এই লেখা এই আধুনিক সময়ে একজন মানুষের কেরিয়ারের ভিত্তিচিন্তা বা ফাউন্ডেশন নিয়ে। এর উপরই নির্মিত হবে তার কেরিয়ার ও কেরিয়ারের অন্যান্য কার্যাবলী।
এর উদ্দেশ্য একটা সফল, কার্যকর ও হ্যাপি কেরিয়ার তথা লাইফ।
>
আপনার কাছে কী রিসোর্স আছে প্রথমে চিন্তা করেন। সময় আছে, কাজ করার এবিলিটি আছে, বুদ্ধি আছে, জ্ঞান আছে।
এইসব মিলাইয়া আপনি কোন "কর্মী বা এমপ্লয়ী" না। এইটা হচ্ছে প্রথম কথা।
আপনি নিজে একটা কোম্পানি। যেই কোম্পানির উদ্দেশ্য আপনার জন্য প্রফিট, হ্যাপিনেস, সম্মান ইত্যাদি আনা।
এই কোম্পানির সিইও আপনারেই হইতে হবে।
নিজেরে নিজের এই কোম্পানির সিইও না ভাবতে পারলে, আপনার ভালো কেরিয়ার হবে না।
>
অনেক মানুষ আছে, একটা জিনিশ শেখার মত যদি সামনে আসে, সে ভাবে এইটা কি ইমিডিয়েট আমার কাজে লাগবে। সে একজন কর্মীর মত চিন্তা করে।
আপনারে ভাবতে হবে, ওই নতুন জিনিশ শেখাটা আপনার জন্য হলো, আপনার কোম্পানিতে আরেকটা অংশ যোগ করা। যেই অংশ এখন হয়ত কাজে লাগছে না, কিন্তু কোন সময় কাজে লাগতে পারে। যদি কোনদিন নাও লাগে এটা আপনার এই "আমি" কোম্পানিরে সমৃদ্ধ করবে।
সময় ও সুযোগ থাকলে শেখার ক্ষেত্রে "কী লাভ হবে" ভাববেন না। লাভ হবেই।
>
একজন যদি তার স্টার্টাপ শুরু করেন, যেমন স্টিভ জবস বা জাকারবার্গ তাদের কোম্পানি শুরু করছিলেন, তারা কী করে?
ইনভেস্টর খুঁজে। ভালো এমপ্লয়ী খুঁজে। নিজেদের স্ট্র্যাটেজি তারা ঠিক করে। মার্কেটিং প্ল্যান ঠিক করে। প্রডাক্ট বানায়।
একজন উদ্যোক্তার কাছে কাজটা ৯ টায় শুরু ৫ টায় শেষ না। অন্তত শুরুর দিকে সে কাজই করে কোম্পানির জন্য, কোন নির্ধারীত সময় নেই। তার উদ্দেশ্য থাকে কীভাবে কোম্পানিটারে সফল করা যায়।
আপনার কেরিয়ারের জন্যও আপনারে একইভাবে ভাবতে হবে।
কোথায় কী শিখতে হবে বের করতে হবে। মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
শুরুর দিকে নিজেরে প্রমাণ করতে বেশী কাজ করতে হবে।
>
আপনি যদি জব পোস্টের অপেক্ষায় থাকেন তাহলে দেরী হয়ে যাবে।
একটা স্টার্টাপ ইনভেস্টরদের সাথে যোগাযোগ করে সাধারণত।
আপনাকে সুযোগ বুঝতে হবে ও মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
>
যোগাযোগ করতে গেলে একটা স্টার্টাপ কখনো বলবে না, আমি অসহায়, আমাকে ফান্ড দেন।
সে দেখাবে কীভাবে সে কার্যকর প্রডাক্ট তৈরি করেছে, এবং কীভাবে এতে ইনভেস্ট করলে ইনভেস্টরের লাভ হবে।
সে ইনভেস্টরকে বেনিফিট দেখায়। ইনভেস্টর নিজের বেনিফিটের জন্যই ইনভেস্ট করে।
আপনারে যে চাকরীতে নিবে সে আপনার উপকারের জন্য নিবে না। আপনি তারে কী বেনিফিট দিবেন, তার কোম্পানিতে কী ভ্যালু এড করবেন, তা দেখে নিবে।
