সকাল দশটার কিছু সময় পরেই ইয়োশিকোর কূটনীতিক স্বামী বিদেশী অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। এখন ইয়োশিকোর একান্ত সময়। তিনি তার পড়ালেখা করার কক্ষে চলে গেলেন। “কে” ম্যাগাজিনের গ্রীষ্মকালীন বিশেষ সংখ্যায় পাঠাতে হবে যে গল্পটি তার বাকী কাজ শেষ করতে হবে।
ইয়োশিকো বিখ্যাত লেখিকা। তার সাহিত্যিক প্রতিভা এবং ঝরঝরে গদ্য তাঁকে এনে দিয়েছে বিপুল খ্যাতি। এমনকী তার কূটনীতিক স্বামীর খ্যাতিও তার লেখক খ্যাতির কাছে ম্লান হয়ে পড়ে।
প্রতিদিন ইয়োশিকো প্রচুর চিঠি পান। তার লেখার প্রশংসা করে সেসব লেখা মূলত। সেইদিন সকালেও তার ব্যতিক্রম ছিল না। তিনি ডেক্সে বসেই দেখতে পেলেন আজ সকালের ডাকে আসা চিঠির স্তুপ। এই চিঠিগুলির প্রায় সবই একই ধরনের হয়। একই ধরনের কথাবার্তা। তবুও ইয়োশিকো চিঠিগুলি পড়েন, একঘেয়ে বা আগ্রহউদ্দীপক যাই হোক না কেন।
ছোট চিঠিগুলি প্রথমে নিয়ে তিনি দ্রুত পড়ে ফেললেন। এরপর আসল বিরাট এক চিঠি। বেশ কিছু কাগজভর্তি মোটা খাম। মনে হচ্ছে কোন পান্ডুলিপি। যদিও পান্ডুলিপি কেউ পাঠাবে এমন তাকে বলে নি তবুও এভাবে পান্ডুলিপি পাওয়া অস্বাভাবিক না তার জন্য। অনেক লেখক হতে চাওয়া লোকেরা তার কাছে পান্ডুলিপি পাঠায় তার সমালোচনা জেনে নেবার জন্য। এই ধরনের লেখাগুলি প্রায়ই হয় অহেতুক দীর্ঘ, অর্থহীন ও বিরক্তিকর লেখার প্রচেষ্টা।
ইয়োশিকো তবুও খামটি খুললেন। তিনি যা ভেবেছিলেন তাই। ভালোভাবে বাঁধাই করা একটি পান্ডুলিপিই। তবে কোন অজানা কারণে কোন শিরোনাম নেই, লেখকের নামও নেই। শুরু হয়েছে হঠাৎ করে,
“প্রিয় ম্যাডাম”
এক মুহুর্তে ইয়োশিকো’র মনে হল এটি হয়ত সাধারণ চিঠিই। পরক্ষণেই তার নিচের কয়েকটি লাইনে চোখ গেল। ধীরে ধীরে তিনি অদ্ভুত বর্ননার মধ্যে মগ্ন হয়ে পড়লেন। তার কৌতুহল গিয়ে ঠেকল সর্বোচ্চ বিন্দুতে, এবং যেন কোন এক যাদুশক্তির অদ্ভুত মোহমায়ায় তা ছড়িয়ে পড়তে থাকল। তিনি পড়ে যেতে লাগলেন,
প্রিয় ম্যাডাম, সম্পূর্ন অপরিচিত হয়ে আপনাকে চিঠি পাঠানোর এই দৃষ্টতা আশা করি ক্ষমা করবেন। আমি যা লিখতে যাচ্ছি, ম্যাডাম, তা আপনাকে প্রচন্ড ধাক্কা দেবে। এমন ধাক্কা যার কোন সীমা পরিসীমা নেই। তবুও আমি আপনার কাছে আমার পাপ স্বীকার করে যাব, এবং পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বর্ননা করে যাব সেই ভয়ানক অপরাধের কথা; যা আমি করেছি।
অনেক মাস ধরে আমি নিজেকে লুকিয়ে রেখেছি সভ্যতার আলো হতে, যেভাবে স্বয়ং শয়তান নিজেকে লুকিয়ে রাখে। এই পৃথিবীতে একটি প্রাণীও নেই যে আমার কৃত অপরাধের কথা জানে। তা স্বত্ত্বেও আমার বিবেক আমাকে যন্ত্রণা দিতে শুরু করেছিল এবং আমি তা আর সহ্য করতে পারছিলাম না। আমার সবকিছু স্বীকার করে ফেলতেই হবে।
আমি এ পর্যন্ত যা লিখেছি তা নিশ্চয়ই আপনাকে হতবুদ্ধি করে ফেলেছে। তবুও, আমি করজোরে প্রার্থনা করছি আপনি দয়া করে আমার কথাগুলি পড়ুন। যদি আপনি পড়েন তাহলে সম্পূর্নভাবে বুঝতে পারবেন আমার মানসিক অবস্থা এবং এও বুঝতে পারবেন কেন কেবল আপনার কাছেই আমি সব স্বীকার করছি।
আমি যা যা বলতে যাচ্ছি তা এতই অদ্ভুতরকম ব্যতিক্রমী যে আমি বুঝতে পারছি না কোথা থেকে শুরু করব। সোজাভাবে বলতে গেলে আমি ভাষা পাচ্ছি না। মানুষের তৈরী ভাষা সেই ঘটনার ছবি সম্পূর্নরূপে আঁকতে অক্ষম বলে আমার মনে হচ্ছে। কিন্তু তবুও আমি ক্রমানুসারে ঘটনাগুলি একের পর এক বলে যাবো, যেভাবে সেগুলি ঘটেছিল।
প্রথমেই আমি বলে নিচ্ছি আমি দেখতে অতি কুৎসিত, বর্ননার অযোগ্য রকমের কুৎসিত। এই কথাটি মনে রাখবেন, নাহলে যদি আমার কাতরতম অনুরোধে আপনি আমার সাথে দেখা করার অনুরোধটি গ্রহণ করেন, সেই সময়ে হয়ত আমার কুৎসিত চেহারা দেখে আৎকে উঠবেন, ভয় পাবেন। বিশেষত মাসের পর মাস অস্বাস্থ্যকরভাবে বসবাসের পর আমার অবস্থা খুবই খারাপ। আমার এই অতি কুৎসিত চেহারার নিচে, আমার হৃদয়ের গভীরে সব সময়ই পবিত্র এবং অপ্রতিরোধ্য আবেগ সর্বদা বিদ্যমান ছিল; আপনি তা বিশ্বাস করুন।