দিল চাহতা হ্যায় ফিল্ম দেখলাম একটু আগে। এইটা একটা সাইকোলজিক্যাল-ইমোশনাল ড্রামা ফিল্ম বলেই আমার মনে হয়। এর মূল টেক্সট হইল, মানুষের দিল যা চায় ভয়ের কারণে সে ওইটা প্রকাশ করতে পারে না।
এই ডায়লগ বা এই ধরণের সিচুয়েশন ফিল্মে আমরা কয়েকবার আসতে দেখি। যেমন আমির খান বা আকাশ প্রীতি জিন্তারে লাভ ইউ বলতে পারে না ভয়ে।
সমীর বা সাইফ আলি খান পূজারে বলতে পারে না লাভ ইউ, যদি সে রিজেক্ট করে, তাইলে যে ফ্রেন্ডশিপ আছে ওইটাও হারাবে।
আর ফিল্মে তিন বন্ধুর মধ্যে সবচাইতে ম্যাচিউর চরিত্র, সিদ্ধার্থ বা অক্ষয় খান্নাও প্রকাশ্য করতে ভয় পাইত যে সে তারা জশওয়ালরে লাভ করে। কারণ তার চাইতে বেশী বয়েসী, ডিভোর্সী, বাচ্চা আছে, আবার এলকোহলিক এমন এক মহিলারে সে যে লাভ করতেছে এটা কেউ বুঝবে না, এই তার ভয় ছিল। আমরা দেখি এই ভয়টা সত্যিও। এই লাভ প্রকাশ করতে গিয়াই আকাশের সাথে তার কথা কাটাকাটি হয়, তার মা কষ্ট পায়, পরে তারা জশওয়াল শুইনা ফেলে, তার সাথেও সম্পর্ক খারাপ হয়।
এই ভয়ের উপরেই গল্পটারে নির্মাণ করা হইছে। যখন আমরা দেখতে পাই ফিয়ার কেটে যাইতেছে, শেষের দিকে, তখন তিন বন্ধু আবার মিলিত হন।
একটা ফিল্মরে নানাভাবে পড়া যায়। এই ফিয়ারের গল্পের বাইরে গিয়া অন্যভাবে দেখতে চাই, অন্য আরেকটা দিক।
আমার প্রথম আগ্রহের জায়গা, ফিল্মে ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চা হিশেবে আসা রোহিতরে নিয়া। শুরু থেকেই জানা যায় প্রীতি জিন্তা তার বাগদত্তা, বা তার লগে বিয়া হবে। পরে, যখন প্রীতি জিন্তা ও আমির খানের অস্ট্রেলিয়ায় দেখা হয়, কথা হয়, তখন আমরা দেখি প্রীতি জিন্তা আমির খানরেও রাখতেছে। রোহিত তারে বলে দিছে আমিরের লগে দেখা না করতে, তাও সে করে। তার লগে খায় দায়, অপেরায় যায়। তার ভিতরে প্রেম জাগাইতে চায়। ওইদিকে বিপদ বুইঝা রোহিত অস্ট্রেলিয়ায় চলে আসে।
শেষে জানা গেল, রোহিতের বাবা মা প্রীতিরে লালন পালন করছেন, এই দায় চুকাইতেই সে নাকি রোহিতরে বিয়া করতে রাজী ছিল। এইটা আমার বিশ্বাস হইল না।
ফিল্মের গল্পের সামঞ্জস্য রাখতে এটা করা হইছে, নায়িকা প্রীতিরে ভালো দেখাতে হবে তো। রোহিতরে দেখানো হইছে জেলাস হিশেবে। কিন্তু নিরপেক্ষ ভাবে দেখলে, রোহিতের রিয়েকশনের ধরণ যথাযথ না হইলেও, তার রিয়েকশন করা একেবারেই ঠিক হয় নাই, এমন বলা যাবে না। এবং তার রিয়েকশন করা যে ঠিক ছিল তা তো আমরা পরে দেখলাম। প্রীতি পরে আমির খানরেই প্রেমে ফেলে দিল। বিবাহের ভরা মজলিশে রোহিত অপমানিত হইল।
আমির খানরে এখানে প্রীতি একটা অপশন হিশাবে রাখছে, রোহিত তো আছেই। আমির খারাপ বা যুথসই না হইলে, রোহিতই ঠিক থাকতো। আমির খান এখানে না আসলে অন্য কেউ আসতো। রোহিতের কাছ থেকে অনেক কিছু পাইলেও তার হিশাবে সে হয়ত কিছু পাইতেছিল না, এইজন্য অন্য আরেকজনরে তার খুঁজতে হইছে।
এভলুশনারি সাইকোলজিস্ট ডেভিড বাসের বই, হোয়াই ম্যান বিহেভব্যাডলিঃ হিডেন রুট অব সেক্সুয়াল ডিসিপশন, হ্যারাসমেন্ট এন্ড এসল্টে ছিল, রিসার্চে দেখা গেছে, ভালো সম্পর্কে থাকা নারী পুরুষেরাও "বিকল্প" অপশন রাখে, বিপরীত লিঙ্গের সাথে বন্ধুত্ব রেখে। যাতে তাদের সম্পর্ক ভেঙ্গে গেলে এই বিকল্প অপশনকে তারা বেছে নিতে পারে।
