ইভিল আই বা কারো চোখ লাগা অর্থাৎ কোন ভালো জিনিশ কোন কোন লোক দেখলে ওই জিনিশের বা ব্যক্তির খারাপ হয়, এই ধারণাটা বহু প্রাচীন। এইটা যেমন ফোক ধর্মগুলাতে আছে, তেমনি ফোক ধর্মগুলার বিভিন্ন প্রথা রীতির বিরুদ্ধে থাকা প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মগুলাতেও আছে। সব জায়গাতেই এই চোখ লাগার খারাপ প্রভাব থেকে বাঁচতে নানা কিছু পরিধান করার, বা দোয়া বা মন্ত্রের নিয়ম আছে।
ধারণা করা হয় প্রাচীন মেসোপটেমিয়ায় এই ধারণা প্রথম শুরু হয়। এই ধারণার বেসিক হচ্ছে, কোন কোন ব্যক্তি চোখের দৃষ্টিতে খারাপ প্রভাব থাকে, যখন সে ঈর্ষা নিয়ে তাকায়। কেবল দৃষ্টি না, ঈর্ষার দৃষ্টিই খারাপ তৈরি করে। তা না হলে ওই লোক যাই দেখত তাই জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাবার কথা। অর্থাৎ লজিক্যালি, বুঝানো হইছে, তার ঈর্ষা যুক্ত দৃষ্টিরে।
প্রাচীন মিশরে গ্রীসে রোমে ধারণা প্রচলিত ছিল। তারা এটারে ঈর্ষার সাথে সরাসরি যুক্ত করছেন, এবং এক বা কাছাকাছি শব্দ দিয়ে ঈর্ষারেও ডিফাইন করছেন। আগেকার সময়ে মানুষদের, বিশেষত গ্রীকদের বিশ্বাস ছিল, যখন আমরা কিছু দেখি তখন আমাদের চোখ থেকে আলো গিয়ে পড়ে ওই বস্তুর উপরে। এই বিশ্বাসের ভিত্তিতেই তারা চোখ লাগার খারাপ প্রভাবরে ব্যাখ্যা করত। কিন্তু এখন আমরা জানি বস্তু থেকে আলো এসে চোখে পড়ে; যেই আলো আবার কোন আলোর উৎস থেকে বস্তুতে পড়েছিল এবং সেখান থেকে প্রতিফলিত হয়ে চোখে পড়লে, চোখের ভেতরের কারিকুরিতে আমরা কিছু দেখি।
ফলে, চোখ লাগা মানে চোখ থেকে কোন শক্তি গিয়ে ওই বস্তুতে পড়ে, এই ব্যাখ্যা এখন খাটে না।
প্লুতার্ক এইরকম বলছিলেন যে, ব্যক্তির নিজের চোখও নিজের উপর লাগতে পারে। নার্সিসাসের কাহিনী যেমন। সে জলাশয়ে তার নিজের রূপ দেখে নিজেই মুগ্ধ হয়ে যায়। ওইখানে আটকে থাকে ও মারা যায়।
ইবনে খালদুন ইভিল আই বা এই খারাপ চোখের যে ব্যাখ্যা দিছেন, তা প্রাচীন মেসিপটেমিয়ার ধারণার সাথে মিলে। তিনি বলছেন খারাপ চোখ একটা শক্তি, এটা ব্যক্তির ইচ্ছার অধীন না। স্বয়ংক্রিয় ভাবে কাজ করে। অর্থাৎ, এখানে আলাদাভাবে "খারাপ চোখ" কে স্বীকার করা হচ্ছে, যার দেখায় খারাপটা হচ্ছে তার এখানে করার কিছু নাই। সে চাইলে ঐটা বন্ধ করতে পারবে না।
