প্রশ্নঃ ছাত্র জীবনে যে স্কিলগুলো অর্জন করা উচিত। যা ভবিষ্যতে বা পরবর্তী জীবনে হেল্প করবে।
ফেসবুকের প্রশ্নোত্তর পোস্টে একজন এই প্রশ্ন করেছেন। একইরকম প্রশ্ন বিভিন্ন সময়ে আসে। তাই এখানে দীর্ঘ উত্তর রাখলাম। এটি আমার মতামত মাত্র। আমি মনে করি এইরকম করলে ভালো।
---
১। কিভাবে নিজেরে ফিট রাখতে হয়।
এইটা একটা বড় বিষয়। অনেক বুড়া বিলিয়নিয়ার ইত্যাদিদের স্বাক্ষাতকারে দেখবেন, তারা টাইম চায়, ইয়াং হইতে চায়।
বাট, অনেক ইয়াং দেখা যায় ধনীদের নিয়া হা হুতাশ মনে মনে, করতেছে বুড়াদের মত জীবন যাপন। ফিটনেস নাই। তারা কী করতেছে আসলে? অপচয় করতেছে নিজেরে।
Nothing, Lucilius, is ours, except time.
লুসিলিয়াসরে লেখা চিঠিতে রোমান স্টোয়িক দার্শনিক সেনেকা লিখেছিলেন।
এটা মনে রাখতে হবে।
যখন আপনে ইয়াং তখন সাধারণ হিশাবে একজন বুড়া লোকের থেকে আপনার যে গুরুত্বপূর্ণ এডভান্টেজ আছে, তা হইল, আপনার টাইম আছে। একইসাথে ফিজিক্যাল অন্যান্য দিকেও এডভান্টেজ আছে।
সাধারণ হিশাবে বলা কারণ ইন্ডিভিজুয়াল ব্যক্তির ক্ষেত্রে, তার কত টাইম আছে ইত্যাদি তো বলা যায় না নির্দিষ্ট করে।
আপনে যদি আপনার পূর্ণ পটেনশিয়ালে যাইতে চান, তাহলে ফিজিক্যাল স্ট্রেংথের দিক থেকে সেই উচ্চ মাকামেও যাইতে হবে।
তা না হইলে, আপনে যেই পটেনশিয়ালে যাইতে চাইতেছেন, তা কীসে চড়ে যাবেন?
আপনে ইয়াং বয়েসে স্ট্রেংথ ট্রেইনিং সম্পর্কে জানেন না, নিজের মাসলের স্ট্রেংথ বুঝলেন না, দেখলেন না, সক্রেটিসের কথায় এইটা লজ্জাজনক, আমার কথায় নিদারুণ অপচয়।
লাইফস্টাইলরে ঐভাবে রাখেন, এক্সারসাইজ, স্ট্রেংথ ট্রেইনিং এইগুলা একদিনের জন্য না, লাইফের অংশ। চলতে থাকবে।
নিজেরে ফিট রাখার পেছনে আপনার যথাযথ চেষ্টা থাকতে হবে, বাকিটা আল্লার ইচ্ছা।
এই স্কিলটা যদি থাকে তাহলে অনেক জরুরী বেসিক স্কিলের ফাউন্ডেশন তৈরি হয়ে যাবে।
যেমন মেন্টাল টাফনেস, নিয়মানুবর্তীতা, হার্ডওয়ার্ক, ডুয়ার মাইন্ডসেট ইত্যাদি।
২। মেন্টাল টাফনেস এর স্কিল।
এই স্কিল আপনার এত কম বয়েসে অর্জন হবে না। বেশিরভাগের চল্লিশ বছরেও হয় না। যদি ইয়াং বয়েসে এটারে বুঝতে না পারেন, অর্জনের লক্ষ্যে কাজ না করেন তাহলে অর্জিত হবার সম্ভাবনা আরো কম থাকবে।
জীবনের নানা সিচুয়েশনে আপনারে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে, বড় সিদ্ধান্ত নিতে হবে, এমন অপরচুনিটি আসবে নিবেন কী নিবেন না এই দ্বিধায় থাকবেন, ব্যর্থ হবেন, নিজের স্বক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ আসবে। এইসব পরিস্থিতিতে নিজেরে ঠিক রাখা, স্থির রাখা, ঠিক ভাবে চিন্তা করা, পরিশ্রম করে যাবার যে এবিলিটি তাই মেন্টাল টাফনেস।
