একটা বিশাল ফালতু মাইন্ডসেট আছে, নো ফ্রি লাঞ্চ, পয়সা ছাড়া দুপুরের খাবার তথা লাঞ্চ মিলে না। এটা দ্বারা বুঝায়, সবকিছুই ট্র্যানজেকশনাল। কিছু পাইতে হইলে তোমারে কিছু দিতে হবে।
অবশ্যই, কেউ দোকান থেকে কিছু কিনতে গেলে তারে টাকা দিতে হবে। কোন রেস্টুরেন্টে খাবার খাইতে গেলে টাকা দিতে হবে। কারণ, উনারা ওইসব পণ্য বা খাবার কিনে আনছেন বা সময়, শ্রম দিয়া বানাইছেন। ফলে টাকা দিয়া কিনা স্বাভাবিক।
তার মানে এই না, নো ফিরি লাঞ্চ। বহুত জায়গায় ফিরি লাঞ্চ আছে। এই কালচারে "সেবা" একটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিশ। অনেক মন্দির, মাজারে, লঙ্গরখানায় ফ্রি খাবার দেয়। তারা সেবা করে, কারণ আধ্যাত্মিক দুনিয়ায় প্রবেশের এক পথ হইল সেবা।
জাপানিজ, নর্ডিক, ন্যাটিভ আমেরিকান, আফ্রিকান উবুন্টু, মানে প্রায় সব কালচারে এই ধরণের সেবাড় কনসেপ্ট আছে। যেখানে আপনি ফিরি লাঞ্চ পাবেন।
নো ফিরি লাঞ্চের ওয়ার্ল্ডভিউ জঘন্য, যদি দেখেন কেউ এইটা সিরিয়াসলি ধারণ করে, এইটা ব্যাড সিগনাল। কারণ তার জীবন দৃষ্টি ট্রানজেকশনাল, দয়া মায়া মমতার মত ভালো অনুভূতির ধারণা তার নাই। ইন্ট্রিনসিক ভ্যালু, হ্যাপিনেস, ওয়েল বিং, ভালো সম্পর্ক, ভালো অভিজ্ঞতা, ভালোবাসা ইত্যাদি সে ভ্যালু করে না, তার কাছে সব ভ্যালু ম্যাটেরিয়ালিস্টিক, আলটিমেটলি সে একটা লুজার হবে। কারণ এই ইন্ট্রিনসিক ভ্যালু গুলাই লাইফে মিনিং দেয়, ও ব্যক্তিরে হ্যাপি করে। এইগুলা ব্যবহার করেই ব্যক্তিগত ভালো সম্পর্ক মানুষ তৈরি করে, নিজেরে ভালো রাখে।
সাইকোলজিক্যালি এর নেগেটিভ ইমপ্যাক্ট হইল, এই ব্যক্তি কাইন্ডনেসরে সন্দেহ করবে, কারণ সে এইটা বিশ্বাস করে না। সে সব সময় দুই পয়সা দুই আনার লাভ ক্ষতির হিশাবে থাকবে। এই চিন্তা যখন তার ভেতরে সব সময় বিদ্যমান থাকবে, তখন সে নিয়ত একটা স্ট্রেসে থাকবে। সে অন্যরে বিশ্বাস করতে পারবে না। ফলশ্রুতিতে, তারেও মানুষ বিশ্বাস করবে না। এবং, জে পি মরগ্যানরে ১৯১২ সালে যখন জিগানো হইছিল কংগ্রেসে, ব্যাংকিং ক্রেডিট ব্যবস্থার মূল কি টাকা বা সম্পদ না? মরগ্যান তখন বললেন, 'না স্যার, ক্যারেক্টার হইল আগে।' আস্থা বিশ্বাস না হইলে, ও তা না রাখা হইলে সিস্টেম ফাংশনই করবে না। পুরা দুনিয়া একরকম দাঁড়াইয়া আছে এই আস্থা-বিশ্বাস নামক অবস্তুবাদী জিনিশের উপরে।
মানুষের সমাজ ও সামাজিক সম্পর্ক এক রকম না। এখানে দয়া মায়া মমতা সাহায্য ইত্যাদির স্থান আছে। যেইখানে বস্তুগত ট্রানজেকশনাল সম্পর্ক দরকার, সেইখানে তা আছে। ওইটারে ফ্রি ভাবা যেমন বোকামি, তেমনি মানুষের উতকর্ষের প্রমাণ যেসব বৈশিষ্ট্য, ঐগুলারে বস্তুগত বিনিময়ের পাল্লায় মাপা হইল মূর্খতা।
Comments
No posts