইউনিক পাথর তারা নাকি আরও কম দামে বিক্রি করতে পারবে? এটা সত্যি নাকি?
কথাটা শুনে থমাস সাহেবের মাথায় বিদ্যুৎ খেলে গেল। তিনি দ্রুত সরে যাবার চেষ্টা করলেন, তার প্রতিবেশী দৌড়ে এসে তাকে ধরল, বলল, এটা সত্যি নাকি থমাস?
থমাস সাহেব মুখ কালো করে রইলেন। প্রতিবেশী যা বুঝার বুঝে নিল।
পরের সপ্তাহে এই নতুন কোম্পানির খবর সারা শহরে রটে গেল।
মানুষেরা হুমড়ি খেয়ে পড়লো থমাস সাহেবের ইউনিক পাথরগুলা বিক্রি করে দিতে। যেহেতু বিক্রেতা বেশী, তাই দাম পড়ে গেল। থমাস সাহেব কম দামে বিক্রেতাদের কাছ থেকে পাথর কিনতে লাগলেন।
প্যানিক সেল যত বাড়লো তত দাম কমতে থাকলো, বেসিক চাহিদা জোগানের সূত্র মতে।
থমাস সাহেব খুশিমনে আবার কম দামে পাথরগুলা কিনে তার ফ্যাক্টরি ভরে ফেললেন। এখন কয়েকমাস একটু নীরব থাকার পালা তিনি ভাবলেন। এই কয়মাস বিক্রি কম হোক । কিন্তু এই গুজব ছড়িয়ে এবং চাহিদা বাড়িয়ে তিনি যা লাভ করেছেন, ও পরে গুজব ছড়িয়ে জোগান বাড়িয়ে তিনি যে ফ্যাক্টরি আবার ভরেছেন, এখানে লাভ হয়েছে অনেক। কিছুদিন পরে মানুষ সব ভুলে যাবে। তখন আবার চাহিদা বাড়ানোর গুজব ছড়িয়ে দাম বাড়াবেন ও ফ্যাক্টরিতে থাকা পাথরগুলা বেশি দামে বিক্রি করবেন।
থমাস সাহেব এই প্রক্রিয়াতে অবশ্য কিছু বুদ্ধিমান ক্রেতাদের দেখলেন। এরা প্যানিক সেলে যখন দাম কমেছে, তখন বিক্রি করে নি, বরং কেউ কেউ কিনেছে। আবার যখন গুজবে দাম বেড়েছিল তখন বিক্রি করে দিয়েছে। তিনি বুঝলেন এই দাম কমায় যারা কিনেছে তারা অপেক্ষায় আছে আবার দাম বাড়ার। মনে মনে হাসলেন থমাস সাহেব, এরা তার খেলাটা ধরে ফেলেছে।
এই থমাস সাহেবের গল্পটি স্টক মার্কেটে চাহিদা জোগানের ফোর্স কীভাবে কাজ করে তার সরলীকৃত চিত্র। বেসিকে, চাহিদা ও জোগান। এবং এইজন্য, স্টক প্রাইস এনালাইসিসে ভলিউম গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি দেখেন বেশি দামে বেশি ভলিউমে কোন স্টক বিক্রি হচ্ছে, তাহলে সেটা বেশি চাহিদার ইঙ্গিত দেয়। বেশী চাহিদা মানে দাম বাড়বে।
উলটাটা, যখন দেখবেন বেশি ভলিউমে সেল হচ্ছে, তা স্টকের দাম ডাউনট্রেন্ডের দিকে যাবে বুঝায়।
মার্কেট সেন্টিমেন্ট গ্রাফটা এইরকম,
একজন ইনভেস্টর যদি শর্ট টার্ম ট্রেডার হন বা লং টার্ম ইনভেস্টর, দুই ক্ষেত্রেই মার্কেটে প্রাইস উঠানামার চাহিদা-জোগানের বেসিক মেকানিজম, ও মার্কেট সেন্টিমেন্ট বুঝা দরকারী। শর্ট টার্ম ট্রেডার এর উপর নির্ভর করেই কেনাবেচা করেবেন। আর লং টার্ম ইনভেস্টর এর উপর নির্ভর করেই তার এন্ট্রি পয়েন্ট খুঁজে নিবেন, ও যখন প্যানিক সেল চলতেছে তখন প্যানিকড হবেন না। ওয়ারেন বাফেট যে বলেন, যখন অন্যেরা গ্রিডি হয় তখন ফিয়ারফুল হও, আর যখন অন্যরা ফিয়ারফুল হয়, তখন গ্রিডি হও, এর মর্মার্থ বুঝতে পারবেন উপরের ব্যাখ্যা, ও মার্কেট সেন্টিমেন্ট গ্রাফ থেকে।
স্টক এক্সজেঞ্জ কী এবং কী তার ইতিহাস?
পৃথিবীর প্রথম পাবলিকলি ট্রেডিং কোম্পানি হিসেবে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে ধরা হয়। ইস্ট ইন্ডিজ যখন আবিষ্কৃত হলো তখন ইউরোপ থেকে জাহাজ আসত সেখানকার সম্পদ আহরণ করতে। কিন্তু এই কাজটি ছিল অনেক ঝুঁকিপূর্ন। দূর্ঘটনা, ডাকাতের হাতে পড়ে ধ্বংস ইত্যাদি ঝুঁকি ছিল। এসব কারণে খুব কম জাহাজ দেশে ফিরতে পারতো।
তখন এগুলিতে ইনভেস্টকারীরা রিস্ক কমাতে ১৬০০ সালে একটা পুরা ভিন্নরকম কর্পোরেশন তৈরি করলেন, গভর্নর এন্ড কোম্পানি অব মার্চেণ্টস অব লন্ডন উইথ ইস্ট ইন্ডিজ। এখানে ইনভেস্টের ক্ষেত্রে ইনভেস্টররা রিস্ক কমাতে এক জাহাজে টাকা না দিয়ে কয়েকটাতে ভাগ ভাগ করে দেয়ার ব্যবস্থা রাখলেন।
দেখা গেল এই পদ্বতিতে লাভ হয়। তিন জাহাজের মধ্যে দুইটা হারিয়ে গেলে, এবং একটা ফিরে আসলেও লাভ করতে পারেন ইনভেস্টররা। তখন ইউরোপে এই ধরনের চার্টার তৈরি হলো অনেক ধরনের বিজনেসকে কেন্দ্র করে।
১৬০২ সালে ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি অফিসিয়ালি প্রথম পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানি হয়, এবং শেয়ার রিলিজ করে আমস্টারডাম স্টক এক্সচেঞ্জে।
এখন স্টক এক্সজেঞ্জ কী?
আপনি পারিবারিক নিত্য পণ্যের বাজার করতে গেলে পাশের মুদি দোকান থেকে করতে পারবেন, কয়েক গলি দূরে আপনার বন্ধুর দোকান থেকে করতে পারবেন, বা ২০ মিনিট দূরের সুপার মার্কেট থেকে করতে পারবেন।
এই একেকটা দোকান হলো একেকটা এক্সচেঞ্জ। ওইখানে গিয়ে আমরা কিছু জিনিশ কিনতে পারি।
এরকম স্টক কিনার দোকানগুলিকে বলে স্টক এক্সচেঞ্জ। যেমন নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ, নাসদাক, লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ, সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ইত্যাদি।
স্টক এক্সচেঞ্জের আগেকার সময়ে মানুষ কফিশফে বা কোন জায়গায় একটা দিনের নির্দিষ্ট সময়ে মিলিত হয়ে শেয়ার কেনাবেঁচা করতেন।
নিউ ইয়র্কে তেমনি এক দল লোক ছিলেন। তারা মিলিত হয়ে শেয়ার কেনাবেঁচা করতেন। আস্তে আস্তে অনেক মানুষ তাদের এখানে আসতে থাকলেন, তারাও শেয়ার কিনতে লাগলেন, ও পরে বেঁচতে থাকলেন। এত মানুষ আসতে থাকলেন যে মূল লোকেরা সপ্তাহে একদিন করে বাড়াতে বাড়াতে কয়েকদিন বসতেন তখন।
তখন ওই প্রথমে আসা লোকেরা দেখলেন এত এত লোকদের সাথে ডিল করা ঝামেলার। এবং তাদের কাছেই এই এলাকার সবচাইতে বেশি কোম্পানির শেয়ার আছে। অতএব, এই ২৪ জন লোক মিলে একটা চুক্তি করলেন। আমেরিকার অর্থনৈতিক ইতিহাসের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ন এই ঘটনাটি ঘটেছিল মে ১৭, ১৭৯২ সালে। সময় বুঝার জন্য ভাবুন ১৭৫৭ সালে পলাশী যুদ্ধ হয়েছিল।
এই ঐতিহাসিক চুক্তির নাম বাটনউড চুক্তি।
এখানে তারা সম্মত হন যে, নিজেরা ছাড়া আর কারো কাছে তারা শেয়ার বিক্রি করবেন না। এবং আর কেউ কিনতে চাইলে ২৫ সেন্ট করে ফি নিবেন।
বলা হয়ে থাকে, বাটনউড নামে এক গাছের নিচে এই চুক্তি হয়। এরপর তারা কাছের এক কফিশপে মিলিত হয়ে তাদের চুক্তি মতে শেয়ার কেনাবেঁচা করতেন। এর এক বছর পরে এই ব্যক্তিবর্গ কাছের এক বিল্ডিং কিনে নেন। এবং সেটাই আজকের নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ।
নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জের মিটিং, ওয়াল স্ট্রিটের বাটনউড গাছের নিচে। লিওনার্দ ব্লিকার, এন্দ্রু বার্কলে, চার্লস ম্যাকইভারস, অগাস্টিন লরেন্স, ডেভিড রিডি। ১৭৯২ সালের ছবি।
এখন অনেক স্টক এক্সেঞ্জ আছে। বিখ্যাত এবং বড় কয়েকটি নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ, নাসদাক, সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ। নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সেঞ্জ সবচাইতে বড়।
মার্কেট ক্যাপের বিচারে ২০২৪ সালে পৃথিবীর সবচাইতে বড় স্টক এক্সচেঞ্জগুলি, স্ট্যাটিস্টার সৌজন্যে,
স্টক এক্সেঞ্জ হলো স্টকের দোকান, কিন্তু একেক দোকানের নিয়মনীতি আলাদা থাকতে পারে। যেমন নিউ ইয়র্ক এক্সচেঞ্জ যেহেতু বড় তাই এতে কোন কোম্পানি তাদের স্টক তালিকাভুক্ত করতে গেলে কিছু কঠিন শর্ত পূরণ করতে হয়। যেমন এত বড় হতে হবে, এত কর্মী হতে হবে, প্রতিদিন এত পরিমাণ স্টক বেচা কেনা হতে হবে ইত্যাদি।
তাই, সকল স্টক সকল এক্সেঞ্জে মিলে না। কিছু ক্ষেত্রে কোন কোন কোম্পানি কয়েকটি এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয়।
নাসদাক বিখ্যাত টেক কোম্পানিগুলির জন্য।
যে ২৪ জন বাটনউড চুক্তি করেছিলেন, যার ফলে আধুনিক স্টক এক্সচেঞ্জের জন্ম, তাদের প্রত্যেকে হলেন মূল ব্রোকার। অর্থাৎ, ব্রোকার হলেন তারা যাদের মাধ্যমে আমরা শেয়ার কেনাবেচা করি।
আমি যদি এগজাম্পল কোম্পানির স্টক কিনতে চাই তাহলে আগেকার সময়ে সরাসরি বা ফোনে আমার ব্রোকারকে বলতে হতো আমি দুই হাজার ডলারে একটা এগজাম্পল কোম্পানির স্টক কিনব।
ওই ব্রোকার দেখত তার কাছে কেউ আছে কি না যে ২ হাজার ডলারে এগজাম্পলের স্টক বিক্রি করবে। মিললে কেনাবেঁচা করে দিত, নিজের ফি নিয়ে। আর না থাকলে সে এক্সচেঞ্জে গিয়ে অন্য ব্রোকারদের কাছে দেখত দুই হাজার ডলারে কেউ এগজাম্পলের স্টক বিক্রি করবে কি না। এভাবে কাজ করত।
এখন ডিজিটাল সিস্টেমে কম্পিউটার বা মোবাইল থেকে অর্ডার দেয়া যায়। আর দ্রুত সেই অর্ডার অন্য সেল অর্ডারের সাথে মিলে কেনাবেচা সম্পন্ন হয়ে যায়।
আমরা যেসব প্লাটফর্ম ব্যবহার করি, যেমন ইন্টারেক্টিভ ব্রোকার, ফাইডালিটি, টিডি আমেরিট্রেড, রবিনহুড, উইবুল, ই-তরো ইত্যাদি, এগুলি ব্রোকার-ডিলারের কাজ করে।
স্টক মার্কেটে আপনার প্রতিযোগী কারা?
