এক
বাংলাদেশের একসময়ের সুপারস্টার নায়ক নায়িকা শাবানা ও জসিমের ফিল্ম, বা শাবানা আলমগীরের ফিল্মের একটা জিনিশ ছোটবেলায় আমারে সিরিয়াস চিন্তায় ফেলে দিছিলো।
খেয়াল করলাম এই প্যাটার্ন যে, যদি ফিল্মের গল্প শাবানা জসিমের সুখের সংসার দিয়া শুরু হয়, তাহলে ১০০ ভাগ নিশ্চিত তাদের সংসারে অশান্তি হবে, ভেঙ্গে যাবে, শেষদিকে গিয়া ভুল বুঝার অবসান, আবার জোড়া লাগবে।
আবার যে ফিল্মে তারা সংসার করেন নাই, পরস্পররে চিনেন না, সেইসব ফিল্মে তাদের চিন পরিচয় হবে, প্রেম হবে, নানা ঝামেলা হবে, এবং শেষদিকে তাদের বিয়া হবে।
আমার চিন্তাটা ছিল, বিষয়টা এমন কেন! এক ফিল্মে তারা সংসার করার জন্য এত স্ট্রাগল করেন, আবার অন্য অনেক ফিল্মে তাদের বিয়ার পর দেখা যায় অশান্তি। এমন কেন হয় না যে, তাদের সংসারে খালি সুখ আর সুখ থাকবে। এই প্রতুশ্রুতিই তো দর্শকেরা পাই ওই দ্বিতীয় ধরণের, অর্থাৎ প্রেম হওয়া ফিল্মগুলাতে।
পরবর্তীতে একসময় বুঝলাম, সংসারে অশান্তিটা না হইলে গল্পটাই তো হইত না। গল্পের টেনশন কই, আর সুখ আনন্দ দুঃখ কান্না ইত্যাদি ফুটাইয়া তোলার ক্যানভাস থাকে কই গল্প না থাকলে।
আমার নাহয় ওইটা ছোটবেলার এক কনফিউশনের জায়গা ছিল, রিয়ালিটি আর ফিকশনরে মিলাইয়া বুঝার ভ্রমে।
কিন্তু ফেসবুকে অনেক এডাল্ট মানুষ দেখা যায়, যারা মনে করেন ফেসবুক সমাজে শাবানা জসিমের সুখের সংসার হবে।
এইখানে কোন ঝামেলা থাকবে না।
কিন্তু সেইটা অসম্ভব। ওইরকম যদি ফিল্মে কেবল সুখ আর সুখ, এবং ফেসবুকে ঝামেলাহীন, ইস্যুহীন অবস্থা থাকতো, তাহলে ফিল্ম এবং ফেসবুক দুইটাই বোরিং হইয়া উঠতো।
দুই
বিখ্যাত কাউরে না চিনাটা স্বাভাবিক। অনেক বিখ্যাতরেই আপনে চিনেন না।
তবে, বিখ্যাত কেউ মারা গেলে তারে চিনি না বলা আসলে তারে চিনা বা না চিনার বিষয় না। এর রাজনীতি দুইটা।
এক, ঐ ব্যক্তির সাথের আইডিওলজিরে ডিনাই করা।
দুই, ওই ব্যক্তির প্রতি লোকের যে শ্রদ্ধা জাগ্রত, এবং দেখানো হচ্ছে, এরে আঘাত করা।
এটা আপনে বুঝতে পারবেন এই থট এক্সপেরিমেন্টে। আমি যদি আইজ বলি আব্দুল্লাহ আবু সাঈদরে চিনি না বা পড়ি নাই, তেমন কোন রিয়েকশন হবে না। মানুষ ভাববে না পড়তেই পারে। কিন্তু ধরা যাক আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ (আল্লাহ তারে দীর্ঘদিন সুস্থভাবে বাঁচাইয়া রাখুক) আজ মারা গেলেন, আর আমি বললাম, আবু সাঈদের কিছুই পড়ি নাই, ইত্যাদি, তখন অনেকে রিয়েক্ট করবেন।
কারণ তখন তারা সাঈদ সাহেবরে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। তারা বুঝতে পারবেন আমার এই কথাটা কেবল উনারে না চিনার না, বরং তাদের আবেগরেও লাত্থি দেয়া।
এখন এই আবেগরে লাত্থি দেয়ার জন্য স্বাভাবিক ভাবেই তারা আমারে লাত্থি দিতে পারবে। আক্ষরিক লাত্থি না, ফেসবুকে গালাগালি অর্থে। আবার এইখানেও যার যা বুলি, পরিশীলিত ভাষায় এটা একজন করতে পারে তার সূক্ষ্ম রসবোধ ভাষা দক্ষতা থাকলে পরোক্ষ আক্রমণ করে, অন্য আরেকজনের হয়ত তা নাই, সে সরাসরি গালি বা ট্রল করবে।
প্রশ্ন আসতে পারে কেন একজন ইমোশনে আঘাত করবে। বিভিন্ন কারণে করতে পারে। কারো উদ্দেশ্য বুঝার জাদুকরী বিদ্যা আমাদের জানা নাই। মানুষের এই ভ্রান্ত কনফিডেন্স আছে, তারা বুঝতে পারে অন্যের মন। কিন্তু এটা ভুয়া, এমন হইলে এতো ঝামেলা হইত না সমাজ সংসারে। এটা মানুষের এক চিন্তার ভ্রান্তি, কগনিটিভ বায়াস, সে নিজেরে দিয়াই সব বুঝতে যায়।
কারণগুলা, এমন হতে পারে সে এটেনশন চায়। সে প্রভোক করতে চায়, যেমন ধর্মের নবী বা মহাপুরুষ নিয়া অনেকে আবেগে আঘাত দেন। অনেকে ঘৃণা থেকেও করতে পারে। অনেকে করতে পারে বিদ্যমান ইমোশনের প্রদর্শনী, স্তুতির আবাহন যে প্রভাব বিস্তার করতেছে, তার বিরুদ্ধ রাজনীতি হিশাবে। কতো কারণই সম্ভব। ইনটেনশনের আলাপ তাই ভুয়া।
এই সকল প্রতিক্রিয়াগুলারে আমি স্বাভাবিক হিশাবেই দেখতে চাই।
এবং এইখানে ইন্টারেস্টিং, ও আমার আগ্রহের পয়েন্ট হইল, এটা একটা সুযোগ মানুষরে তার উগ্রতা দেখানোর।
ধরেন একজন লোক নিজেরে শিক্ষিত, সুশীল, মার্জিত হিশাবে দাবী করে ও বিশ্বাস করে, তার ভেতরের আগলিনেস দেখাইয়া দিতে আমি আগ্রহী। তারেই দেখাইয়া দেয়া, তার টলারেন্সির, উদারতার ভালনারেবিলিটি। এইসব মজার এক আদি দার্শনিক কাজ, সক্রেটিস থেকে যার শুরু।