চ্যাপ্টার ১৫
যেহেতু আমার উদ্দেশ্য হইল, যারা বুঝদার আছেন তাদের জন্য কাজের জিনিশ লেখা, তাই বেহুদা কল্পনা করার চাইতে কার্যকর বাস্তব সত্যেই সরাসরি চলে যাওয়া উচিত বলে মনে হইছে। অনেকে কল্পনা করে গেছেন আদর্শ রিপাবলিক কেমন হবে, তার নীতি, বৈশিষ্ট্য কেমন হবে, ইত্যাদি, যা কখনো বাস্তবের মুখ দেখে নাই। যা বাস্তব আছে, তা যে ভুলে যায় যা করা উচিত তার উছিলায়, সে নিজেরে টিকাইয়া রাখতে পারে না, নিজের ধ্বংস দেখতে হয় তার।
ম্যাকায়াভেলী প্লেটোনিক বা সেইন্ট অগাস্টিনের সিটি অব গডের আদর্শবাদী আইডিয়া, খৃষ্টান ইউনিভার্সালিজম যেটা বর্তমান হিউম্যানিজম, এই আইডিয়া রিজেক্ট করছিলেন। তিনি গ্রহণ করছিলেন ক্ল্যাসিক্যাল প্যাগান ভার্চ্যু, যেখানে গ্লরি- মহত্ত্ব-গৌরব-শৌর্য-বীর্য ইত্যাদির আকাঙ্ক্ষা, এক্সেলেন্স অর্জন, সিভিক দায়িত্বে অংশগ্রহণ এইগুলা ভার্চ্যু। অন্যদিকে খ্রিস্টানিটিতে, বিনয়, ক্ষমা, পরকাল, কেউ এক গালে মারলে আরেক গাল পাইতা দেয়া ইত্যাদি মূলে। প্যাগান ভার্চ্যু এবং খ্রিস্টান ভার্চ্যু বিপরীত, তাই তাদের মধ্যে একটা ক্ল্যাশ আছে। প্যাগান ভার্চ্যু খ্রিস্টানিটির চোখে খারাপ। এইজন্যই ম্যাকায়াভেলীরে পশ্চিমা বিশ্ব স্বাক্ষাত শয়তান হিশেবেই দেখেছে।
কিন্তু ম্যাকায়াভেলী আসলে বুঝতে পারছিলেন খ্রিস্টানিটির আদর্শবাদ দিয়া বাস্তব দুনিয়ার রাজনীতি চলবে না। এটাই তার ওরিজিনাল ইনসাইটের মূলে। তিনি খারাপ লোক ছিলেন না যে আনন্দ নিয়া শাসকরে খারাপ হতে বলছিলেন। তিনি ছিলেন একজন রিয়ালিস্ট পলিটিক্যাল থিংকার। মানব প্রকৃতি, মানব সমাজ, বাস্তবতা ও ইতিহাস সম্পর্কে তিনি ক্লিয়ার ছিলেন চিন্তায়। শাসকের প্রধান কাজ রাষ্ট্ররে টিকাইয়া রাখা ও শক্তিশালী করা, এটা তিনি ধরে নিছেন। এর জন্য যা করতে হবে সেটাই তিনি বলতে চাইছেন।