এটা অর্জন করার ফাউন্ডেশনের জন্য কিছু টুলস বা প্র্যাকটিস আছে। যেমন, স্টোয়িক দর্শনের নানা আইডিয়া।
আমি এই সম্পর্কে লিখেছি - স্টোয়িক দর্শন নিয়ে লেখা
মেন্টাল টাফনেস কী, এর যদি সহজ উদাহরণ দেখতে চান, তাহলে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের পা নড়াইতে না পারা অবস্থায় আফগানিস্থানের সাথে ২০১ রানের ইনিংস দেখতে পারেন।
অথবা, মোহাম্মদ আলীর রাম্বল ইন দ্য জাঙ্গল ফাইট দেখতে পারেন - রাম্বল ইন দ্য জাঙ্গল।
অথবা, রকির প্রথম ফিল্মে আছে এটা।
৩। এনটাইটলমেন্টের মাইন্ডসেট পরিহার করতে হবে।
মনে মনে এই ধারনা রাখা যে আপনি ডিজার্ভ করেন বা আপনার একটা অলিখিত অধিকার আছে, যেন দুনিয়ার দায় পড়ছে আপনারে একটা ভালো চাকরী, গুড লাইফ ইত্যাদি দেবার, কিন্তু অন্যরা লজিক্যালি বলবে, এইরকম হবার কোন মানে নাই।
উদাহরণ দেই, আপনি একটা স্কিলফুল মানুষ, আপনি প্রত্যাশা করেন আপনারে লোকে চাকরি দিবে, এই প্রত্যাশা অনেক দিক থেকে ঠিক হইতে পারে। কিন্তু আপনার কোন স্কিল নাই কিন্তু প্রত্যাশা করেন যে আপনি ভাল চাকরি ডিজার্ভ করেন, সম্মান ডিজার্ভ করেন, এটা এনটাইটলমেন্টের মেন্টালিটি।
সাধারণ মধ্যবিত্ত মানব সন্তানও জন্ম নিয়া দেখে মা বাপ তারে কথায় কথায় সব দিয়া দেয়।
মা যেমন খাবার দেন, ঘর পরিষ্কার করে দেন, বলার আগেই ভালো মন্দের খোঁজ নেন।
বাচ্চাদের কাছে ফিল হয় যেন তারা বিশেষ কিছু। যেন এইভাবে তারা সব কিছু পেয়ে যাবে। যেন সবার এক অলিখিত দায় আছে তারে নানা কিছু দেবার।
সেলফ হেল্প বই এবং বিজ্ঞাপন মিডিয়া বলতেছে আপনি স্পেশাল। আপনি যা চান তাই করতে পাড়বেন যদি তাদের বই পড়েন, লেকচার শুনেন বা পণ্যটা কিনেন। তারা আপনারে এই "স্পেশাল" ফিল দিয়া পণ্যটা বিক্রি করে।
আপনার মনে বদ্ধমূল ধারনা জন্মে যায় আপনি স্পেশাল, কিন্তু স্পেশাল হবার জন্য কিছুই করেন নাই লাইফে।
আপনি ভাবেন দুনিয়ার দায় আছে আপনারে সব দেবার।
আসলে এই দায় নাই।
আপনারে কিছু পাইতে হইলে তা পরিশ্রম করেই পাইতে হবে।
ইভেন যদি বাপের অনেক সম্পত্তি থাকে, তাও এই এনটাইটলমেন্টের মেন্টালিটি আপনারে উইক ক্যারেক্টারের বানাবে।
দুনিয়ার নির্জলা বাস্তবতার দিকে তাকান। আপনি যা দিবেন সেই অনুসারেই পাবেন।
আপনি ভালো বা স্পেশাল না। এই মডেলই ভুয়া।
আপনি লার্নার, যে বিভিন্ন সময় ও অবস্থার প্রেক্ষিতে শিখে যায়, এবং যে কখনো গিভ আপ করে না। এবং যে একজন গিভার। যে কখনো দেবার আগে পাবার প্রত্যাশা করে না। এই মডেল বাস্তবসম্মত, এনটাইটলমেন্টের মেন্টালিটি দূর করতে হেল্প করবে।
৪। ডুয়ার মাইন্ডসেট তৈরি করুন।
কিছু লোক কথা বলে। কিছু লোক কাজ করে।
কাজ করা লোকগুলা হোন, কারণ এরাই উইনার হয়।
