বাংলাদেশে ইলেকশন হবে আগামী জানুয়ারীতে। সেই প্রেক্ষিতে এখন রাজনীতির মাঠ গরম, নানা ঘটনা ঘটবে, আলোচনা হবে। রাজনীতি আমাদের জীবনের সাথে সংশ্লিষ্ট একটি বিষয়। তাই, এখন থেকে রাজনৈতিক ব্রিফ প্রকাশ করব বাংলাদেশের আসন্ন ইলেকশন বিষয়ে।
জাতিসঙ্ঘ শান্তি রক্ষা ইন্সটিটিউট বাংলাদেশের ইলেকশন নিয়ে এনালাইসিস ও কমেন্টারি প্রকাশ করেছে জুন ১৫, ২০২৩ সালে। লিখেছেন জিওফ্রি ম্যাকডোনাল্ড, পিএইচডি।
সেখানের মূল পয়েন্টগুলিঃ
বাংলাদেশে লেজিটিমেট নির্বাচন হয়েছিল পনের বছর আগে। আগামী ইলেকশনের বাকি ছয়মাস। এই ইলেকশনে তিনটা মূল ইস্যুর দিকে দেখতে হবে।
১। কীভাবে নির্বাচন হবে
আওয়ামীলীগ বলে নির্বাচন কমিশনের আন্ডারেই নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব। কিন্তু বিরোধী দল বিএনপি চায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্ডারে নির্বাচন।
১৯৯১, ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালে তিন বার তত্ত্বাবধায়ক সরকার সিস্টেমে নির্বাচন হয়েছিল।
১৯৯৬ সালে সরকারে থাকা বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্ডারে নির্বাচন দিতে চায় নি। তখন বিরোধী দলগুলা নির্বাচনে যেতে অস্বীকৃতি জানায় ও আন্দোলন করে। এতে বিএনপি বাধ্য হয় নতুনভাবে নিয়ম করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে।
২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নিয়মে ক্ষমতাসীন বিএনপি ম্যানিপুলেশন করছে বিরোধী দলের এমন অভিযোগ রাজনৈতিক অচলাবস্থা তৈরি করে। তখন ঘটনার ধারাবাহিকতায় সামরিক সরকার আসে, ও দুই বছর ক্ষমতায় থাকে।
সামরিক সরকার যাবার পর বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসে, ও ২০১১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার না দিয়ে আওয়ামীলীগ এক, নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে ইলেকশন দিতে চায়, দুই, এক জাতীয় সরকার/ বিরোধী দলের সাথে মিলে এক নির্বাচন কালীন সরকার তৈরি করতে চায় বলে গুজব চালু আছে।
২। বিএনপির অবস্থা
বিএনপি প্রধান বিরোধী দল। পলিটিক্যাল জন সমর্থন কেমন তা বিচার করার জন্য বিধিবদ্ধ ভালো জনমত জরিপের ব্যবস্থা বাংলাদেশে নেই। মিছিল মিটিং র্যালিতে লোক কেমন হয় এর দ্বারা আন্দাজ করতে হয়।
বিএনপির ভেতরে আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব আছে নেতৃত্ব নিয়ে। এক অংশ তাদের লন্ডনে থাকা নেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে।
যদিও বিএনপি নিজেদের ভেতরের দ্বন্দ্বকে গুজব বলে।
কিন্তু দেখা গেছে নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া, ইত্যাদি গুরুতর ইস্যুতেও তাদের সকল নেতাকর্মী একমত হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন নি।
৩। আমেরিকার প্রেশারের ভূমিকা
আমেরিকা তার নীতি ভিত্তিক পলিসির অংশ হিশাব গণতন্ত্র প্রসারের জন্য বাংলাদেশকে বেছে নিয়েছে। ২০২১ সালে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে দেশের এলিট ফোর্স র্যাবকে স্যাংশন দেয়া হয়।
২০২১ এবং ২০২৩ সালে বিশ্ব গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায় নি বাইডেন প্রশাসন।
মে ২০২৩ সালে আমেরিকান সরকার ঘোষণা দেয়, যারা বাংলাদেশের ইলেকশন সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হতে বাঁধা দিবে, তাদের আমেরিকান ভিসা দেয়া হবে না।
আমেরিকার সেক্রেটারি অব স্টেট এন্থনি ব্লিনকেন, বাংলাদেশে আমেরিকার এম্বাসেডর পিটার হাস, স্টেট ডিপার্টমেন্ট কাউন্সিলর ডেরেক চলেট কয়েকবারই প্রকাশ্যে বলেছেন, বাংলাদেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন তারা চান।
একই পথে হাঁটছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, ইংল্যান্ড ও জাপান। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন নির্বাচনকালীন এক কমিশন গঠন করার কথা ভাবছে ইলেকশন বিচার করতে।
