মুরাদুল ইসলামের নিউজলেটার (Bilingual Newsletter, where you will get curated links of what I'm reading) - Issue #20
একটি শর্ট বুক রিভিউ এবং একটি জাপানি টেকনিক অন লাইফ।
এনিথিং ইউ ওয়ান্ট - ডেরেক সিভার্স
এনিথিং ইউ ওয়ান্ট - ডেরেক সিভার্স
দশ বছরের শিক্ষা এক ঘন্টায়ঃ
এই চ্যাপ্টারে আমার ভালো লেগেছে সিভার্সের পটভূমি স্থাপন করাকে। তিনি বলেছেন যে ১৯৯৮ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে নিজের শখের জিনিস নিয়ে কাজ করতে গিয়ে তিনি সফল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরি করে ফেলেছিলেন। তা পরে ২২ মিলিয়ন ডলারে বিক্রিও করে দেন। এখন মানুষ তার কাছে টিপস, উপদেশ চায় জীবন বা ব্যবসা সম্পর্কে। সুতরাং এই বইটি তিনি লিখছেন। কিন্তু তার জীবন বা ব্যবসাকে দেখার পদ্বতিটিই একমাত্র পদ্বতি না, বরং অন্যতম একটি পদ্বতি। এবং এই পদ্বতিটির বিরুদ্ধে তিনি নিজেও বিরুদ্ধ যুক্তি দাঁড় করাতে পারবেন।
আমি নিজেও এটি মনে করি। একজন মানুষের জন্য যে পদ্বতি কাজ করে, অন্যের জন্য তা কাজ করবে তা নিশ্চিত হয়ে বলা যায় না বেশিরভাগ সময়েই। কারণ ভিন্ন মানুষের চিন্তাশক্তি, ক্ষমতা ও দূর্বলতার জায়গা এবং পরিবেশ অনেক ভিন্ন হতে পারে।
সিভার্সের ফিলোস
১। বিজনেস টাকার জন্য না। এটি আপনার নিজের স্বপ্ন ও অন্যদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা।
২। বিজনেস তৈরি হলো দুনিয়াকে ইম্প্রুভ করার আর এর সাথে সাথে নিজেকেও ইম্প্রুভ করার সেরা এক উপায়।
৩। আপনি যখন কোম্পানি বানালেন তখন বানালেন নিজের ইউটোপিয়া। অর্থাৎ, সেখানে আপনি ডিজাইন করবেন আপনার নিঁখুত পৃথিবী।
৪। কখনো কোন কিছু কেবল টাকার জন্য করবেন না।
৫। কেবল নিজের স্বার্থের জন্য কখনো ব্যবসা দিবেন না। অন্যদের সাহায্য করতে বা তাদের সমস্যা সমাধান করতেই শুরু করুন।
৬। সফলতা আসে স্থিরভাবে নতুন কিছু আবিষ্কার করে যাওয়া এবং সেটিকে আরো ইম্রুভ করে যাওয়ার মাধ্যমে। যা কাজ করছে না তাকে অটলভাবে প্রমোট করে যাওয়ার মাধ্যমে নয়।
৭। আপনার বিজনেস প্লান হলো বাস্তবের সাথে মিল নেই এমন জিনিস। বিজনেস শুরু করার আগে কেউ জানে না আসলে মানুষ কী চায়।
৮। টাকা ছাড়া শুরু করা একটা সুবিধা। মানুষকে সাহায্য করা শুরু করতে আপনার টাকার দরকার নেই।
৯। আপনি সবাইকে খুশি করতে পারবেন না তাই গর্বের সাথে কিছু লোককে বাদ দিন।
১০। আপনার বিজনেস চালাতে নিজেকে অপ্রয়োজনীয় করে তুলুন।
১১। কোন কিছু করার মূল কারণ হলো নিজেকে হ্যাপি করা। তাই, সেটাই করুন যা আপনাকে হ্যাপি করে।
বইয়ে এই জীবনবোধ গুলিই বিস্তারিত করা হয়েছে। সিভার্স প্রতিটার পেছনে নিজের গল্প বলে বুঝাতে চেয়েছেন যে, কেন তিনি এটাকে ভালো মনে করেন।
ইকিগাই - বা উদ্দেশ্যপূর্ণ জীবন যাপন
কী আপনি ভালোবাসেন। এই প্রশ্ন আপনি নিজেরে করলে উত্তর পাবেন যেইটা, সেইটা আপনার প্যাশন হবার সম্ভাবনা বেশি।