স্টক মার্কেট হচ্ছে পুরাপুরি জিরো সাম গেইম। আপনি বেশি দামে কিনতেছেন মানে আরেকজন বেশি দামে বেঁচতেছে। তার লাভ হচ্ছে কারণ আপনি লস করলেন তাই। আপনার দাম বিচারে ভুল ছিল।
সাধারণ ভাবে স্টক মার্কেটের বেসিক বিহেভিওরাল মনস্তাত্ত্বিক পয়েন্ট হলো একজন লোক মনে করতেছে একটা স্টক দশ ডলার থেকে বাড়বে না সহসাই, কমে যাবে, ফলে সে বেঁচতে চায়। আরেকজন লোক একই স্টক দশ ডলারে কিনতে চায় কারণ সে মনে করে এটি বাড়বে।
একই জিনিশ দুইজন দুই দিক থেকে দেখে। দুইজনের ভিউ, জাজমেন্ট ভিন্ন, সেখান থেকেই তারা একশন নেয়। একজন বিক্রি করে আরেকজন কিনে। এটাই সাইকোলজিক্যাল মূল মেকানিজম।
এখন, এই ধরনের গেইমে আপনি যদি অংশ নেন তাহলে প্রথমেই বুঝতে হবে আপনার প্রতিযোগী কারা। কারণ আপনি হারলে তাদের কাছেই হারবেন, আপনার টাকা তারাই নেবে।
ধরা যাক গ্রামের এক বাজার যেখানে স্টকের মত নিলাম ব্যবস্থায় জিনিশ বিক্রি হয়। আজকে আলুর দাম মোটামোটি দশ থেকে বারো টাকার মধ্যে ছিল। আপনার কাছে ৫ কেজি আলু আছে, ৭ টাকা কেজিতে নিয়েছিলেন। বাড়লে বিক্রি করার ইচ্ছায়।
আপনি জানতে পারলেন চেয়ারম্যান সাহেবের কাছে ২০০ কেজি আলু আছে জমানো। তার পারিবারিক কিছু ঝামেলার কারণে বা আলুর প্রতি বিদ্বেষ জন্মানোর কারণে তিনি তার সব আলু কাল মার্কেটে ছেড়ে দিবেন।
তাহলে আপনার কাজ কী হবে?
পরদিন সকালে চেয়ারম্যান সাহেবের আগে মার্কেটে গিয়ে আপনার ৫ কেজি ১০ বা ১১ টাকায় বিক্রি করে দেয়া। কারণ একটু পরেই চেয়ারম্যান সাহেব তার সব আলু ছেড়ে দিলে জোগান বেড়ে যাবে আর আলুর দাম ৫ টাকায় নেমে যেতে পারে।
এখানে আপনি নিজেকে বাঁচাতে পারলেন কারণ আপনি জানতেন যে মার্কেটে কারা কারা আছে। কারা খেলছে। যে জানে না এটা সে হয়ত কাল দেখতে পাবে আলুর দাম হুট করে নেমে যাচ্ছে। বুঝতে বুঝতেই তার অনেক দেরী হয়ে যাবে, তখন ধরা যাক আলুর কেজি নেমে গেছে ৬ টাকায়, প্যানিকে সে ৬ টাকাতেই বিক্রি করে দিলো তার আলু, এখানে তার লস হলো।
এখানে যে চেয়ারম্যান সাহেবের উদাহরণ দিলাম, এরকম চেয়ারম্যানেরা স্টক মার্কেটে আছেন। যেমন মিচ্যুয়াল ফান্ড। সাধারণ কেউ মিচুয়াল ফান্ডে টাকা রাখেন, সেই ক্লায়েন্টদের টাকা মিচ্যুয়াল ফান্ড ইনভেস্ট করে। ক্লায়েন্টদের একটা পার্সেন্টেজ হিসাবে প্রফিট দেয়। এসব ফান্ড একসাথে অনেক শেয়ার কিনে, এবং একসাথে অনেক শেয়ার বিক্রিও করে। ফলে তাদের কর্মকান্ড মার্কেটের দামে প্রভাব ফেলে।
এজন্য হয়ত আপনি দেখবেন কোন কোম্পানি নিয়ে ভালো নিউজ আসলো। আপনি ভাবলেন দাম বাড়বে। কিন্তু কয়েক পার্সেন্ট কমে গেল। কারণ হয়ত বড় বড় প্রাতিষ্ঠানিক মালিকরা তাদের অনেক অনেক স্টকগুলি বিক্রি করে প্রফিট নিয়ে গেছে।
মিচ্যুয়াল ফান্ড বা এরকম প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার মালিকদের ক্ষেত্রে, তারা সাধারণত যে স্টক প্রফিট করছে সেটি বিক্রি করে দেয়, তাদের কেনা স্টক যেগুলা কম পারফর্ম করছে, বা একটু সময় লাগবে, সেগুলির লস কাভার করা যায়। কারণ তাদের ক্লায়েন্টদের প্রফিট দেবার দায় থাকে তাদের।
কোন কোম্পানির স্টক কেনার আগে তাই আপনি দেখতে পারেন এর প্রাতিষ্ঠানিক মালিকানা কত ভাগ। কোন কোন প্রতিষ্ঠানের মালিকানা আছে। এবং সেসব প্রতিষ্ঠানের স্ট্র্যাটেজি কেমন হয়ে থাকে সাধারণত।
হেজ ফান্ড আরেক ধরনের ফান্ড। এরা বড় বড় ধনী ক্লায়েন্টদের টাকা নেয়, তবে সেখানে সবাই টাকা জমা দিতে পারে না। তাদের নিয়মনীতি আলাদা , এবং তারা বেশি ঝুঁকি নেয়। তাদের রিটার্ন রেইটও বেশি।
এছাড়া আছে ট্রেডিং ফার্ম। যারা অনেক টাকা ম্যানেজ করে থাকে।
এইসব ইনভেস্টররা মার্কেট সম্পর্কে জানে, অনেক ভেতরের তথ্য হয়ত তাদের কাছে থাকে। টুলস থাকে। অনেক ক্ষেত্রে মিডিয়া থাকে প্রেস রিলিজ বা ফাইনান্সিয়াল উপদেশ দিয়ে মার্কেট প্রভাবিত করার জন্য। তাই তাদেরকে বলা হয়ে থাকে স্মার্ট মানি।
উদাহরণ হিসেবে ওয়ারেন বাফেটের বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে হচ্ছে স্মার্ট মানি। রে দালিওর ব্রিজ ওয়াটার এসোসিয়েটস হচ্ছে স্মার্ট মানি। এজন্য তাদের বড় কোন মুভ নিয়ে আলোচনা হয়। যেমন একবার বাফেট তার অনেক ফাইনানশিয়াল কোম্পানির স্টক বিক্রি করে দিয়ে বারিক গোল্ডের স্টক কিনলেন প্রচুর। এটা নিয়ে অনেক আলোচনা হলো। নানাভাবে এই মুভকে দেখার চেষ্টা হলো। বাফেট গোল্ডে আস্থা রেখেছেন, তার মানে কি সামনে আসছে অর্থনৈতিক কোন বিপর্যয়, এই পয়েন্টই আলোচনা-আলাপের মূলবিন্দু।
কোন স্টক কেনার পরে প্রাতিষ্ঠানিক মালিকদের কাজ থাকে এর দাম বাড়ানো। এজন্য টিভিতে বা পত্রিকায় আপনারা দেখে থাকবেন এডভাইজররা কোন স্টক বাড়বে বা কমবে তা নিয়ে উপদেশ-আলোচনা করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।
এরপরে আছেন সাধারণ রিটেইল ইনভেস্টররা। যাদের ডাম্ব মানি বলা হয়। বেশিরভাগ রিটেইল ইনভেস্টররা টাকা হারান মার্কেটে, কারণ তাদের পর্যাপ্ত ক্যাপিটাল, জ্ঞান, ও মেন্টাল ট্রেইনিং থাকে না।
এখন, আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে এত বড় বড় এনালিস্ট সমন্বয়ে গঠিত প্রাতিষ্ঠানিক ইনভেস্টরদের আপনি হারাবেন কীভাবে?
তাদের হারানোর আপনার দরকার হবে না। আপনি তাদের কার্যকলাপে মার্কেটে যে প্রভাব পড়ে সে সম্পর্কে বুঝতে পারলেই চলবে। তখন আপনি অন্য রিটেইল ইনভেস্টরদের হারাতে পারবেন, এবং নিজে লস থেকে বাঁচবেন।
এবং, স্মার্ট মানির এনালিস্টেরাও মানুষ। ফলে, আপনি পরিশ্রম করতে পারলে, প্রতিভা ও আগ্রহ থাকলে তাদের মুভ অনুমান করতে পারা অসম্ভব কিছু নয়।
এছাড়া, একজন রিটেইল ইনভেস্টর হিসেবে আপনি প্রতিষ্ঠানের চাইতে স্বাধীন। প্রতিষ্ঠানে অনেক লোক কাজ করে। তাদের নানা টার্গেট থাকে। বুরোক্রেসি থাকে। সেগুলি থেকে আপনি মুক্ত।
কত ভাগ প্রাতিষ্ঠানিক মালিকানা আছে কোন স্টকের তা কীভাবে দেখবেন?
ইয়াহু ফাইনান্স বা ফিনভিজে গেলেই দেখতে পারবেন।
আগস্ট ২৬, ২০২০ সালে ফেইসবুকের প্রাতিষ্ঠানিক মালিকানা। সূত্র ফিনভিজ।
উপরের ছবিতে লাল মার্ক করা জায়গাটিতে দেখাচ্ছে ফেইসবুকের প্রাতিষ্ঠানিক মালিকানা কত ভাগ। বড় ও ভালো কোম্পানির ক্ষেত্রে এই মালিকানা অনেক বেশি হয়ে থাকে। কত ভাগ প্রাতিষ্ঠানিক মালিকানা ভালো এবং কত ভাগ ভালো না, এমন কোন কথা নেই। কথা হলো আপনি কী চান, তার উপর ভিত্তি করে এই তথ্য দেখতে হবে।
স্টক মার্কেটে টাকা বানানোর উপায় কী কী?
