খেলাধুলা ও বিনোদন ইন্ডাস্ট্রির নেগেটিভ দিক আছে যেমন, পজেটিভ দিকও আছে।
খেলাধুলা পরোক্ষ ভাবে ডিপ্রেশন কমাইতে সাহায্য করে। মানুষ একটা কিছু নিয়া থাকার সুযোগ পায়।
কেন এইগুলা নিয়া আছে, এমন প্রশ্ন আপনে করবেন।
আপনারেই যদি প্রশ্ন করা হয় যে, তারে সামগ্রিক ভাবে কী কী নিয়া থাকার সুযোগ আপনি দিছেন?
উত্তরে বেশী কিছু বলতে পারবেন না।
বাংলাদেশে বেশিরভাগ ইয়াং-ই কাজ করতে চায়। কিন্তু তার জন্য কাজ নাই।
যুক্তিতে কইবেন তার স্কিল নাই।
এখন শুরু থেকেই কে আর মহাস্কিল অর্জন করে শুরু করে? তারে স্কিলফুল করার জায়গায় নিতে হবে না?
স্বীকার করতেছি এইখানে তাদের দোষ আছে। তারা নিজে নিজে কেন শিখতেছে না অনলাইনে।
কিন্তু মাথায় রাখেন, অনলাইনের এই বাস্তবতা এখনো নতুন।
এই নতুন পদ্বতিতে, নিজ থেকে শেখার স্কিল রাতারাতি সবাই শিখে ফেলবে, এমন না।
আর স্কিল শিখা, আপনে নিজে যদি স্কিলফুল হইয়া থাকেন ও সৎ থাকেন, তাহলে স্বীকার করবেন, স্কিল শেখা কেবল ভিডিও দেখা ও কোর্স করায় হয় না। তারে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। কাজ করতে করতেই লোকে শিখে।
নিজ থেকে প্রজেক্ট ধরে ধরে অনেকে শিখেন। তাদের উৎসাহরে স্যালুট, কিন্তু মাথায় রাখেন, বেশিরভাগেরই এই উৎসাহ নাই, তারা এটা এখনো পারে না।
মানুষের ন্যাচারই হইল সে অলস, ভালো জিনিশ তারে নিজ ইচ্ছা ও পরিশ্রমে সময়ের সাথে আয়ত্ত্ব করতে হয়, এবং খারাপগুলা আয়ত্ত্ব হয়ে যায় "কীভাবে কেমন করিয়া যেন" এবং দ্রুত।
আর, দেশের ইয়াং জেনারেশনরে নিজে নিজে সব শিখতে হবে, তাদের উপরেই দিয়া দিলেন সব দোষ এবং দায়িত্ব, তাহলে একটা দেশ যে খাঁড়া করে রাখছেন মানুষের ট্যাক্স ভ্যাট দিয়া, এই খাম্বার কাজটা কী? দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার কাজটা কী?
বিদেশে গিয়া, ভালো কোম্পানিতে কাজ পাইয়া অনেকে ইয়াং জেনারেশনরে দোষ দিয়া মোটিভেশন ঝাড়েন। তাদের আমি একটু সৎ হইতে বলি, ও বলি একটু বের হইয়া আমেরিকায় নর্মাল মানুষদের দেখেন। তারা সবাই তো অফিস আদালতে বইসা, ভালো জামা কাপড় পইরা জব করেন না। অনেক অনেক লোক কাজ করেন শ্রম নির্ভর জবে, ফ্যাক্টরিতে, রাস্তায়, কৃষিতে। বাঙ্গালী কম্যুনিটিতে এনারাই তো বেশী। বা, এতো এতো গাড়ি যে দেখেন, এতো কনজিউম করার মত পণ্য, এতো পিজ্জা, এইগুলা যে মানুষেরা এসেম্বলি লাইনে দাঁড়াইয়া দাঁড়াইয়া তৈরি করেন, প্যাক করেন, এইসবের একটু খোঁজ নেন।
ওইসব কাজ করতে কোন স্কিল লাগে না। কিন্তু মিনিমাম ওয়েজ বা তার সামান্য উপরে হইলেও সাধারণ ভালো ভাবেই একজন লোক তার পরিবার লইয়া চলতে পারবে এই কাজ করে। বাঙালীরা চলেন নাই? এবং এইসব শ্রমিকেরাই কি স্বাদের একনোমিতে বড় প্রভাব রাখতেছেন না?
আপনার দেশে এইরকম কাজের সুযোগ কোথায়? যারা স্কিলফুল না ও স্কিল অর্জন করতে পারবে না এরা কি না খাইয়া মরবে তাহলে?
