ভূমিকাঃ
বাংলাদেশের ফেইসবুকে প্রতি বছর কয়েকবার নিয়ম করে যেসব ঘটনা ভাইরাল হয়ে থাকেন, তার মধ্যে একটা সরকারী কর্মকর্তাদের স্যার ডাকা নিয়ে।
ঘটনা হয়, কোন কর্মকর্তা স্যার না ডাকায় ক্ষিপ্ত হন বা স্যার ডাকতে বাধ্য করেন।
এই নিউজকে কেন্দ্র করে চলে আলোচনা সমালোচনা।
প্রতি বছর এই ঘটনার যে পুনরাবৃত্তি হয়, এটা পরিবর্তিত এই সমাজ ব্যবস্থার একটা টেনশনরে উপস্থাপন করে।
এই লেখায় সেই টেনশনরে খোলাসা করা হয়েছে।
এবারের ঘটনাঃ
সাম্প্রতিক ঘটনা, রংপুরের ডিসি চিত্রলেখা নাজনীনরে স্যার না ডাকাকে কেন্দ্র করে, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক উমর ফারুকের সংঘাত। ফারুক গেছিলেন তার স্কুলের এক কাজে। আসার সময় ডাইকা ফেলছিলেন আপা। তখন চিত্রলেখা বলেন, আমি নারী না হলে কি বলে সম্বোধন করতেন?
প্রশ্নটা গুরুতর, এক নারীবাদী এঙ্গেলও আছে।
ফারুক বলেন, ভাই বলে সম্বোধন করতাম।
চিত্রলেখা বলেন, আমার চিয়াররে তো সম্মানটা দিতে হবে।
এতে দুইজনের বাগবিতণ্ডা হয়।
ফারুকের শিক্ষক মর্যাদাবোধে আঘাত লাগে, এক পর্যায়ে ফারুক বের হয়ে ওইখানেই তার মেয়েরে নিয়ে, একটা লিফলেট লিখে ঝুলিয়ে প্রতিবাদে বসে পড়েন।
ফেসবুকে তার ছবি ছড়াইয়া তিনি দেন, বা অন্যরা দেন। পরে, তার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছাত্র ছাত্রীরা জড়ো হন।
সন্ধ্যা সাতটার দিকে ডিসি চিত্রলেখা নেমে আসেন। শিক্ষার্থীরা নাকি উত্তেজিত হয়ে পড়েন।
ডিসি সবাইকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে জানান।
পরদিন ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি প্রতিবাদ বিবৃতি দেয়।
আর ফেইসবুকে মানুষেরা তো নিয়মিতই বিবৃতি দিয়া যাচ্ছেন।
এখন, প্রথম কথা শিক্ষক উমর ফারুক ডিসিরে আপা ডাকবেন কেন? বা পুরুষ হইলে ভাই ডাকবেন, এটা কোন যুক্তিতে?
তিনি হয় নাম ধরে ডাকবেন, নাইলে স্যার ডাকবেন। প্রফেশনাল জায়গায় গিয়া ভাই আপা মারাবেন কেন?
দ্বিতীয় কথা, শিক্ষক ফারুক পপুলিজমরে ব্যবহার করছেন। এর ডেঞ্জার সম্পর্কে সচেতন থাকেন। ভাইরাল হইয়া তিনি যে পাওয়ার দেখাইলেন, এইটা আরেক অন্যায়ের পথ তৈরি করতে পারে।
স্যার ডাকা বিষয়ে এই বাৎসরিক লড়াইয়ের গভীরে কী আছেঃ
বাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীদের কেরিয়ারের প্রথম চয়েজ সরকারী কর্মকর্তা হওয়া।
এতে,
১। তার ও তার পরিবারের সামাজিক মর্যাদা বাড়ে।
২। অর্থনৈতিক নিরাপত্তা আছে।
৩। ক্ষমতা থাকে।
সামাজিক মর্যাদার বিষয়টা ব্রিটিশ আমল থেকে আসা, সরকারী কাজে যারা সাহায্যকারী হয়েছিলেন ইংরেজি শিখে, তাদেরকেই বলা হতো "ভদ্রলোক", বাবু বা জেন্ট্রি ক্লাস, মূলত ব্রাহ্মণ এবং কায়স্থ থেকে আসা। তারা উপরোক্ত তিনটা অর্জন করেছিলেন, মর্যাদা, ক্ষমতা ও টাকা। [ বাংলাদেশী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের কেরিয়ার স্ট্র্যাটেজি নিয়ে একটা চ্যাপ্টার আছে মিলেনিয়াল জেনারেশন ইন বাংলাদেশ বইতে, যেটি লিখেছেন সিদ্দিকুর রহমান]