সাধারণত আপনি হয়ত জানেন কোন স্টক কিনতে হয়। দাম বাড়লে বিক্রি করতে হয়। এভাবে স্টক মার্কেটে প্রফিট করা যায়। এটা একটা উপায়। একে বলা হয় গোয়িং লং।
আরেকটা উপায় হল শর্ট সেলিং। যেখানে আপনি আপনার ব্রোকারের কাছ থেকে কিছু শেয়ার ধার নিতে পারবেন।
ধরা যাক, আপনি চেয়ারম্যান সাহেবের কাছ থেকে দশ কেজি আলু নিলেন, আর বললেন ফেরত দিয়ে দিবেন। সেদিন আলুর দাম ছিল দশ টাকা। আপনি বিক্রি করে দিলেন। পরের দিন আলুর দাম কমে গেল, ৫ টাকা হয়ে গেল। আপনি তখন দশ কেজি আলু কিনে চেয়ারম্যান সাহেবকে ফেরত দিয়ে দিলেন। এটা শর্ট সেলিং।
১০ কেজি আলু ১০ টাকায় বিক্রি = ১০০ টাকা।
১০ কেজি আলু ৫ টাকায় কেনা = ৫০ টাকা।
আপনি, বিশিষ্ট বুদ্ধিমানের হাওয়া থেকে লাভ হলো ৫০ টাকা।
ঝুঁকি কী এখানে? পরদিন থেকে যদি আলুর দাম বাড়তে থাকে। ৩০ টাকায় চলে যায়, ৮০ টাকায় চলে যায়।
সেক্ষেত্রে চেয়ারম্যান তো আজীবন অপেক্ষা করবেন না।
আপনাকে ১০ কেজি ফেরত দিতে হবে।
ব্রোকাররা যে ধার দেয় শেয়ার, এটার এক ইন্টারেস্টিং ব্যাপার আছে। ব্রোকারদের কাছে অনেক মানুষের শেয়ার কেনা থাকে। ধরা যাক একজন ৫০০ টেসলার শেয়ার কিনে ফেলে রাখছে। তখন আরেকজন ৫০ টা টেসলার শেয়ার ধার চাইল ব্রোকারের কাছে। ব্রোকার ওই ব্যক্তির ৫০০ শেয়ার থেকে ৫০ টা দিয়ে দিবে।
দ্বিতীয় ব্যক্তি ধার নিয়ে শর্ট করবে। কমলে তো কম দামে কিনে ফেরত দিবে। আবার বাড়তে থাকলে একটা পর্যায়ে কিনে ফেরত দিবে। এরকম সিস্টেমও থাকে ব্রোকার চাইলে একটা পর্যায়ে যদি দাম বাড়তেই থাকে তাহলে নিজেই বিক্রি করে দিয়ে তার ধারের শেয়ার নিয়ে নিবে। কিন্তু এ পর্যন্ত সাধারণত যাইতে হয় না। যারা শর্ট করে তারা সাধারণত কম সময়ের জন্য করে, কারণ সময়ের সাথে একটা ফী থাকে।
তাদের লক্ষ্য থাকে ফল করতে থাকা প্রাইস থেকে লাভ বের করা। প্রাইস দ্রুত ফল করে।
ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হল, যে ব্যক্তির ৫০০ শেয়ার থেকে ধার দিয়েছে ব্রোকার সে জানতেও পারবে না। কারণ তার ৫০০ তো ঠিকই রয়েছে সে দেখবে।
শর্ট সেলিং এ লাভের একটা লিমিট থাকে। ৫ টাকায় শর্ট করলে আপনার সর্বোচ্চ লাভ কত হতে পারে?
যদি শেয়ার ০ তে যায় তাহলে ৫ টাকা।
শেয়ারের দাম বাড়তে থাকলে লস হবে লিমিট ছাড়া। কারণ, থিওরিটিক্যালি শেয়ারের দাম কত উঠবে তার লিমিট নাই, যদিও বাস্তবিক বিচারে স্টকের উপর নির্ভর করে লিমিট ধারণা করা যায়।
যেসব ফার্ম স্টক শর্ট করে তারা প্রায়ই ঐ কোম্পানি সম্পর্কে বাজে প্রচারণা চালায়। অনেক সময় ইন ডেপথ রিসার্চ প্রকাশ করে কেন ঐ কোম্পানিটি ফ্রড। এই ধরণের ফার্মের উদাহরণ হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ, যারা আদানি গ্রুপসহ অনেক কোম্পানির বিরুদ্ধে রিসার্চ রিপোর্ট প্রকাশ করেছে।
আরেকটা উপায় আছে স্টক মার্কেটে টাকা বানানোর, যার জন্য আমাদের যেতে হবে প্রায় ২৫০০ বছর আগের প্রাচীন গ্রিসে। গণিতবিদ, প্রথম দার্শনিক ও বিজ্ঞানী বলে খ্যাত থেলিস ছিলেন প্রাচীন গ্রিসের মিলেটাসের অধিবাসী।
৮২৫ বিসিতে তিনি সুর্যগ্রহন অনুমান করেছিলেন, এটা তার বিখ্যাত একটি কাজ। এছাড়া বৈজ্ঞানিক চিন্তা, এবং প্রথম দার্শনিক চিন্তা তার থেকেই শুরু বলে ধরা হয় অনেকসময় পশ্চিমা জ্ঞানতাত্ত্বিক ধারায়।
থেলিস জ্ঞানী ছিলেন, কিন্তু খুব বেশি ধনী হবার চেষ্টা তিনি করেন নি তখনো তার জ্ঞান দ্বারা। গ্রিসের প্রভাবশালীরা এ নিয়ে হাসাহাসি করছিল, যে থেলিস আপনি যদি এত জ্ঞানী হয়ে থাকেন তাহলে জ্ঞান দিয়ে টাকা বানিয়ে দেখান।
থেলিস তখন গ্রিসের জলবায়ু ইত্যাদি নিয়ে স্টাডি করলেন। এবং অনুমান করতে পারলেন সামনের বছর অলিভের ফলন ভালো হবে।
তিনি অলিভ ওয়েলের মেশিন যা ছিল তার প্রায় সব, মানে অলিভ পিষে তেল বানানোর যাঁতাগুলি, সব ভাড়া নিলেন একটা ফি দিয়ে। এরপর যখন ফলন ভালো হল, তখন দেখা গেল থেলিসের কাছেই সব মেশিন। থেলিস বেশি দামে মেশিনগুলি ভাড়া দিলেন।
এভাবে তিনি প্রচুর সম্পদ অর্জন করেছিলেন।
এরিস্টটলের মতে ন্যাচারাল ফিলসফির এই প্রতিষ্ঠাতা থেলিস প্রমাণ করেছিলেন জ্ঞানের সাথে সম্পদ অর্জনের বা অর্থনৈতিক স্বাধীনতার কোন বিরোধ নাই।
থেলিস যে কাজটি করেছিলেন তা হল প্রাথমিক পর্যায়ের অপশন ট্রেডিং। অপশন হল একটা চুক্তি। এই চুক্তি কিনতে ফি বা প্রিমিয়াম দিতে হয়।
চুক্তিটা হয় এমন, এই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এই স্টক আমি এত দামে কিনতে পারব।
যেমন একটা স্টকের দাম দুই টাকা। আমার মনে হলো এটি এক সপ্তাহ পরে ৫ টাকা হতে পারে। আমি তখন একটি অপশন কিনলাম, এই স্টক আমি আগামী সপ্তাহের মধ্যে দুই টাকায় কিনতে পারব, এখন এর দাম যাই হোক না কেন। একটা অপশন চুক্তিতে থাকে ১০০ শেয়ার।
এর জন্য ফি দিলাম ৩০ টাকা।
কিন্তু স্টক কিনি নাই।
দেখা গেল এক সপ্তাহের মধ্যে স্টক ৮ টাকায় চলে গেল।
কিন্তু যেহেতু আমি চুক্তি কিনে রেখেছি তাই আমি ১০০ স্টক কিনতে পারব ২ টাকা করে। কিনে ৮ টাকা করে সাথে সাথেই বিক্রি করে দিতে পারব, কারণ মার্কেটে তার দাম তখন ৮ টাকা করে।
তখন আমার লাভ কত হবে?
২ টাকা করে ১০০ স্টক কিনা = ২০০ টাকা
অপশন ফি ছিল = ৩০ টাকা
খরচ মোট = ২৩০ টাকা
৮ টাকা করে ১০০ স্টক বিক্রি = ৮০০ টাকা
লাভ = ৮০০ – ২৩০ = ৫৭০ টাকা।
আর যদি দেখা যেত এক সপ্তাহে স্টকের দাম ১ টাকায় চলে গেছে তাহলে আমি স্টকগুলি কিনতাম না। কারণ চুক্তি এমন আমি চাইলে কিনতে পারব। এটা অবলিগেশন না কিনতেই হবে।
সুতরাং, সেক্ষেত্রে আমার লস হত, অপশন ফি এর ৩০ টাকা।
যেমন থেলিসের ওই বছর অলিভের ফলন কম হলে তার প্রিমিয়াম বা ফি এর টাকা লস যেত। তবে তার ক্ষেত্রে হয়ত তখন মেশিনগুলি ভাড়ার পুরো টাকা দিতে হত বছর শেষে, এই জায়গায় আধুনিক অপশন ট্রেডিং এর সাথে অল্প পার্থক্য আছে।
দর্শন-জ্ঞান যে কেবল থিওরি না, ব্যবহারিক তা দর্শনের জন্মলগ্ন থেকে ছিল। দর্শন ও জ্ঞান যখন একাডেমিয়ায় প্রবেশ করল তখন তা হয়ে গেল ব্যবহারিকতা বিচ্ছিন্ন থিওরির বাগাড়ম্বর। কারণ শিক্ষাকে পণ্য করার জন্য দরকার ছিল এর কোর জিনিসটাকে ভেঙ্গে দেওয়া। এখন বেশিরভাগ এই বাগাড়ম্বরসর্বস্ব জ্ঞানকেই অবলম্বন করতে চায়, জ্ঞানের ব্যবহারিক প্রয়োগ অস্বীকার করতে চায়।
যাই হোক, যে অপশনের কথা বললাম, বা থেলিস যেটা করেছিলেন তার নাম এখন কল অপশন। এটা বেশি পপুলার। আরেকটা আছে পুট অপশন।
এটা হল এই চুক্তি যে, কোন স্টক আমি এই দামে বিক্রি করতে পারব, এই সময়ের মধ্যে।
ধরা যাক, আমার কাছে ১০০ স্টক আছে এক কোম্পানির। একটা স্টকের দাম বিশ টাকা। আমি পুট অপশন কিনলাম, আগামী এক মাসের মধ্যে আমি এটি বিক্রি করতে পারব বিশ টাকায়, এখন দাম যতই হোক না কেন। কারণ আমার মনে হচ্ছিল আগামী মাসে মার্কেট ক্র্যাশ করতে পারে। এই সুবিধা কিনার জন্য প্রিমিয়াম দিতে হল, ২০০ টাকা।
ধারণা মত আগামী সপ্তাহে স্টকের দাম কমে হয়ে গেল ১০ টাকা। তখনো কিন্তু আমি চাইলে ২০ টাকায় স্টক বিক্রি করতে পারব। এক্ষেত্রে আমি যে লস হতে পারত প্রতি শেয়ারে দশ টাকা করে, তার হাত থেকে বেঁচে গেলাম। খরচ হল প্রিমিয়ামের টাকাটা।
আর যদি মার্কেট ঠিক থাকে, স্টকের দাম ৩০ টাকা হয়ে যায় তাহলে কিছুই করলাম না। এক মাসের টাইম শেষে চুক্তিটা এমনিতেই শেষ হয়ে যাবে। খরচ শুরু প্রিমিয়ামের দুইশ টাকাই।
অপশন হল ডেরিভেটিভ মার্কেট।
নিচে আমার একটা অপশন কলের উদাহরণ।
২০২০ সালের আগস্টের ১৭ তারিখে কিনেছিলাম রকেট কোম্পানির স্টকের অপশন কল ১৯ ডলারে। ০.৭৫ করে ১০০ টাতে খরচ ৭৫ ডলার।
২১ আগস্টে এর দাম বেড়ে হয় ২৫.৮৯ ডলার পার শেয়ার।
