১। আপনি আপনার অডিয়েন্সরে অউন করতে পারবেন। আপনার ফেসবুক ফ্যান ফলোয়ার আপনার নিয়ন্ত্রণে নাই, ফেসবুকের এলগোরিদম চেইঞ্জের উপর নির্ভর করে রিচ। অন্যদিকে সাবস্টাক বা অন্য যেকোন নিউজলেটারে আপনার নিয়ন্ত্রণ থাকে অডিয়েন্সের উপরে।
ফেসবুকে কিওয়ার্ড ভিত্তিক সেন্সরিং আছে, এছাড়া রিজিওনাল সেন্সরিং হয় আইডি টার্গেট করে এমন কথা শোনা যায় বাংলাদেশের অনলাইন বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজে। এই ধরণের সেন্সরিং থেকে সাবস্টাক মুক্ত।
আপনারে ফেসবুক ব্যান করে দিলে আপনি আপনার ফলোয়ারদের এক্সেস হারাবেন। শ্যাডো ব্যান করে দিলে অডিয়েন্স থাকবে কিন্তু তাদের সামনে লেখা যাবে না।
নিউজলেটার সাবস্ক্রাইবারদের ক্ষেত্রে ইমেইল লিস্ট আপনি চাইলে অন্য প্লাটফর্মে নিতে পারেন। এবং এখানে শ্যাডো ব্যান করার সুযোগ নেই।
ইমেইল সবার ইনবক্সেই যাবে। তাদের মধ্য থেকে যারা বেশি ইমেইল খুলবে, বা নিয়মিত পড়বে, তাদের মিস করার কথা না।
এখানে অসুবিধা একটা আছে, মানুষ ইমেইলে পড়তে অভ্যস্থ না। এই অভ্যাস হতে টাইম লাগতে পারে।
২। ইন্টারনেটে লেখার ক্ষেত্রে লেখক হিশাবে আপনি যে প্রধান ভ্রান্তিতে ভুগেন তা হলো, ভাবেন আপনি এক সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিচ্ছেন। কিন্তু কম্পুটারের বা মোবাইলের পেছনে একজন ব্যক্তিই আপনার লেখা পড়েন। অর্থাৎ, কমিউনিকেশন এখানে ওয়ান টু ওয়ান, কিন্তু ম্যাস কমিউনিকেশনের মত মনে হয়।
লেখারে ওয়ান টু ওয়ান কমিউনিকেশন হিশাবে আবিষ্কার করলে আপনার লেখা ভালো হবে। ইমেইল নিউজলেটার সেই ভাইবটা রাখে।
৩। যে ব্যক্তি আপনারে তার ইমেইলে প্রবেশাধিকার দিলো, সে আপনার লেখা সম্পর্কে আগ্রহী। এটা অনাগ্রহীদের সরাতে এক ফিল্টারিং হিশাবেও কাজ করবে।
৪। ফেসবুক স্ট্যাটাসে হাইপার টেক্সটের সুবিধা নেয়া যায় না। বইয়ের কাগজে লেখা, এবং ইন্টারনেটের লেখার চরিত্র আলাদা। ইন্টারনেটের লেখায় আপনি লিংক যুক্ত করতে পারবেন, ছবি যুক্ত করতে পারবেন, ভিডিও দিতে পারবেন। এই সুবিধা স্ট্যাটাসে নাই, কিন্তু সাবস্টাক বা অন্য যেকোন নিউজলেটারে মিলবে।
৫। নিউজলেটার সেন্সরপ্রুফ। সরকার চাইলেও ইমেইল বন্ধ করতে পারবে না। আপনি আপনার আগ্রহীদের ইনবক্সে ঠিকই পৌঁছে যাবেন। ইভেন সাবস্টাক যদি বন্ধ করে দেয় সরকার বাংলাদেশ থেকে, তাও সাবস্ক্রাইবারদের লিস্ট আপনার কাছে থাকবে। আপনি সেই লিস্ট দিয়ে অন্য নিউজলেটার সার্ভিস ট্রাই করতে পারবেন, বা ম্যানুয়ালি মেইল দিয়ে কানেক্ট করতে পারবেন।
৬। একটা ওয়ার্ডপ্রেস সাইট চালানো সহজ না, এখানে ডোমেইন হোস্টিং এর সেটআপ, খরচের ব্যাপার থাকে। ওয়ার্ডপ্রেসের ড্যাশবোর্ড এখন অনেক অপশনে ভারী। লেখার ফোকাস নষ্ট করে। সেইদিক থেকে সাবস্টাক ফ্রি, জাস্ট রেজিস্টার করে নিউজলেটার সেটআপ দিতে হয়, সিএমএস কার্যকর কিন্তু সিম্পল। লেখালেখির জন্য এনাফ, এছাড়া পডকাস্টের, ভিডিওর অপশনও আছে।
