যারা চিন্তাশীল আছেন, চিন্তা করেন তারা কখন টের পান যে তারা চিন্তাশীল? যখন তারা নিজেরা বুঝেন একটা, কিন্তু দেখতে পান ঘটতেছে আরেকটা। তখন তাদের নিজেদের বুঝ এবং দেখতে থাকা ঘটনার একটা সংঘর্ষ হয়, একটা কন্ট্রাডিকশনের যাতনা তিনি অনুভব করতে থাকেন। প্রতিটা চিন্তাশীল লোকের এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এর পরে তার ভেতরে সন্দেহের শুরু হয়, তার অনুসন্ধান শুরু হয়।
চিন্তাশীলের সাথে সমাজের প্রথা, নীতি, ধারণার যে ক্ল্যাশ, এটা প্রায় সকল সময়ের চিন্তকের লেখায় কমবেশী পাবেন। সমাজের রীতি প্রথা ধারণায় আবদ্ধ না থেকে ব্যক্তি হিশাবে নিজে চিন্তা করার গুরুত্ব সকল সময়ের চিন্তকেরাই তাদের লেখায় উল্লেখ করেছেন। এছাড়া, মানুষের মধ্যে কীভাবে রিজন বা চিন্তার সূত্রপাত হয়, কীভাবে একজন লোক চিন্তক বা দার্শনিকে পরিণত হয়, এই বিষয়ে জ্ঞানীরা ভেবেছেন।
মানুষের মধ্যে কি জন্ম থেকেই চিন্তা বা রিজন থাকে, নাকি সে জন্মের পরে অনুসন্ধিৎসু ভাবে নানা কিছু দেখে, এক্সপেরিয়েন্স করে, এবং এর মাধ্যমেই তার রিজন তথা বোধ বুদ্ধি তৈরি হয়?
এইসব বিষয় নিয়ে একটা দার্শনিক মেজর কাজ হচ্ছে আন্দালুসিয়ান দার্শনিক ইবনে তোফায়েলের উপন্যাস, হাই ইবনে ইয়াকদান (বা ইয়াকজান)। ১২ শ শতকে এটি লেখা হয়।
দার্শনিকেরা তার সময়ের চিন্তা দ্বারা প্রভাবিত হন, ওই সময়ের চিন্তার সমস্যাগুলি সমাধান করতে যান। ইবনে তোফায়েলও এই বইতে কয়েকটা সমস্যার সমাধান করতে গেছিলেন বা ওই বিষয়ে তার চিন্তা উপস্থাপন করতে গেছিলেন। যেগুলা ওই সময়ের আন্দালুসিয়ার বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজের আলোচ্য বিষয় ছিল। এর প্রায় শতবছর আগে ছিলেন শক্তিশালী দার্শনিক ইবনে সিনা, তার চিন্তার প্রভাব ইবনে তোফায়েলের মধ্যে ছিল ব্যাপক ভাবে।