ম্যাডোনা হোর ডাইকোটমি নিয়া আপনে শুনে থাকবেন। এর মূল কথা পুরুষদের মধ্যে বা সমাজে এই ধারণা প্রচলিত আছে নারীরা দুইভাবে বিভক্ত। এক, ম্যাডোনা, যারা বিয়া করার মত, এদের সাথে সন্তান উৎপাদন ও লালন পালন করা যায়, এবং এরা চরিত্রের দিক থেকে অতি উন্নত, চিটিং করে না, এরা এক পুরুষে আটকে থাকে ইত্যাদি।
আর দ্বিতীয় ধরনের নারী, যারা হোর তথা মাগী টাইপ, এদের সাথে সেক্স করা যায়, কিন্তু এদের বিয়া করার প্রশ্নই আসে না।
এভলুশনারি দিক থেকে এই ধারণার লাভের গুড় পুরুষের পক্ষেই যায়। কারণ এটা যদি প্রতিষ্ঠিত হয়, বা ঠিক হয় তাহলে তারা ম্যাডোনাদের বিয়া করবে। এরা সতী লক্ষ্মী ভালো ইত্যাদি। আর মাগী টাইপের নারীদের সাথে সেক্স করবে, এবং নিজেদের জিন ছড়ানোর চেষ্টা করবে।
এটা দুই লিঙ্গের মধ্যেকার সেক্সুয়াল আর্মস রেইসে পুরুষদের একটা টুল। এইটা বিশ্লেষণ করেই আমরা এই লেখায় নারী পুরুষ রোমান্টিক সম্পর্ক, সেক্সুয়াল আর্মস রেইস, ক্ষমতার ডায়নামিকসের দুই একটা জিনিশ বুঝতে যাব।
ম্যাডোনা অথবা মাগী, নারীদের দুই ভাগে ভাগ করার এই প্রবণতা পৃথিবীর প্রায় সব খানেই পুরুষদের মধ্যে কমবেশি বিদ্যমান। খালি কনজারভেটিভদের মধ্যে না, কনজারভেটিভরা সরাসরি বলে। লিবারেলদের মধ্যেও ভেতরে ভেতরে এই দুই ভাগে ভাগ করে দেখার প্রবণতা কাজ করে।
মানুষের মেটিং এর সিস্টেম এখন সমাজের দিকে তাকিয়ে দেখলে দেখা যায়, এটি মনোগ্যামাস। বিয়া করেন তারা ও একসাথে থাকেন। ছাড়াছাড়ি হইলে, আরেকটা বিয়া করেন। অর্থাৎ মনোগ্যামাসই থাকেন। ইতিহাসে দেখলে দেখা যায়, ক্ষমতাবান পুরুষেরা অনেক নারীর সাথে সেক্স করতেন। ধারণা করা হয়, প্রাথমিক ইতিহাসে মানুষের মধ্যে পলিগ্যামি বেশী ছিল, কিন্তু এখনকার যেসব সহজ আধুনিক সমাজ আছে, এইগুলাতে আর ঐ আগের মত পলিগ্যামি নাই, আবার এই সমাজগুলা আধুনিক শহুরে সমাজের মত স্ট্রিক্ট মনোগ্যামাসও না। আবার পরিসংখ্যান ইত্যাদি যদি দেখেন, কেমন চিটিং হইতেছে বিয়ার মধ্যে, তা বিচার করলে বলতে হবে, আধুনিক কালে মানুষের মেটিং এর সম্পর্ক ভেতরে অনেক বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক বজায় রাইখা মনোগ্যামাস।
আরেকটা দিক থেকে মানুষের মেটিং সম্পর্ক বুঝার চেষ্টা করা যায়, নিকঠাত্মীয় এপদের সাথে তুলনা করে। যেমন শিম্পাঞ্জি খুবই পলিগ্যামাস, আবার গরিলা মনোগ্যামাস। থার্ড এপ মানুষ এর মাঝামাঝি।
যদি আমরা এই তিন প্রাণীর টেস্টিকল তথা বিচির সাইজ দেখি, শিম্পাঞ্জির বিচি অনেক বড়, প্রায় ১৫০ থেকে ১৭০ গ্রাম। মানুষের প্রায় ৫০ গ্রাম। আর গরিলার প্রায় ৩৫ গ্রাম।
মানুষের পুরুষেরা মনোগ্যামি ও পলিগ্যামির মাঝামাঝি এক অবস্থা চায়। এবং এইজন্য তাদের কাছে ম্যাডোনা অথবা মাগী বিভাজনটা কাজের। সবাইরে ম্যাডোনা ভাবলে তাদের পুরা মনোগ্যামাস হইতে হবে, আবার সবাইরে মাগী ভাবলে পুরা পলিগ্যামাস মেটিং সিস্টেমে যাইতে হবে। তখন সংসার বাচ্চা কেমনে হবে?
