প্রশ্ন- আমার মতে পৃথিবীতে কখনো পূর্ণ শান্তি ছিল না।আর আসবেও না।কোন আদর্শ সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে বিচার করতে পারে না।আপনার কী মত?
ফেসবুকের প্রশ্ন উত্তর থেকে।
পূর্ণ শান্তির ধারণা ভুল। পূর্ণতার ধারণাই ভুল। এই আশাটা অযৌক্তিক।
পৃথিবী একটা জটিল সিস্টেম। জাতে, সংস্কৃতিতে, ভূপ্রকৃতিতে ভিন্নতা আছে। এর চাইতে বড়, মানুষদের ভেতরে সাইকোলজিক্যাল একরকমতা ও ভিন্নতা আছে। এই সব মিলাইয়াই দুনিয়ার কমপ্লেক্স সিস্টেম চলতেছে।
পূর্ণ শান্তির জন্য রোবটদের সমাজ দরকার, কম্পুটার গেইমে। যেখানে কিছু নিয়ন্ত্রিত হবে।
মতাদর্শগুলা তৈরি হয় একেক অঞ্চলে, তাদের মানুষদের, সাইকোলজি, ভু প্রকৃতি, পরিবেশ, সমাজের প্রভাবে। মতাদর্শগুলা দিনশেষে একটা ব্যাখ্যা পদ্বতি।
ক্যাপিটালিজমের স্পিরিট হিশাবে ম্যাক্স ওয়েবার দেখাইছিলেন প্রটেস্ট্যান্ট ধর্মীয় এথিকসরে। পিউরিটান প্রটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টানদের মধ্যে একটা এংজাইটি ছিল যে তারা কি পার পাবে, নাকি দোজখে যাবে। এই ভয় ও উদ্বেগ থেকে তাদের মধ্যে জন্ম নিছিল কঠোর পরিশ্রম করার মানসিকতা। এটা তাদের কাছে হয়ে গেছিল এক ধর্মীয় দায়িত্বের মত। শুধু টাকার জন্য না, বরং এর মাধ্যমে তারা মুক্তির দিশা খুঁজত। বেনজামিন ফ্রাঙ্কলিনরে ম্যাক্স ওয়েবার দেখাইলেন ক্যাপিটালিস্ট এই এথিকসের আদর্শ উদাহরণ হিশেবে। ট্রডিশনাল একনোমিতে দেখা হইত, প্রফিটের প্রতি অবসেশন, বেশী টাকা বানানো নৈতিকভাবে খারাপ। ইতালির ফ্লরেন্সেও এই ধারণা ছিল। আমাদের সমাজে এখনো আছে। এই জন্য ধান্দা এখানে নেগেটিভ শব্দ। কিন্তু মাড়োয়ারি বিজনেসম্যানদের কাছে নিশ্চয়ই ধান্দা খারাপ শব্দ না। ইনভেস্টর মহনিশ পাভরাইয়ের বিখ্যাত বই ধান্দো ইনভেস্টর। বেন ফ্রাঙ্কলিনের কাছে প্রফিটের জন্য কাজ, বেশী টাকা বানানো ছিল মহৎ, আরেকভাবে সমাজরে সার্ভ করার উপায়। একইজিনিশ সমরখন্দ/তাসখন্দের সূফী পীর খাজা আহরারের মধ্যেও দেখা যায়, যিনি বলছিলেন একেকজন একেক দরজা দিয়া আধ্যাত্মিকতার নগরে প্রবেশ করে, আমি করছি সেবার দরজা দিয়া। বলা বাহুল্য, তিনি তার সময়ের একজন সেরা সম্পদশালী ছিলেন এবং মানুষের জন্য ব্যয় করতেন। কিন্তু সাধারণভাবে আমরা সূফীদের সন্ন্যাস জীবন যাপনের কথা বলতে দেখি। আবার জর্মন দেশের দার্শনিক নীতশে বলছিলেন, এইসব তথাকথিত মহতদের মিলে দুনিয়ার সব সমাজে, যারা সন্ন্যাস জীবনের কথা বলে, এই গুরুচোদারা আসলে ঈর্ষা/ রিসেন্টিমেন্ট থেকে এসব বলে,- এই ছিল তার অবস্থান।
মতাদর্শ কখনো নিরপেক্ষ হবে না। ওই সমাজ, সংস্কৃতি, অইখানকার পরিবেশ ইত্যাদির প্রভাব থাকবে ওইখানে জন্ম নেয়া মতাদর্শ, জনমানুষের চিন্তায়।
ফলে, কোন আদর্শ আদর্শ আদর্শ নয়!
কোন মতাদর্শ কোন জায়গার বেটার হইতে পারে, অন্য জায়গায় একই মতাদর্শের প্রয়োগ খারাপ ফল বয়ে আনতে পারে। কারণ, ওই যে ভিন্ন ভিন্ন এলাকার ডিফ্রেন্স।
এখন আবার মূল পয়েন্ট, শান্তিতে যাই।
পূর্ণ শান্তি বলতে কিছু নাই। বাট, আপেক্ষিক বা মোটামোটি এক শান্তি বজায় আছে।
কারণ, মানব বিবর্তনে যেসব সন্তান খুব এগ্রেসিভ, খুবই স্বার্থপর ছিল তাদের মেরে ফেলা হইছে। মা বাপেরা মেরে ফেলছে, বা সাধারণ মানুষেরা দলবদ্ধ হয়ে এদের মেরে ফেলছে। এইভাবে মানুষেরা ডোমেস্টিকেটেড হইছে। এই থিম এখনো মানুষদের গল্পে, ফিল্মে মিলে। দুষ্টের দমন হয়।
এই কারণে বিবর্তনের ধারায় মানুষের জিনে স্বার্থপরতা, এগ্রেশন, একাই সব খাইয়া নেবার প্রবণতা, ইত্যাদি কম। কারণ ওইসব প্রবণতার মানুষগুলা টিকে নাই।
ফলে, তুলনামূলক একটা শান্তি থাকে সব সময়েই। যখন অশান্তি হয়, তখন মানুষের বোকামির জন্য হয়। ভূ প্রাকৃতিক কারণে কিছু জায়গা দূর্ভাগ্যজনক কনফ্লিক্টের মধ্যে পড়ে যায়।