কথা বলা সহজ। এইখানে কোন রিস্কও নাই, কষ্ট করতে হয় না।
প্রিচ করা সহজ। এইজন্য প্রিচার এতো বেশি, এবং বেশি থাকার কারণে বেশিরভাগ এইসব প্রিচিং ভুয়া।
আগে এক্ট করেন, তারপর প্রিচ করেন। অথবা প্রিচই কইরেন না আপনার করাটা দেখান, সেইখান থেকেই যে বুঝার বুঝে নিবে।
স্টয়িক এক প্রিন্সিপল হইল, এপিকটেটাসের ভাষ্যে, তোমার দর্শন প্রিচ কইর, এম্বডি ইট।
কাজ করতে গেলে রিস্ক নিতে হয়, নিজের সময় ও শ্রম দিতে হয়।
কথা বলার দরকার যে নাই, তা না। কিন্তু সেই কথাগুলা, সমালোচনাগুলা কার্যকর হতে হবে, লজক্যালি সাউন্ড হতে হবে, যাতে এইখান থেকে ভ্যালু এড হয়। একটা শক্তিশালী মতামত তৈরি করতেও কাজ করতে হয়। এই সংশ্লিষ্ট পড়ালেখা, চিন্তা সেই কাজ।
৫। সামাজিক সব সম্পর্কের সোশ্যাল এক্সচেঞ্জ উপলব্ধি করুন।
সব সম্পর্কেই ভ্যালু দেবার ও ভ্যালু নেবার ব্যাপার থাকে।
ভ্যালু না দিয়ে আপনি যদি ভ্যালু নিতে থাকেন তাহলে কেউই আপনারে বন্ধু বানাবে না। মানুষ এড়িয়ে চলবে।
আবার, যদি শুধু ভ্যালু দিতে থাকেন, ও ভ্যালু টেইকারদের চিনতে পারেন না, তাহলে মানুষ আপনারে বোকা মনে করবে ও ব্যবহার করবে।
ভ্যালু দেয়া সামাজিক ইনফ্লুয়েন্স তৈরির কার্যকর উপায়।
কখনো ভ্যালু নিলে, কিছু না কিছু ভ্যালু ব্যাক করবেন।
এতে যে ভ্যালু দিচ্ছে সে আপনারে ভ্যালু টেকার ভাববে না।
মানুষের পারসেপশন অর্থাৎ আপনারে কী ভাবে তা জরুরী। সে আপনারে ভ্যালু টেকার ভাবলে এড়িয়ে চলবে।
এই লেখায় বিস্তারিত আছে কীভাবে সামাজিক সম্পর্কে ভ্যালু কাজ করে - সামাজিক সম্পর্ক বিশ্লেষণ ।
৬। আপনার সম্পর্কে অন্যের পারসেপশন জরুরী।
মানুষ আপনারে কী ভাবে তা জরুরী, আপনি ভেতরে কি তা মানুষ দেখবে না।
আপনি বাইরে যদি ফকিন্নির মত থাকেন তাহলে আপনারে মানুষ কম গুরুত্ব দেবে। তার দায় নাই আপনার ভেতর দেখার। আপনি যেমন তার ভেতর দেখতে পারেন না, তেমনি সেও আপনার ভেতর দেখতে পাবে না।
দেখতে যদি আপনারে খারাপ লাগে পোশাক আশাকে, আপনি অপরিষ্কার হন, তাইলে সামাজিক ভ্যালু হারাবেন। কিছু ক্ষেত্রে অতি প্রতিভাবানরা অপরিষ্কার ও খারাপ ভাবে থাইকাও ভ্যালু পান, কিন্তু এটা তাদের কাউন্টার সিগন্যাল। তারা এতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছেন যে, তাদেরকে মানুষ এমনেই চিনে ও দাম দেয়। আপনার ওই প্রতিভা ও কাজ নাই।
লুজারেরা এইসব অতি প্রতিভাবানদের অনুসরণ করে ভাবেন যে, তাদেরও মানুষ প্রতিভাবান ভাইবা দাম দিবে। এটা লং রানে অকার্যকর হবে। এক ধরণের অর্কিড আছে, সুভাষ ও নেকটারযুক্ত ফুলরে হুবহু কপি করছে। প্রাথমিকভাবে পোকাদের আকৃষ্ট করলেও লং রানে এই স্ট্র্যাটেজি টিকে নাই। পোকারা আইসা প্রতারিত হইছে। এবং সময়ের ব্যবধানে বুঝে গেছে সে কী। এইটা আর্টের ক্ষেত্রেও সত্যি, বড় শিল্পীদের আর্ট কপি করলেই বড় শিল্পী সাহিত্যিক হওয়া যায় না, অরিজিনাল ভ্যালু না থাকলে।