শিক্ষার উদ্দেশ্য তখন দাঁড়ায় ইংরাজি শিখে উক্ত তিন জিনিশ পাওয়া, এর জন্য সরকারী কর্মকর্তা হওয়া।
ব্রিটিশদের পরেও এর প্রভাব রয়ে যায়। [এমনকি এখানকার যে বুদ্ধিজীবী সমাজ তৈরি হয়েছিল, যারা সরকার বিরোধীতা করেছিলেন, বেশিরভাগেরই উদ্দেশ্যও ছিল তিনটা, মর্যাদা, ক্ষমতা ও টাকা। কোন মানবিক আদর্শ তাদের ছিলো না।]
এখন, আর্থ-সামাজিক অবস্থা অনেক বদলে গেছে। পাশ করা শিক্ষার্থীদের ৫% এর মত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পান। এর খুব ক্ষুদ্র অংশ বিসিএস পাশ করে সরকারী কর্মকর্তা হতে পারেন। এই টোটাল পাশ করা শিক্ষার্থীরাও শিক্ষিত হন। ফলে এইখানে দুইটা পক্ষ থাকেই, এক হাইয়েস্ট টার্গেটে সফল হওয়া অল্প অংশ, আর এতে বিফল হওয়া বিরাট অংশ।
ইন্টারনেট প্রযুক্তির কারণে মানুষ দেশ বিদেশের খবর রাখছে। তারা দেখছে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীরে সাধারণ এক লোক ধমকাইতে পারে। তারা ভাইরালের পাওয়ারও দেখতেছে।
পাবলিকের আত্মসম্মানবোধ জাগছে। আর জাগছে শিক্ষিত মিডলক্লাসের ঈর্ষা। তারা আর সরকারী কর্মকর্তাদের সম্মান দিতে চায় না।
তারা মনে করে, তারা নিজেরাও শিক্ষিত, ফলে কেন ঐ সরকারী কর্মকর্তাদের দাম দিবে? ওরা তো পাবলিক সার্ভেন্ট!
এই সামাজিক টেনশন মূলত, শিক্ষিত মিডলক্লাসের লগে, সরকারী কর্মকর্তাদের, যারা নিজেরে এই মিডলক্লাসের চেয়ে উচ্চ ক্লাস দাবী করে ও সম্মান চায়, যার শুরু সেই ব্রিটিশ আমলের ভদ্রলোক ক্লাস থেকে।
শিক্ষিত মিডলক্লাসের ঈর্ষাই সামাজিক বিপ্লবের ভাষা তৈরি করে। তারা যখন দেখতে পায়, তাদের চাইতে কম জানে, তাদের মতোই বা তাদের চাইতে কম শিক্ষিতরা বেশী সম্মান দাবী করছে, বা বেশী সম্পদ পাইয়া যাচ্ছে, তখন তারা প্রতিবাদের দিকে যায়, সামাজিক তত্ত্ব তৈরির দিকে যায়। ফ্রেঞ্চ রেভলুশনে যেই জায়গাতে গরীবেরা ছিলো ঐসব এলাকা ভালনারেবল ছিলো না, বরং যেইখানে শিক্ষিত মিডলক্লাস, আপার মিডলক্লাস ছিল, যাদের বিবর্ধিত আশা ছিল নিজেদের লাইফ ও ভবিষ্যৎ নিয়া, তারাই ঝামেলা করছে। তারা নিজেদের মনে করতে থাকে ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত, সম্পদ থেকে বঞ্চিত, নিজেদের তারা মনে করতে থাকে বঞ্চনার শিকার। আপার ক্লাসরে তারা প্রতিদিন দেখে আর ঈর্ষা অনুভব করে।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে, ক্ষমতার মূল কেন্দ্রে ঈর্ষা করার জায়গা এদের নাই। কারণ মূল কেন্দ্র ডিক্টেটরের মত বসে আছে। ওইটারে আঘাত করার মত ভাবনা মিডলক্লাসের নাই। এরিস্টটল তার রেটরিকে বলে গেছিলেন ঈর্ষা আপনে বেশী অনুভব করবেন যখন আপনারই এক আত্মীয় উপরে উঠে যাবে। মিডলক্লাসের ঈর্ষা তাই ওই সরকারী কর্মকর্তার প্রতি, যে তার মতোই মিডলক্লাস ছিল, কিন্তু আলাদীনের চেরাগে (পড়ুন বিসিএস) কপাল ঘষে উপরে উঠে গেছে, যে চেরাগে তারাও ঘষেছিল কপাল, ফল ধরে নাই।