ওয়ার্ডপ্রেস সাইটের আরেক অসুবিধা হলো, এখানেও ফেসবুকের উপর নির্ভর করতে হয়। লেখা ফেসবুকে শেয়ার দিলে অডিয়েন্স বুঝেন নতুন লেখা প্রকাশ হইছে, এবং তখন অনেকে পড়তে আসেন।
সাবস্টাকে এইরকম পোস্ট না দিলেও চলে যদি আপনার বড় সাবস্ক্রাইবার লিস্ট থাকে।
তবে প্রথমদিকে আপনারে ফেসবুকে শেয়ার করেই সাবস্ক্রাইবার সংগ্রহ করতে হবে।
অথবা, ফ্রি পোস্ট যেহেতু যে কেউ পড়তে পারেন, তাই লিংক আপনি ফেসবুকে শেয়ার করতে পারেন। ওয়বেবসাইটে যেমন প্রকাশিত লেখা থাকে, তেমনি এখানে থাকবে, ও পাঠকেরা পড়তে পারবেন।
৭। আপনারে ফেসবুক বা অন্য চ্যানেলগুলা তো ছাড়তে হচ্ছে না। একটা ইউজ করলে আরেকটা ছাড়তে হবে এমন নিয়ম নাই। বরং এইগুলার সাথে সাবস্টাক, ঘোস্ট বা অন্য কোন নিউজলেটার ইউজ করলেন। ওইগুলা থেকে আগ্রহী অডিয়েন্সরে এইখানে আনলেন।
এক ডিজিটাল মিডিয়া আরেকটারে লিমিট করে না বরং বর্ধিত করে রীচ। অনেক গান এখন মানুষ দেখেন টিকটকে, পরে ইউটিউবে গিয়ে পুরা গান শুনেন।
৮। শেষের কথা মনেটাইজেশন নিয়ে। বাংলা অনলাইনে এত লেখা কিন্তু মনেটাইজেশনের সমস্যা। আমাদের হয়ত অত বড় কোম্পানি নাই যে অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিবে। ফলে বিজ্ঞাপন মডেলে টাকা আনার উপায় নাই। বাকি থাকে বই প্রকাশ করে বিক্রি। তাও বছরে একবার, এবং বই বিক্রি, রয়ালটি এইগুলাতে নানা স্তরে সমস্যা বিদ্যমান। সাবস্টাক বা অন্য কোন নিউজলেটার দিয়ে এই সমস্যার সমাধান করা যাবে। অভারল সিস্টেমের জন্য এটা দরকারী, মানুষ তার ক্রিয়েটিভ কর্ম - লেখা, এনালাইসিস, গান ইত্যাদি যেন বেঁচতে পারে চাইলে আগ্রহী অডিয়েন্সের কাছে, এই উপায় থাকলেই টোটাল ক্রিয়েটিভ সিস্টেমটা শক্তিশালী হয়ে উঠবে, এইখানে ভ্যালু এড হবে।
সাবস্টাকের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নাই। আমি অনলাইনে লেখার দুইটা সমস্যা, এক, সেন্সরশীপ এবং দুই, মনেটাইজেশন - এর সমাধান করতে চাচ্ছি। সাবস্টাক, ঘোস্ট, মেইলচিম্প, সেন্ডফক্স, বিহাইভ ইত্যাদি নিউজলেটার ভিত্তিক প্লাটফর্মগুলিকে উক্ত দুই সমস্যা সমাধানের কার্যকরী টুল হতে পারে।
যে অসুবিধা আপনি ফেইস করবেন, দেখতে পারেন ওপেন রেইট কম। ২০২২ সালে জেনারেল ইমেইল ওপেন রেইট ছিল প্রায় ২২.৫০%। ইন্ডাস্ট্রি ভেদে অনেক বেশ কম আছে। আপনার কাছে এটা মানা কঠিন হতে পারে, যেখানে ফেসবুকে পোস্ট করলেই দেখতে পাচ্ছেন ৫০০০ ভিউ, সেখানে সাবস্টাকে যদি হয় ৪০০ ভিউ।
এই সমস্যা সমাধান করতে পারবেন আপনার সাবস্ক্রাইবারদের ইমেল খুলতে ও পড়তে উৎসাহিত করে। এবং ফেসবুক, এমাজন, গুগল এরা যে ভিউ এর ডেটা দেখায় তা সন্দেহের বাইরে না। প্রফেশনাল এড এক্সপার্টদের কাছে এইসব প্ল্যাটফর্ম "ওয়ালড গার্ডেন" হিশেবে পরিচিত, কারণ তাদের বাগানের ভেতরের সব নিয়ন্ত্রণ তাদের কাছে। তারা ডেটা ওপেন করে দেয় না। অনেক জায়গায় ট্রান্সপারেন্সি থাকে না। যেহেতু তারাই সেলার, কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট উপস্থিত, তাই এড মেজারমেন্ট ডেটায় কিছু অতিরঞ্জন করে থাকে।