আর তখন আমার অপশন এক্সারসাইজ হয়। আমি কিনতে পারি ১৯ ডলার করে।
এতে লাভ ২৫.৮৯ – ১৯ = ৬.৮৯
৬.৮৯ * ১০০ = ৬৮৯
প্রিমিয়ামের ফি বিয়োগ দিলে = ৬৮৯ – ৭৫ = ৬১৪ ডলার।
এবং এটি যদি আমার অনুমান অনুযায়ী না বাড়ত, যদি ১০ ডলারে চলে যেত, তাহলে আমার স্টক কিনতে হতো না। কেবল প্রিমিয়ামের ৭৫ ডলার খরচ হতো।
আমরা যদি রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট হিসাব করি, ইকুয়েশনটা হলো,
৬১৪/৭৫ *১০০ = ৮১৮.৬৬%
তবে, এখানে বলে রাখি, এখানে যেরকম সহজ মনে হচ্ছে, অপশন ট্রেডিং এত সহজ না। অপশন ট্রেডিং এ ঝুঁকি বেশী থাকে যদি ঠিকমত করা না যায়।
বেশীরভাগ ক্ষেত্রে অপশন ট্রেডাররা অপশন এক্সারসাইজ করেন না। প্রিমিয়ামের ফি বাড়লেই অপশন কন্ট্রাক্টই বিক্রি করে দেন।
যেমন, উক্ত উদাহরণে, আমি ০.৭৫ ডলারে একটা অপশন কিনছি। যখন স্টকের দাম বাড়ছিল তখন একসময় হয়ত প্রিমিয়াম দাম ৩ ডলারে চলে গিয়েছিল। তখন আমি অপশনটা ৩০০ ডলারে বিক্রি করে দিতে পারতাম।
সেক্ষেত্রে কোন স্টক না কিনেই আমার লাভ হতো ৩০০ ডলার - ৭৫ ডলার = ২২৫ ডলার।
বিভিন্ন ধরণের ট্রেডিং
যেহেতু স্টক মার্কেটে বিভিন্ন ধরণের প্লেয়ার থাকে, তাদের উদ্দেশ্যও বিভিন্ন থাকবে স্বাভাবিক। এই লেখা যারা পড়তেছেন একেকজনের একেক উদ্দেশ্য থাকতে পারে। কেউ জানার জন্য, কেউ নিজের ট্রেডিং এ কাজে লাগানোর জন্য, কেউ আমার লেখা ভালো লাগে কেবল এই কারণে।
আমি এখানে আমার কিছু ট্রেডের উদাহরণ দিয়ে বলব। আমি বিভিন্ন ধরণ ট্রাই করে দেখেছি কোনটা কেমন। এর কোনটাই আমি স্ট্র্যাটেজি হিশাবে কাউকে করার পরামর্শ দিচ্ছি না।
স্টক মার্কেটে প্রাইস ওঠানামা করে। খুব ভলাটাইল স্টকের দাম ওঠানামাকে কাজে লাগিয়ে এক ধরণের ট্রেডার প্রফিট করেন। তারা দিনে কিনে দিনেই বিক্রি করে দেন। কারণ এসব স্টক পরেরদিনের জন্য ধরে রাখা বেশি রিস্কি।
ধরা যাক এক স্টকের দাম দুই দশমিক ১০ ডলার। আপনি কিনলেন। পাঁচ মিনিট পর হলো দুই দশমিক বিশ ডলার, তখন বিক্রি করে দিলেন।
আবার, ৫ মিনিট পড় দুই দশমিক ১৫ ডলারে নামলো তখন কিনলেন। আর ১০ মিনিট পর ২ দশমিক ২৫ ডলারে বিক্রি করে দিলেন।
উভয় ক্ষেত্রে আপনার লাভ হলো বিশ সেন্ট করে। কিন্তু উভয় ক্ষেত্রে আপনি যদি ৩০০০ শেয়ার কিনে থাকেন, ৬০০০ ডলার ইনভেস্ট করে, তাহলে আপনার লাভ হবে ৩০০০ * ০.২০ = ১২০০ ডলার করে। এবং খুব অল্প সময়ে আপনি ২৪০০ ডলার প্রফিট করে ফেলতে পারবেন।
এখানে রিস্ক হলো, প্রাইস অল্প নিচে নামলেও একইভাবে বেশি ক্ষতি হবে।
শুরুর দিকে এটা আমি করতাম। প্রাইসের মোমেন্টাম বুঝা খুব জরুরী এর জন্য।
২০২০ সালের আগস্টের ২৩ তারিখে নিউজ এসেছিল এফ ডি এ প্লাজমা দিয়ে কোভিড-১৯ ট্রিটমেন্ট অথোরাইজ করেছে। আগে থেকেই ধারণা ছিল প্লাজমা সম্পর্কিত স্টকের দাম বাড়বে। আমার জায়গায় আপনি হলেও তা ভাবতে পারতেন, সহজ হিসাব।
কিন্তু এক্ষেত্রে প্লাজমা সম্পর্কিত কোম্পানির স্টক কিনে বসে থাকলে চলবে না। কারণ লো ফ্লট স্টক খুব হাই ভলিউমে কেনাবেঁচা হবে, এবং খুব সম্ভবত দিনের শেষে প্রাইস ফল করবে।
তাই এখানে প্রফিট করতে হলে স্কালপিং করতে হবে।
ইনভেস্টমেন্টও ছিল কম। এখানে প্রায় সবগুলি কেনা ও বেঁচাই খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে।
এই অল্প সময়ের স্কালপিং যারা করেন এরা সেকেন্ড থেকে শুরু করে কয়েক মিনিট ধরে রেখে প্রফিট করেন ও বার বার করতে থাকেন।
এই ধরণের ট্রেডিং এর ক্ষেত্রে আসলে বিজনেসটা কীসের তা জানার চাইতে বেশি বুঝা দরকার হয় প্রাইসের মুভমেন্টের ধরণ, ভলিউম এবং সে অনুসারে অনুমান করতে হয়।
টেকনিক্যাল এনালাইসিস এখানে বেশি গুরুত্বপূর্ন ফান্ডামেন্টাল এনালাইসিসের চেয়ে। ফান্ডামেন্টাল এনালাইসিস কোম্পানির ব্যালেন্স শিট, ইনকাম এগুলির ভিত্তিতে এনালাইসিস, যা স্টক কিনে অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ সময় ধরে রাখতে দরকারী।
স্কাল্পিং খুবই ঝুঁকিপূর্ণ, বেশীরভাগ ট্রেডারই স্কাল্পিং এ লস করেন।
ট্রেডিং কেবল লাভ দিয়ে বিচার হয় না, লস ম্যানেজমেন্ট এখানে বেশি গুরুত্বপূর্ন।
আরেক ধরণ, সুয়িং ট্রেডিং। এখানে কোন স্টক কয়েকদিন থেকে কয়েক সপ্তাহ ধরে রাখেন। তারা শর্ট টার্মে মার্কেট মুভমেন্ট কাজে লাগান।
আমার একটা সুইং ট্রেডের উদাহরণ,
জুলাইয়ের ২০, ২১ এ পিন্টারেস্টের ৪০০ স্টক কিনি।
পিন্টারেস্টের স্টক ৩০০ টা বিক্রি করি জুলাই ৩১ এ, বাকি ১০০ আগস্টের ১০ তারিখে।
কেনার খরচ ছিল, ১০,২৪৩, এবং বিক্রি হলো মোট ১৩৩৩০ ডলারে। প্রফিট ৩০৮৭।
তারপরে আছে পজিশন ট্রেডিং। যেখানে ট্রেডাররা লং টার্ম প্রাইস মুভমেন্ট কাজে লাগান। এখানে কয়েক সপ্তাহ থেকে মাস, বা বছরও তারা ধরে রাখেন বেশি প্রফিটের জন্য।
যেমন অক্টোবর ২০২২ সালে কিনেছিলাম শপিফাই ১ হাজার ডলারে।
জুলাই ১০, ২০২৩ সালে বিক্রি করি, দ্বিগুণের কিছু বেশী প্রফিটে। এটা ছিল লং টার্ম পজিশন ট্রেড।
আরেক ধরণের ট্রেডিং আছে, যেখানে ইনভেস্টরেরা বছর বছর ধরে কোন কোম্পানির স্টক ধরে রাখেন। এদের বলা হয় ভ্যালু ইনভেস্টর।
লম্বা সময় ধরে কোম্পানির ভ্যালু বাড়তে থাকে, প্রফিট বাড়তে থাকে, সেই অনুসারে স্টক প্রাইসও বাড়ে।
এই ধরণের ট্রেডিং এ কোম্পানির ফান্ডামেন্টাল, মট ইত্যাদি বেশী এনালাইসিস করা হয়, এবং টেকনিক্যাল এনালাইসিস, শর্ট টার্ম প্রাইস মুভমেন্ট ইগনোর করা হয়।
লং টার্ম ইনভেস্টররা ইটিএফে ইনভেস্ট করে থাকেন ঝুঁকি কমাতে। ইটিএফ হচ্ছে এক্সেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড, এইসব ফান্ড কিছু কোম্পানিতে ইনভেস্ট করে। যেমন, কোন ইটিএফ আমেরিকার ৫০০ সেরা বিজনেসে ইনভেস্ট করেছে, আপনি তার স্টক কিনতে পারবেন। এক্ষেত্রে এর স্টক কিনার মাধ্যমে আপনি আমেরিকার সেরা ৫০০ কোম্পানির ক্ষুদ্র অংশ নিলেন। কোন ইটিএফে আছে টোটাল মার্কেট শেয়ার, কোন ইটিএফে আছে ইন্টারন্যাশনাল স্টক।
যেকোন বড় কোম্পানি ১০০ বছর পরে নাই হয়ে যেতে পারে। যেমন কোডাক একসময় বড় কোম্পানি ছিল, এখন সেই অবস্থান নাই।
কিন্তু ১০০ বছরে আমেরিকার সেরা ৫০০ কোম্পানি নাই হয়ে যাবার সম্ভাবনা কম, এমন হতে হলে আগে আমেরিকার ফুল কলাপ্স হতে হবে।
এইদিক দিয়ে আমেরিকার সেরা ৫০০ কম্পানির ইটিফের স্টক কিনা কম রিস্কি।
বিভিন্ন ধরণের ইটিএফ আছে। আমেরিকার স্টক এক্সেঞ্জ থেকে বাংলাদেশের কোম্পানিতে বা ভারতের কোম্পানিতে ইনভেস্ট করতে হলে, ওইসব দেশের কোম্পানিতে ইনভেস্ট করা ইটিএফের স্টক দ্বারা করা যায়।
ইটিএফ সাধারণ ইনভেস্টরদের প্যাসিভ, ঝামেলাহীন, লং টার্ম কম্পাউন্ডিং জন্য অসাধারণ এক মাধ্যম।
ইনভেস্টিং বলতে আমি কী বুঝি
ইনভেস্টিং বলতে একেকজন একেকরকম বুঝতে পারেন, এর মাধ্যমে তিনি কী উদ্দেশ্য হাছিল করতে চাচ্ছেন, তার উপর ভিত্তি করে। কারো কাছে এটা স্টক কিনে দাম বাড়লে বিক্রি করা, কারো কাছে কোন বিজনেসে টাকা খাটিয়ে লাভ বের করা, কারো কাছে আরো কোন উপায়ে দ্রুত টাকা দ্বিগুণ তিনগুণ করার পদ্বতি।
আমি ইনভেস্টিং বলতে বুঝি, নিজের প্রয়োজনের অতিরিক্ত টাকারে কাজে লাগিয়ে লং টার্মে ওয়েলথ জেনারেশন।
টাকারে আমি ওয়েলথ জেনারেশনের মাধ্যম মনে করি, যদিও ওয়েলথের পরিমাপক হিশাবে টাকা ব্যবহার হয়।
ফলে, ইনভেস্টিং আমার কাছে কম দামে শেয়ার কিনে বেশি দামে বিক্রি বা দ্রুত টাকা দ্বিগুণ তিনগুণ করার উপায় না।
এখানে, ইনভেস্টিং বলতে আমি যা বুঝি, তাই সঠিক এমন না। একেকজনের একেক গেইম। প্রত্যেকের গেইম নির্ভর করে তার বুঝ ও বিচার, এবং অর্থনৈতিক লক্ষ্যের উপর। আমি শুধু বলতেছি আমার গেইম কী সেই সম্পর্কে।
