আগে দেশে দূর্ভিক্ষ হইত এখন হয় না, আগে গরীব মানুষ ডাল ভাত পাইতেন না, এখন মাংস পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা করছেন, এই লজিক দিয়া দেশের উন্নতি হইছে বুঝানোর চেষ্টা ভুল।
দেখতে হবে এই সময়ের পরিসরে গ্লোবাল উন্নতি কেমন হইছে, এবং তার সাপেক্ষে আমাদের কী হইছে ও কী হইতে পারতো।
তুলনা কার বা কীসের সাথে দেয়া হইতেছে তা গুরুত্বপূর্ন। তুলনা ফ্রেম বদলে দেয়।
ছবিতে আমি বড় ফ্রেইম দেখাইলাম। ১৯৫০ এর পর সারা দুনিয়াই উন্নত হইছে।
এখন বাংলাদেশরে এড করে দেখি, সাব সাহারান আফ্রিকার থেকে ৫০০ ডলারের মত বেশী। প্রশ্ন হলো, কেন সাউথ ইস্ট এশিয়ার মত হইতে পারলো না?
বা আরেকটা তুলনামূলক চিত্র,
লাস্ট দুই মিলেনিয়ার টাইম ফ্রেমে দেখলে আরো ক্লিয়ার দেখবেন গ্লোবাল উন্নতির গ্রাফ।
এইসময়ে যোগাযোগ, টেকনোলজিক্যাল ডেভলাপমেন্ট, কৃষি, ব্যবসা বাণিজ্য সব ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন হইছে, যা গ্লোবাল উন্নতি ত্বরান্বিত করছে।
এখন বাংলাদেশের এক দিনমজুর স্মার্টফোনে যখন ইচ্ছা বলিউডের নাচ দেখতে পারেন, যেইটা বাদশা আকবরের সময় ধনীরাও পারতেন না। বাদশা আকবর হয়ত পারতেন নাচাইতে, কিন্তু এতো ভালো সাউন্ড সিস্টেম, গ্রাফিক্যাল প্রেজেন্টেশন ছিলো না। বা স্মার্টফোনে কল দেয়া, ভিডিও কল দেয়া ইত্যাদি পরাক্রমশালী আকবরও পারেন নাই।
কিন্তু এই তুলনায় দেশের উন্নতির বিচার করতে গেলে ভালো তুলনা হয় না।
-
জিডিপি যে উন্নতি মাপার ভালো ইনডিকেটর, তা না। কারণ ডেটা ম্যানিপুলেট করা হচ্ছে না, তার নিশ্চয়তা কী। এইখানে গ্লোবাল উন্নতিটা সহজে বুঝাইতে এই গ্রাফগুলার আনয়ন, গ্রাফগুলার উৎস, আওয়ারওয়ার্ল্ড ইন ডেটা। জিডিপি পার ক্যাপিটা।
-
মাথাপিছু আয়কে সুখ পরিমাপের একটা ফ্যাক্টর ধরা হয়। কিন্তু মানুষের ব্যক্তিজীবনে জীবনে দুর্দশা বাড়লে মাথাপিছু আয় বাড়তে পারে আবার ব্যক্তিগত সুখ বাড়লে মাথাপিছু আয় কমতে পারে।
এক দেশে তিনজন পুরুষ আর তিনজন মহিলা আছে। পুরুষের আয় ১০০ টাকা করে। নারীরা ঐ পুরুষদিগের চাকরানি, তার বেতন জনপ্রতি ২০ টাকা।
ঐ দেশের মোট আয় বা জাতীয় উৎপাদ - ৩৬০ টাকা
সুতরাং, ঐ দেশের মাথাপিছু আয় ৬০ টাকা।
ভদ্রলোকেরা ঐ মহিলাদের বিয়ে করলেন, তাহলে ভদ্রমহিলাদের আর বেতন দেয়া লাগে না। যদিও ভদ্রমহিলারা আরো বেশী স্বামীর সেবা করলেন, আরো বেশী স্বামীর টাকা ব্যবহার করলেন।
তখন ঐদেশের মাথাপিছু আয় হলো ৫০ টাকা। মাথাপিছু আয় কমলো, কিন্তু তাদের সুখ বেড়েছে।
একসময় হঠাৎ একদিন পাহাড় থেকে পড়ে গিয়ে দু'জন ভদ্রমহিলা হারিয়ে গেলেন। তাদের স্বামীদের জীবনে দুঃখ নেমে এল। বন্ধুদের দুঃখে অন্য পুরুষটিও দুঃখ পেল। এবং তার বউকে সব সময় সাথে সাথে এবং চোখে চোখে রাখতে লাগল। তার দুঃখ দুশ্চিন্তা বাড়ল। পুরা দেশ দুঃখী হল।
কিন্তু জনসংখ্যা কমে যাওয়ায় (এবং পুরুষদের আয় অপরিবর্তীত রয়েছে) তাদের মাথাপিছু আয় তখন হবে ৭৫ টাকা। মাথাপিছু আয় বেড়েছে, কিন্তু সুখ কমেছে।
যে পাহাড় থেকে পড়ে গিয়ে মহিলাদ্বয় হারিয়ে গিয়েছিলেন খবর রটে গেল সে পাহাড়ে এক প্রেতাত্মা আছে। বউ হারানো দুই স্বামী পাশের রাজ্য থেকে এক ওঝা নিয়ে এল। ওঝা মন্ত্র দিয়ে পাহাড় হতে তাদের বউ উদ্ধার করে দেবেন, এই তাদের মনোস্কামনা। তাদের রাজ্যের প্রাচীন গ্রন্থে বার বার নিষেধ করা ছিল, বাইরের রাজ্য থেকে কখনো ওঝা আনবে না। কিন্তু বউয়ের শোকে কাতর দুই পুরুষ তা মানল না, তাদের বুদ্ধিনাশ হয়েছিল।
ওঝা এল। পাহাড় দেখল। সে কামরুপ কামাখ্যা থেকে ডিগ্রী নেয়া ওঝা। ঝটিকা কিছু মন্ত্র পড়ে নিজেই বনে গেল রাজ্যের রাজা। যে ভদ্রমহিলা বেঁচে ছিলেন সে তাকে বানাল রানী। আর তিন পুরুষকে দিয়ে করাতে লাগল গাধার খাটুনি। যে পন্য উৎপন্ন হত তা বিদেশে রপ্তানী হত। ফলে দেশের আয় বেড়ে গেল পঞ্চাশ শতাংশ। মোট আয়ের ৯০ ভাগ নিয়ে নিত রাজারূপী ওঝা। আর বাকী দশভাগ পেত তিন পুরুষ। তাদের দুঃখের সীমা নাই। কিন্তু দেশের মাথাপিছু আয় বেড়ে গেছে!
সুখী দেশ বা সুখ পরিমাপের পরিসংখ্যানীয় পদ্বতির এক সীমাবদ্ধতা হলো এই মাথাপিছু আয়ের হিসাবকে ফ্যাক্টর হিসেবে নেয়া। উপরের গল্পটি মাথাপিছু আয় ও সুখের ফাঁক ব্যাখ্যার জন্য। এইরকম একটি গল্প দিয়ে ব্যাপারটা বুঝিয়েছেন আকবর আলি খান তার আজব ও জবর আজব অর্থনীতি বইতে। আমি সেখানকার গল্পটির উপর ভিত্তি করে উপরে ব্যাখ্যামূলক গল্পখানা প্রনয়ন করিলাম।