হয় পুত পবিত্র ম্যাডোনা অথবা মাগী, সমগ্র নারীদের এই ভাবে ভাগ করে দেখা, যদিও পুরুষদের একটা হিপোক্রেটিক এবং সেক্সুয়াল গেইনের টুল, তথাপি এর মারাত্মক খারাপ প্রভাব তার উপরও পড়ে। যেমন তার সঙ্গীরে একেবারে ম্যাডোনা হিশেবে দেখতে গিয়া সে সেক্সুয়াল আকর্ষন হারাইয়া ফেলে প্রায়ই। তার ইনার সেক্সুয়াল আকর্ষন জমা হয় তার ধারণায় থাকা সেই"সো কলড" মাগীদের জন্য।
নিজের বউরে ম্যাডোনা হিশাবে দেখার ফলে সে তার ধারণায় যারা মাগী, এদের সাথে কোনরূপ ইনভেস্টমেন্ট ছাড়া সেক্স করতে যায়, নানারূপ সেক্সুয়াল এডভেঞ্চার করতে যায়। যেইটা তার রিলেশনশিপে চিটিং, তথা এডাল্টারি।
এইটাই কাকোল্ড সাইকোলজির মূলে থাকে, যেখানে সে তার বউরে যখন দেখতেছে, তখন ম্যাডোনা হিশাবে দেখতেছে অতএব আকর্ষন পায় না। তাই তার সেক্সুয়াল ডেজায়ার গিয়া জমা হয় ওইখানে, যেখানে তার বউরে কেউ মাগী হিশাবে দেখতেছে, এবং ওই ব্যক্তির সাথে তার বউ সেক্স করতেছে। এটা দেইখা, ওই ব্যক্তির তার বউয়ের প্রতি সেক্সুয়াল ডেজায়ার দেইখা তার কামনা চরিতার্থ হয়, সে সেক্সুয়াল আনন্দ পায়।
সেক্সুয়ালি হয়ত সে তার বউয়ের সাথে নানাভাবে সক্রিয় হইতে পারতো, যদি তারে সে স্বাভাবিক মানুষ হিশাবে দেখতে পারতো, যার মধ্যে সেক্সুয়াল কামনাও আছে, আবার মায়া মমতাও আছে। যেমন তার নিজের মধ্যেও আছে।
আবার, এই ম্যাডোনা ও মাগী বিভাজনের ধারণা যখন তার মাথায় থাকে, তখন তার জন্য একটা ভালো প্রেম সম্পর্ক করা কঠিন হয়। ভালো রিলেশনশিপ দরকারি, ইভেন যেসব আগেকার রাজাদের বিশাল হারেম ছিল, তাদেরও প্রেমের সম্পর্ক থাকতো একজনের সাথে।
কেন এই বিভাজন মাথায় থাকলে ভালো সম্পর্ক সে করতে পারে না?