মনে হয় না, শিক্ষিত মিডলক্লাসের বাইরে অন্য কারো সরকারী কর্মকর্তাদের স্যার ডাকা নিয়া সমস্যা আছে। এই মিডলক্লাসই আবার, পুলিশের কোন বড় কর্তারে ভয়ে স্যার ডাকবে।
উপরোক্ত শিক্ষক উমর ফারুকের ঘটনায়, দেখেন শিক্ষক সমাজ কীভাবে আগাইয়া আসছে, আসছে ছাত্র ছাত্রী সমাজ। তাদের সম্মানের গায়ে ফোস্কা পড়ে গেছে। বলাবাহুল্য, এই ধরণের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েই সরকারী কর্মকর্তারা হন, যারা পরবর্তীতে কিন্তু আবার এই শিক্ষার্থী ক্লাসের সমান নিজেদের ভাবেন না। উঁচা ভাবেন।
এই স্যার ডাকাডাকির বিবাদরে এই দুই ক্লাসের মধ্যেকার বিবাদ হিশাবেই দেখেন।
রাষ্ট্র ক্ষমতার সাথে স্যারের কী সম্পর্কঃ
অনেকে বলতেছেন এখন সরকারী কর্মকর্তা অত্যধিক পাওয়ারফুল হয়ে গেছেন, কাউরে তারা তোয়াক্কা করেন না। এই প্রস্তাবরে, ঈর্ষার ফিল্টারে বাদ দিয়াও কিছুটা আমলে নিতে হয়। কারণ বর্তমান সরকার অগণতান্ত্রিক, ফলে তাদের কী (key) পিপলদের তুষ্ট রাখতে বেশী সবিধা দিতেই হবে।
দ্য ডিক্টেটর'স হ্যান্ডবুক পলিটিক্যাল সাইন্টিস্ট ব্রুস বুইয়েনো ডি মেসকুইটা এবং এলিস্টার স্মিথ দেখাইছেন ডিক্টেটরশীপে ও গণতন্ত্রে ক্ষমতা কীভাবে কাজ করে।
এখানে রুলাররা রুল চালায় না, বরং ক্ষমতার রুলেই রুলার চলে। এইজন্য ইউটোপিয়ান স্বপ্ন দেখানো বিপ্লবীরাও বাজে ডিক্টেটর হয়। তারা সিংহাসন নেয় চালাতে, কিন্তু সিংহাসনই তাদের চালায়।
কেউ একা শাসন করতে পারে না। তার কিছু কী (key) পিপল লাগে। এই কী পিপল তার ক্ষমতায় থাকার জন্য জরুরী। এরা তার হয়ে কাজ করে। আইন বানায়, প্রশাসনের কাজে থাকে, আইন শৃঙ্খলার কাজে থাকে। তাই তার প্রধান কাজ থাকে কী পিপলরে খুশি ও লয়াল রাখা।
গণতন্ত্রে আরেক ধরণের কী থাকে, যারা বিপুল সংখ্যক লোক, তার পক্ষে ভোট দিয়েছে। কিন্তু এদের সে পুরা খুশি রাখতে পারবে না। এরা বিশাল ও এদের চাহিদা অনেক। তাছাড়া এরা পরবর্তীতে অন্য পক্ষকে সমর্থন দিতে পারে। এবং এদের জন্য খরচ করা কাজের যেমন হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয়, রাস্তাঘাট ইত্যাদি নির্মান, এর সুফল অন্য দল ক্ষমতায় আসলে নিতে পারে।
এদের জন্য খরচ করা হচ্ছে শাসকের জন্য অপচয়। তাও সে অল্প খরচ করে এদের খুশি রাখে। এদের সে ভাগ ভাগ করে, এবং কিছু ভাগকে ভর্তুকি ও অন্যান্য সুবিধা দেয়। যেমন কৃষিভর্তুকি, বা অন্য পেশাজীবীদের দেয়া সুবিধা, কোটা।
