ভালো আর্ট কি, এটা নিয়ে একজন সাধারণ ব্যক্তি দ্বন্দ্বে পড়তে পারেন। তার কাছে স্বাভাবিক ভাবে মনে হবে যা বেশী জনপ্রিয় হচ্ছে তাই ভালো আর্ট। যে বই বেশী বিক্রি হচ্ছে তাই ভালো আর্ট।
এ পট্রেইট অব দ্য আর্টিস্ট এজ এ ইয়াং ম্যানে জেমস জয়েস আর্টকে কাইনেটিক আর্ট ও স্ট্যাটিক আর্ট দুইভাগে ভাগ করেছেন।
তিনি মূল্য দিয়েছেন স্ট্যাটিক আর্টকে।
কাইনেটিক আর্ট হচ্ছে সেই আর্ট যা আপনাকে আলোড়িত করে। যেমন পর্নো ফিল্ম, যা যৌনভাবে উত্তেজিত করে। বিজ্ঞাপনের আর্ট, যা আপনাকে কোন জিনিস কিনতে আগ্রহী করে। রাজনৈতিক পোস্টার স্লোগানের আর্ট।
পক্ষান্তরে স্ট্যাটিক আর্ট ব্যাক্তিকে স্তব্দ করে। আপনাকে সে এরেস্ট করে, যাকে জয়েস বলেন এস্থেটিক এরেস্ট। এটি আপনাকে আলোড়িত, আবেগতাড়িত বা অন্য কিছু মনে করায় না, বরং তার নিজস্বতার মাধ্যমে আপনাকে ধরে রাখে।
একটি ভালো বই, ভালো গল্প হবে স্ট্যাটিক আর্ট। সে তার নিজস্বতা, তার স্ববিরোধীতা, তার জটিলতাসহ সব কিছু দিয়ে তার পাঠককে স্তব্দ করে দিতে বা স্টপ করে দিতে পারে। আলোড়িত করার, আবেগতাড়িত করার, কোন প্রপাগান্ডা বিক্রি করার দায়িত্ব তার নেই।
জনপ্রিয় হবার আকাঙ্খা থাকে কাইনেটিক আর্টের। কারণ তার উদ্দেশ্য আর্টের মাধ্যমে অন্য কিছু একটা দেয়া। যেমন, পর্নোগ্রাফি। সে সিমপ্লি আর্ট করছে না, বরং এর মাধ্যমে তার উদ্দেশ্য উত্তেজিত করা। বেস্ট সেলার হবার লক্ষ্য নিয়ে লেখা বইগুলি যেমন, বিশেষত জনরা ফিকশন, বা ফালতু সামাজিক উপন্যাস, তারো উদ্দেশ্য একটা সাসপেন্স, উত্তেজনা, আবেগ তৈরী করা। এগুলি কাইনেটিক আর্ট।
বিশ্ব সাহিত্যে কাইনেটিক আর্টের বিস্তার বুঝা যেতে পারে হুর্হে লুই বোর্হেসের নিচের কথাটি থেকে। বোর্হেস বলছেনঃ
“সাহিত্য এখন এমন বানিজ্যিকীকরণ হয়েছে যে, আগে এই প্রভাব ছিল না। এখন লোকেরা বেস্টসেলার নিয়ে কথা বলে, এই ফ্যাশনটা এসেছে যা আগে ছিল না। আমার মনে আছে যখন আমি লেখা শুরু করেছিলাম, আমরা কখনো বইয়ের সফলতা বা ব্যর্থতা নিয়ে ভাবতাম না। এখন যাকে “সফলতা” বলা হয় ওটা ঐসময় ছিলই না। যাকে এখন “ব্যর্থতা” বলা হয় তাই তখন সবাই স্বাভাবিক হিসেবে মেনে নিয়েছিল। একজন লেখত তার জন্য, বা স্টিভেনসন যেমন বলতেন, নিজের কিছু বন্ধুদের জন্য।
অন্যদিকে এখন একজন ভাবে বিক্রি নিয়ে। আমি জানি এমন অনেক লেখক আছেন যারা বলেন তাদের ষষ্ট সপ্তম অষ্টম মুদ্রণ চলে গেছে ও তারা এই এই পরিমাণ টাকা আয় করেছেন। আমি যখন যুবক ছিলাম তখন এইসব কথা বললে অদ্ভুত শোনাত। মানুষেরা ধরে নিত যে লেখক এমন বলছেন তিনি আসলে বুঝাতে চাচ্ছেনঃ ‘আমি জানি আমি খারাপ লেখি, কিন্তু টাকার জন্য লেখতে হচ্ছে, এ ছাড়া আমি কীভাবে পরিবার চালাব।’ তাই, লেখকদের এমন কথাকে একধরনের বিনয় হিসেবে, বা বোকামি হিসেবেই আমি ধরে নেই।”
The post আর্ট – কাইনেটিক ও স্ট্যাটিক – জয়েস ও বোর্হেস appeared first on মুরাদুল ইসলাম.