জানেন নিশ্চয়ই, ম্যাকায়াভেলী প্রতিদিন কাজ কর্ম শেষে, উত্তমরূপে পোশাক পরে, সুগন্ধি লাগাইয়া তার সেই ঘরে প্রবেশ করেন, যেইখানে রয়েছেন দুনিয়ার সব বড় বড় জ্ঞানীরা। ম্যাক্যায়াভেলী তাদের লগে কথাবার্তা বলেন। তার প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন, তর্ক করেন। কোনরূপ ঈর্ষায় না ভুগে তাদের কাছ থেকে নেন, তাদের বুদ্ধিতে ও জ্ঞানে কখনো চমৎকৃত হন।
দুনিয়াতে আসা সব বড় বড় জ্ঞানীদের লিখিত চিন্তার লগে ম্যাকায়াভেলীর এই আলাপে, আমিও মাঝে মাঝে ঢুকে যাই, সময়ের সকল হিশাব নিকাশ ছিন্ন করে, হার্মিস ট্রিসমেগিস্টাসের আশীর্বাদে।
সাম্প্রতিক ম্যাকায়াভেলীর পড়ার ঘরে, তার সাথে যখন আলাপ হইল, তখন আমি তারে জিজ্ঞাসিলাম বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়া, বিশেষত শেখ হাসিনা যে ভারতে আছেন, তারে নিয়া কী করা যায় ইত্যাদি বিষয়ে। অবশ্য এর আগে পুরা ঘটনার বিত্তান্ত সবিস্তারে বর্ণনা করতে হইল ঘণ্টা খানেক সময় ধরে।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, শেখ হাসিনারে কীভাবে দেশে আনা যায় ও বিচারের সম্মুখীন করা যায়, এই ব্যাপারে আপনার সুচিন্তিত মতামত ব্যক্ত করেন।
ম্যাকায়াভেলী গম্ভীর হইয়া বললেন, তারে আনবা কেন?
আমি বললাম, বিচার করতে হবে না? ফ্যাসিবাদের চূড়ান্ত মৃত্যু দেখাইতে হবে তার বিচার করার মাধ্যমে।
ম্যাকায়াভেলী বললেন, আরো দূরে গিয়া ভাবো। ফ্যাসিবাদী শক্তি তো এখন ক্ষমতায় নাই। তোমরা আস্তে আস্তে সব জায়গা থেকে ফ্যাসিবাদ সরাইবা। কিন্তু ডেমোক্রেসির নাম দিয়া আবার মবের শাসন আইনো না। ডেমোক্রেসির চাইতে আগে তোমাদের বুঝা দরকার লিবার্টি, লিবার্টি নিশ্চিত করতে দরকার হইলে ডেমোক্রসির বিরুদ্ধে যাইতে হবে।
আমি বললাম, তা গেলাম, কিন্তু শেখ হাসিনারে দেশে আনার ব্যাপারে কিছু বলেন। উনি ভারতে আছেন, ওইখান থেকে নানা কথা বলেন। তার পোলা কথা বলে। এইদিকে, কথা শোনা যায় সেনা প্রধান ওয়াকার ভারতের সহায়তায় ইউনূস সাহেবরে সরাইয়া, ভারতের সাহায্যে আবার হাসিনারেই আইনা বসাইতে চাইতেছেন। উনার সমর্থকেরাও এই আশায় আছে। পশ্চিমবাংলা থেকে অনেক লোকেরা গান ভিডিও বানাইতেছে তার পক্ষে। তার সমর্থকেরা আশায় বইসা আছে উনি দেশে ফিরে আসবেন, আবার ক্ষমতার মসনদে বসবেন। এমতাবস্থায় তারে নিকট ভারতে রাইখা বসে থাকা তো রিস্কি।
ম্যাকায়াভেলী বললেন, দেখো, শেখ হাসিনার বয়স ৭৭ বছর। উনারে আবার ক্ষমতায় বসানোর পরিকল্পণা ভারত করবে না। কারণ এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যা খরচ হবে মেধা ও শ্রমে, তার রিটার্ন উনি দিবার টাইমই পাবেন না। এর চাইতে উনি ভারতে থাকলেই ভালো।
আমি বললাম, বয়সের কথা ঠিক বলেছেন, উনি মইরা গেলেই জাতি উদ্ধার হইত বলে অনেক লোকে ভাবে। এই উটকো ঝামেলা দূর হইত।
