আমরা বেশিরভাগই চিন্তা করি এফিশিয়েন্সির মডেলে। কোন কাজের ক্ষেত্রে আমাদের প্রধান চিন্তা থাকে এটি করলে হাতে হাতে কতো লাভ আসবে। লাভ বেশি হলে সেটি ভালো।
আমাদের হেলথ সিস্টেমসহ, এইরকম সকল ব্যবস্থাপনায় আমাদের চিন্তাটা থাকে, আমরা ১০০ টাকা দিচ্ছি, ঐ ব্যবস্থা কত টাকার আউটপুট (এখানে সেবা) দিচ্ছে?
রোগি আছে একশো জন, বেড একশোটা; এই অবস্থাই আমাদের কাছে আদর্শ।
শুধুমাত্র সেনাবাহিনীর ক্ষেত্রে আমরা এফিশিয়েন্সি দিয়ে চিন্তা করি না। সেইখানে আমরা রেজিলিয়েন্স বা টাফনেস হিসাব করি। সেনাবাহিনীতে কেন প্রচুর টাকা ঢালা হয়? হাতে হাতে ফল পাবার জন্য নয়। কঠিন পরিস্থিতিতে পড়লে, যুদ্ধে বা দূর্ভিক্ষে হেল্প পাবার জন্য। আমাদের আবেগি লেখক হুমায়ুন আজাদ লেখেন সারাদিন লেফট রাইট করলে ক গণ্ডা শস্য ফলে ইত্যাদি। কারণ তিনি এফিশিয়েন্সি দিয়ে বুঝতে চান, রেজিলিয়েন্সের জন্য নির্মিত একটা ব্যবস্থাকে। তিনি জাগনা থাকলে এটা এখন তারে বলা যাইত।
অন্যান্য অনেক ব্যবস্থাতেও একইভাবে রেজিলিয়েন্স দিয়ে মানুষের চিন্তা করা দরকারী। বিশেষত, হেলথ সিস্টেম, যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থা, গবেষণা, কৃষি ইত্যাদি জায়গায়।
ক্রিকেট দিয়ে উদাহরণ দেয়া যায়। টিমে খালি ক্রিস গেইলদের রাখলে হবে না, যদিও তারা ১০০ বলে ২০০/৩০০ করে দিতে পারে কখনো। আপনারে রাহুল দ্রাভিড়, জয়বর্ধন, সাংগাকারা বা পন্টিংদেরো রাখতে হবে। তা না হলে টাফ সিচুয়েশন আসলে, উইকেট পড়তে থাকলে সেই অবস্থা হ্যান্ডেল করার মত শক্তি আপনার থাকবে না।
বিজনেসের ক্ষেত্রেও আমি এটা দেখেছি। অনেক সময় এফিশিয়েন্সি এবং কেপিআই এর দিকেই বেশি ফোকাস দেয়া হয়, কিন্তু আপনার স্ট্র্যাটেজি কতটুকু রেজিলিয়েন্সি রাখে, কঠিন টাইমে কতটুকু বাউন্স ব্যাক করার ক্ষমতা রাখে, এগুলির দিকে খেয়াল রাখা হয় না।
সাধারণত দেখা যায়, মানুষরে কোন স্কিল শিখতে বললে সে প্রথমে দেখে এর দ্বারা হাতে হাতে কোন লাভ আছে কি না। ডাইরেক্ট কোন লাভ আসবে কি না। যদি দেখে নাই, তাহলে ওইটা শিখতে চায় না। সে চিন্তা করে এফিশিয়েন্সির মডেলে।
কিন্তু কেউ যদি নিজেরে তার কেরিয়ারের মালিক ও সিইও মনে করে, তাহলে বুদ্ধিমানের কাজ হবে তার সিস্টেমরে রেজিলিয়েন্ট বানানো। এন্টি ফ্রাজাইল বানাতে পারলে সবচাইতে ভালো। কিন্তু রেজিলিয়েন্ট অর্থাৎ খারাপ টাইম থেকে দ্রুত ব্যাক করতে পারে এমন বানানোটা দরকারী। আর এটা দীর্ঘদিনের পরিকল্পিত কাজের মাধ্যমে করতে হয়।
সকল ক্ষেত্রেই, যেমন সিলেট শহর একটা গুরুত্বপূর্ণ ফল্ট লাইনের কাছাকাছি আছে, ফলে এই অঞ্চলে যে কোন সময় বড় ভূমিকম্প হতে পারে। আমাদের উচিৎ হইল ওই দূর্বিপাক মাথায় রেখে ওই অঞ্চলের স্থাপনাগুলারে সাজানো, হেলথ সিস্টেমরে সাজানো। দীর্ঘ সময় ধরে আস্তে আস্তে এর জন্য কাজ করে যাওয়া। যাতে যদি ওই খারাপ পরিস্থিতি আসে তাহলে দ্রুত ব্যাক করতে পারে।
পরীক্ষা হয় ব্যাড টাইমে। আপনারে কোন সিস্টেম যেমন কোন দেশের অর্থনীতি, বা স্বাস্থ্য, আইন শৃঙ্খলা ব্যবস্থা ইত্যাদি এনালাইজ করতে দিলে যদি বর্তমান আউটপুট দিয়ে বিবেচনা করেন, তাহলে ভুল বিচার হবে। কারণ সাধারণ স্বাভাবিক অবস্থায় পারফর্মেন্স তুলনামূলক ভালো থাকে। আপনারে দেখতে হবে ওই ব্যবস্থা দুর্বিপাক সামলাইতে কতটুকু প্রস্তুত ও ওই প্রস্তুতিতে সে কীরকম সময় দিচ্ছে।
দারুণ!