জাকারবার্গ
আমি মার্ক জাকারবার্গের ফ্যান না। কিন্তু এটা মানতে কোন আপত্তির অবকাশ নাই যে, সে সাম্রাজ্য বানাইছে। অন্য টেক উদ্যোক্তারা যারা বড় হইয়া যান, তারা গ্যানি গুণী ও বিশেষ হিশাবে পরিচিত হন। এই ক্ষেত্রে আগাইয়া ছিলেন স্টিভ জবস। পরে হইলেন এলন মাস্ক। জেফ বেজোস বা বিল গেটসেরাও সেই দাম পান।
জাকারবার্গের ক্ষেত্রে বদনামই হয় বেশি। বিশেষত তার কোম্পানি যেখানে মানুষের ব্যক্তিগত ডেটা নিয়া কাজ করে, প্রাইভেসী রাখতে পারে না। নানা ঝামেলা।
আমার এই পোস্ট কে ক্রিয়েটিভ, কে গুণধর তুলনামূলক, তা নিয়া না অবশ্যই।
এটা জাকারবার্গের ব্যবসার কিছু গল্প নিয়া।
২০০৬ সালে তার বোর্ড, তার এগজিকিউটিভেরা তারে চাপ দিতেছিল কোম্পানি ইয়াহুর কাছে বেইচা দিতে।
এক বিলিয়ন ডলারে।
চিন্তা করে দেখেন, ২০০৬ এর ফেসবুক, দাম এক বিলিয়ন। বোর্ডে থাকা ইনভেস্টর আর এগিজিকিউটেভেরা এই অফার ছাড়বে কেন? এক সামাজিক মাধ্যম এত টাকায় বিক্রির সুযোগ, হিউজ!
২২ বছরের জাকারবার্গের তখন লাভ হইত ৩০০ মিলিয়ন ডলার।
সবাই তারে বলতেছিল বিক্রি করে দিতে। ম্যানেজমেন্ট বোর্ড চাপ দিল। বন্ধুরা বলল এই অফার ছাড়ে কেবল গর্দভেরা।
কিন্তু ২২ বছরের পোলা জাকারবার্গ তার সিদ্ধান্তে স্থির থাকল। সে বেঁচল না।
তার এই হিম্মত তথা কারেজ আছিল সবার বিরুদ্ধে যাওয়ার ও এই বড় অফাররে না বলার।
পরের বছরে ফেসবুক মাইক্রোসফট থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার ইনভেস্টমেন্ট তুলে।
এই ঘটনার কয়েক বছরের মধ্যে জাকারবার্গ তার পুরা ম্যানেজমেন্ট ও বোর্ড বদলাইয়া ফেলে। সে জানত যে, যারা তার ভিশনে বিশ্বাস করে কেবল তারাই তারে ওইখানে যাইতে হেল্প করতে পারবে। সে এইসব লোকদের বিশ্বাস করতে পারে। অন্যরা অন্তরায়।
কোম্পানি চালাইতে কত ঝামেলা হয়। এইসময়ে জাকারবার্গ একজন সিএফও হায়ার করে। সেই লোক তার ইগোর কারণে এটা মানতে পারতেছিল না যে, তার পোলাপানের বয়সের এক পোলা তার বস। সে ছয়মাসের মধ্যে জাকারবার্গরে সরাইতে এক ক্যু করে ফেলে।
জাকার তারে ফায়ার করে।
একসময় মিউজিক ইন্ড্রাস্ট্রি হুমকি দিল কোম্পানির মালিকানা, টাকা ইত্যাদি না দিলে তারা মামলা করবে।
জাকার ফাইট করতে চাইল।
তার এক উচ্চপদস্ত কর্মকর্তা জাকাররে না জানাইয়া মিউজিক ইন্ড্রাস্ট্রির লগে মিটিং করল।
জাকার এটা জাইনা তারে ইমেইল দিল, দ্বিতীয়বার এই জিনিশ হইলে তুমি ফায়ার হইবা।
জাকার ভিন্নমত শুনতে রাজী ছিল, কিন্তু তার কোম্পানির সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তারে না রাইখা আলাপ মানতে রাজী ছিল না।
২০১০ সালে সোশ্যাল নেটুয়ার্ক ফিল্ম রিলিজের কালে, সবাই বলতে থাকল এইটাতে জাকার ও ফেসবুকের ব্র্যান্ডের ক্ষতি হবে। টিমের মরাল ভাঙবে। পরামর্শদাতারা জাকাররে বললেন ইগনোর কইরা যাও।
জাকার করল উলটা। সে শোরলাইন সিনেমা হল ভাড়া নিয়া নিল প্রিমিয়ারের দিন। পুরা কোম্পানি লইয়া গেল সিনেমা দেখতে। পুরা কোম্পানির এমপ্লয়ীদের সাথে দেখল।
জাকারবার্গ যে এতদিন ধরে তার কোম্পানিরে নিয়া আগাইছে, কত নতুন জিনিশ আনছে, বাদ দিছে, কত কত লোকের লগে কাজ করছে, এইসব করতে কঠিন সব সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তার কো ফাউন্ডেরা একে একে বাদ গেছে।
কিন্তু জাকারবার্গ তার কোম্পানি নিয়া আগাইতেছে। ফাইট করতেছে। এইখানে তার কৃতিত্ব আছে।
ফেসবুকের লগে লগে সেও ইভলভ হইতেছে।
কত ধরনেরই তো লিডার হয়। সেও একধরণের লিডার। কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়া নিয়া আগানোই লিডারের কাজ। সেই কাজে এখন পর্যন্ত জাকারবার্গ সফল।