>
একটা কোম্পানি খুব ভালো প্রেজেন্টেশন নিয়ে গেলো, কিন্তু দেখা গেল সে বাস্তবে কিছুই করে নাই। এমতাবস্থায় ইনভেস্টররা তারে ফান্ড দিবে না।
আগে নিজের প্রডাক্ট দেখাতে হবে, ভ্যালু দেখাতে হবে।
আপনিও যদি সেরা রেজুমি নিয়া যান, কিন্তু ভ্যালু দেখাতে না পারেন, কাজ হবে না।
রেজুমিকে গুরুত্ব কম দিয়া ভ্যালু তৈরির দিকে নজর দেন।
পাবলিকলি ভ্যালু তৈরি করেন।
যে জব করতে চান, জব পাওয়ার আগেই ওই কাজটা করতে থাকেন। মানুষরে দেখান যে আপনি কাজটা পারেন।
এটা আপনার কার্যকর রেজুমি হিশাবে কাজ করবে।
অনেক সময় ইনভেস্টররা স্টার্টাপদের সাথে যোগাযোগ করে ইনভেস্ট করার আগ্রহ নিয়ে। কারণ তারা দেখতে পায় কোম্পানিটি ভালো করছে, এখানে ইনভেস্ট করলে লাভ হবে।
আপনিও ভ্যালু তৈরি করতে থাকলে, নিজের দক্ষতা দেখাতে পারলে একইভাবে এমপ্লয়ারদের আগ্রহ তৈরি করতে পারবেন।
>
এর জন্য আপনারে ভ্যালু তৈরি করতে হবে, মানুষরে তা দেখাতে হবে।
সেইজন্য, আপনার সোশ্যাল মিডিয়া আপনার লাইভ রেজুমি।
আপনি কর্মী না, নিজেই একটা কোম্পানি।
আপনার প্রতিটা ইন্টারেকশন আপনার অভারল ব্র্যান্ডের সাথে জড়িত।
আপনি দেখা গেল সারাদিন নেগেটিভিটি পোস্ট করে বেড়ান। এটাই হবে তখন আপনার ব্র্যান্ড।
কোন কোম্পানি চাইবে তাদের মধ্যে একজন নেগেটিভ মাইন্ডসেটের লোকরে নিতে?
>
একজন ডুয়ার হইয়া উঠেন।
আপনার নিজের যে কোম্পানি, নিজের ব্র্যান্ড, এর মূল স্তম্ভ নির্ভরযোগ্যতা ও ডুয়ার এটিচিউড।
আপনার উপর যেন মানুষ নির্ভর করতে পারে।
আপনি কথা দিয়ে রাখেন না, ট্রল করতে থাকা ফাতরা, এইরকম হলে আপনার কোন দাম নাই।
ব্র্যান্ড মানেই নির্ভরযোগ্যতা। ব্র্যান্ডের প্রডাক্ট ভালো হয়, এই বিষয়ে মানুষের আস্থা থাকে। ব্র্যান্ড এইটা ধরে না রাখলে তাদের ব্র্যান্ড ভ্যালু হারায়।
ডুয়ার এটিচ্যুড মানে, এইটা করতে হবে, ঐটা করতে হবে এমন পরামর্শের বাইরে গিয়ে করে দেখানো। সমাজ বদলের নসিহত দিবেন না, যেটা পারেন করে দেখান।
যে করে দেখায়, তারটা ছোট হলেও গুরুত্ব রাখে।
যে পরামর্শ দিতেই থাকে এইটা করতে হবে, ওইটা করতে হবে, সে একটা সহজ কাজ করে যায়। উপদেশ পরামর্শ সবাই দিতে পারে। যা ইচ্ছা তা উপদেশ দেয়া যায় সামাজিক মাধ্যমে।
বড় কোম্পানিগুলাতে ডুয়ারদের দাম।
এই করতে হবে, ওই করতে হবে বলতে থাকা, কিন্তু নিজে কিছু করতে না পারাদের দাম নাই। এরা বোঝা।
বোঝা কেউ টানতে চায় না।
>
দূরের বড় লক্ষ্য সেট করে দৌড়াবেন না।
প্রতিদিনের কাজের সিস্টেম তৈরি করুন।
সফলতার জন্য দূরের বড় লক্ষ্য নয়, প্রতিদিনের সিস্টেম জরুরী।