এছাড়া, এই জনগণ যাতে প্রোডাক্টিভ কাজে নিয়োজিত হতে পারে এজন্য শাসককে খরচ করতে হয়। কারণ প্রোডাক্টিভ কাজ বেশী হলে ট্যাক্স বেশি হবে। ট্যাক্স বেশি হলে সে তার মূল কী পিপলদের বেশী অর্থ দিয়ে খুশি রাখতে পারবে।
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির মত যদি হয়, ভোটই লাগে না শাসন ক্ষমতা যাইতে তাহলে মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা আরো কমে। তখন দেশী বিদেশী কী পিপলদের তুষ্ঠ রাখতে হবে সরকারকে।
এছাড়াও কোন প্রভাবশালী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকেও তার খুশি রাখতে হয়। কারণ প্রভাবশালী ব্যক্তির কথার প্রভাব থাকে জনগণের উপরে। তাকে হাতে রাখলে অনেক ভোট নিশ্চিত। বা তারা সরকারের সোশ্যাল ক্যাপিটাল ঠিক রাখেন, বিভিন্ন ইস্যুতে লেখেন, বক্তৃতা দেন। এজন্য এদের ডিক্টেটরের মত সরাসরি টাকা না দিলেও চুক্তি, পুরস্কার, সম্মান বা অন্য কোন ভাবে সুবিধা দিয়ে থাকে গণতান্ত্রিক সরকার। এই দলে থাকেন জনপ্রিয় লেখক, সাংবাদিক, মিডিয়া ব্যক্তিত্বরা।
বিপ্লবে ক্ষমতা থেকে জনগণের এক দল ডিক্টেটরকে সরিয়ে ফেললো, এমন ক্ষেত্রে ভেতরের চিত্র হলো সেনাবাহিনী তা হতে দিয়েছে। এখানে বাইরে থেকে দেখলে জনগণের এক অংশ ক্ষমতা নিয়েছে। কিন্তু মূল চিত্র হলো শাসকের প্রধান কী পিপলরা তার প্রতি সন্তুষ্ট ছিল না। তাই তারা তাকে সরিয়ে দিয়ে নতুন শাসক বসিয়েছে। জনগণের বিপ্লব এখানে সামনে দৃশ্যায়ন হয় কেবল।
নতুন শাসককেও পুরাতন শাসকের নিয়মে চলতে হয়। তার নতুন কী পিপলদের সন্তুষ্ট করে চলতে হয়। তাদের সাথে নিয়ে বিপ্লব করেছিল তাদের সম্পদের ভাগ দিতে হয়।
এভাবেই ক্ষমতা তার নিয়মে চলে। কোন আন্দোলনে ক্ষমতা কীভাবে রিয়েক্ট করবে এবং একে দমন করতে কোন পর্যন্ত যেতে পারে তা বুঝতে হলে দেখতে হবে যাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন হচ্ছে তারা ক্ষমতাতন্ত্রের কী পিপল কি না। যদি কী পিপল হয় তাহলে ক্ষমতাতন্ত্র তাদের স্বার্থ রক্ষা করতে চাইবে।
কী পিপলদের স্বার্থ তখনই শাসক বিসর্জন দিবে, যখন যারা আন্দোলন করছে তাদের কাছে থাকা শাসকের স্বার্থটি বড় হয়ে থাকে।
এখন এই লেন্সে স্যার বিষয়ে বিবাদমান দুই পক্ষকে দেখি।
এক পক্ষ সরকারী কর্মকর্তা, যারা সরকারের কী পিপলদের অন্তর্গত।
আরেক পক্ষ, শিক্ষিত মিডলক্লাস, যাদের রয়েছে জীবন ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বিবর্ধিত আশা।
যদি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা হতো, অন্তত তাহলে নির্বাচনের আগে এই বিবাদ হলে সরকার শিক্ষিত মিডলক্লাসরে খুশি করতে চাইতো।
কিন্তু, যেখানে ভোটেরই দরকার নাই সেখানে এই শিক্ষিত মিডলক্লাসের কি কোন দাম আছে?
