সাম্প্রতিক দেখলাম, টিভি অভিনেতা অভিনেত্রীদের একাংশ হিরো আলমের বিরুদ্ধে এক হয়ে বসে কথা বলতেছেন। তারা "রুচির দুর্ভিক্ষের" বিরুদ্ধে।
রুচি বিষয়ে আগের লেখায় পিয়েরে বর্দিউর রুচি ও সোশ্যাল ক্যাপিটালের সম্পর্ক দেখাইতে, এই পয়েন্ট আনছিলাম যে, রুচি আর্থ সামাজিক ক্লাসের উপর নির্ভর করে। ফলে, এই রুচিগত যুদ্ধ এক ক্লাসের বিরুদ্ধে অন্য ক্লাসের। এবং আমার উপসংহার ছিলো, এটা ক্ষমতার যুদ্ধ।
এই টিভি অভিনেতা অভিনেত্রীদের হিরো আলমের বিরুদ্ধে একাট্টা হওয়া সেই উপসংহারকে শক্তিশালী করে।
ভাবেন, কেন এইভাবে তাদের এক হইতে হইল আলমের বিরুদ্ধে? তাদের কি এমন নাশ হইতেছিল? মানুষ কোন পর্যায়ে পড়লে এইভাবে এক হয়, যেন একটা যুদ্ধ লড়তেছে?
এই ভিডিওতে, দেখা যাচ্ছে বৃন্দাবন দাসের রেসিস্ট ও ফ্যাসিস্ট অগণতান্ত্রিক অবস্থান।
হিরো আলম ইলেকশন করছে, বা ওবায়দুল কাদেররে চ্যালেঞ্জ করছে, এটারে কতো খারাপ ভাবে দেখতেছেন এরা। অথচ, এটাই গণতান্ত্রিক।
ওবায়দুল কাদেররে রাজা মেনে বসে থাকতে হবে বৃন্দাবন? রাজতন্ত্র চলতেছে দেশে?
বৃন্দাবন ও আরো যারা এই প্রসঙ্গ আনেন, তারা সরকাররে ক্ষেপাইতে চান, যে দেখো, তোমাদেরও কী অপমান করলো, এখন এরে কিছু একটা করো।
বৃন্দাবন কন্সপিরেসি থিওরি দিতেছেন। যেমন, এক বাহিনী আছে আলমের পেছনে, যার জন্য দেশের বড় পত্রিকা তার বিষয়ে প্রকাশ করে লেখা, ইত্যাদি। এইরকম কোন লোক বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র কন্সপিরেসি করা হয় ঘৃণা তৈরির জন্য, এন্টিসেমেটিজমের লজিক, ইহুদিরা সব কন্ট্রোল করতেছে।
এবং, তেলের কি ফলন, বৃন্দাবন বলতেছেন, তিনি ছাত্র ইউনিয়ন করেছেন। কিন্তু সুকান্তের কবিতার লাইন বলতে গিয়া মুজিবের নাম নিলেন। ছাত্র ইউনিয়ন করা বৃন্দাবন কি এটা জানতেন না, লাইনটা ছিলো, "বিপ্লব স্পন্দিত বুকে, মনে হয় আমিই লেনিন"?
আরেকটা ইন্টারেস্টিং জিনিশ খেয়াল করেন। বৃন্দাবন হিরো আলমের নাম না নিয়ে ওই লোকটা ওই লোকটা বলতেছেন। মানে, তার নাম নেয়াই যাবে না এমন! একই কাজ মামুনুরও করতেছেন এখন। এই নাম না নেয়াটারে বৃন্দাবনদের অবজ্ঞার প্রকাশ, তারা আর আলমরে গুরুত্ব দিতে চান না। কিন্তু আমি বলব, এই নাম নেয়াটাতেই আলমরে বেশী গুরুত্ব দেয়া হইল। যেমন, মনোথিজমের শুরুর দিকে তাদের গড নাম বলতেন না, তার নাম নেয়া যাইত না, তিনি যা তিনি তাই। পাওয়ারের প্রতীক হিশাবে এটা ছিল তার বৈশিষ্ট্য, ভয়ে বা অবজ্ঞায় বৃন্দাবনেরা ঐ স্থান আলমরে দিলেন। এইরকম আধ্যাত্মিক উচ্চ আসনে কেন তারা নিতেছেন আলমরে?
বৃন্দাবন, কন্সপিরেসি তত্ত্ব দিয়েছেন। অনেকে নাকি আছে আলমের বিরুদ্ধে পক্ষে, তারা এইসব করাচ্ছে। দেশের সংস্কৃতি, রুচি ধ্বংস করতে। হিটলারের নাৎসি লজিকের মত শোনালেও এর সম্ভাব্যতা যে নাই, তা নয়। আলম যেই পরিমাণে ভাইরাল, ও ভাইরালিটি ধরে রাখতে তার যে সক্রিয়তা ও প্রতিভা, এই বিবেচনায় কোন দেশী বিদেশী এজেন্সি তারে ব্যবহার করতেই পারে।
যেমন, আগামী ইলেকশনে আলম যদি দাঁড়ায়, ও পাশ করে, এটা দেখাইয়া সরকার বলতে পারে ইলেকশন নিরপেক্ষ হইছে।
আলমের ইলেকশন করা ও পাশ করা নিত্য নতুন ভাইরাল ইস্যু আনবে, যা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু সরাইয়া দিতে স্বক্ষম।
বৃন্দাবনের কন্সপিরেসি লজিকে বলা যায়, বৃন্দাবনেরাই কি আলমরে গুরুত্বপূর্ণ করতে নেমেছেন, কোন এজেন্সির কালচারাল ফ্রন্টের ফাইটার হিশেবে?