ধরা যাক, এক ব্যক্তি ৫০০০ টাকা কোন এসেটে ইনভেস্ট করলেন। প্রতি মাসে ১০০০ টাকা করে যোগ করলেন। ৩৫ বছরে যদি এভারেজ ১০ পার্সেন্ট ইয়ারলি রিটার্ন হয় সেখান থেকে, তাহলে তার টাকা গিয়ে দাঁড়াবে ৩৩ লাখ ৯৫ হাজার ৩৬০ টাকায়।
এই কম্পাউন্ডিং এর গেইমটাতে আমি আগ্রহী। এটা কোন এক্সাইটিং গেইম না, বোরিং মনে হতে পারে অনেকের কাছে।
যার টাকা একেবারে নাই, তার জন্য এটা না। এটা দ্রুত টাকা বানানোর কোন উপায় না। বরং যার জীবন যাপনের স্বাভাবিক টাকা আছে, এবং অতিরিক্ত আছে, আয়ের চাইতে ব্যয় কম, তার জন্য এই ইনভেস্টিং।
কেন এই ইনভেস্টিং জরুরী, এই প্রশ্ন করা হলে, উত্তর হলো, টাকার ভ্যালু দিন দিন কমে ইনফ্ল্যাশনের কারণে। এবং টাকা আপনার সামনে যে সুযোগ গুলা হাজির করে, তার মধ্যে একটা ভালো সুযোগ কম্পাউন্ডিং ও সম্পদ তৈরির।
ওয়েলথ জেনারেশনের জন্য সবচাইতে ভালো ব্যবসা। কিন্তু ব্যবসার সময়, রিসোর্স, সুযোগ, দক্ষতা সবার থাকে না।
দুই নাম্বার ভালো উপায়, ভালো ব্যবসায় সরাসরি ইনভেস্ট করা। এইসব ব্যবসার গ্রোথ হয় বেশি। ফলে রিটার্নও বেশি হয়। স্বাভাবিক ভাবেই এখানে রিস্ক বেশি থাকে। বেশিরভাগ ব্যবসাই যেহেতু ফেইল করে।
পরে আছে রিয়াল এস্টেটে ইনভেস্ট, রিয়াল এস্টেটেরও ভ্যালু বাড়ে সাধারণত সময়ের সাথে।
তারপরে বাকি থাকলো, পাবলিক কোম্পানিতে ইনভেস্ট করা। অর্থাৎ স্টক মার্কেটে। এইখানে আমার বিবেচনা, একটা বিজনেসরে বিজনেস হিশেবে দেখেই ইনভেস্ট করা বেটার। বেন গ্রাহাম, ওয়ারেন বাফেট ইত্যাদি ভ্যালু ইনভেস্টরদের যে লাইন, সেটা বেশি র্যাশনাল।
সেইফ বেট হিশেবে আমি ভ্যালু ইনভেস্টিংরে দেখি।
যেখানে ইন্ট্রিনসিক ভ্যালু আছে এমন কোম্পানিতে, লং টার্মে ইনভেস্ট করা, বাফেট যেটারে বলেন কোনদিন আর না বিক্রি করার জন্য ইনভেস্ট।
বিভিন্ন এসেট ক্লাসে, বিভিন্ন রিজিয়নে, বিভিন্ন কারেন্সিতে ইনভেস্ট হলো যেকোন খারাপ পরিস্থিতি বিবেচনায় রিস্ক কমানো।
আমার কর্মক্ষেত্র টেক সেক্টর একটা ইভলভিং, এবং গ্রোথ সেক্টর। ফলে, ভ্যালুতে আস্থা থাকলেও গ্রোথে অবিশ্বাস করতে পারি না। এটা হলে হবে বাতাসে থেকে বাতাসরে অস্বীকারের মত।
ফলে, আমি গ্রোথরে প্রাধান্য দিয়ে ইনভেস্টিংরে অগুরুত্বপূর্ণ মনে করি না। কিন্তু অপেক্ষাকৃত রিস্কি মনে করি।
আমার সেক্টরে আমি প্যাশনেটলি ইনভলভ থাকায়, কিছু সম্ভাবনাময় প্রযুক্তি ও ফিউচারিস্টিক বিজনেসেও আমার আগ্রহ। ওইসব নিয়ে আমার কিছু থিসিস আছে, যেখানে আমি ৫০% এর সামান্য বেশি মনে করি এগুলি হবার সফল সম্ভাবনা আছে।
এবং ওইগুলা যদি বাস্তবায়িত হয় তাহলে যেন আমার কোন রিগ্রেট না থাকে, সেইজন্য এই হাইপার গ্রোথ হাইপার রিস্কি জায়গাতেও আমি ইনভেস্টে আগ্রহী।
বেট না ধরাটা অংশ না নেয়া না, একটা পজিশন, যেইটা বলে আমি এইটারে না করলাম, আমি এটা বিশ্বাস করি না। সুতরাং, বেট ধরে আমি আমার পজিশন নেই, যে আমার ৫০% এর অধিক আস্থা আছে এটা সফল হবে।
কে কী বলে, তার চাইতে গুরুত্বপূর্ণ তার পোর্টফোলিওতে কী আছে। স্কিন ইন দ্য গেইম ছাড়া অনেক কথা বলা যায়। খেলায় স্কিন রাখার কথা বললেই বেরিয়ে আসে, কে আসলে সত্যিকার অর্থে কোনটা বিশ্বাস করে।
আমি যদি বলি চীন আগামী ৫০ বছরে উন্নত দেশের কাছাকাছি চলে যাবে, কিন্তু আমার পোর্টফোলিওতে চীনের স্টক নাই, তাইলে যে কথাটা আমি বললাম তা বলার জন্য বলা।
ভ্যালু, গ্রোথ, এবং হাইপার গ্রোথ হাইপার রিস্ক, এই তিন বাস্কেটের ন্যাচার আলাদা। এইগুলাতে ইনভেস্টিং এর ধরণ আলাদা।
কম্পাউন্ডিং এর হিশাব - সম্পদের গোপন সূত্র
মেন্টাল একাউন্টিং এবং হাউজ মানি
মানুষের শেখার প্রক্রিয়ারে এভাবে ভাগ করা যায়, এক/ প্রথমত তার ঐ বিষয়ে আগ্রহ থাকবে, দুই/ এই বিষয়ে সে জানবে ও চিন্তা করবে, ৩/ তার অভিজ্ঞতায় সে একই ধরণের পরিস্থিতির মুখে পড়বে, এবং তার মনে হবে সে এই জিনিসটা জেনেছিল আর তখন সে প্যাটার্ন রিকগনাইজ করতে পারবে।
বলা যায়, এই তিন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে তার শেখার চক্র সম্পন্ন হয়। ব্যতিক্রম বিদ্যমান, কিন্তু সাধারণ হিসাবে এটাকে মডেল ধরা যায়।
মেন্টাল একাউন্টিং সম্পর্কে আমি প্রায় তিন চার বছর আগে থেকে জানি। এ নিয়ে চিন্তা, আলোচনা করেছি। কিন্তু ইদানীংকালে লক্ষ করলাম ডিসিশন মেকিং এ একটা ভুল করে যাচ্ছি, এটা আমার মেন্টাল একাউন্টিং এর এক ভুল বিচারের জন্য হচ্ছে, কিন্তু আমি ধরতে পারছিলাম না।
সকল মানুষ তাদের অর্থনৈতিক ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য মাথার মধ্যে একটা হিসাবের ব্যবস্থা রাখে, এটা মেন্টাল একাউন্টিং। যেমন, এই টাকা দিয়ে কাপড় কিনব, এই টাকা দিয়ে বিল দিব ইত্যাদি। ক্ল্যাসিক্যাল অর্থনীতিতে বলা হত, কারো কাছে দুইটা ১০ টাকা থাকলে, দুইটাই তার কাছে সমান। যেহেতু লজিক্যালি দুইটাই সমান। কিন্তু মনস্তাত্ত্বিক অর্থনীতিবিদ রিচার্ড থ্যালার তার ল্যান্ড মার্ক একটা পেপারে ১৯৯৯ সালে দেখান যে, ঘটনা আসলে এমন হয় না।
ছবি ১ নভেম্বর ২০২০ সালে নেয়া।
একজন মানুষ কীভাবে টাকা ব্যয় করবে তা নির্ভর করে এই টাকাকে সে কীভাবে দেখছে তার উপর, এই সূত্রটি হচ্ছে মেন্টাল একাউন্টিং এর মূল কথা।
যেমন, কেউ রাস্তায় ১০০ টাকা কুড়িয়ে পেল, এই টাকাকে সে একভাবে খরচ করবে আর বেতনের ১০০ টাকাকে অন্যভাবে খরচ করবে। এই কারণে জুয়া খেলায় জিতলে অনেক মানুষ টাকা উড়িয়ে ফেলে। বা এমন জায়গা থেকে সে যদি টাকা জিতে যেখান থেকে জেতা প্রচলিত না বা তার ধারণার মধ্যে নাই, তাহলে সেই টাকাকে সে অন্যভাবে দেখে।
মনস্তাত্ত্বিক অর্থনীতিবিদ রিচার্ড থ্যালার এবং তার সহগবেষকেরা, এবং পরবর্তীতে অন্যান্য মনস্তাত্বিক অর্থনীতিবিদেরা অনেক মেন্টাল একাউন্টিং ইফেক্ট তাদের পরীক্ষায় দেখিয়েছেন, যে বাস্তবে এগুলি হয়।
এবং বাস্তবে মেন্টাল একাউন্টিং খুব জটিল থাকে, যেহেতু এখানে অনেক বিষয় জড়িত। যেমন, পয়সা উসল করা ধারণাটির সাথে হয়ত আপনি পরিচিত। খাবারের অর্ডার দিয়েছেন, খেয়েছেন, পরে ভাল লাগছে না, এক্ষেত্রে পয়সা উসল করার জন্য অনেকে খেয়ে থাকেন। বা কোন একটা জায়গায় পয়সা খরচ করে ফেলেছেন, কাজ করছে না, দেখা যাচ্ছে কাজ করবে না, তাও সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন না, কারণ মনে হয় যে আপনি এখানে অনেক টাকা ঢেলে ফেলেছেন।
শুধু আলাদা ব্যক্তি না, বিভিন্ন দেশের সরকারী বেসরকারি সংস্থায় এরকম ভুল অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তের উদাহরণ প্রচুর।
থ্যালার এবং জনসন ‘হাউজ মানি” টার্মটি নেন ক্যাসিনো থেকে। এর দ্বারা বুঝানো হয় ঐ গ্যাম্বলারকে যে ক্যাসিনোতে জিতে জেতার টাকার কিছু বা পুরাটা দিয়ে নতুন বেট শুরু করে। থ্যালার ও জনসন এটাকে ইনভেস্টিং এর দিক থেকে দেখে রিসার্চ করেন ও দেখান যে, ইনভেস্টররা জিতার টাকায় বেশি রিস্ক নেন।
যদিও অন্যভাবে উপার্জন করা ১০০ টাকা এবং ট্রেডে উপার্জিত ১০০ টাকা সমান, তথাপি তারা মানসিকভাবে দুই টাকাকে দুইভাবে দেখেন, ফলে, অতিরিক্ত রিস্ক নেন। কারণ ট্রেডে উপার্জিত টাকায় অনিশ্চয়তা কাজ করে, ফলে দেখা যায় একজন ট্রেডার তার হিসাবে হয়ত আশা করেছিলেন ১০০ টাকা লাভ হবে, কিন্তু অনেক সময় ৫০০ টাকা লাভ হয়ে যায়।
আমার রিস্ক টেকিং এর ক্ষেত্রে, এই ইফেক্ট লক্ষ করেছি। তখন জিততে থাকি তখন বেশি রিস্ক নিতে থাকি। অনেক সময় অহেতুক রিস্ক।
রিস্ক টেকিং এর বিষয়টাকে এভাবে না দেখে, শারীরবৃত্তীয় দিক থেকে দেখলে, দ্য আওয়ারস বিটুইন ডগ এন্ড উলভ বইটার কথা বলা যায়। সেখানে নিউরোসাইন্টিস্ট জন কটস দেখিয়েছিলেন ইনভেস্টররা জিতলে রিস্ক সিকিং বিহেভিয়ার দেখান, অতিরিক্ত রিস্ক খুঁজতে থাকেন। আবার লস করলে অতিরিক্ত রিস্ক এভার্স হয়ে উঠেন। শারীরিকভাবে এটা হয়, ওই সময়ে হরমোন জনিত পরিবর্তনের কারণে।