আপনারে নিয়া যেসব বড় সিদ্ধান্ত হবে, যেমন আপনার প্রমোশন, বা এইরকম কোন মেজর সিদ্ধান্ত, ঐ রুমে আপনি থাকবেন না।
কিছু লোক আলোচনা করে ঠিক করবেন।
তারা আপনারে বিচার করবেন তাদের পারসেপশনে তথা ধারণায় যে "আপনি" আছেন তার উপর ভিত্তি করে।
মনে করবেন না যে, আমি যেমনে ইচ্ছা চলব, কিন্তু লোকে আমার ভেতরের ট্যালেন্ট দেখে বুঝে নেবে। এমন হবে না।
ভেতরের ট্যালেন্ট কেউ দেখতে পায় না।
৭। সফলদের কাউন্টার সিগন্যাল কপি করবেন না।
আপনার প্রিয় কোন সেলিব্রেটি, বিখ্যাত ব্যক্তি থাকতে পারেন, যিনি উলটা কাজ করেন। ধরা যাক ক্যাজুয়াল থাকেন, মিটিং এ স্যান্ডেল পরে চলে যান।
এটা দেখে আপনিও এইরকম করতে গেলেন।
আপনার জন্য এটা হবে খারাপ। কারণ ঐ আপনি ঐ সেলিব্রেটি বা বিখ্যাত ব্যক্তি না। ঐ ব্যক্তি তার রেপুটেশন দ্বারা একটা অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন। তিনি স্যান্ডেল পরে গেলেও লোকে তার উপর আস্থা রাখে, কারণ তিনি নিজেরে প্রমাণ করেছেন।
আপনি একইরকম করলে বরং দেখা হবে আপনি অনভিজ্ঞ, ও বোকা।
৮। লাইফ হইল লার্নিং।
লার্নিং 'একেবারেই' আলাদা কিছু না। যারা এই লার্নিং শব্দটা সম্পর্কে জানেন না, তাদের লাইফও লার্নিং দ্বারা ঘেরা থাকে।
সময়ের সাথে সাথে আপনি বিভিন্ন কিছু করবেন, বিভিন্ন খারাপ ভালো পরিস্থিতিতে পড়বেন, এবং এইসব থেকে কিছু না কিছু শিখবেন।
আমরা যে শেখার সাথে সাধারণত পরিচিত, স্কুলের শেখা, ওইরকম শেখা না। এইখানে শেখাটার রিচুয়ালাইজেশন নাই। রিচুয়ালাইজেশন বলতে, ক্লাসে যাওয়া, পড়া, পরীক্ষা দেয়া। এইগুলা নাই। এইসব না থাকার দরুন, স্কুল মাথার মধ্যে যে ভরে দিছে লার্নিং মানে অই রিচুয়ালের মধ্য দিয়া যাইতে হবে, তাই আমাদের লাইফরে শেখার জার্নি মনে হয় না।
লাইফরে লার্নিং হিশাবে না দেখলে আপনি নিজে এই লার্নিং জার্নিরে ছোট করে দেখবেন, নিজের জন্য খারাপ এবং অন্যদের লার্নিংরেও অবজ্ঞা করে দেখবেন, যদি না তারা কোন স্কুলে অর্থাৎ রিচুয়ালের মধ্য দিয়া শিখে।
অনেক স্পেশাল বিষয়াবলী স্কুলের রিচুয়ালের ভেতর দিয়া শিখতে হয়। ওই শেখায় ক্রেডিবিলিটি তৈরি হয়, এবং তা ভালো।
কিন্তু লাইফের মূল লার্নিং জার্নিটা ওইরকম না। এইখানে সব মানুষই সময়ের সাথে সাথে শিখে।
প্রায় প্রতিটা ইন্টারেকশনে বা ঘটনায় কোন নতুন তথ্য পায়, ইনসাইট পায়, আগের তথ্য ইনসাইটের লগে কানেক্ট করার জায়গা পায়।
এইভাবে লাইফরে দেখলে, সাধারণ ভাবে ডমিন্যান্ট যে দেখা প্রচলিত আছে, সফলতা বা ব্যর্থতা দিয়ে দেখা, তা থেকে কিছুটা বের হওয়া যায়।
