১। খালেদ মুহিউদ্দীনের শো'তে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন একটা পলিটিক্যাল প্রশ্ন বা অনুরোধ করছিলেন আন্দালিব রহমান পার্থকে।
তার প্রশ্ন/ অনুরোধ ছিল, যেহেতু পার্থ তারেক রহমানের সাথে লন্ডনে গিয়ে চা কফি খাইলেন, তাহলে গনভবণে গিয়ে আপনার খালা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে এক কাপ চা খান।
এইটা একটা ইন্টারেস্টিং কথা।
কিন্তু খালেদ একজন দর্শকের মেসেজ পড়লেন। যেখানে দর্শক 'উদাত্ত' আহবান জানিয়েছেন টকশোকে যেন আহমদ হোসেন আত্মীয় করণ না করেন। এই দর্শককে সাবেক ছড়াকার ছড়াকার বলে খালেদ বলেছেন, এবং দর্শকও এইমত নিজের পরিচয় দিতে চাইছেন।
খালেদ তাকে আবার 'খুব বন্ধু'ও বলেছেন। কিন্তু তিনি যে বিএনপির সিনিয়র নেতা নজরুল ইসলাম খানের ছেলে, তা বলেন নাই। "বন্ধু" একটা সম্পর্কের টার্ম, একজন অচেনা দর্শক এবং আমাদের খুব বন্ধু দর্শক কতো আলাদা অর্থ ধারণ করে। অর্থাৎ, সম্পর্ক বা আত্মীয়তা যে শোতে অনুপস্থিত ছিলো তা না, এবং আগের এক শোতে দেখেছিলাম খালেদ প্রশ্ন করার সময়ে "বন্ধু হিশাবে" জানতে চেয়েছেন হারুণ সাহেবকে।
ইন্টারেস্টিং হইল এইবারে আহমদ হোসেনের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক প্রসঙ্গটারে নাই করে দিলেন খালেদ-অনিক। কেন? তিনি নাকি টকশোরে আত্মীয়করণ করছেন!
আরে এইটা তো গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। দেশে দুইটা প্রধান দল আত্মীয়তার ভিত্তিতেই নেতৃত্ব দখল করে আছে, নেতা পর্যায়ে বড় দলগুলির মধ্যে আত্মীয়তার ডালপালা বিস্তৃত। এই অবস্থায় কেন পলিটিক্যাল টকশোতে এই সম্পর্ক ও আত্মীয়তারে আনা যাবে না?
সম্পর্ক, আত্মীয়তা রাজনীতিই, আরও বেটার ভাবে বললে, রাজনীতি হইল সম্পর্ক ও আত্মীয়তারে নির্ধারণ করা।
যেমন আহমদ হোসেন মোক্ষম প্রসঙ্গটা আনছিলেন, এর উত্তরে পার্থ কী বলতেন এতে বুঝা যাইত তার সম্পর্ক-আত্মীয়তা, এবং সেইসাথে তার রাজনৈতিক অবস্থান আরও ক্লিয়ার হইত।
বেশী পলিটিক্যাল কারেক্টনেস দেখাইতে গিয়া বা রাজনীতি কম বুঝার কারণে অনিক-খালেদ সমবায় এটারে পণ্ড করলেন।
২। এক ছাত্রী ফেসবুক লাইভে এসে তার সার্টিফিকেট পুড়াইছিলেন হতাশা ও ক্ষোভে। মন্ত্রী পলক তারে ডাকাইয়া নিয়া চাকরি দিছেন।
মন্ত্রী পলকের এটা এক পপুলিস্ট অন্যায় কাজ।
কারণ আরও যারা সার্টিফিকেট পুড়াবে তাদের তিনি ডাইকা নিয়া জব দিবেন না।