এই সাইকেলটা একটা মারাত্মক ট্র্যাপ।
দেখা যাবে, আপনি জিতে টাকা বানাচ্ছেন। এরপর অহেতুক রিস্ক নিয়ে নষ্ট করছেন। লস করার পর আবার বুঝেশুনে রিস্ক নিচ্ছেন, আবার টাকা বানাচ্ছেন। এবং তখন আবার অহেতুক রিস্ক নিচ্ছেন।
অর্থাৎ, এই সাইকেলে আপনার সতর্ক হওয়া উচিত বা কাজ করা উচিত যখন জিতছেন তখন।
এইজন্য একজন ট্রেডারের জন্য জিতার সময়টাই বিপদজনক। জিতা অতি আত্মবিশ্বাস তৈরি করে, যেটা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। আর অতি আত্মবিশ্বাস রুইনের দিকে নিয়ে যায় ট্রেডিং এ, কারণ এখানে প্রতিটা সিদ্ধান্তে আপনার স্কিন আছে। সিদ্ধান্ত খারাপ হলে স্কিন পুড়বে।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, প্রথম ট্রেডিং বইয়ের লেখক, জাপানিজ ধান ট্রেডার মুনেহিসা হোমা, যাকে গড অব মার্কেট নাম দিয়েছিল তখনকার লোকেরা, তিনি তার ১৭৫৫ সালের লেখায় এই সমস্যা বুঝতে পেরেছিলেন। স্পষ্টভাবে লিখে গেছেন, বড় লাভ করার পর দুইদিন গ্যাপ নাও। যত বড় সুযোগই আসুক, যদি তুমি ট্রেডে অংশ নাও তাহলে লস করবে। কারণ তখন তুমি অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে, আগে যেখানে ১০০ লাভ করেছ সেখানে ২০০ লাভ করতে চাইবে।
এখন যে জিনিশ মেন্টাল একাউন্টিং দিয়ে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে, বা সাইন্টিফিক্যালি নিউরোসাইন্স দিয়ে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে, মুনেহিসা সেই সময়েই তা ধরতে পেরেছিলেন শুধুমাত্র পর্যবেক্ষণ ও চিন্তার মাধ্যমে, আপডেটেড তথ্য তার কাছে না থাকা স্বত্বেও। এবং এর থেকে বের হবার উপায়ও বের করেছিলেন। সম্ভবত হরমোনাল ইফেক্ট তিনি আন্দাজ করেছিলেন অভিজ্ঞতা থেকে, আর বুঝতে পারছিলেন কোন কারণে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় জিতলে। দুইদিন গ্যাপ নিতে বলেছিলেন যাতে এই প্রভাব দুইদিনে স্থির হয়ে আসে।
দি ফোর পিলারস অব ইনভেস্টিং বই থেকে নোট
বইয়ের লেখক নিওরলজিস্ট এবং ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজার উইলিয়াম জি বার্নস্টাইন, প্রকাশ ২০১০।
স্টক মার্কেটে ইনভেস্ট করার মূল স্তম্ভ চারটা। এক ইনভেস্টমেন্ট থিওরি। দুই, ফাইনানশিয়াল ইতিহাস। তিন, সাইকোলজি। চার, ব্যবসা।
দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে ( শত বছর, দশক ইত্যাদি) স্টক প্রাইস কেবল উপরেই উঠে। তাই স্টক ইনভেস্টমেন্ট সবচাইতে লাভজনক, যদিও নিয়মিত বিরতিতে স্টক মার্কেট খুবই উঠানামা করে থাকে।
পৃথিবীর কোন ইনভেস্টমেন্ট বিশারদের ধারণা নেই আগামীকাল স্টক মার্কেট কোনদিনে যাবে।
শর্ট টার্মে স্টক খুবই উঠানামা করে, এজন্য যার প্রচুর লস সহ্য করার ক্ষমতা নেই, সে এখান থেকে বড় রিটার্ন পাবে না।
কোন স্টকের বর্তমান দাম ন্যায্য কি না, এটা বেশীরভাগ ইনভেস্টররা বুঝতে পারেন না। ভাবতে হবে এই স্টক ভবিষ্যতে কিরকম ইনকাম দিবে। এই ভবিষ্যতের ইনকামের জন্যই আপনি আজকে তাকে একটা দাম দিয়ে কিনছেন।
একজন ইয়াং লোকের উচিত টাকা জমানো, এবং মার্কেট ক্র্যাশের জন্য অপেক্ষা করা। মার্কেট ক্র্যাশের সময় সে কম দামে ভালো স্টক কেনার সুযোগ পাবে।
ইনভেস্টর হিসেবে টাকা বানাতে হলে ফাইনানশিয়াল হিস্টরি স্টাডি করতে হবে।
ইতিহাসে বার বার দেখা গেছে কোন স্টকের দাম তার ভ্যালুর চাইতে অনেক অনেক বেশি, কিংবা অনেক কম হয়ে যায়। পরবর্তীতে এগুলি নিয়ে বিশ্লেষণ করলে অযৌক্তিক মনে হলেও, ঐ সময়ে, ম্যানিয়ার টাইমে এমন হওয়া অসম্ভব নয়।
মানুষ অতিমাত্রায় সোশ্যাল প্রাণী, এবং গ্রুপে থাকলে তার বুদ্ধি লোপ পায়। স্টক মার্কেটের বেসিক সাইকোলজিক্যাল লাইন এটি।
স্বল্প মেয়াদে লাভের চিন্তা মানুষের প্রকৃতি।
অতি আত্মবিশ্বাস ইনভেস্টরদের অর্থনৈতিক বিনাশের প্রধান কারণ।
আপনার ইনভেস্টমেন্ট সফলতার সামনে প্রধান বাঁধা আপনার সাইকোলজি তথা আপনি।
অনেক অনেক প্রফেশনাল, উন্নত স্কিলের, এবং প্রযুক্তির প্রাতিষ্ঠানিক ইনভেস্টররা মার্কেটে আছে। এই অবস্থায়, কেউ একজন তার সামান্য রিসোর্স নিয়ে স্বল্প মেয়াদে তাদের সাথে প্রতিযোগিতায় পারবে না।
যে স্টক সেক্টর ভাল পারফর্ম করে কয়েক বছর, পরের কয়েক বছর খারাপ করে সাধারণত।
রিস্ক কমানোর জন্য ইনডেক্স ফান্ডে লং টার্ম ইনভেস্ট করতে হবে।
ইনফ্ল্যাশন এবং ট্যাক্স কেন বিবেচনায় নিবেন
ইনভেস্টরদের জন্য ইনফ্ল্যাশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ জিনিশ। ইনফ্ল্যাশন বিবেচনা করেই তার ইনভেস্টমেন্ট, এবং ইনভেস্টের রিটার্ন হিসাব করা উচিত।
মধ্যযুগের বাংলার একটি গল্প। তখনকার সময়ে বাংলার এক ছোট দ্বীপে কিছু মানুষ বাস করতেন। তখনকার বিনিময় মাধ্যম ছিল কড়ি; এক ধরণের সামুদ্রিক শামুকের খোল। দ্বীপে এই খোল পাওয়া যেত না। অনেককাল আগে ২০০০ খোল পাওয়া গিয়েছিল। এগুলি দিয়েই কেনাবেচা করা হত। পণ্য জায়গা জমি ইত্যাদির দাম পরিবর্তন হত না।
আমাদের এখনকার সময়ের মত ঐ সময়ে কিছু লোক তাদের কড়ি জমিয়ে রাখতেন। কিছু লোক কড়ি জমানোর বদলে জায়গা জমি কিনে রাখতেন।
একবার এক সামুদ্রিক ঝড়ে ওই দ্বীপে আরও দুই হাজার কড়ি এসে পড়ল। তখন দ্বীপে মোট কড়ির পরিমাণ হল ৪০০০। কিন্তু উৎপাদিত পণ্য আগের মত একই রয়ে গেল।
কড়ি বেড়ে যাবার কারণে তখন বেশি কড়ি একই পরিমাণ জিনিশ ক্রয়ে লাগল। ফলশ্রুতিতে, বিক্রেতারা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিল।
বেশি কড়ির জন্য কড়ির আগের ক্রয় ক্ষমতা গেল কমে।
তখন, যারা আগে কড়ি জমিয়ে রেখেছিলেন তারা হলেন লুজার। কারণ তিনি হয়ত ১০ কড়ি জমিয়েছিলেন। কিন্তু সেই দশ কড়িই এখন মূল্যমানে অর্ধেক হয়ে গেছে। আগে ৫ কড়িতে যা কেনা যেত তা তিনি এখন কিনবেন ১০ কড়িতে।
অন্যদিকে, আরেকদল যারা পণ্য কিনে রেখেছিলেন তারা লাভবান হলেন। তিনি হয়ত ১০ কড়ি দিয়ে জমি কিনে রেখেছিলেন। সেই জমির দাম এখন বেড়ে গেল।
অর্থাৎ, যখন টাকার পরিমাণ হয় বেশি আর পণ্যের পরিমাণ হয় কম, এবং এই বেশি টাকা কম পণ্য কিনতে যায় তখন ইনফ্ল্যাশন হয়। টাকার দাম কমে যায় বা পণ্যের দাম বেড়ে যায়। বা জটিল ভাবে বললে, যখন টাকার সাপ্লাই ইকোনমিক গ্রোথের চেয়ে বেশি হয়।
সেন্ট্রাল ব্যাংকের উদ্দেশ্য একটা নির্দিষ্ট ইনফ্ল্যাশন রেইট বজায় রাখা, সেটি যেন আবার মাইনাসে না যায়। এখন কেউ বলবেন পজিটিভ ইনফ্ল্যাশন রেইট বজায় রাখার মানে কি, যেহেতু আমরা দেখছি ইনফ্ল্যাশন মানে টাকার দাম কমে যাওয়া বা পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া?
এটা করা হয় যাতে মানুষ টাকা খরচ করতে উদ্বুদ্ধ হয়, এবং টাকা জমিয়ে না রাখে। ইনফ্ল্যাশন রেইত ০ হলে একজন ১০০ টাকা জমিয়ে রাখলে ১ বছর পরেও তার মান সমান থাকবে। ফলে সে জমিয়ে রাখতে আগ্রহী হবে। কিন্তু যদি ইনফ্ল্যাশন রেইট পজিটিভ থাকে, তাহলে সে টাকা জমানোর বদলে খরচ করতে আগ্রহী হবে, বা ইনভেস্ট করবে। এতে ইকোনমিক গ্রোথ হবে।
উপরোক্ত ব্যাপারগুলিতে বুঝাই যাচ্ছে অনেক অনুমান ধরে নেয়া হয়েছে। যেমন খরচ বাড়লে ইকোনমিক গ্রোথ বেশি হয়, এটা কায়নেশিয়ান ইকনমির এক অনুমান। এবং সব ম্যাক্রো ইকোনমিক ধারণার মত এর বিরুদ্ধেও কথা আছে।
ধরা যাক, আপনি ১০০ হাজার ডলার ইনভেস্ট করলেন কোন স্টকে। ৫ বছর পরে তা হলো ২০০ হাজার ডলার।
আপনি খুশি।
আমি আপনাকে বললাম, বাৎসরিক রিটার্ন কত?