সফলতা ও ব্যর্থতা আইডেন্টিটি বা ইগোর লগে জড়িত হয়ে পড়ে। যেমন কেউ কোন কাজে ব্যর্থ হইলেন, তখন অন্যরা ধরে নেয় তার হয়ত প্রতিভা বা দক্ষতা কম, এবং তিনি নিজেও এইভাবে দেখতে থাকেন। এটা দ্রুত আইডেন্টিটির লগে জড়িত হয়ে যায়। যেমন বলা হয়, অমুক সফল ব্যক্তি। হয়ত তিনি টায়ারের ব্যবসায় সফল হইছে। সত্য হলো, তিনি ওই ব্যবসায় সফল হইছেন। ব্যক্তি হিশাবে সফল কি না, বা ব্যক্তি হিশাবে কাউরে সফল বলতে কী কী ক্রাইটেরিয়া আছে, এগুলা তো নাই আসলে। এবং দুনিয়ার বাস্তবতায় এটা একরকম অসম্ভবই।
রাজা ক্রইসাস সফলভাবে পনের বছর ধরে রাজত্ব করে যাচ্ছিলেন। রাজ্যে উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি হচ্ছে। গ্রীক সেইজ সলোনরে রাজা জিজ্ঞেস করছিলেন, আপনার দেখা সবচাইতে সুখী ও সফল ব্যক্তি কি আমি নই?
সলোন বলছিলেন, না। কারণ মানুষের ভাগ্যে কী আছে তা তার মরার আগে বলা যায় না।
ক্রইসাস বিশ্বাস করেন নাই।
এর কিছুদিন পরেই তার ছেলে মারা যায়। পারস্যের রাজা আক্রমণ করেন, পরাজিত ও বন্দি করেন ও শূলে চড়ানোর ব্যবস্থা করেন ক্রইসাসকে।
ক্রইসাস শূলে চড়তে যাবার সময় চিৎকার করে বলছিলেন সেইজ সলোন আপনি সেইদিন কী বলেছিলেন, তা আমি আজ বুঝতে পারলাম।
পারস্যের সম্রাট এই কথা শুনে এড় অর্থ জানতে চান। ক্রইসাস খুলে বলে ঘটনাটা। তখন আবার পারস্যের রাজা ক্রইসাসের শাস্তি মওকুফ করে দেন।
লাইফরে সফলতা ও ব্যর্থতা মডেলে দেখার এই এক বাস্তবিক অসুবিধা, অনেক জিনিশ অনিশ্চিতের অধীনে।
পক্ষান্তরে, লার্নিং দিয়ে দেখলে, বেশি লজিক্যাল। কারণ কমবেশী লার্নিং সব এনকাউন্টারেই থাকে। যেমন এই স্ট্যাটাস পড়াতেও আছে।
লার্নিং দিয়ে দেখলে, আপনার চেষ্টা থাকবে কীভাবে এইটারে আরো বেটার করা যায়, এবং এর মাধ্যমে সেলফ লার্নিং বাড়ানো যায়। সেলফ লার্নিং বা নিজেরে জানো বলা হয়, কিন্তু কীভাবে জানবে মানুষ? সেইটাও সক্রেটিস বলে গেছেন, লাইফরে এগজামিন করে। এই এগজামিন হইল এক্সপেরিয়েন্স করা, যেটা সফলতা ও ব্যর্থতার জাজমেন্টাল মডেলে সম্ভব হয়, কেবল লার্নিং এর মডেলে হয়। আপনি লাইফরে এগজামিন করবেন, শিখবেন, এবং এই শেখাটারে নিজের সেলফ লার্নিং এ মেলাবেন।
সব মানুষই এইভাবে লাইফ লিড করেন কমবেশি। এইজন্য বয়স্ক লোকদের কিছু লাইফ ইনসাইট হয়। বাট, ইয়াং বয়েস থেকে সচেতনে করতে পারলে অনেক অহেতুক স্ট্রেস থেকে বাঁচবেন, এবং বেটার ভাবে লাইফরে ও নিজের সেলফ লার্নিং এর জার্নিরে ম্যানেজ করতে পারবেন।
