১। এইখানে বাংলার পপুলার তুর্কি সিরিজের এক দৃশ্য দেখা যাচ্ছে, যেখানে আমার ভাই সুলতান চতুর্থ মুরাদকে একটা অফার দেয়া হয়েছিল। তাকে বলা হয়েছিল তুমি পুরা ইউরোপ শাসন করতে পারবে, ইতিহাসের সবচাইতে বড় সম্রাট হবে। বিনা রক্তপাতে সব জয় করতে পারবে। শুধু খ্রিস্টান হয়ে যাও। সম্রাট কন্সটানটাইন যেমন খ্রিস্টান হয়েছিলেন। আগে রাজারা ধর্মান্তরিত হলে প্রজারাও ধর্মান্তরিত হতো সাথে সাথে। এই অফারের উত্তরে ভাই মুরাদ ক্ষেপে যান। তিনি লোকটারে দুর্গের উপর থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করেন। এই দৃশ্য বাঙ্গালী মুসলমানের কাছে পপুলার। কিন্তু আমি আমার এই ভাইয়ের কাজটাকে সমালোচনা করছি। তার এই কাজটা করা অনৈসলামিক হয়েছে। এর দ্বারা ইসলামের মহানুভবতার শিক্ষা প্রকাশ পায় না। কেউ দাওয়াত দিতেই পারে, এর জন্য তারে মেরে ফেলা ঠিক না। আমরা স্মরণ করতে পারি সেইসব নবীদের কোথা, যারা জালিম শাসকদের কাছে নিয়ে গেছিলেন ধর্মের বানী। তখন জালিম অনেক শাসকেরা তাদের মেরে ফেলতে চাইছিলো। ভাই মুরাদ এইখানে সেইসব জালিম শাসকদের পদাঙ্ক অনুসরণ করলেন। নিন্দা।
২। অভিনেতা নয়াজুদ্দিন বলেছেন গ্রামের লোকদের ডিপ্রেশন নাই।
তার এই কথার পরে মানুষেরা তার বিরুদ্ধে ঝাপাইয়া পড়েছেন দেখলাম। তার কথাটা একদিক থেকে ভুল। কিন্তু, এই ঝাপাইয়া পড়ে তার বিরোধিতার মধ্যে আমি ডিপ্রেশন বা মানসিক অসুস্থতার লগে নিজের আইডেন্টিটিরে জড়াইয়া দেখার চেষ্টা দেখতে পাই। এটা মানুষরে সাইকোলজিক্যালি উইক করে।
নওয়াজের কথা একদিক থেকে ভুল বললাম, পুরা ভুল বলতে পারি নাই। কারণ যেইভাবে লোকেরা ইজিলি 'মানসিক অসুস্থতারে" স্কিজোফ্রেনিয়া, ডিপ্রেশন, বাইপোলার ইত্যাদি দিয়া ডিফাইন করেন, আসলে এইটা তাত্ত্বিকভাবে জটিল। কারণ "মানসিক অসুস্থতা" শারীরিক অসুস্থতার মত না, বরং কিছু বৈশিষ্ট্যরে গ্রুপ করে নাম দেয়া হয়, এবং অসুস্থতা হিশাবে আইডেন্টিফাই করা হয়। এই ক্রিটিক্যাল দিক থেকে নয়াজের কথাটারে দেখলে ভুল মনে হবে না, নওয়াজ যদি হাংগেরিয়ান-আমেরিকান সাইকিয়াট্রিস্ট থমাস সাসের আইডিয়াগুলা জানতেন, আরো ভালোভাবে হয়ত বলতে বা নিজেই বুঝতে পারতেন। সেইক্ষেত্রে আবার যারা ডিপ্রেশনরে নিজের আইডেন্টিটি ভাইবা নওয়াজের বিরুদ্ধে গেছে, এরাই বলতো, নওয়াজ ভাই ঠিকই কইছেন, আমরা রোগী না।
নওয়াজের কথাটা যেইদিক দিয়ে ভুল, মানুষের প্রায় রোগেরই জেনেটিক ইনফ্লুয়েন্স থাকে, এবং তার উদ্দেশ্য যদি হয় সাফারিংরে আউটরাইট ডিনাই করা, এটা তার না জানার ফল। গ্রামে হয়ত বেটার পরিবেশ তাই কম হয় এই ধরণের মানসিক সমস্যা। কিন্তু হয় না যে, তা বলা যাবে না। হয়, কিন্তু জ্বিনে ধরা, ভূতে ধরা ইত্যাদি নানা ট্র্যাডিশনাল পদ্বতিতে চালাইয়া দেয়া হয়। আর গ্রামে যে এর ভালো সে দেখতে পারে না, এর কথা তারে লাগায়, সারাদিন অন্যের হাঁড়ির খবর নিয়া থাকে, এই ধরণের নীচ গ্রাম্য কালচার মানসিক সমস্যা থেকে আগত না কে বলবে, অথবা হইতে পারে এগুলার মাধ্যমেই অনেকে ডিপ্রেশনরে ট্যাকল দিতে পারে গ্রামে।