আপনি হিসাব করতে বসলেন,
{(২০০/১০০) ^১/৫ – ১ } * ১০০ = ১৪.৮৭%
ভালো রিটার্ন। আপনি এস এন্ড পি ইনডেক্সের এভারেজ রিটার্নকে হারিয়ে দিয়েছেন।
কিন্তু কথা হল, ট্যাক্স হিসাবে ধরেছেন? ২০% ট্যাক্স হলে ২০ হাজার ডলার চলে যায় ২০০ হাজার থেকে, থাকে ১৮০ হাজার ডলার।
আপনি কি ইনফ্ল্যাশন হিসাবে নিয়েছেন? ধরা যাক ঐ ৫ বছরে ইনফ্ল্যাশন ছিল ৫%।
অর্থাৎ ৫ বছর আগে ১ ডলারে যে জিনিশ কিনতে পারতেন, সেই একই ভ্যালু এখন কিনতে গেলে লাগবে ১* (১.০৫)^৫ = ১.২৮ ডলার।
তাহলে ইনফ্ল্যাশন হিসাবে নিলে আপনার আজকের ১৮০ হাজার হল, ১৮০/১.২৮ = ১৪১ হাজার ডলার। অর্থাৎ ৩৯ হাজার ডলারের ভ্যালু নাই হয়ে গেছে ৫ বছরে ইনফ্ল্যাশনের জন্য। পক্ষান্তরে ট্যাক্সে গেছে ২০ হাজার।
১০০ হাজারে ১৪১ হাজার হলে রিটার্ন হয় ৭.১২%। আপনি এস এন্ড পি কে হারাতে পারেন নি।
প্রকৃত রিটার্ন হিসাব করতে হলে ইনফ্ল্যাশন এবং ট্যাক্স বিবেচনায় নিতে হবে।
আমি আজ আপনার কাছ থেকে ১০০ টাকা নিলাম। যে ১০০ টাকা দিয়ে ১ টা ছাগল কিনা যায়।
এক বছর পরে আপনাকে ৫০০ টাকা দিলাম। কিন্তু তখন যদি ইনফ্ল্যাশনের কারণে ঐ ৫০০ টাকার ভ্যালু ১০০ টাকায় চলে আসে, আর ৫০০ টাকা দিয়ে ঐ ১ টা ছাগলই মিলে তাহলে আপনার ৪০০ টাকা লাভ হল না।
আর ইনফ্ল্যাশনের প্রভাব ট্যাক্সের চাইতে বেশি। কারণ ইনফ্ল্যাশন আপনার মূল এবং লাভ তথা টোটাল টাকার ক্রয় ক্ষমতা বা ভ্যালুর উপরে। এবং প্রতিবছরেই হতে থাকে। অন্যদিকে ট্যাক্স কেবল লাভের উপরে, এবং একবারই প্রযুক্ত হয়, যখন বিক্রি করবেন তখন।
ইনভেস্টিং বিষয়ে যা মনে রাখা যাইতে পারে
১। বেশি আর্ন করেন, বেশি সেইভ করেন। সেইভ না করলে আপনে যতোই আর্ন করেন ইনভেস্ট করার মত মানি থাকবে না।
২। ইনভেস্টিং সম্পর্কে শিখেন। একেবারে ভেতর বাহির যতটুকু সম্ভব। এটা পরীক্ষার পড়া না এক সাবজেক্ট পড়ে পরীক্ষা দিলেই পাশ। একজনকে নিয়মিত শিখতে হয়।
ইনভেস্টিং এর গেইম কঠিন। ২০২০ সালের এক রিপোর্ট মতে গত ১৫ বছরে ৯০% পেশাধার ফান্ড ম্যানেজার এস এন্ড পি ৫০০ কে হারাতে পারে নি। এই পেশাধার ম্যানেজারেরা আইভি লীগের ডিগ্রি নেয়া, তাদের সারাদিনের কাজই হলো এনালাইসিস করা, ফান্ড ম্যানেজ করা। তারাই যদি না পারে, সাধারণ ইনভেস্টরদের জন্য আরো কঠিন। এখানে আসলেই প্রচুর সিরিয়াস টাইম দিতে হবে।
৩। যেকোন মূল্যে শর্ট টার্ম ট্রেডিং এড়িয়ে চলেন।
শর্ট টার্ম ট্রেডিং ক্যাসিনোর গেইমের মত। এখানে ভাগ্যগুণে আপনি হয়ত জিতে যেতে পারেন। কিন্তু প্রতিবার ভাগ্য আপনাকে সাহায্য করবে না। একবার জিতলেন, কিন্তু আপনার কোন স্কিল আয়ত্ত্ব হইল না। ফলে, লং রানে আপনি হারবেন। অন্যদিকে ইনভেস্টিং এর এনালাইসিস, ডিসিশন মেকিং এর স্কিল, টেম্পারমেন্ট, রিসার্চ করার স্কিল এগুলি করতে করতে আপনি আয়ত্ত্ব করলেন, শুরুর দিকে অত বেশি জিতলেন না, কিন্তু লং রানে আপনার জিতার সম্ভাব্যতা বেশি। কারণ আপনি ইনভেস্টিং এর স্কিল আয়ত্ত্ব করেছেন। এবং এখানে আরেকটা দিক, একজন ইনভেস্টর লং টার্মে চিন্তা করবেন। কারণ তিনি যে প্রফিট পান তা ফিউচার ভ্যালু বিষয়ে তার সঠিক সিদ্ধান্ত ও সেই অনুযায়ী একশনের ফল হিসেবেই।
৪। চিন্তা করার সময় নিম্নে এক বছর আগাইয়া চিন্তা করেন। বেটার ১০ বছর আগাইয়া চিন্তা করা।
অতীতের ডেটা গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু দৃষ্টি থাকতে হবে ফিউচারে। পৃথিবীর এই পর্যন্ত একনোমির ইতিহাস যদি পড়েন, এবং এর থেকে একটা শিক্ষা নিতে চান, তাহলে সেটা হবে, অতীতকে আপনি যত সেরা মনে করেন, অতীত ওইরকম ছিল না। বর্তমানকে যত খারাপ মনে করেন, বর্তমান অত খারাপ না। এবং ভবিষ্যৎ, আপনার ধারণার চাইতেও বেটার হবে।
৫। কোন বিজনেস নিয়ে রিসার্চ করতে গেলে দেখা যায় আপনি ৫০ ঘণ্টা রিসার্চ করে সামান্যই নতুন তথ্য পেয়েছেন। এই দীর্ঘ সময় এক বিজনেস নিয়ে জানতে গিয়ে, এর প্রতি আপনার একটা কমিটমেন্ট তৈরি হবে। আপনি তখন চাইবেন আপনার এই ৫০ ঘণ্টার শ্রম বৃথা না যাক। কিন্তু আপনি কত ঘণ্টা রিসার্চে টাইম দিলেন এর উপর নির্ভর করে কোন স্টক ইনভেস্টমেন্ট যোগ্য হয় না, এর সাথে কোন সম্পর্ক নেই। এই সমস্যা এড়াতে, প্রথমে ব্রড ভাবে আইডিয়াগুলি দেখুন। প্রতিদিন কিছু কিছু আইডিয়া। যদি কোন এক আইডিয়া আগ্রহ তৈরি করে তাহলেই ডিপে যান। দুই, যে জায়গায় আপনার দক্ষতা আছে, যে বিজনেসগুলা বুঝেন, ঐগুলাতেই ফোকাস করেন, এগুলা রিসার্চ করা ইজি হবে। তিন, রিসার্চ পাবলিকলি শেয়ার করতে পারেন আগ্রহীদের সাথে, তারা এমন কোন দিক দেখতে পাবে হয়ত, যা আপনি পান নি।
রিসার্চে একজন ডিটেকটিভের মত কাজ করতে হয়। প্রতিটি সাকসেসফুল কোম্পানির একটা সিক্রেট থাকে, যেই সিক্রেট তাদের সাকসেসফুল বানায়। সেই সিক্রেট খুঁজে বের করাই রিসার্চের কাজ।
জুয়ায় আসক্তির সাইকোলজি
একটা ইন্টারেস্টিং প্রজেক্ট আছে, যেখানে বই হিশাবে লাইব্রেরীতে মানুষেরা থাকেন। অন্য মানুষেরা যান, গিয়ে তাদের সাথে গল্প বলেন। মানুষের জীবনই তো গল্প, গল্পের সমাহার। প্রাচীন গল্প বলার ও শোনার ধারায় জীবন বুঝার প্রচেষ্টা থেকেই এই প্রজেক্ট। সম্ভবত বাংলাদেশেও এটি শুরু হয়েছে। আরজে কিবরিয়ার অনুষ্ঠান এইরকম মানুষের গল্পের লাইব্রেরীর মত। তার উপস্থাপনা ভালো, বিশেষত নন জাজমেন্টাল থাকাটা, এবং বক্তাকে বলতে দেয়া।
লাইফ ১৬ শাওন পর্বে কথা বলেছেন যিনি, তিনি জুয়ায় আসক্ত ছিলেন। তার গল্প শুনলাম। আমি নিচে কিছু ব্যাখ্যা করব, এটা ব্যক্তির কোন ভালো মন্দের বিচার না, বরং জুয়া কীভাবে আসক্ত করে, এর মেকানিজমটা কী, তার ব্যাখ্যা।
শাওন প্রথমে নেপালে গিয়ে এক ক্যাসিনোতে এই খেলার সাথে পরিচিত হন। দ্রুত টাকা বানান। এরপর খরচ করেন। রিসার্চে দেখা গেছে, এরকম হঠাত করে অপ্রত্যাশিত ভাবে পাওয়া টাকা মানুষ দ্রুত উড়িয়ে দেয়। সাইকোলজিতে এর নাম দেয়া হইছে, হাউজ মানি ইফেক্ট।
প্রথমত তিনি কৌতূহল ও লোভে বা সহজে বেশি টাকা আর্নের জন্য জুয়ায় মজে যান। পরে, টাকা হারতে থাকলে সেই হারা টাকা উদ্ধার করে আরও খেলতে থাকেন।
এখানে তার আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে গেছে। জুয়ায় জিতলে বা কোন ইনভেস্টমেন্টে ভালো রিটার্ন আসলে মানুষের আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে যায়। এমনিতেই, মানুষেরা ওভার কনফিডেন্ট থাকে, তার উপর এই ধরণের লাভে সে নিজেকে ভাগ্যবান ভাবতে থাকে, ও নিজের দক্ষতার বিচারে ওভার কনফিডেন্ট বায়াসের দিকে নিয়ে যায়।
দ্বিতীয়ত, তিনি ক্লাসিক একটা ফাঁদে পড়েছেন। যার নাম গ্যাম্বলার ফ্যালাসি। স্বাধীন ইভেন্টগুলারে তিনি মনে করছেন সম্পর্কিত ইভেন্ট। যেমন, আমি ছক্কার ঘুটি মারলাম তিনবার। একবার উঠল এক, আরেকবার দুই, আরেকবার তিন। এখন পরেরবারে ছয় উঠার সম্ভাব্যতা কত?
যেহেতু প্রতিটা ছক্কার ঘুটি মারা স্বাধীন ইভেন্ট, তাই সব সময়ই ছক্কা উঠার সম্ভাব্যতা সমান থাকে। কিন্তু গ্যাম্বলার ফ্যালাসিতে, ব্যক্তি মনে করতে থাকে আগে কম উঠছে, তাই এইবার ছয় উঠবে।
ফলে, সে ভাবে তিনবার লস করছি, পরের দানে লাভ করব।
কিন্তু, প্রত্যেকটাই র্যানডম ইভেন্ট। আগে লস করায় পরেরবারে লাভের সম্ভাব্যতা বাড়ে না।
স্টক মার্কেটে অনেকে মনে করে, এত টাকা লস করছি, এখন এত টাকা তুলে ফেলব। এটা গ্যাম্বলার ফ্যালাসি।
সাথে সাংক কস্ট ইফেক্ট। মানে, এত লস করে ফেলছি, এত ইমোশনাল ইনভেস্টমেন্ট হয়ে গেছে, ফলে এখান থেকে সরব না, লাভ উঠাইয়া যাব। কিন্তু কথা হচ্ছে, মার্কেট বা ওই জুয়ার বোর্ড জড় বাস্তবতা। সে জানে না আপনি কত লস করছেন ওখানে, আপনার ইমোশন বা আত্মবিশ্বাস বা আশা কোনটারই দাম নাই তার কাছে। সে এগুলা বুঝে না।
ষ্টকে ইনভেস্টমেন্ট যারা ভ্যালু ইনভেস্টিং, এবং ঐতিহাসিক মার্কেট এনালাইসিস ছাড়াই করে ফেলতে চায়, বিভিন্ন জনের দেয়া টিকার সিম্বল দেখে, তাদের এই কাজ গ্যাম্বলিং।
শাওনের গল্পে আরেকটা ইন্টারেস্টিং বিষয়, তিনি যখন অনেক দেনায় পড়ে একসময় জুয়া ছেড়ে দেন, চাকরি করতে যান, পরে একদিন ফেসবুকে বাংলা জুয়ার সাইটের এড দেখেন। আবার আস্তে আস্তে অল্প অল্প করে জুয়ায় পড়ে যান। এখন, এই বিজ্ঞাপন কেন তার কাছে আসলো বলতে পারেন কী?
