আমাদের প্রিয় ডিটেক্টিভ খোরশেদ আলম
জানতে পারিল যে
শহরে অজস্র কবুতর
পড়িতেছে মারা
ধান কাটা এই বেলা হয়ে গেল সারা
খোরশেদ আলম, সমস্ত এডগার এলান পো
সমস্ত আগাথা ক্রিস্টি
সমস্ত আর্থার কোনান ডয়েল
শেষ করিয়াও বুঝিতে না পারে
কেন কী করিয়া
এই শহরে এই বেলা
এতো এতো কবুতর
এইভাবে পড়িতেছে মারা
পৃথিবীতে যুদ্ধ চলিতেছে ধীরলয়ে
মধ্যপ্রাচ্য হইতেছে অশান্ত টের পাওয়া যায়
ইরান বানাইতেছে নিউক্লিয়ার উইপন
আর এইদিকে সৌদি আরব তা প্রতিহত করতে বদ্ধ পরিকর
হইতেছে নানা প্রক্সি যুদ্ধ, সিরিয়া-ইয়ামন-ফিলিস্তিন
হায় হায়, কত কত লোক মারা যায় প্রতিদিন
এইসবেরই কি সংকেত
এই কবুতরগুলির হত্যা
যেন পৃথিবীতে আসিতেছে নামিয়া
আবার এক অশান্তির কাল
খোরশেদ আলম ভাবিয়া নাকাল
সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়ে সে
হাতে নেয় নতুন বিয়ার
কাঁধে পোষা কাক করে কা কা
কোথায় জানি অন্ধকার রাতে বাতাস ছাড়াই
শাই শাই উড়ে যায় ফস্টার ওয়ালেসের ব্যান্ডানা
কুণ্ডলী পাকানো ধোঁয়ায়
যেন ভেসে উঠে কার মুখ
কার ছায়া ছায়া জীবনের কুয়াসা
হাত ফসকে চলে যাওয়া রঙিন বেলুনের মায়া
খোরশেদ আলমের উপর ভর করে
ভর করে দুরতিক্রম্য কিছু হতাশা
অন্ধকার শহরে আসলে কী হয়
যাতে শুভ্র কবুতরগুলি
এইভাবে মারা যায়
কে করে এই খুনগুলি
পার হয়ে আসি অন্ধকারের ঘুলঘুলি
খোরশেদ আলম ভাবিয়া না পায়
এজিদ মিস্ত্রাল ওইদকে
নতুন কামানে দেয় শান
কামান দাগিয়ে বীরদর্পে সে
শহর ঘুরিয়া বেড়ায়
তার কালো হ্যাট
তামাটে চেহারা
খয়েরী আলখেল্লা
আর ক্রূর হাসি
সব মিলিয়ে যেন সার্জো লিওয়নের ওয়েস্টার্ন থেকে এইমাত্র উঠে আসা
আগুন হাতে নিয়ে খেলায় সে
আগুনে আগুনেই তার জীবন যাপন
খোরশেদ আলমের সাথে তার শত্রুতা
শহরের প্রতিটা ইটও জানে
জানে রাস্তার ধূলিকণা
অন্ধকারে এই শহরে
এজিদ মিস্ত্রাল
প্রতিমুহুর্তে যেন রচনা করে যায়
প্রলয়ের ব্যঞ্জনা
এই শুভ্র কবুতরগুলি
খুনের পেছনে
এজিদ মিস্ত্রালের কালো হাত আছে
এমন মনে করছে গোয়েন্দা-পুলিশ বিভাগের প্রায় সবাই
কিন্তু খোরশেদ আলম তা মানে না
কারণ তাকে আগে পেতে হবে তথ্য প্রমাণ
প্রমাণ ছাড়া খোরশেদ
যেন নিজের হাতকেও বিশ্বাস করে না
ডিপার্টমেন্টের মিটিং এ বসে
পুলিশের প্রধান বারী সাহেব বলে গেলেন
যা আলামত মিলেছে এই পর্যন্ত
তাতে আমাদের মনে হয় এটা
এজিদ মিস্ত্রাল করে বেড়াচ্ছে
কারণ সে খোরশেদ আলমকে
বিব্রত করতে চায়
কারণ মাস তিনেক পূর্বে
খোরশেদ আলম তার জীবনের প্রথম কবিতাটি লিখেছিল
শুভ্র কবুতর নিয়ে
এবং সেটি একটি দৈনিকের সাহিত্য পাতায় ছাপা হয়
বারী সাহেবের কথায় কেউ দ্বিমত করেন না
কিন্তু খোরশেদ আলম তা মানতে পারে না
সে ক্লু এর জন্য রাতের পর রাত
সমস্ত শহর চষে বেড়ায়
কবুতরের খুপড়িতে পড়ে থাকে
বিড়ালের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে
আর অনেক অনেক মদ খায়
এভাবে কিছুদিন চলার পরে
একদিন ভোরে
খবর আসে
একজন কবি
আত্মহত্যা করেছেন
শহরের উপকন্ঠে
একটি ছড়ার ধারে
পাহাড় থেকে নেমে আসা ছড়ায়
তখন ছিল উছলে পড়া জলরাশি
আগের রাতে প্রচুর মদ খেয়ে
অনেক সিগারেট পুড়িয়ে
অসামান্য ডিটেক্টিভ
আমাদের খোরশেদ আলম
পড়ে ছিল তার বাসার মেঝেতে
খবর পেয়ে
কোনমতে চোখ খুলে সে
অকুস্থলে পৌছে যায়
গিয়ে দেখতে পায়
কবি আত্মহত্যা করেছেন
আপন গলা কেটে
আর এক হাত দিয়ে
বুকের কাছে চেপে রেখেছেন
গলা কাটা এক শুভ্র কবুতর
খোরশেদের মাথা ঝিম ঝিম করে ওঠে
সে মাটিতে বসে যায়
কারণ সে তখন
মীমাংসা করে ফেলেছে
এতো এতো কবুতর হত্যার রহস্য
এই কবি
অকৃত্রিম প্রতিভা ছিল তার
খোরশেদের সাথে এক অন্ধকারে
অনেক আগে
কথা বলেছিলেন তিনি
সকল কবিতা তিনি
রাতের অন্ধকারের মাঝে
লিখে রাখতেন
আর অদ্ভুত সুরে হাসতেন
খোরশেদ জানতো এইসব
যেমন সে এই শহরের আরো কতো রহসের খবর জানে
এবং জানতো কবি গেয়েছিলেন
তার কবিতায়
আমি মারা যাবার কালে
অজস্র কবুতরের
রক্ত হয়ে ঝরে যাব
আগস্ট, ২০২০