দেশ স্বাধীনের হাফ সেঞ্চুরী পরেও ইন্ডাস্ট্রি বলতে শস্তা শ্রম নির্ভর রেডিমেইড গার্মেন্ট, যেন একনোমির এক ডাচ ডিজিজের মত হইয়া রইছে, সংযুক্ত আর কোন শিল্প হয় নাই।
কেন পরিকল্পনা করে দেশ চালকেরা কাজের ক্ষেত্র বানাইলেন না, ও ইয়াংদের কাজের লাগার মত স্কিলে দক্ষ করলেন না? এই প্রশ্ন কি আসে না সামগ্রিক ইয়াংদের তাদের কেন স্কিল নাই, ড্রাইভ নাই, কেন তারা খেলাধুলা নিয়া থাকে আর অন্যরা মেডেল পায়, এইরকম যুক্তিতে উৎসাহ' দিতে যাবার কালে?
আপনাদের মত অল্প কয়েকজন প্রতিভাবান বের হইছেন, দেশ বিদেশে মেডেল পাইতেছেন, ইত্যাদি, তা আপনারা এমনিতেই হইতেন ঐরকম। আপনাদের জেনেটিক প্রতিভা, পরিশ্রমের ড্রাইভ আছে। এই এক্সেপশন উদযাপন করে আসলে সামগ্রিক ইয়াংদের লাভটা কী? তাদের লাইফের তো এতে কোন উন্নতি আমি দেখি না।
আর আপনারা যেহেতু আছেন বিদেশে, ওইখানে বড় কোম্পানিতে কাজ করেন, আমেরিকান কলিগদের তো দেখেন, এরা কি সবাই এক্সেপশনাল প্রতিভাবান ও অসাধারণ স্কিলফুল? মানে, বাংলাদেশের ইয়াংরা এইরকম হইতেই পারবে না, এমন তাদের পরিশ্রমের ড্রাইভ, বুদ্ধি ও ট্যালেন্ট? আমি যা দেখলাম, এমন কিছু মনে হয় নাই।
এখন, আসেন ভাবি, বাংলাদেশের কাদের ইউরোপ আমেরিকায় শিক্ষা বা কাজ নিয়া নিরাপদে যাবার সুযোগ আছে, এই বিষয়ে।
যাদের অনেক অনেক টাকা আছে। যারা খুবই প্রতিভাবান ছাত্রছাত্রী।
কিন্তু এনারা তো খুবই কম একটা পার্সেন্টেজ মোট ছাত্রছাত্রীদের সাপেক্ষে।
মানলাম তারা বিভিন্ন নামকরা ইউনিভার্সিটিতে গেলেন, হাতি ঘোড়া মেরে ফেসবুকে ছবি দিলেন, ও গুগল ফেসবুক ইত্যাদি কোম্পানিতে গিয়া বড় বেতনে চাকরী করলেন, আমেরিকায় নিজের ও তার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের লাইফ সুন্দর করলেন।
যে কারো ব্যক্তিগত সাফল্য তার ভাগ্য ও পরিশ্রমের ফল, এইজন্য তারে অভিনন্দন, ও বুয়েনা সুয়ের্তে অর্থাৎ গুড লাক।
কিন্তু এই সুযোগ ও প্রতিভা কি সবার আছে? সবার থাকবে? আমেরিকাতেই যাদের জন্ম তারা কি সবাই গুগল ফেসবুকে জব করে?
যাদের এই সুযোগ ও প্রতিভা নাই, তাদের আমি যদি এখন এই গুগল ফেসবুক ও আমেরিকা দেখাইয়া তুলনা করে মোটিভেশন দিতে যাই, এটা মোটিভেশন হয় কোন যুক্তিতে, এটা আমার বুঝার বাইরে।
বেটার, আপনে কী করতে পারেন আমি বলি।
মানুষের সফলতা কেবলই তার পরিশ্রমের ফল না। মানুষের ব্যর্থতা কেবলই তার অলসতা ও নিজের দোষে না।
তারে ছোট না কইরা তার সারকামস্টেন্সেস বিবেচনায় নেন।
আপনি একটা ভালো জায়গায় থাকার ফলে যে সুবিধাগুলা পাইতেছেন, যে নলেজ ও গুপ্ত বিদ্যার কাছাকাছি আসতেছেন, সেইগুলা সম্ভব হলে বিলাইয়া দিতে পারেন।
এইটাই আপনার করা বড় উপকার হবে।
আপনার যাত্রা হওয়া উচিত মহান টাইটান প্রমিথিউসের পথে।