অনলাইনে আপনি কিছু দেখছেন মানে এটা আপনাকে উদ্দেশ্য করেই দেয়া।
শাওনের সার্চসহ কিছু তথ্য ছিল ইন্টারনেট কোম্পানির কাছে। ফেসবুক এই তথ্যের সাহায্যে বুঝে নিয়েছে তার মনের গহীনে জুয়া বিষয়ক দূর্বলতার কথা। জুয়ার কোম্পানি যখন টাকা দিয়েছে ফেসবুককে, এবং রাফলি বলেছে যাদের মনে জুয়া নিয়ে দূর্বলতা আছে তাদের কাছেই এড দেখাও, ফেসবুক সেই সুযোগ করে দিয়েছে।
শুধু ফেসবুক না, ইন্টারনেটে একজন ব্যক্তি কী করেন, তার প্রচুর তথ্য জমা হয় নানা সার্ভারে। পারসোনালি আইডেন্টিফায়েবল তথ্য না, এগুলা দিয়া ব্যক্তি আপনারে আইডেন্টিফাই করা হবে না। কিন্তু আপনার মন পড়া যাবে। সেই পড়া মন ধরে করা হবে তাবিজ। এই তাবিজগুলা বিজ্ঞাপন বা নানা ধরণের ইনফ্লুয়েন্স হয়ে আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছে, এবং আপনি জানেনও না।
শাওন যখন বেরিয়ে আসতে চেয়েছিলেন, তখন তারে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে আবার খপ করে ধরা হয়েছে। পুরা গল্পে এই জায়গাটা বেশি ভয়ের। কারণ এটি দেখিয়ে দেয়, যে কারো দূর্বলতা ধরে এভাবে টান দিতে পারে কোম্পানিগুলা, কারণ তাদের কাছে তথ্য আছে।
অভিমন্যুর কাছ থেকে ট্রেডিং লেসন
যেকোন ইনভেস্টমেন্টে ইনভেস্ট করা তথা এন্ট্রি নেয়া যদি প্রথম ধাপ হয়, তাহলে দ্বিতীয় অংশ হলো কীভাবে বের হয়ে আসবেন সে পরিকল্পনা ঠিক করে রাখা।
অভিমন্যু অর্জুনের পুত্র। মহাভারতে কুরু ও পাণ্ডবদের যুদ্ধে অভমন্যুর গল্প আছে। তিনি তার মা সুভদ্রার গর্ভে থাকা অবস্থায় চক্রব্যূহে প্রবেশ করার নিয়ম শিখেছিলেন। অনেক জায়গায় লেখা অর্জুনের কাছে গল্প শুনছিলেন সুভদ্রা, আবার মহনিশ পাবরাই তার ধান্দো ইনভেস্টর বইতে লিখেছেন, সুভদ্রা গল্প শুনছিলেন তার ভাই কৃষ্ণের কাছ থেকে। মায়ের পেতে থাকা অভিমন্যু চক্রব্যূহে প্রবেশের নিয়ম শুনলেন, এর পরে সুভদ্রা ঘুমিয়ে যান। চক্রব্যূহ থেকে বের হয়ে আসার নিয়ম অভিমন্যুর আর শেখা হল না।
মহাভারতের তেরোতম দিনে দ্রোণাচার্য একটি চক্রব্যূহ তৈরি করেন। সেটা ভেদ করতে যুদ্ধে গিয়েছিলেন অভিমন্যু। তিনি সফলভাবে প্রবেশ করেন। কিন্তু বের হবার উপায় জানতেন না, তাই পরাজিত ও নিহত হন।
একজিট প্ল্যান বা কখন বের হয়ে আসবেন ও কীভাবে সে পরিকল্পনা না থাকলে অভিমন্যুর মত দশা হতে পারে ইনভেস্টরদের।
ধান্দো ইনভেস্টর বইতে ভ্যালু ইনভেস্টিং এর ভিউ পয়েন্ট থেকে কীভাবে ভালো বিজনেস পেতে হয়, কীভাবে সেগুলিতে ইনভেস্ট করতে হয়, এবং কীভাবে বের হবার পরিকল্পনা করতে হয় সেগুলি নিয়ে আলোচনা করেছেন ইনভেস্টর মহনিশ পাবরাই। ১৯৯০ সালের দিকে তিনি ৮ পরিবারের ১ মিলিয়ন ফান্ড নিয়ে পাবরাই ফান্ড প্রতিষ্ঠা করেন, যার ২০১৯ পর্যন্ত রিটার্ন ১৩.৩%, এবং বর্তমানে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি ফান্ড ম্যানেজ করে।
একজিট প্ল্যানের ক্ষেত্রে, মাউন্টেইন ক্লাইম্বার এড ভিয়েস্তার্সের একটা কথা এখানে উল্লেখ করা যায়। তিনি তার বই, নো শর্টকার্টস টু দি টপঃ ক্লাইম্বিং দ্য ওয়ার্ল্ড’স ১৪ হাইয়েস্ট পিকস’তে লিখেছিলেন, উপড়ে উঠা হচ্ছে অপশনাল, কিন্তু নামাটা বাধ্যতামূলক।
প্রতিটা ট্রেডের ক্ষেত্রে এই কথা মনে রাখা দরকারি।
একজিট প্ল্যান না থাকলে আপনি যতই গেইন করেন না কেন, লস ম্যানেজ করতে পারবেন না।
লস ম্যানেজমেন্টের প্রথম কথা, চক্রব্যূহে প্রবেশের আগে কীভাবে বের হতে হবে তার পরিকল্পনা করে নিতে হবে।
এ ম্যান ফর অল মার্কেটস – এড থর্প
ট্রেডিং এর একটি বিখ্যাত বই এ ম্যান ফর অল মার্কেটস। ম্যাথমেটিশিয়ান এবং হেজ ফান্ড ম্যানেজার এডওয়ার্ড থর্প ট্রেডার হিসেবে অভিজ্ঞতা, লাইফ লেসন ইত্যাদি নিয়ে বইটি লিখেছেন। প্রকাশিত হয় ২০১৭ সালে।
বই থেকে ইনসাইট এবং সে বিষয়ে কিছু আলোচনা করে এই লেখা।
বেশীরভাগ স্টক কেনার গল্প, পরামর্শ, উপদেশ একেবারে অনর্থক। যেকোন এসেট ক্লাসের (স্টক, বা অন্য কিছু) ক্ষেত্রে বুঝা কঠিন আপনি কখন একটা বাবলের মধ্যে আছেন, এবং বাবলের মধ্যে থাকলে, সেটা কখন ফাটবে।
ড্যান গার্ডনার এবং ফিলিপ টেটলক একটা বই লিখেছেন, সুপারফরকাস্টিং নামে। সেখানে তারা দেখতে চেয়েছেন বিশেষজ্ঞরা নিছক চান্সের চাইতে ভালোভাবে অনুমান করতে পারেন কি না। দেখা গেছে তারা তা পারেন না।
বিশেষজ্ঞরা বোল্ড এবং নির্দিষ্ট ক্লেইম করেন, এজন্য তারা প্রচুর মিডিয়ার এটেনশন পান। কিন্তু নির্দিষ্ট ক্লেইম কখনো ভালো অনুমান হতে পারে না। কারণ ভবিষ্যৎ দেখা গেলেও আমরা দেখতে পারি আবছাভাবে।
যেসব মানুষ বিভিন্ন দিক থেকের সম্ভাবনাকে বিচার করতে পারে তারা অপেক্ষাকৃত ভাল অনুমান করতে পারে।
বার্নার্ড বারুচ, আমেরিকান স্টক ইনভেস্টর এবং ফাইনান্সিয়ার বলেছিলেন, নাপিত, বিউটিশিয়ান, ওয়েটার বা যেকোন ব্যক্তি যদি আপনার কাছে কোন ভেতরের তথ্য নিয়ে আসে, যেটাতে আপনার লাভ হবে, তখন সতর্ক হয়ে যান। ওয়াল স্ট্রিটে আমি যত বেশিদিন থেকেছি ততোই এমন গোপন ইনসাইড তথ্যের ব্যাপারে অবিশ্বাসী হয়ে উঠেছি। আমি বিশ্বাস করি, যেকোন সময়ে, ইনসাইড তথ্য আমেরিকান ট্রেজারি বা ব্যাংক অব ইংল্যান্ড বিধ্বস্ত করে ফেলতে পারে। একজন ব্যক্তি, যার তথ্যের জন্য এমন বিশেষ কোন পাইপলাইন নাই, সে ইকোনমিক ফ্যাক্টরে পড়বে, দেখবে, এবং ঠাণ্ডা মাথায় সে অনুসারে সিদ্ধান্ত নিবে। সেই ব্যক্তিরেই আপনি ইনসাইড তথ্য দেন, সে তখন নিজেকে অন্যদের চাইতে বুদ্ধিমান মনে করতে থাকবে, এবং আরও অনেক ফ্যাক্ট তাঁর সামনে থাকলেও দেখবে না।
উপরের পয়েন্টের সারমর্মই নাসিম তালেবের উক্তি, একটা গর্দভরে ব্যাংকরাপ্ট করতে তারে তথ্য দিন।
স্টক মার্কেটে লস করা মানুষদের একটা বিশাল অংশ নিউজ দেখে বা এক্সপার্টদের বোল্ড ক্লেইম দেখে ইনভেস্ট করেছিলেন বা বিক্রি করেছিলেন। যেমন, কোন এক্সপার্ট বলেছিল মার্কেট ক্র্যাশ করবে, তিনি ভয় পেয়ে বিক্রি করে দিয়েছেন। বা কোন জায়গায় দেখা গেল, একটা নিউজ, এমনভাবে লিখেছে যেন গোপন কোন তথ্য প্রকাশ করছে। সেটা দেখে প্রভাবিত হয়েছিলেন।
বা, অন্য কোন ব্যক্তির কাছ থেকে শোনা “গোপন” তথ্য, যে এই স্টক আগামীতে মাইক্রোসফট হয়ে যাবে।
লাক ও লটারী লইয়া
মার্ক টুয়েনের ইনভেস্টিং
সেনেকার স্টইসিজম বুঝা
টাকা, সমাজ ও সভ্যতা
অপরচুনিটি কীরকম আসবে আপনার জীবনে
চার্লি মাঙ্গারের যে উপদেশ শুনে বাফেট টাকা বানালেন
অবশ্যই লেখার শিরোনামটি ফাউল শোনায়, কিন্তু এর মধ্যে সত্যতা কিছু আছে। চার্লি মাঙ্গার ওয়ারেন বাফেটকে যে উপদেশ দিয়েছিলেন সেটি হলোঃ
“A great business at a fair price is superior to a fair business at a great price.”
বাংলায় ভাষান্তরের চেষ্টা, ন্যায্য মূল্যে একটি অসাধারণ ব্যবসা, চমৎকার মূল্যে একটি ন্যায্য ব্যবসার চেয়ে উত্তম।
চার্লি মাঙ্গার এখানে তার বিখ্যাত ইনভার্স পদ্বতিতে ভেবেছেন। মানুষ সাধারণত মনে করে কম দামে ভালো ব্যবসা কেনাই ভালো। ওয়ারেন বাফেটও তাই করতেন। কিন্তু মাঙ্গার বললেন উলটা। তার কথা হলো বেশী দামে খুবই ভালো বা অসাধারণ বিজনেস কেনা ভালো। বিজনেস কোয়ালিটি গুরুত্বপূর্ন। প্রাথমিক ভাবে দাম বেশী মনে হলেও কোয়ালিটি বিজনেস লং রানে প্রফিট বেশী দেয়।
মাঙ্গার বলেন, লং রানে কোন ষ্টকের রিটার্ন তার ব্যবসাটির রিটার্নের চাইতে বেশি হবে না, একইরকম হবে। যদি কোন ব্যবসা তার পুঁজির বিপরীতে ৬% হারে আয় করে ৪০ বছর ধরে, এবং আপনি এই ষ্টক ৪০ বছর ধরে রাখলে ৬% এর বেশি হারে রিটার্ন পাবেন না। এমনকি, প্রাথমিক ভাবে কম দামে ষ্টক কিনে থাকলেও।
অন্যদিকে কোন ব্যবসা যদি ১৮% হারে আয় করে তার পুঁজির বিপরীতে ২০ বা ৩০ বছর ধরে, তাহলে ওই স্টক আপনি প্রাথমিক ভাবে বেশী দামে কিনলেও আপনার ১৮% হারে কম্পাউন্ডিং হবে। যা অনেক বেশী।
এখন, এই ধারণায় কিছু জিনিশ ধরে নেয়া হয়েছে -
১। লং রানে কোম্পানির আর্নিং রিটার্ন এর হারেই হবে এর ষ্টকের রিটার্ন। যে ব্যবসার হাই রিটার্ন দেবার সামর্থ্য আছে, ওইটা গ্রেট বিজনেস।
২। ওই বিজনেস তার আয় বা আয়ের বড় অংশ আবার রি-ইনভেস্ট করেছে একই ব্যবসায়, বা একই ব্যবসায় অন্যান্য ইনোভেটিভ দিকে। এই অংশটা তার মন্তব্যে নাই কিন্তু এটা ধরে নেয়া হইছে। কারণ তা না হইলে রিটার্ন দীর্ঘ সময় ধরে এতো বেশী থাকবে না।
এই ধরণের ব্যবসা পাওয়া সহজ না।
“Charlie made me focus on the merits of a great business with tremendously growing earnings power – but only when you can be sure of it – not like Texas Instruments or Polaroid, where the earnings power was hypothetical.” Warren Buffett
“If you’re in a lousy business for a long time, you’re going to get a lousy result even if you buy it cheap.” Warren Buffett
ইনভেস্টিং উইজডম
আলেকজান্ডার ও ফ্রেমিং
ইনভেস্টিং রিসার্চ টুলঃ
প্রথমেই বাজেট টেম্পলেট, টাকা সেভিং এর স্কিল না থাকলে সম্পদ বানানো যাবে না।
-----—
আপডেট হবে।
লাস্ট আপডেটঃ জুন ১৬, ২০২৪।
ইদের দিনে দারুন এক বিষয়ে লেখা। সময় নিয়ে পড়বো।
ইদ মোবারক ভাই।