ম্যাকায়াভেলী বললেন, বোকামি কইর না। উনি মইরা গেলে তোমাদের কোন লাভ নাই, ভারতের লাভ। তোমরা দোয়া করো যাতে উনি বাঁচেন। যত বেশি দিন উনি ভারতে থাকবেন তত বেশি তোমরা ভারতের লগে নেগোসিয়েশনে এইটারে ইউজ করতে পারবা, ভারতরে এইটা দিয়া চাপ দিতে পারবা। ইউনূস সরকার চান্স পাইলেই এই প্রসঙ্গ তুলতে পারে, এটা ব্যবহার করে অন্যান্য সুবিধাদী নিতে পারে। আমাদের এক স্বৈরাচার সরকার, যে এত ছাত্র ও সাধারণ লোকরে হত্যা করছে ক্ষমতার লোভে, সে পলাইয়া তোমাদের দেশে আছে। তোমরা তারে ফিরাইয়া দাও, নাইলে এইদিকে ছাড় দাও।
এবং ইউরোপিয়ান দেশগুলা, জাতিসংঘ ও আমেরিকার লগে কথাবার্তাতেও এটা ব্যবহার করতে পারে। যে দেখো, ইন্ডিয়া আমাদের লগে কী করতেছে, এত বড় মানবতা বিরোধী অপরাধীরে জায়গা করে দিছে। ইন্টারন্যাশনাল সাপোর্ট দরকারী, বিশেষত, ভারত সংখ্যালঘু নির্যাতনের কার্ড খেলে, বিশ্বের কাছে বলে বাংলাদেশে হিন্দুরা মাইর খাইতেছে। এইটা কি হিন্দুদের উদ্ধার করতে বলে? না, বরং ইন্টারন্যাশনাল সাপোর্ট পাইয়া বাংলাদেশরে চাপে রাখতে যাতে নেগোসিয়েশনে সুবিধা পায়। তোমরাও ইন্ডিয়ারে মোরালি উইক দেখাইতে পারবা এই ইস্যু ব্যবহার করে।
আর এইদিকে, দেশে তো তোমরা সব ঠিকঠাক চালাইতে পারবা না। নতুন অনভিজ্ঞ সরকার, অনেক সমস্যা হবে। তখন এইটারে ভারতের ষড়যন্ত্র বা ভারতে বইসা থাকা শেখ হাসিনার ষড়যন্ত্র বইলা চালানোরও জায়গা থাকে। আবার তার করা অন্যায়গুলারেও সামনে আনতে পারবা তোমরা বার বার, সে পলাইয়া ইন্ডিয়ায় আছে এই ইস্যুরে ধইরা। এইটা তোমাদের লেজিটিমেসি বাড়াইতে থাকবে।আমি বলতেছি না এইটা অলওয়েজ তোমরা করে যাইবা, কারণ গুড গভর্নমেন্ট হইবা তোমরা, কিন্তু পরিস্থিতি বিবেচনায়, অবস্থা সামলাইতে ব্যবহার করতে পারবা।
তোমাদের দেশের বেশিরভাগ সাধারণ মানুষ ইন্ডিয়ারে লাইক করে না। স্বাধীনতার পরের দুঃশাসনের স্মৃতি থেকে তারা বলতো, 'হাসিনা গো হাসিনা তর কথায় নাছি না, তর বাপের কথায় নাইচ্চা দেশ দিলাম বেইচ্চা'। হাসিনা ইন্ডিয়াতে আশ্রয় নিয়া পাবলিকের মনের সন্দেহটারেই আরো সত্য করলেন। যে তারে চালাইত ইন্ডিয়া, তিনি ইন্ডিয়ার স্বার্থেই চলতেন।
হাসিনা, জীবিত অবস্থায় ভারতে অবস্থান করতে থাকলেই তোমাদের লাভ।
হাসিনা মইরা গেলে বা ইউরোপে আশ্রয় নিতে পারলে, ইন্ডিয়ার লাভ। হয়ত তার আমেরিকান পোলা অলরেডি আই-১৩০ পিটিশন ফাইল করে ফেলছে মারে নিয়ে আসার জন্য, এই প্রসেসে এক বা দুই বছর লাগতে পারে তার আমেরিকান গ্রিন কার্ড পাইতে। জানি না আমেরিকা তার পরিচয় জানতে পারলে আসতে দিবে কি না। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা যেহেতু নাই নিশ্চয়ই তার ছেলের লিগাল রাইট আছে পিটিশন করার।
অসাধারন লেখা
সর্বকালের শ্রেষ্ঠ লেখা!