কোন কাজে আপনি ভালো। এইটার উত্তরে হয়ত পাওয়া যাবে আপনার পেশা কী।
দুনিয়া কী চায এর উত্তরে পাওয়া যাইতে পারে আপনার মিশন। কী কাজের জন্য আপনারে টাকা দেয়া হবে, বা কী কাজ করে আপনি টাকা কামাইতে পারেন। এর উত্তর খুঁজতে গেলে আপনি পাইতে পারেন কোন কাজ বা পেশায় আপনি যাইতে চান।
এই প্রশ্নগুলার উত্তর খুঁজতে গিয়া আপনি একটা কমন গ্রাউন্ড পাবেন। যেইটা হলো ইকিগাই।
ইকিগাই একটা টেকনিক জীবনে কী কাজ করা দরকার বা বলা যায় উদ্দেশ্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার। এই প্রশ্নগুলি সম্পর্কে আপনি যখন ভাববেন, এবং মাঝের জায়গাটা তথা ইকিগাই সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট হবে আপনার, তখন আপনি লাইফে তুলনামূলক বেশি হ্যাপি হইতে পারবেন এমন বলে অনেক রিসার্চ।
ফলো ইওর প্যাশন বা আপনি যা ভালোবাসেন তাই করেন, তবেই সফল হবেন, এই জাতীয় উপদেশ একমুখী, এবং অপেক্ষাকৃত দূর্বল। পক্ষান্তরে ইকিগাই হইল আত্ম অনুসন্ধানের মাধ্যমে নিজের প্যাশন, মিশন, দুনিয়ার চাহিদা, নিজের দক্ষতা ইত্যাদি বিষয়ে চিন্তা করে জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে ধারণা বের করা।
জাপান দীর্ঘদিন আইজোলেটেড দেশ ছিল। তারা অন্য দেশের সাথে মিশত না। তাই লাইফ ও লাইফের সমস্যাবলির সাথে ডিল করার নানা টেকনিক তারা নিজ থেকে বের করছে। ইকিগাই তেমনই একটা।
জীবনে আমি কী করব, আমার লাইফের উদ্দেশ্য কী ইত্যাদি নিয়া অনেক মানুষই সমস্যায় ভুগেন। অনেক টাইম এতে নষ্ট হয়। নিজের ইকিগাই সম্পর্কে ধারণা ক্লিয়ার হলে আপনার এই উদ্দেশ্য জনিত সমস্যা কমে যাবে। ফলে আত্মবিশ্বাস থেকে শুরু করে অভারল হ্যাপিনেস বাড়ে।
রিসার্চে দেখা গেছে ইকিগাই দুশ্চিন্তা কমায়, উদ্বেগ কমায়। বিভিন্ন নিউরোট্রান্সমিটার যেমন ডোপামিন, সেরোটোনিন, এন্ড্রোফিন ইত্যাদির ভারসাম্য তৈরি করে।
৭ বছর ধরে প্রায় চল্লিশ হাজার জাপানিদের উপর একটি পরীক্ষা করে দেখা গেছে যাদের ইকিগাই সম্পর্কে ধারণা নেই, বা অস্পষ্ট ধারণা তাদের হৃদরোগের সম্ভাবনা তথা আশংকা বেশি।
গবেষণায় দেখা গেছে যাদের ইকিগাই নিয়ে অস্পষ্ট ধারণা তারা অন্যের স্বীকৃতির কাঙাল। সিকিং এপ্রুভাল যাকে বলে। কিন্তু যাদের ইকিগাই সেন্স ভালো তারা নিজের কাজটা করেই স্যাটিসফেকশন পাইতে জানেন।
ইকিগাই সম্পর্কে ভালো ধারণা খারাপ সময়ে শক্ত থাকতে সাহায্য করে। ২০১১ সালের মার্চে জাপানে ভূমিকম্প হয়। এই দূর্যোগে শক্ত থাকতে অনেক অনেক জাপানিকে সাহায্য করেছিল ইকিগাই।
আরেকটি গবেষণা জানায় ইকিগাই যেহেতু পজেটিভলি প্রভাব ফেলে মানসিক স্বাস্থ্যের উপরে, তাই এটি আপনারে দীর্ঘদিন বাঁচতে সাহায্য করে। ইকিগাই আপনে দ্রুতই পেয়ে যাবেন এমনো না। হয়ত এই বিষয়গুলা নিয়া আপনারে অনেক ভাবতে হবে, নোট রাখতে হবে।