প্রতিদিনের অল্প অল্প উন্নতি ঐ বড় লক্ষ্য, বা তার থেকেও দূরে নিয়ে যাবে।
>
সত্যিকার জানার আগ্রহ তৈরি করুন।
জানার আগ্রহ জ্ঞানের চাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
যে জ্ঞানীর জানার আগ্রহ শেষ, সে আর শিখবে না।
যে নতুন বিদ্যার্থীর সত্যিকার জানার আগ্রহ বেশী, সে ওই জ্ঞানী থেকে গুরুত্বপূর্ণ।
সমস্যা, বিষয়, কাজ, স্ট্র্যাটেজি নিয়ে সত্যিকার আগ্রহ তৈরি করুন।
>
আবার, নিজে যেহেতু আপনি আপনার কোম্পানি, প্রতিদিন নলেজ বাড়াতে থাকুন এই কোম্পানিরে শক্তিশালী করতে।
এর বিভিন্ন দিক বাড়াতে।
কোম্পানি এখানে সামগ্রিকতা, এজ এ হোল বুঝাতে বলা। আপনি কোন কর্মী না।
>
যা ঘৃণা করেন তা করবেন না। করলে, এটা আপনারে আনহ্যাপি করবে।
মানুষের নামে নিন্দা কুৎসা করবেন না।
অন্যের সামনে মানুষের কুৎসা, পরনিন্দা যদি করেন, আপনারে লং রানে সবাই কুৎসা, পরনিন্দা কারক হিশাবে চিনবে। স্পন্টেনাস ট্রেইট ট্রান্সফারেন্স নামে এক বিষয় আছে, আপনি যা নিন্দা করেন অন্যের বিষয়ে, মানুষ আপনার কথা ভাবার সময় ওই নিন্দার বৈশিষ্ট্যগুলিই মাথায় আনে। এইজন্য দেখবেন, কোন পরনিন্দা কারকরে কেউ কখনো ভালো বলে না। কেরিয়ারের জন্য এইটা ডেডলি হইতে পারে। এটা আপনার ব্র্যান্ড ভ্যালুর জন্য ক্ষতিকর।
>
কাউকে ঈর্ষা করবেন না।
ঈর্ষা ব্যক্তিকে নীচ ও লুজার করে তোলে।
সফলেরা নিজের দিকে ফোকাস দেয়, ও সামনে এগিয়ে যায়।
আপনার চাইতে অনেকে অনেক তাড়াতাড়ি অনেক বেশী পেয়ে যাবে, এটা আপনার জন্য কোন ট্র্যাজেডি না।
দুনিয়া কোন জিরো সাম গেইম না।
তার পাওয়া, সফলতা যেন আপনার মনোবেদনার কারণ না হয়। হলে এটা আপনার জাজমেন্টকে প্রভাবিত করবে।
>
আপনার সব ভালো যাবে এটা ভাববেন না।
অনেক কাজ ব্যর্থ হবে।
ব্যর্থ হলে নিজের দিকে ফোকাস দিন।
পরের স্টেপে মনোযোগ দিন।
সব স্ট্র্যাটেজি, পরিশ্রম ঠিকঠাক, তাই সব সফল হবে, এমন না।
কাজের ফলাফলে অন্যান্য অনেক বিষয়ের প্রভাব থাকে।
কিন্তু ব্যর্থ হলে, নিজে কী ইম্প্রুভ করতে পারতেন, নিজের কোন জায়গায় উইকনেস ছিলো সেদিকে ফোকাস করে কাজ করে যান।
>
কোন সফলতায় বা ব্যর্থতায় আত্মহারা হবেন না।
সফলতা ও ব্যর্থতা দুইটাই চলে যাবে।
কিন্তু এইগুলার প্রভাবে ভুল বিচার করে যা করে ফেলবেন, তার ফল বয়ে বেড়াতে হবে।
————————-
কেরিয়ার নিয়ে নিয়মিত লেখব। এই সংবিধান দিয়ে শুরু করলাম।
কেরিয়ার বিষয়ে যে একটা লেখা আপনার পড়া উচিত
If your articles were sorted by topic, it could help readers easily locate the articles they are interested in and encourage further reading.
এর চেয়ে ভাল লেখা আর কি হতে পারে আমার জানা নাই।ধন্যবাদ।