এনভি/ ঈর্ষা, রিসেন্টিমেন্ট দুনিয়ার সবচাইতে শক্তিশালী ফোর্স। ফ্রেডরিক নীতশের দার্শনিক চিন্তায় বড় ভিত্তি হচ্ছে এই রিসেন্টিমেন্ট দিয়ে বিশ্লেষণ, কীভাবে রিসেন্টিমেন্ট নানা ভাবে কাজ করে। প্রাচীন মানুষেরা এটা বুঝতে পারছিলেন। তাই তারা এই খারাপ চোখের ধারণা নিয়ে আসছিলেন।
এই চোখ লাগা বা খারাপ চোখের ধারণা যা বুঝায়, অর্থাৎ কোন ব্যক্তির চোখ লাগে, ঐভাবে ফাংশন করে না। বরং এর মূল কাজ হচ্ছে মানুষরে তার নিজের ঈর্ষা সম্পর্কে সচেতন করে রাখা। এখন যদি বলা হইত নীতিকথা, তুমি তোমার ঈর্ষা নিয়ে সচেতন থাকো, কাউরে ঈর্ষা করবা না, এই নীতিকথা মানুষ ভুলে যাবে। কারণ তার ঈর্ষার ড্রাইভ সবচাইতে শক্তিশালী, এবং প্রাকৃতিক। স্বয়ংক্রিয় ভাবে তার মধ্যে জাগ্রত হতে থাকে।
ইভিল আই এর কনসেপ্ট বলে, তুমি, এবং তোমার সবচাইতে মূল্যবান জিনিশগুলি, যেমন সন্তান ও সম্পদ, ইত্যাদি, একটা খারাপ চোখের প্রভাবের মধ্যে আছে। তাই এই চিহ্ন, দোয়া, মন্ত্র ইত্যাদি ধারণ করো। এগুলার ফাংশন দৃশ্যত ইভিল আই থেকে বাঁচানো, কিন্তু প্রকৃত উদ্দেশ্য যে ধারণ করছে, ও যারা দেখছে তাদের রিমাইন্ডার দেয়া যে ঈর্ষার শক্তি শক্তিশালী, এবং চারপাশে বাস্তব। যাতে এই মনে রাখার মাধ্যমে সে নিজের ভালো জিনিশগুলা নিয়ে হাম্বল থাকে, হেল্পফুল থাকে, এবং প্রধানত, অন্যদের ভালো জিনিশে ঈর্ষা না করার সচেতন চেষ্টা করে। এক উদাহরণ, ইসলামে বলা হয় কারো ভালো জিনিশ দেখলে বলতে হবে মাশা আল্লাহ্। যাতে খারাপ চোখ না লাগে। কোন ব্যক্তিই চায় না সে ঈর্ষক পরিগণিত হোক বা তার খারাপ চোখ লেগে কারো ক্ষতি হোক। কারণ এইটা ভয়ংকর খারাপ ও বাজে হিশাবে দেখা হয়। এবং যদি ইভিল আই কেবল কিছু ব্যক্তিরই হইত, তাহলে সবার মাশা আল্লাহ্ বলার দরকার হইত না।
এই খারাপ দৃষ্টির কনসেপ্ট হইল ঈর্ষার ক্ষতিকর দিক দেখানোর জন্য, যাতে এর ভয়ে মানুষ সমাজে পরস্পর সহযোগিতামূলক আচরণ করে। কারো সাফল্যে তার ক্ষতি করার চেষ্টা না করে।
ব্যক্তি কেন্দ্রিক যে চোখ লাগার ধারনা, যে ওই ব্যক্তির দৃষ্টি খারাপ, দেখছে তাই এই খারাপ হয়ে গেছে, এর ব্যাখ্যায় সাইকোথেরাপিস্টেরা (আরমান্দো দি ভিনসেন্টিজ) বলেন, যারা বিশ্বাস করে যারা নেগেটিভ সাজেশনের প্রভাবে পড়ে যায়।
কারো চোখ লাগা এইভাবে হয়ত ফাংশন করে না যে ওই ব্যক্তির চোখ লেগে ক্ষতি হয়, কিন্তু ১০০ ভাগ এইভাবে ফাংশন করতে পারে যেখানে ভালোটা দেখে নিজের "স্বয়ংক্রিয়" ঈর্ষা নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে কেউ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ক্ষতি করার চেষ্টা করবে।