স্টিভ জবসের একটা লেকচার আছে, যেইখানে একসময় তিনি জিগান আপনারা কারা ম্যানিফেকচারিং থেকে আসছেন। অল্প কিছু লোকে হাত তুলেন। তখন জবস জিগান তাইলে বাকিরা কই থেকে, কারা কনসালটেন্সি থেকে আসছেন? অনেক লোক হাত তুলেন। তখন জবস বলেন, এইটা তো খারাপ, মানে কনসালটেন্সি জিনিশটা খারাপ এমন না, কিন্তু আপনে কনসালটেন্ট হিশাবে বিভিন্ন কোম্পানিতে কাজ করতেছেন অল্প অল্প সময়ে, আপনে হালকা একটা ভিউ পাইলেন। কিন্তু কয়েক বছর ধরে যারা কাজ করবে অই কোম্পানিতে, তারা বেটার ভিউ পাবে, তাদের লার্নিং ভালো এবং দ্রুত হবে, কারণ তাদের প্রতিটা সিদ্ধান্তের জবাবদিহিতা থাকবে, তারা জিনিশটারে ঔন করবে।
এইখানে তিনি যেটা পয়েন্ট আউট করছেন তা ঠিক, তার এনালাইসিসের মডেল ছিল লার্নিং এর মডেলে।
৯। হাই এজেন্সি ও লো এজেন্সির পার্থক্য বুঝেন। হাই এজেন্সি ব্যক্তি হইয়া উঠেন।
কিছু মানুষ অনুভব করে তাদের লাইফের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ আছে। কী তারা চায় এই বিষয়ে তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারে, এবং উদ্দেশ্যে পৌঁছাতে কী করতে হবে, সেইটাও করে ফেলতে পারে।
ধরা যাক, আপনি কোন এক দেশে জেলখানায় বন্দি আছেন, জেল থেকে পালাইতে চান কিন্তু বাইরের কোন লোকের সাহায্য লাগবে যে জেল ভেঙ্গে আপনারে পালাইতে হেল্প করতে পারে। এই অবস্থায় আপনি আপনার পরিচিত কারে ফোন দিবেন?
যারে দিবেন সে আপনার দেখায় সবচাইতে হাই এজেন্সি পারসন।
অন্যদিকে লো এজেন্সি পারসনেরা মনে করে তাদের লাইফের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ নাই। হয়ত ভাগ্য বা পরিবেশ বা অন্য কিছু তাদের জীবন নিয়ন্ত্রণ করছে।
প্রায় প্রতিটা মানুষের বাচ্চা এজন্সি নিয়াই জন্ম নেয়। কারণ তারে খাবারের জন্য কানতে হয় বয়া বুঝাইয়া দিতে হয় যে সে ক্ষুধার্ত। তার কাছে বড় হইতে হইতে কী রিসোর্স আছে, ও কী পরিবেশে বড় হইতেছে, এইগুলা অনেক কিছু পরবর্তীতে তার মধ্যে এজেন্সিরে প্রভাবিত করে।
কেউ হয় হাই এজেন্সি, কেউ লো এজেন্সি।
এটা শিক্ষা বা কে কতটুকু জানে এর উপর বেশি নির্ভর করে না। অনেক লোক আছেন পড়ালেখা নাই কিন্তু হাই এজেন্সি ফিল করেন।
নিজের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, এবং সেইগুলা অর্জন করতে কী করতে হবে, এইসব সিদ্ধান্ত নিতে ও সে অনুযায়ী কাজ করতে একজন মানুষের চিন্তার ক্ষমতা দরকার, যার মাধ্যমে সে বিভিন্ন অপশন থেকে তার উদ্দেশ্য ঠিক করে নিতে পারবে। তার নিজের আবেগরে বুঝার ও নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা তার লাগবে। তার বিশ্বাস থাকতে হবে যে সে পারবে।
কেউ কোন এক সময়ে লো এজেন্সি অর্থাৎ পাওয়ারলেস ফিল করতে পারে। কিন্তু সে যদি চেষ্টা করে তার এজেন্সি বাড়াতে তাহলে এই স্কিল ডেভলাপ করবে।
কিভাবে সে করতে পারে?