৩। বাংলাদেশের ক্রিকেটার লিটন কুমার দাস জামাই ষষ্টির ছবি পোস্ট করেছেন অনেক খাবার সামনে নিয়ে। সেখানে তার ভক্তরা ফান করছেন। সেইখানে কেউ কেউ গরুর মাংস নেই কেন, ইত্যাদি বলছেন। সেই কমেন্টগুলারে তুলে ধরে কিছু পত্রিকা নিউজ করেছে, মৌলবাদীদের আক্রমণ। অনেক লোক এইসব কমেন্ট শেয়ার করছে।
এইরকম প্রায় সময় দেখা যায়। আম পাবলিকের মন্তব্য তুলে ধরে দেখানোর চেষ্টা করা হয় এরা কত খারাপ, এদের রুচি কত খারাপ বা এরা কত মৌলবাদী।
এটি আবার শিক্ষিত অংশের মধ্যে মৌলবাদ ও রুচি বিষয়ে ছ্যা ছ্যা এর জন্ম দেয়। এবং, এই মন্তব্যগুলার উপস্থাপন, ও উদযাপন আন্তঃধর্মীয় ঘৃণারে সলিডিফাই করে, যেটাই প্রকৃত সাম্প্রদায়িকতা।
এগুলা মূলত, সামাজিক মাধ্যমের প্রধান ট্রেন্ড, নিজেরে বা নিজেদের অন্যদের চাইতে বেটার দেখানোর প্রবণতারই অংশ। এটি শিক্ষিত মূর্খদের পলিটিক্যাল কারেক্টনেসের চর্চা, এবং তার সাথে সাথে ঘৃণারও চর্চা।
৪। আওয়ামীলীগের পক্ষে ফেরদৌস, রিয়াজ নিপুণ ইত্যাদি চলচ্চিত্র অভিনেতা অভিনেত্রীদের প্রচারণা চালাইতে দেখা গেল। এর সাথে মিলাইয়া দেখতে হবে গতবারের এফডিসি ইলেকশনরে। ওই ইলেকশনের পর থেকেই এই চলচ্চিত্র অভিনেতা অভিনেত্রীদের মধ্যে রাজনৈতিক বাসনা জাগ্রত হয়েছে বলা যায়।
নায়ক ফারুক মারা যাবার পর থেকেই তার আসন থেকে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পাইতে অভিনেতা অভিনেত্রীদের আলোচনা দেখা যাচ্ছে। শুরু করেছে টিভির অভিনেতা সিদ্দিক। এরপর, চলচ্চিত্রের খলনায়ক ডিপজল এর বিরোধিতা করেন। এই আসনে নায়ক ওমর সানী নায়ক ফেরদৌসের নাম প্রস্তাব করেন। পরবর্তীতে নায়ক আলমগীর, নায়ক সোহেল রানার নামও প্রস্তাব করেন অভিনেতা অভিনেত্রীরা।
এইখানে লক্ষণীয় মজার বিষয়, এইরকম একের পর এক নাম প্রস্তাব করে তারা এই আসনটা শিল্পীদের জন্য সংরক্ষিত আসন হিশেবে নিয়ে যাচ্ছে। এমন আলোচনার চাপ তৈরি করছে যে, আওয়ামীলীগ যেন শিল্পীদের একজনকেই মনোনয়ন দেয়।
আজীবন তৃতীয় শ্রেণীর অভিনয় করে যাওয়া, আম জনতার কাছে পপুলার এইসব অভিনেতা অভিনেত্রীরা ক্ষমতার খানকি হতে উদগ্রীব।
৫। স্ক্রিনশটে দেখতে পাচ্ছেন এনটিভির করা একটা স্বাক্ষাতকার ভিডিও, যেখানে দেশের একজন মডেল তার স্ট্রাগল ইত্যাদি নিয়ে মোটিভেশনাল কথাবার্তা বলেছেন। এই ভিডিওটার যে উপস্থাপন, পত্রিকার পক্ষ থেকে এটি অসৎ সাংবাদিকতা।
থাম্বনেইল এবং উপরের ট্যাগ লাইন মিলে এই অর্থ তৈরি করে, হয়ত ব্যারিস্টার সুমনই মডেলকে ভিজিটিং কার্ড দিয়ে বলেছিলেন রুমে এসো। কিন্তু আসলে এটা বলেছিলো অন্য আরেক লোক। মডেল ব্যারিস্টার সুমনের সাথে কাজ করেন, সুমনের প্রশংসা করেছেন ভিডিওতে।
ট্যাগ এবং থাম্বনেইল দিয়ে যে অর্থ তৈরি করতে চাইলো পত্রিকাটি, এটা ভিউ বাড়াতে। যেন লোকে আগ্রহ নিয়ে দেখে সটয়ই ব্যারিস্টার সুমন বলেছিল কি না।
৬। গুইসাপ সাহেব হরিণটাকে খেয়ে ফেললেন। গুইসাপের দিক থেকে দেখলে নিজের সারভাইভালের জন্য কাজটা তিনি করেছেন। হরিণের দিক থেকে দেখলে দূর্বলের উপর আক্রমণ করেছেন।