মুন্না ত্রিপাঠির সেলফ একচুয়ালাইজেশন যেভাবে শুরু হয়
সেলফ একচুয়ালাইজেশন
একজন ব্যক্তি যখন তার নিজের সম্পর্কে সচেতন হয়, দুনিয়াতে তার অবস্থান কী, তার লাইফের উদ্দেশ্য পায়, সেটা তার সাইকোলজিক্যাল ডেভলাপমেন্টের সর্বোচ্চ স্তর, যার নাম সেলফ একচুয়ালাইজেশন।
বেশীরভাগ মানুষ সারা জীবনে এটা পায় না।
ফলে, তার পুরা পটেনশিয়াল সে কাজে লাগাইতে পারে না।
অনেক সময় মানুষের মধ্যে নিজের পূর্ণ সম্ভাবনায় যাইতে একটা ভয় কাজ করে।
হিব্রু বাইবেলের বর্নিত আছে একজন নবীর কথা। যার নাম জনাহ। তারে ঈশ্বর বলছিলেন, নিনেভেহতে গিয়া ঈশ্বরের বাণী প্রচার করতে।
জনাহ পালাইতে চাইলেন। এক পর্যায়ে সমুদ্রে একটা বিরাট মাছ তাকে গিলে ফেলে। ওইখানে মাছের পেঠে তিনি থাকেন। পরে ঈশ্বরের নির্দেশে মাছ বমি করে তাকে। তিনি বের হয়ে আবার আদেশপ্রাপ্ত হন ও নিনেভেহতে যান।
জনাহ যে পালাইতে চাইছিলেন, এইরকম অনেক মানুষ তার ফুল পটেনশিয়ালে যাওয়া থেকে পালাইতে চায়। এইটার নাম দেয়া হইছে জনাহ কমপ্লেক্স।
তবে, সেলফ একচুয়ালাইজেশন কোন ডেসটিনেশন নয়, প্রসেস। মানুষ একবারেই বুঝে ফেলে না। তখন তার সেলফ একচুয়ালাইজেশনের পথে যাত্রা শুরু হয়, তখন আস্তে আস্তে বুঝে।
মুন্না ত্রিপাঠির সেলফ একচুয়ালাইজেশন
মির্জাপুর সিজন এক, এবং দুইয়ে সবচাইতে ইন্টারেস্টিং লাগছে মুন্নার চরিত্র।
মুন্না কন্টিনিউয়াস একটা ইনফিরিয়রিটিতে থাকে তার অতি বুদ্ধিমান বাহুবলী বাপের জন্য। এইখান থেকে বের হইতেই তার স্ট্রাগল। কিন্তু সে বের হইতে পারে না। তার ঐ প্রতিভাও নাই, আবার তারে হেল্প করারও কেউ নাই।
তার বন্ধু যেগুলা ছিল, সবাই তারে ইউজ করার ধান্দায়। যেমন, কম্পাউন্ডার প্রথম সিজনে, তারে কুবুদ্ধি দিয়া বাপ আখান্ডানান্দ ত্রিপাঠিরে মারাইতে চায়। দ্বিতীয় সিজনে তার বন্ধু হয় রতি শংকর শুক্লার ছেলে শরদ, যে এই বন্ধুত্ব করে ত্রিপাঠি পরিবারের বিনাশ ও মির্জাপুর দখলের চক্রান্তে। আর চ্যালা টাইপের যেগুলা তার সাথে থাকত, এগুলা তো চ্যালাই।
ফলে মুন্না কোন হেল্পার পায় নাই।
প্রথম সিজনে সে স্ট্রাগল করে গেছে, কিছু কইরা দেখাইতে। সে প্রেম করতে চাইছিল এক মেয়ের সাথে, সেই মেয়ে আবার নায়ক গুড্ডুর প্রেমিকা। এদিকে বাবলু গুড্ডু ত্রিপাঠি ফ্যামিলির কাজে যোগ দিয়া এত ভালো করতে লাগল যে, আখান্ডা ত্রিপাঠির কাছে রেসপেক্ট অর্জন করে নিল।
মুন্নার জন্য এইগুলা ছিল বড় হিউমিলিয়েশন।
সে এর বিরুদ্ধে ফাইট কইরাই গেছে। দ্বিতীয় সিজনে, যখন মাধবি ইয়াদবের প্রেম হইয়া যায় তাদের বিয়ার পরে, তখন মুন্না চেইঞ্জ হতে থাকে। সে বুঝতে থাকে দুনিয়ায় তার অবস্থান আসলে কী। এই বুঝ না থাকা তারে অস্থির রাখছিল সকল সময়। মাধবি এই সিরিজের সবচাইতে শক্ত একটা ক্যারেক্টার। সে মুন্নারে হেল্প করে, ঐ হেল্প যেইটা সে সারাজীবন খুঁজতেছিল। সে এখানে মুন্নার জন্য লাকানিয়ান বিগ আদারের মত।
মাধবি হিস্টরিক এক দায়িত্ব পালন করছে বলা যায়, যদি আমরা ইতিহাসের দিকে তাকাই, অনেক মহামানবরে, মিথিক্যাল হিরোরে প্রথম স্বীকার করে নিছেন, বা তাদের মাহাত্ম্য তাদেরই বুঝাইয়া দিছেন এমন একেকজন। মনোমিথ বা জোসেফ ক্যাম্পবেলের হিরোর জার্নিতে যে ব্যাখ্যা, হিরো প্রথমে অভিযানে যাইতে চায় না, বিশ্বাস করতে চায় না, তারে একজন বিশ্বাস করায়।
বিশ্বাস কখনো সরাসরি হয় না, আরেকজন বিশ্বাস করতে হয়, তার বিশ্বাস দেখেই বিশ্বাসের জন্ম হয়, যেমন জিজেক ব্যাখ্যা করছিলেন এ গ্ল্যান্স ইন টু দি আক্রাইভস অব ইসলাম প্রবন্ধে।
মুন্নার ক্ষেত্রে এই মুক্তির পর, দুনিয়াতে তার অবস্থান বুঝার পড়, মুন্না আর আগের অবস্থায় থাকে না। সে ইনফিরিয়রিটি থেকে বের হইয়া যায়। তার দাদারে চিতায় জ্বালানোর টাইমে, বাপের সাথে দাঁড়াইয়া স্পষ্ট বাদানুবাদ করে নিজের অবস্থান জানায়।
মুন্নার চরিত্রের সাইকোলজিক্যাল ডেভলাপমেন্ট সম্পন্ন হয়। সে নায়ক হইয়া উঠে, বা হয়ত তারে আর ভিলেন রাখার জায়গা থাকে না। কারণ ভিলেন বলতে দর্শক ভাবে সাইকপ্যাথিক ক্যারেক্টার, যেমন আখান্ডানান্দ ত্রিপাঠি। বা বেশীরভাগ সময়ে মুন্না যেমন ছিল, খারাপ। যদিও সুক্ষ্ম পর্যবেক্ষণে সে খারাপের চাইতে বেশি ছিল পথহারা, দিশাহারা। যেহেতু এই অবস্থায় তারে আর রাখার সুযোগ নাই, তাই স্ক্রিপ্ট রাইটার তারে রাখতে চাইলেন না।