একলব্যরে আঙ্গুল কাইটা নিয়া যে গুরুদক্ষিণা নিছিলেন গুরু দ্রোণ, এইটা ঠিক আছে। আবেগী দিক থেকে দেখলে এখানে খারাপ মনে হয়, কিন্তু লজিক্যালি এই শাস্তি একলব্যের প্রাপ্য।
একলব্য শিখছিলেন কীভাবে? বলা হয়, গুরু দ্রোণের এক মূর্তি রাইখা পূজা করে, ভক্তিযোগের মাধ্যমে শিখেন। এইটা ঠিক হইলে, স্বয়ং ভগবান আইসা তারে শিখান দ্রোণের প্রতি ভক্তির জন্য, যেইটা একরকম দ্রোণেরই শেখানো। আবার, তিনি লুকাইয়া দ্রোণরে দেখে দেখেও শিখে থাকতে পারেন।
তিনি, গুরুর কাছ থেকে লুকাইয়া শিক্ষা নিছেন, গুরুর নিষেধ স্বত্তেও। এইখানে তিনি আসলে চুরি করছেন, এবং গুরুর সাথে চুরি হইল বড় চুরি। একইভাবে, কর্ণ মিথ্যা বলে পরশুরামের কাছ থেকে ব্রহ্মাস্ত্রের জ্ঞান লাভ করেন। পরে পরশুরাম জানতে পারলেন যখন, যে কর্ণ ব্রাহ্মণ নন, তখন অভিশাপ দেন প্রয়োজনের দিনে ব্রহ্মাস্ত্রের ব্যবহার কৌশল তিনি ভুলে যাবেন। এইটাও শাস্তি ছিল কর্ণের প্রতি, এবং বলা যায় মৃত্যুদণ্ড, কারণ সংকটকালে এইজন্য তার মৃত্যুই হয়।
একলব্য ও কর্ণ দুইজনই গুরুর কাছে চুরি করছিলেন, যার শাস্তি তারা পাইছেন। এবং এই শাস্তির ধরণ একইরকম, যেন এই অর্জিত বিদ্যা তাদের কাজে না লাগে। গুরুর অভিশাপ।
দ্রোণের ক্ষেত্রে জাত প্রথা হ্যান ত্যান ইত্যাদি অনেকে বলবেন, বা কর্ণের ক্ষেত্রেও, কিন্তু যে সময়ের প্রেক্ষাপটে এই কাহিনীগুলা তা অনেক আগের। জাত প্রথারে ওই সময়ের প্রেক্ষিতে বুঝা এখন সম্ভব নয়। তাছাড়া, দ্রোণের একলব্যরে না শেখানোর পেছনে রাজনৈতিক কারণও ছিল।
এই কাহিনীটা আমাদের কী বুঝায়, বা কোন সমস্যারে দেখায়?
আমি পেইড নিউজলেটার শুরু করেছি এক বছর হইল, খুবই নতুন এক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে। এই সময়ে, এই আধুনিক প্রযুক্তিগত বর্তমানে, আমি ফিল করলাম মহাভারতের ওই ঘটনার প্রায়োগিকতা এখনো শেষ হয় নাই।
যেমন, আমার পেইড নিউজলেটার সংখ্যা কারো ইমেইলে গেলে সে অন্য দশ জনরে ফরোয়ার্ড করে দিতে পারবে। বা, ধরেন, দশজন মিলে এক ইমেইল খুললো, এবং একজনে পে করে দশজনে ব্যবহার করলো। এইগুলা আমার সাথে করা বাটপারি, যেখানে আমি তাদের কিছু শিখাইতেছি- গুরুত্বপূর্ণ কিছু না হইলে তারা নিশ্চয়ই এত কসরত করতো না।
আমার কাছে এখন, ছোট স্কেলে দ্রোণ বা পরশুরামের বাস্তবতাই। মহাভারত যে সমস্যারে দেখাইছিল, এটা এইভাবে নানা রূপে বিরাজিত থাকবেসময়ে সময়ে। এর কোন টেকনিক্যাল সমাধান নাই। যেমন দ্রোণ বা পরশুরাম কোন টেকনিক্যাল সমাধান করতে পারেন নাই, তারা আটকাইতে পারেন নাই। পরে দ্রোণ নিজের বদনাম মাথায় নিয়াও গুরুদক্ষিণার সুরতে শাস্তি দিলেন, একলব্য না মানতে পারতেন, না দিতে পারতেন আঙ্গুল। তিনি যে দিছেন এখানে তার মাহাত্ম্য আছে। না দিলে অভিশাপের পথেই যাইতে হইত দ্রোণরে। অর্থাৎ, এখানে একমাত্র পথই আছে অভিশাপ, যে এখান থেকে অর্জিত জ্ঞান প্রয়োজনের দিনে যেন তাদের কাজে না লাগে। কারণ যে শিখাইতেছে, তার সাথেই তারা বাটপারি করছে।
অথবা, মহাভারতের প্রাচীন জ্ঞান এই শিক্ষাই দেয়, তুমি কর্ণের মত বা একলব্যের মত স্কিলফুল হইলেও যার কাছ থেকে শিখতেছ তার সাথে বাটপারি করতে যাইও না। করলে অর্জিত বিদ্যা কাজে লাগবে না।
এই ওয়ার্নিং কেন দিতে হইল প্রাচীন জ্ঞানীদের? তাও, এত গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র কর্ণ, দ্রোণ, পরশুরাম ও একলব্যের আঙ্গুল কাটার মত মর্মস্পর্শী ঘটনারে সামনে এনে?
কারণ, নিশ্চয়ই এই জিনিশ মনুষ্য প্রকৃতির মধ্যে আছে তারা দেখছিলেন, এবং এর ব্যাপারে সাবধান করা জরুরী মনে করছিলেন।