আমেরিকার এসব পদঃক্ষেপ ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সরকার ভালোভাবে নেয় নি। মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছে, বাইডেন সরকারের বিরুদ্ধেও প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। এর পেছনে সমর্থন রয়েছে ভারতের। আবার, বাংলাদেশ সরকার চীনের ঘনিষ্ট হচ্ছে।
সামনের দিনগুলিতে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আমেরিকার পক্ষ থেকে আরো ফোর্স প্রয়োগ দেখা যেতে পারে।
আমেরিকা বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ন অঞ্চল হিশেবেই দেখছে।
২০২০ সালে ডেপুটি সেক্রেটারি অব স্টেট স্টিফেন বাইগুণ বলেছিলেন বাংলাদেশ ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চলে আমাদের কী পার্টনার। এও বলেছিলেন, এই অঞ্চলে কাজ করার ক্ষেত্রে আমাদের "মূল কেন্দ্র"।
ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চলে বাংলাদেশ এখন গুরুত্বপূর্ণ। তাদের ইলেকশনের দিকে চোখ থাকবে আমেরিকা, চীন ও ভারতের। এই অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ জিও পলিটিক্যাল শক্তি হিশাবে আবির্ভূত হতে হলে দেশটির উচিত তাদের রাজনৈতিক সংস্কার করা, এবং অবাদ ও নিরপেক্ষ ইলেকশন, ও সংজ্ঞাতহীন রাজনীতির দিকে যাওয়া।
লেখার লিংকঃ Three Things to Watch as Bangladesh’s National Election Season Heats Up
নিক্কেই এশিয়াতে জুলাই ১০, ২০২৩ তারিখের খবরে প্রকাশ, আমেরিকা থেকে হাই লেভেল ডেলিগেশন টিম আসছে বাংলাদেশে। তত্ত্বাবধায়ক না নির্বাচন কমিশনে ইলেকশন ইস্যুতে দুই দলের মধ্যে রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসন কল্পেই তাদের এই যাত্রা।
দ্য হিন্দু, জুলাই ১০, ২০২৩ তারিখে প্রকাশ, আমেরিকান হাই লেভেল ডিপ্লোম্যাটদের আসার আগে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আরেক টিম আসবে। তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ইত্যাদিদের সাথে আলাপ আলোচনা কড়ে বুঝবে। তারা রিপোর্ট দেবেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নকে। বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানী পণ্য তৈরি পোশাক, তার বড় বাজার ইউরোপ।
------
আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় থাকতে হলে, বিএনপির একাংশকে তাদের পক্ষে নিয়ে যাবার চেষ্টা করতে পারে। যেহেতু শোনা যায় তাদের ভেতরে দ্বন্দ্ব আছে। জাতীয় সরকারে তাদের এক পক্ষ একমত হয়ে গেলে সরকারের যুক্তি শক্ত হয়।
বিএনপির প্রতিবাদ সমাবেশকে সহিংস করে তোলা গেলে সরকারের পক্ষে ভালো হয় বিদেশীদের সাথে নেগোসিয়েশনে। এখানেও বিএনপির নেতা কর্মীদের হাত করা গেলে কাজ হবে।
তিন নাম্বার, এবং সবচাইতে উইয়ার্ড কেইস, তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ইলেকশন দিয়েও জিতে আসতে পারে আওয়ামীলীগ সরকার।
যদি বিএনপি তাদের জিত ধরেই নেয়, এবং ঠিকমত সক্রিয় থাকতে না পারে। দীর্ঘদিন তারা রাজনীতির বাইরে।
যেকোন অবস্থাতেই আওয়ামীলীগ এবং বিএনপি এই দুই দলের কিছু বাধ্য সমর্থক থাকবে। এছাড়া, এত বছরের শাসনামলে প্রচুর মানুষের রুটি রুজি, নিরাপত্তা লীগ সরকারের সাথে জড়িত হয়ে গেছে। তারা ডু ওর ডাই হিশাবে দেখতে পারে।
ফেয়ার ইলেকশন, যখন নিরপেক্ষ থার্ড পার্টি বিদেশীরা পর্যবেক্ষণ করবে, এর অর্থ এই না যে তারা বিএনপির সমর্থন করবে। বিএনপির জন্য এটা বরে শাপ হবে যদি তাদের নেতাকর্মীরা জেতার আগেই মনে মনে জিতে বসে থাকেন।
বিএনপির নেতাকর্মীদের জন্য এখনই সময় স্মরণকালের সবচাইতে বেশী সক্রিয় হবার।
সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, হিন্দুদের উপর হামলা, ইসলামি মৌলবাদের ইস্যু সামনে আসতেও পারে। এক্ষেত্রে যদি বড় কোন ঘটনা ঘটে, যেমন নাস্তিক কোন বিখ্যাত ব্যক্তি খুন হলেন, এবং বলা হলো কোন জঙ্গি গোষ্ঠী এই কাজ করেছে। এইরকম বড় কোন ঘটনা পরিবেশ বদলে ফেলতে পারে।