সরকারের কাছে তাই এই বিবাদ বাচ্চাদের ঝগড়ার মত, বিপদজনক কিছু না।
সাময়িক ভাবে সরকারী কর্মকর্তারা জনগণের প্রেশারে থাকলে ব্যাপারটা সরকারের জন্য খারাপ হয় না। কারণ এরা যদিও কী পিপল, তথাপি আপনজন না, ক্ষমতার ভাগীদার। সরকাররে বাটে ফেলে ক্ষমতার ভাগ নিয়া যায়। সুতরাং, এদের চাপে ফেলার সুযোগ থাকলে সরকার নিতে চাইবে। কিন্তু সরকার নিজে সরাসরি লাগবে না, সরকারের সমর্থক ইনফ্লুয়েন্সার, লেখক, মিডিয়ার লোকেরা বলে যাবে। তাদের স্বার্থও আছে এইখানে, তারাও যেহেতু কী পিপল, তারা চাইবে হালুয়া রুটির ভাগ বেশী তাদের দিকে আসুক, ক্ষমতা তাদেরকে মনে করুক আপন ভাই। আবার, একইসাথে ইস্যুটা যেহেতু পাবলিকের সিম্প্যাথি পায়, ফলে জনপ্রিয়তাও আরেক প্রাপ্তি তাদের জন্য। কী পিপলদের ভেতরকার দ্বন্দমুখর সম্পর্ক ও ক্ষমতার সাথে তাদের সম্পর্কের ধরণ আরেক বিস্তারিত বিশ্লেষণের বিষয়।
কিন্তু যদি মারাত্মক সিচুয়েশন হয়, যেমন উভয় পক্ষ মারমুখী, সেক্ষেত্রে অবশ্যম্ভাবী ভাবে সরকার কর্মকর্তাদের পক্ষ নিবে। কারণ তখন কর্মকর্তারা সম্মিলিত ভাবে সরকাররে চাপ দিবে।
আবার, এই বিবাদ সরকারের জায়গা করে দেয়া ফাইটের ক্ষেত্র। সরকার বলতেছে, কর্মকর্তাদের নিয়া তোমরা বলতে পারবা, এটা তোমাদের স্বাধীনতার সীমা।
পত্রিকা থেকে নিচের অংশ তুলে দিচ্ছি, শিক্ষক সমিতিটার বক্তব্যের সবচাইতে স্ট্রাইকিং অংশ,
বেরোবি শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ও কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. তুহিন আহমেদ বলেন, ‘সাংবিধানিকভাবে এবং সরকারিভাবে আমরা সবাই প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও স্যার ডাকার বিপক্ষে ছিলেন। ৩০ লাখ শহীদের জীবনের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশে একজন কর্মচারী স্যার হয়ে উঠার বদলে সেবক হয়ে উঠবেন—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’
এই কথা দ্বারা আসলে কী বুঝানো হইল?
বুঝানো হইল, আমরা সরকারী কর্মকর্তাদের স্যার ডাকার বিরুদ্ধে কিন্তু আমরা বর্তমান সরকারকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন দিচ্ছি। আমাদের ফাইট সরকারের লগে নয়।
কেউ কেউ, যারা বেশী স্বাপ্নিক আছেন, তারা ভাবতেছেন স্যার বিরোধী এই সচেতনতা বোধহয় একটা সামাজিক বিপ্লব, ও সরকার বিরোধী আন্দোলনের প্রাথমিক দশা। সরকার যে অন্যায় ক্ষমতা বিস্তারিত করতেছে ও তাদের সহকারী সরকারী কর্মকর্তাদের পাওয়ারফুল করে তুলতেছে, অন্যদিকে জনগণরে ক্ষমতাহীন করতেছে দিন দিন, সে কারণেই জনগণেরা পুঞ্জিভূত ক্ষোভের এক বহিঃপ্রকাশ ঘটাইতেছেন।
আমি মনে করি, এইটা ভুল।
সরকারই এই প্রক্সি ওয়ার হতে দিচ্ছেন। এবং তারা নজর রাখছেন। নিজেদের অবস্থান বিপন্ন হতে দেখলে তারা চটকনা দিবেন, আর তখন এই বেরোবির সমিতি টাইপের আরো যারা বিপ্লবী আছেন, তারা তসবি ধরে স্যার জঁপবেন। মনোথিজমের পূর্বের প্যাগান রিলিজিয়নগুলাতে প্রচলিত ছিল দেবতারে বশীভূত করতে হলে তার নাম জঁপ করতে হয়, সেই বিচারে, স্যার স্যার জঁপ নামে সুফল যে মিলবে না, তা বলা যায় না।