অনেকে ভাবতে পারেন ডিসি হারুণ হয়ত এইজন্যই আলমরে মাথায় হাত দিছেন। এত সহজ না, সরকারী এজেন্সি পিছনে থাকলে এত সামনা সামনি হবে না। হারুণ সাহেব এটা করছেন নিজেরে ধনী গরীব নির্বিশেষে সবার জন্য, এটা দেখাইতে। এখন অবস্থা এই যে, আলমের পক্ষ নিয়া নিজেরে জনমানুষের পক্ষের দেখানো যায়। এক অদ্ভুত মার্কেটিং ভ্যালু তৈরি হইছে আলমের।
এখানে নানাদিকের ফোর্স ক্রিয়াশীল। যেমন পপুলার চিত্র পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান মামুনুর রশীদের বক্তব্যের পরে, সরাসরি আলমের পক্ষ নেন। তিনি জিজ্ঞাস করেন, মামুনুর কালচারের জন্য কী করেছেন ইত্যাদি। এইখানে সোহানের অবস্থানের কারণ আলমের প্রতি ভালোবাসা না, নাটক অঞ্চলের প্রতি বিরোধিতা থেকে। দেশের নাটকীরা পপুলার চলচ্চিত্র পাড়ারে কম শৈল্পিক মনে করে, ও একটা অবজ্ঞাই করে। এইখানে একটা রুচি কেন্দ্রিক ফাইট আছে, যা মূলত ক্ষমতার ফাইট, এবং সহজ ভাষায়, হালুয়া রুটির ভাগ নিয়া দুই পাড়ার ফাইট আছে, অপারেশন জ্যাকপট ঝন্টু পরিচালনা করার কথা যখন পাবলিক হলো, তখন এ নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। পপুলার চলচ্চিত্র পাড়া মনে করে সরকারী অনুদান নাটকীরা নিয়ে নেয়। এই দ্বন্দ্বের অংশ হিশাবেই সোহান আলমের পক্ষে। নাটকীরা আলমের বিরুদ্ধে যত তীব্র অবস্থান নেবে, ততোই পপুলার চলচ্চিত্র পাড়া আক্রমণটা তাদের দিকেই আসতেছে বুঝতে পারবে, ও আলমের পক্ষ নিতে থাকবে আরো বেশী।
আলম কী করে, হাস্যকর না ট্রলের বস্তু হিশাবে ভাইরাল হচ্ছে বিদেশী মিডিয়ায়, এসব অগুরুত্বপুর্ণ। আলমের এই বুদ্ধি আছে নিজেরে নিয়মিত ভাইরাল রাখার। সব সময় অন্তর্নিহিত ভ্যালু দেখে বস্তুর ভ্যালু নির্ধারীত হবে এমন না, অন্তত এই ইন্টারনেটের সময়ে তো আরো না। এটা ডজকয়েনের সময়, একটা ফান কয়েন, যার অন্তর্নিহিত কোন ভ্যালুই নাই, ২০২১ সালের মে মাসে যার মার্কেট ক্যাপ ছিলো ৮৮ বিলিয়ন ডলারের উপরে।
এবং আলমের কাছে আছে অত্যাশ্চর্য এক পাওয়ারফুল কার্ড, যেটা নিয়া স্ট্যাটাসে লেখছিলাম।
হিরো আলমের কার্ড একটাই, এবং সে এটা সুযোগ পাইলেই খেলে দেয়। আজ আমি গরীব বলে, অসুন্দর বলে। পাবলিক খায়। এটা এতদঞ্চলের জাতীয় খাবার আগে থেকেই। গভর্নর রাখাল বালকের গল্প প্রচলিত, বা র্যাগস টু রিচেস স্টরি লাইন সমগ্র দুনিয়ারই এক প্রধান স্টরি লাইন, ভনেগাট এই লেকচারে দেখাইতেছেন। পুরা দুনিয়াই খায়। এবং পপুলার যারা হয় তারা প্রায় সবাই চান্স পাইলেই এটা খেলে, যেমন নায়ক আরেফিন শুভ একবার বলছিলো একশো বা এইরকম কত সামান্য টাকা নিয়া আসছিলো ঢাকায়। হিরো আলমের কার্ডে এই র্যাগস টু রিচেসের যাবার স্ট্রাগল, আরাভ খানও তার গল্প এই মডেলেই উপস্থাপন করছিলো। কিন্তু আলমের মত এত সার্থকভাবে বার বার পাবলিকরে খাওয়াইয়া এই খাদ্যের এতো পাওয়ার এর আগে কেউ দেখাইতে পারে নাই।
---
সর্বশেষ প্রকাশিত প্রিমিয়াম লেখা, বেশী তথ্য কি ইনভেস্টমেন্ট ডিসিশন ভালো করে?