কারণ সে একটা অযৌক্তিক মডেল দিয়া নারীদের বিচার করতে যায়। বাস্তবে সকল নারীদের মধ্যেই সেক্সুয়াল কামনা থাকে, আবার মায়া মমতা ইত্যাদিও থাকে। এখন অবস্থাভেদে, ব্যক্তিভেদে এগুলার তারতম্য হয়। যেমন পুরুষদের মধ্যে দায়িত্ব পালনের টেন্ডেন্সি থাকে, এগ্রেসনের টেন্ডেন্সি থাকে, সেক্সুয়াল কামনা ইত্যাদি থাকে, এবং ব্যক্তি ও অবস্থা ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়। তাই এরকম ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট দুইটা ভাগে দেখার কোন জায়গাই থাকে না।
এখন যে পোলা ভাবতেছে ম্যাডোনা মাগী মাথায় নিয়া, সে ভাববে মাইয়াটা ভালো মাইয়া হলে সহজে রেসপন্স করবে না, তারে চেইজ করতে বাধ্য করবে, সময় নিবে, তারে দিয়া ইমোশনাল ইনভেস্ট করাবে, ইত্যাদি।
এখন মেয়েটা এটা বুঝতে পারলে, তারে চেইজ করাবে, তারে ইনভেস্ট করাবে, ইমোশনালি কন্ট্রোল করবে। কারণ এগুলা না করলে তুমি পোলা তারে মনে করবা "ওয়াইফ ম্যাটেরিয়াল" না। অর্থাৎ, তোমার এক্সপেকটেশনেই তুমি বিপদ ডেকে আনবা, এবং মেয়েদের এসব বুঝার ক্ষমতা বেশী থাকে। তারা বুইঝা সে অনুযায়ী আচরণ করবে।
যে সম্পর্ক একটা সহজ স্বাভাবিক সম্পর্ক হইতে পারতো তা খারাপ ভাবে নির্মিত হয় একটা ভুল ধারণা মাথায় থাকার কারণে।
এবং এইখানে মেয়েদের প্রতি একটা পরামর্শও দেয়া যায়, সমাজে ম্যাডোনা মাগী ধারণাটা খুবই বিস্তৃত, শিক্ষিত লিবারেলদের মধ্যেও, তাই, খেয়াল রাখবেন, আপনারে অন্য পক্ষ কীভাবে জাজ করতেছে। অবশ্যই এটা ওই রিলেশনশীপে আপনার লক্ষ্যের উপর নির্ভর করে। এখন আপনে তারে ভালবাসেন, তার সাথে ফ্যামিলি করতে চান, ভালো মনে দ্রুতই তার সাথে ইজি হয়ে গেলেন। এতে সে মনে করি যদি আপনে ম্যাডোনা না, তাহলে সে আপনারে ওয়াইফ ম্যাটেরিয়াল হিশাবে দেখবে না, খাইয়া ছাইড়া দেয়া টাইপ দেখবে। ব্যক্তি হিশাবে আপনে তো ম্যাডোনা না, মাগীও না, স্বাভাবিক মানুষ, সে এটা বুঝবে না। আপনারে একসময় ছাইড়া যাবে, ও আপনার খারাপ লাগবে।
আবার আমাদের সমাজে ম্যাডোনা মাগী ধারণাটা এত প্রবল যে, অনেক পোলা প্রেম করে আবার মনে করে যেসব মেয়ে প্রেম করে তাদের চরিত্র খারাপ হয়। ফলে, বিয়ার সময় খুঁজে পরহেজগার মেয়ে। পরহেজগার হিশাবে উপস্থিত হওয়া কোন মেয়েরে বিয়াও করে। কিন্তু নিজের আগের প্রেম ভুলতে পারে না। এবং এই নতুন মেয়ের সাথে সম্পর্ক নির্মান করতেও তার কষ্ট হয়। একসময় বিবাহ বহির্ভুত সম্পর্কের দিকে যায়।
আবার কোন স্থায়ী সম্পর্কে নারী তার পুরুষকে কন্ট্রোল করতে তার ওষুধ তারেই দেয়, যেমন নিজেরে দেখায় ম্যাডোনা হিশাবে এবং অন্য সব মেয়েরা চরিত্রহীন। এখন তুমি আমার মত চরিত্রবান মেয়েরে পাইছো, তুমি লাকি, এখন এর যোগ্য হও, আমার জন্য কাজ করো, আমার কথামতো চলো, আমারে খুশি রাখো।
অর্থাৎ, ম্যাডোনা হোর বিভাজন দিয়া নারীদের দেখা পুরুষদের জন্য দিন শেষে খারাপই হয়। নারীদের জন্য সামগ্রিক ভাবে অবশ্যই অন্যায়, অবমাননাকর, এবং বিপদজনক। এই ধারণার উপর ভর করেই অনেক নারীদের উপর অন্যায় করা হয়। একসময় ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছিল এক ইস্যু, এক মেয়ে রাতে অপমানের শিকার হইছিলেন, তখন অনেকে বলতে থাকে ভালো মেয়েরা গভীর রাতে রাস্তায় বের হয় না।
—
আগের লেখাঃ নারীরে আটকাইতে চান?