বাট রোহিত ফিল্মে ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চা, কারণ গল্পের প্রয়োজনে তার একটা দিক ভুলভাবে দেখাইয়া তারে ইউজ করা হইছে।
একইভাবে দেখেন পূজার কাহিনী, যে সাইফ আলি খানের নায়িকা। ওই মেয়ের কিন্তু একটা বয়ফ্রেন্ড আছিল, যে দিন তারিখ মনে রাখে, কবে তাদের কোথায় দেখা হইছিল, ইত্যাদি সব। প্রতিদিন একটা করে বেলুন দেয়। মেয়েরা যেগুলা লাইক করে ঐসব সে ঠিকঠাক করে, কিন্তু মেশিনের মত করে। ওইটাতে পূজা বিরক্ত হয়ে যায়। তাই সে সাইফ আলি খান বা সমীররে জায়গা দেয়, ও পরে ওই মেশিন বয়ফ্রেন্ড বাদ দিয়া সমীরের দিকে চলে যায়। তখন ওই মেশিন বয়ফ্রেন্ডের কি হইল, তার কি দোষ ছিল এসব আর আমরা জানি না।
তারা জশওয়ালের কাহিনীটা একটু জটিল, যে আমাদের অক্ষয় খান্না তথা সিদ্ধার্থের নায়িকা। তাদের প্রথম দেখা হয় যখন তারা তার নতুন বাসায় উঠতেছে, বড় বড় লাগেজ নিয়া। অক্ষয় গিয়া তারে সাহায্য করে। বড় বড় তিনটা লাগেজ টাইনা তারা হাঁপাইয়া যায়। এটা একটা প্রতীকী উপস্থাপন। তারা সাইকোলজিক্যাল ব্যাগেজ এগুলা। প্রথমটা তার আগের বিয়া, যেটার বিচ্ছেদ হইছে। দ্বিতীয়টা, সন্তান, যে মেয়ে আছে, যার সাথে তার দেখা হয় না। তৃতীয়টা, তার এলকোহল আসক্তি। যদিও সে নিজে বলে তারে তার ধনী স্বামী মিথ্যা ভাবে কোর্টে এলকোহলাসক্ত হিশাবে প্রমাণ করাইছে। কিন্তু আমরা দেখি তারে নিয়মিত ড্রিংক করতে। এই তিনটা ব্যাগেজের ভার বহন করতে সে সিদ্ধার্থরে ব্যবহার করছে।
তারা খুব বুদ্ধিমান মহিলা। সে প্রথমদিন সিদ্ধার্থের পেইন্টিং দেখে নিজের এনালাইসিস করে, বলে দেয়, তোমার ভেতরে অনেক কিছু আছে যা তুমি বাইরে শেয়ার করতে চাও না। এতেই সিদ্ধার্থ মুগ্ধ হয়ে যায়। যে তারা প্রতীকী পেইন্টিং এনালাইসিস করে অর্থ করতে পারে, সে কি বুঝত না সিদ্ধার্থ কেন তার সাথে দেখা করতে চায়, তার ছবি আঁকতে চায়। আমার মনে হয় বুঝতো। তার সঙ্গীর দরকার ছিল তাই এই বন্ধুত্ব হইতে দিছে। পরে যখন সে একদিন শুনলো, সিদ্ধার্থ তার মাকে বলছে সে তারারে ভালোবাসে, তখন তার মা তীব্র রিয়েক্ট করেন, তারে দোষী করেন যে সে তার ছেলেরে সিডিউস করেছে, এটা শোনার পরেই তারা অপমানিত হয়ে সিদ্ধার্থের লগে বন্ধুত্ব বন্ধ করে দিতে চায়।
আরেকটা লক্ষণীয় ব্যাপার সিদ্ধার্থের মা কিন্তু তারে বলতেছিলেন, তুই তর মনে কী আছে বল। মা হিশেবে আমি বুঝতে পারব না তো কে বুঝব। তুই তো আমার কাছে কিছু লুকাছ না, ইত্যাদি। এই সাইকোলজিক্যাল ম্যানিপুলেশনে পড়ে সিদ্ধার্থ তার মারে বলে ফেলে। তখন সাথে সাথেই তার মা তীব্র রিয়েক্ট করে ফেলেন। তার একজন নারী হিশেবে তার এন্টেনায় সাথে সাথেই সিগনাল চলে আসে, তারা তার ছেলেরে ইউজ করতেছে। যদিও এদিকে তিনি তার ছেলের ইমোশনরে বিন্দুমাত্র দাম দিতে চান নাই।
এখানে প্রীতি, পূজা বা তারা, তিনজনের কারো দোষ নাই, তিনজনেই নিজের প্রয়োজনটা দেখছে।
আরেকটা দিক, ফিয়ারের যে মূল টেক্সট ছিল, ওইটা এখানে কাজ করলো না। আমির খান প্রীতি জিন্তারে পাইলো, সাইফ আলি পূজারে পাইল, নিজেদের ফিয়ার জয় করে, দুইজনই অন্য দুই পোলার লগে ছিল। কিন্তু অক্ষয় খান্না কেন তারারে পাইল না?
