স্প্যানিশ জেসুইট লেখক ও দার্শনিক বালতাছার গ্রাছিয়ান জন্মেছিলেন ১৬০১ সালে, গত হন ১৬৫৮ সালে। প্রায় ৫৭/৫৮ বছরের তার ধরাধামে বসবাসকাল।
তার একটা বইয়ের নাম, Oráculo manual y arte de prudencia, ইংরাজি অনুবাদে দ্য আর্ট অব ওয়ার্ল্ডলি উইজডম, বাংলায় হইতে পারে দুনিয়াদারী বিষয়ক প্রজ্ঞা। একটা বিখ্যাত বই, শোপেনহাওয়ারের প্রিয় ছিল। তিনি এটি জর্মন ভাষায় অনুবাদও করেন। শোপেনহাওয়ারের মতে এটা একবার পড়ার বই না, বার বার ফিরে ফিরে পড়ার বই, সারাজীবনের সঙ্গী হিশাবে রাখার মত বই।
ফ্রেডরিখ নীতশেও এর প্রশংসা করেছেন। তার কথায়, ইউরোপ এর চাইতে ভালো বা নৈতিক সূক্ষ্মতার বিচারে এর চাইতে জটিল কিছু তৈরি করে নি।
আমি বইটার বাংলায় অনুবাদ করা শুরু করলাম, ইংরাজি থেকে। অনুবাদ করতে চারটা বইয়ের সাহায্য নিচ্ছি, একটা মার্টিন ফিশারের করা অনুবাদ, আরেকটা জোসেফ জ্যাকবের করা অনুবাদ, আরেকটা ক্রিস্টোফার মোরারের অনুবাদ, আরেকটা জেরেমি রবিনসের। স্প্যানিশে বইটা স্প্যানিশ লিটারারি বারোক স্টাইলে, কনসেপ্টিজম নামে এক ধারায় লিখিত, ফলে এর অর্থ বের করা সহজ না। আমি যেই অর্থটা বের করছি, তা উক্ত চার বইয়ের মারফতে।
পদ্বতিটা এইরকম, একটা ম্যাক্সিম আমি পড়লাম, কোথাও না বুঝলে চারটা মিলাইয়া অর্থ বুঝার চেষ্টা করলাম, এবং সেই বুঝে আসা অর্থটাই বাংলায় অনুবাদ করলাম।
বইটা তিনশো ম্যাক্সিম এবং তাদের উপর মন্তব্যের সমাহারে লিখিত।
অনুবাদে মূলের সাথে যথাসম্ভব মিল রাখব। এবং আমি এর সাথে আমার মন্তব্যও যোগ করে দিব।
যদি পরবর্তীতে অন্যান্য রিসোর্স ব্যবহার করি, তা উল্লেখ করব।
আরাগনের বেলমন্তে তে বালতাছার গ্রাছিয়ান জন্ম নেন, এবং আমি এখন যেখান থেকে লিখছি, সেই জায়গার নাম বেলমন্ট। এই মিলরে এক ঐশ্বরিক সিগন্যাল হিশাবে পড়লাম।
১। সকল কিছু পূর্ণরূপে আছে;
কিন্তু এখন দুনিয়ায় নিজেরে গ্রেট বানাইতে চাইলে, অনেক বেশি কিছু লাগে। আগেকার দিনে সাতজন সাধু হইতে যা করা লাগতো, এখন একজন ব্যক্তির ওয়াইজ হইতে তার চাইতে বেশি কাজ করতে হয়, বেশি দিকে নজর দিতে হয়। এখন একজন লোকরে সামলাইতে যা করতে হয়, আগেকার দিনে এক দঙ্গল লোকরে সামলাইতেও এতো করতে হইত না।
--—
বালতাছার গ্রাছিয়ানের সময় এখন আমাদের জন্য অতীত। আমরা শত শত বছর পরে আসছি। এই সময়ে দুনিয়ার জ্ঞান বিজ্ঞান আরো আগাইছে, কত প্রযুক্তি আসছে। দুনিয়া আরো জটিল হইছে, নানামুখী সমস্যা বাড়ছে। গ্রাছিয়ান তার সময়ে বলছিলেন, এখন একজন জ্ঞানী হইতে আগেকার সাত সেইজের চেয়ে বেশি কাজ করার দরকার হয়, কাজ করা বলতে মনোযোগ, সময় দেয়া, জ্ঞান চর্চা ইত্যাদি ধরেন । সাত সেইজ বলতে প্রাচীন গ্রীসের সাত মহাজ্ঞানীর উদাহরণে গেছেন উনি। তার সময়েই ওয়াইজ হইতে সাতজন প্রাচীন সেইজের সমান কাজ করতে হইলে, এখন সেই হিশাবে ২১ জন সেইজের সমান হবার কথা।
আর সাত সেইজ বলতে সাত দিকের জ্ঞান ধরলে, গ্রাছিয়ানের সময়েই আরো বেশি দিকের জ্ঞানের দরকার পড়তো একজন লোকের ওয়াইজ হইয়া উঠতে, এখনকার সময়ে কম হইলে একুশ দিক লাগবেই।