দেখলাম আরও কেউ কেউ পুড়াচ্ছেন। তাদের জন্য রিস্ক-রিওয়ার্ড রেশিওতে রিস্ক বেড়ে যাচ্ছে, রিওয়ার্ড কমে যাচ্ছে। এর কারণ, এই ঘটনা আর অত এটেনশন পাবে না। এবং মন্ত্রী বা কারো পক্ষেই সম্ভব না সার্টিফিকেট পুড়াইতে থাকাদের চাকরী দেয়া।
ভাইরাল হইলেই কেবল বিষয়টার সুরাহা করতে লাগার পেছনে, ভাইরাল ক্ষোভ প্রশমন ও সেইখান থেকে জনতুষ্ঠি অর্জনের উদ্দেশ্য থাকে।
এর ক্ষতিকর দিক, ভাইরাল না হওয়া ব্যাপারগুলা দাম পাবে না।
মানুষ চাইবে খালি ভাইরাল করে দিতে। এতে অনেকের ক্ষতিও হতে পারে। আপনারা জেনে থাকবেন "ভাইরাল করে দে" একটা হুমকি হিশাবে প্রচলিত।
এই ভাইরাল হইতে চাওয়া এক্সট্রিম কর্মকান্ডের দিকে যেতে মানুষরে উৎসাহিত করবে।
যেমন, সার্টিফিকেট পুড়ানো একটা এক্সট্রিম কাজ। কিন্তু যেহেতু এটা ভাইরাল হয়ে গেছে, তাই একই কাজের এক্সট্রিমতা কমে গেছে।
ফলে এটেনশন পাইতে আরেকজন আরও ক্ষতিকর কোন কাজ করে ফেলতে পারে।
এটা যখন সর্বস্তরে প্রচলিত হবে, তখন ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
সেঁচের পানি না পাইয়া কৃষক আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন, এমন ঘটনা ঘটেছে এই বছরই।
আগামীতে হয়ত দেখা যাবে এমন ঘটনা লাইভে এসে ঘটানো হচ্ছে।
৩। মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার কইছেন, যারা অন্যায্য হাহা দে তাদের তিনি ব্লক করেন।
এটা নিয়ে হাসাহাসি হচ্ছে।
ব্যক্তি হিশাবে জব্বারের এই কথায় কোন ভুল নাই। অর্থাৎ যেভাবে তিনি হাহা রিয়েক্টরে দেখতেছেন।
একবার দেখছিলাম এক নটী স্বাক্ষাতকারে বলতেছেন, তিনি হাহা দিছেন পোস্টে তাই তারে অভিনয় প্রজেক্ট থেকে বাদ দেয়া হইছে।
এমন ভাবে বলতেছিলেন যেন তার হাহা নির্দোষ।
কিন্তু, হাসি কখনোই নিরপেক্ষ না। হাসি যোগাযোগের এক উপায়। এর মাধ্যমে বিভিন্ন কিছু বলা যায়।
যেমন আপনে এক মিটিং এ জরুরী কথা বলতেছেন।
একজন লোক হো হো করে হাইসা উঠলো অযথাই। তার হাসিতে তাচ্ছিল্যের মেসেজ থাকতে পারে।
হাহা যে মেসেজ প্রধান করতেছে তার সাপেক্ষে ব্যক্তি হাহা দেয়া লোকের উপর নিজের নন ভায়োলেন্ট পদক্ষেপ নিতে পারেন, যেমন ব্লক করা তার বাক স্বাধীনতার অধিকারের মধ্যে পড়ে।
ফলে, ব্যক্তি হিশাবে জব্বারের ভুল নাই।
কিন্তু যেহেতু তিনি মন্ত্রী হিশাবে তার ফেসবুক চালান, এই পরিচয় প্রদান করেন ও বক্তব্য দেন, তাই একজন জনপ্রতিনিধি হিশাবে তিনি জনগণকে ব্লক করার অধিকার রাখেন না, যদি না ওই ব্যক্তি কারো ক্ষতি করে তার কাজের মাধ্যমে।