কারণ সে বয়েসে অনেক বড়, ডিভোর্সী, বাচ্চা আছে। এইজন্যই পায় নাই ও তারে পরিচালক মেরে ফেলছেন। যেমন আগে বাংলা ফিল্মে রেইপড হইলে নায়িকাদের মেরে ফেলা হইত। বা বিখ্যাত শোলে ফিল্মে জয় ও রাধার মিলন যে কারণে হয় নাই, রাধা বিধবা ছিল। বা, পাতাললোক সিরিজের দ্বিতীয় সিজনে আনসারি যে কারণে মারা গেল- কারণ সে ছিল গে, ফলে পরিচালক আর তারে জিন্দা রাখেন নাই।
এই ফিল্ম নিয়া আরো দুয়েকটা কথা বলা যায়, অন্যান্য প্রসঙ্গ ধরে তা বলা যাবে সময় ও সুযোগে। লাস্ট এক পয়েন্ট বলে শেষ করি। এই ফিল্মের প্রতিটা "লাভ" ত্রিভূজে।
প্রীতি - রোহিত - আমির খান। পূজা - মেশিন বয়ফ্রেন্ড- সাইফ আলি খান। তারা - সিদ্ধার্থের ক্ষেত্রে, দুইটা দৃশ্য খেয়াল করতে হবে। এক দৃশ্য, যহন একদিন সিদ্ধার্থ গিয়া দেখে তারা ঘর সাজাইতেছে কারণ তার মেয়ে আসবে তার বার্থডে উপলক্ষ্যে। তখন এক পর্যায়ে সিদ্ধার্থ জিগায়, তার আগের জামাইরের ব্যাপারে, কোন যোগাযোগ আছে কি না। এইটা ইচ্ছা করে, খুবই উদ্দেশ্যমূলক ভাবে দেখানো হইছে। অক্ষয় খান্নার মুখের এক্সপ্রেশন তখন খেয়াল করতে হবে। ত্রিভুজ ফ্রেম তৈরির জন্য। পরে, যখন মেয়ে আসলো না, দুঃখী তারারে নিয়া সিদ্ধার্থ যায় রেস্টুরেন্টে, তার বন্ধু সাইফ আলি ও আমির খানরে নিয়া তারার জন্মদিন পালন করে। তখন আমির খান তারারে নিয়া নাচে এক পর্যায়ে। সেই সময়ে দেখবেন ক্যামেরা আবার অক্ষয় খান্নার ফেইসে গিয়া শেষ, আবার ওই প্রতীকী ত্রিভূজ ফ্রেমটা আনার জন্য। এবং ওই রাতেই ফেরার সময়ে অক্ষয় খান্না তার লাভ ফিল করে ও বন্ধুদের বলে ফেলে যে সে তারারে লাভ করে।
এটা দার্শনিক রেনে জিরার্দের মিমেটিক ডেজায়ারের লগে যায়, আবার জ্যাক লাকার আইডিয়ার সাথে যায়, যেখানে লাভে তিনজন লাগে - সাবজেক্ট, অবজেক্ট এবং সিম্বলিক আদার বা রাইভাল। এই সূত্রে বলতে পারি, প্রিয়ার লগে সাইফ আলি খানের প্রেম টিকে নাই কারণ ওইখানে কোন সিম্বলিক আদার ছিল না।
❤️🪄