প্রথমে তারে দেখতে হবে, তার বিশ্বাসগুলা কেমন। সে কী মনে করে তার লাইফ ও সাকসেসে তার নিয়ন্ত্রণ আছে, নাকি মনে করে ভাগ্য, সময়, ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে সাকসেস।
বের করতে হবে আপনি হাই এজেন্সি, লো এজেন্সি নাকি মাঝামাঝি।
এরপরে স্ট্র্যাটেজিক থিংকিং করতে হবে, উদ্দেশ্যরে সামনে রেখে। যেমন, ছোট এক উদ্দেশ্য নিলেন, এখন সেটাতে পৌঁছাতে কী কী করতে হবে, সে অনুসারে কাজ করা। দুয়েকটা ছোট ছোট ক্ষেত্রে সফলতা আসলে বিশ্বাস বদলে যেতে পারে।
হাই এজেন্সি পারসন চিনতে পারাও একটা স্কিল।
কিছু বৈশিষ্ট্য বা সিগনাল দেখে বুঝতে পারেন এরা সম্ভাব্য হাই এজেন্সি পারসন।
অল্প বয়েসে এদের অদ্ভুত শখ থাকতে পারে, যেগুলা সমাজের বিরুদ্ধে যায়। কেউ অল্প বয়েসে সমাজের বিরুদ্ধে যাবার প্রেশার সামলাতে পারলে বড় হয়েও একই কাজ করতে পারে।
যখন দেখবেন এরা স্টেরিওটাইপ মানে না। সাধারণত সমাজের নানা স্টেরিওটাইপ আছে, যেমন অভিনেতা এরকম হতে হবে, লেখক এমন হবে, গায়ক এমন হবে, ইত্যাদি সব পেশা বা বিষয় ধরে ধরে। কিন্তু যখন দেখবেন সে রেসলিং প্লেয়ার কিন্তু লেখে কবিতা। অভিনেত্রী কিন্তু পড়ে দর্শন। কাজ করে মার্কেটিং এ কিন্তু অবসেসড প্রাচীন ইতিহাস নিয়ে, এইসব এরা যখন প্রকাশ করে তখন তারা ওই স্টেরিওটাইপের বিরুদ্ধে নিজের এজেন্সি চর্চা করে।
ইমিগ্র্যান্ট মেন্টালিটি আরেকটা সিগন্যাল। যখন কোন ব্যক্তি ইমিগ্র্যান্ট হয়, সে আগে বুঝতে পারে সিকতা ভুল জায়গায় আছে, তারে এখান থেকে বের হতে হবে। এইটা আইডেন্টিফাই করতে পারা ও বের হতে পারা বুঝায় সে হাই এজেন্সি পারসন। তারপরে, নতুন দেশে তারে জিরো থেকে শুরু করতে হয়। তাও ইমিগ্র্যান্টরা ভালো করে। কারণ এজেন্সি বেশি, এবং তারা নতুন জায়গার অপরচুনিটিরে বেশি ভ্যালু দিতে পারে।
পাঠঃ
আমি একটা বড় লেখা লিখেছি, জীবন ও জগত বুঝার আইডিয়া নামে, এটা পড়েন।
এইরকম লেখা পাইতে ফ্রি বা পেইড সাবস্ক্রাইব করে রাখুন।
হাই এজেন্সি এবং লো এজেন্সি বিষয়টা আবার পড়লাম। এটা অসাধারণ ব্যাপার। নিজের এজেন্সি ডেভেলপ করতে কাজ করবে।
Good read, thanks!