পুতিনের নিজের নামে কোন সম্পদ নাই। কিন্তু তার বন্ধু ও আত্মীয়দের নামে রয়েছে প্রচুর সম্পদ। এরা পাবলিকের কাছে পরিচিত নন, অনেকে নিজেরাও ঠিক জানেন না তাদের সম্পদের পরিমাণ সম্পর্কে। পুতিন এদেরকে প্রক্সি হিশেবে ব্যবহার করেন। বিশ্বস্ত বন্ধুবান্ধব থাকলে নিজের নাম ডকুমেন্টসে রাখার কী দরকার।
বাংলাদেশে সম্প্রতি আরাভ খান নামে এক ব্যবসায়ীর খোঁজ পাওয়া গেছে যিনি দুবাইতে স্বর্ণের ব্যবসা করেন। তার মত এতো বিশাল ভাবে বাংলাদেশী কেউ স্বর্ণের ব্যবসা করে নি। তিনি এত কম সময়ে, এতো অল্প বয়েসে, খুনের মামলার পলাতক হয়ে, বার বার পরিচয় বদলানোর হ্যাপা মাথায় নিয়ে, কিভাবে এত টাকার মালিক হলেন, তা এক রহস্য। সেই রহস্যের উত্তর হয়ত পুতিনের প্রক্সিদের নিয়ে অসিসিআরপির করা এই রিপোর্টের মাঝে মিলবে।
আরাভ বড় কোন ক্রিমিনাল ছিলেন এমন কোন কথা পত্রিকায় দেখি নাই। তার ব্যাকগ্রাউন্ডও খুব পাওয়ারফুল এমন মনে হয় না। সম্ভবত, তিনি অল্প পাওয়ারের কোন এক অবস্থানে ছিলেন, বন্ধুবান্ধব নিয়া পাওয়ার দেখাইতে গিয়া ঘটনাক্রমে একটা খুন হয়ে যায়, তারা হয়ত চাইছিলেন মাইর দিয়া ছাইড়া দিতে, কিন্তু খুন হয়ে যায়। এমন ঘটনা অস্বাভাবিক না।
এরপর শুরু হয় আরাভের নিজেরে বাঁচানোর যুদ্ধ, সেই প্রক্রিয়ায় তিনি বড় পাওয়ারের সাহায্য পান। সেইখান থেকেই তিনি বড় পাওয়ারের ঘুটি হইয়া যান।
আরাভ খানের সাম্প্রতিক আলোচনায় আসার ঘটনায় আমার খটকার জায়গা হলো, আরাভ কেনো এতো আয়োজন করে তার দোকান উদ্বোধন করতে গেলেন। তিনি ধর্ম, ক্রিকেট, বিনোদন ইত্যাদি জায়গার পপুলার ব্যক্তিদের টার্গেট করে নিয়েছেন টাকা দিয়ে। এদের যেহেতু টাকা দিলে পক্ষে কথা বলানো যায়, তিনি বলিয়েছেনও।
এবং তখনই সামাজিক মাধ্যমে মানুষেরা খেয়াল করেন, গণমাধ্যম খেয়াল করে। তারা ধরে ফেলেন এই আরাভ আসলে পলাতক খুনের মামলার আসামী।
আরাভ কি মনে করেছিলেন মানুষ তাকে ধরতে পারবে না? ওভার কনফিডেন্স ছিল হয়ত তার। এতো সম্পদের মধ্যে, ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকলে ওভার কনফিডেন্স অস্বাভাবিক না।
অথবা, তিনি এইগুলা করেছিলেন তার স্বর্ণের দোকানের প্রচারণায়, বাংলাদেশীদের কাছে, এবং উপমহাদেশীয়দের কাছে। দেখলাম পাকিস্তানি, আফগানিস্তানি, শ্রীলংকান ক্রিকেটারদেরও নিয়েছেন প্রচারণায়। এদের ফ্যানরা দুবাইতে গেলে যাতে স্বর্ণ কিনেন, এই ছিল হয়ত টার্গেট। কিন্তু এই মার্কেটিং ব্যাকফায়ার করেছে।
এখন আরাভ কী করতে পারেন?
দুইটা অপশনের কথা ভাবা যায়।
১। তিনি নীরব হইয়া যাইতে পারেন। তিনি যাদের হইয়া প্রক্সি দিতেছেন, তারা বলতে পারেন, তুই চুপ হইয়া যা।
তারা কি এখন আরাভরে সরাইয়া দিতে পারেন তার জায়গা থেকে? মনে হয় না। আরাভের উপর ইনভেস্টমেন্ট অনেক, এবং তিনিও সফলতার সাথে আগাইয়া দেয়া সিঁড়িগুলা বাইয়া এতদূর গেছেন।
২। আরাভ আরো এক্টিভ হইয়া যাইতে পারেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।
কারণ স্বর্ণের দোকানটা তো আছে, ব্যবসা কেবল শুরু হইল। যদি টার্গেট হয় বাংলাদেশী মিডলক্লাস, যারা স্বর্ণ কিনতে দুবাই যায়, তাহলে আরাভের চুপ হইয়া গেলে হবে না।
আরাভ তার ল্যাভিশ লাইফস্টাইল আরো দেখাইতে পারেন। কীভাবে তিনি মায়া হরিণ জবাই করে খাচ্ছেন, রোলেক্সের ঘড়ি গিফট পাইতেছেন, বুর্জ খলিফায় ফ্ল্যাট কিনতেছেন, ইত্যাদি।
এবং বার বার বলতে থাকবেন, তিনি খুন করেন নাই। আর হিশাব করলে, তার সম্পর্কে অভিযোগ তো একটাই, এই খুনের মামলা, এখানেও তার কথা বিচার তারে করবে আদালত, কথাটা তো মিথ্যা না। পাবলিক নিবে।
আরাভ সম্পদ, ইসলামি অবস্থান, ও জনপ্রিয় ব্যক্তিদের ব্যবহার করা চালাইয়া যাইতে থাকলে, মানুষ তারে গ্রহণ করে নিবে। মানুষ সম্পদশালী ও সফল ব্যক্তিদের লাইক করে।
দুবাইতে গেলে তার দোকানে ঘুরে আসবে, ওইখান থেকে কিনবে। আরাভ ও তার পেছনে থাকা ইনভেস্টরদের লাভ হবে।
আমার পরামর্শ যদি চান, তাহলে একজন আন্তর্জাতিক বিজ্ঞাপন বিশেষজ্ঞ হিশাবে আমি বলব, আমার সহআর্জেন্টিনা সমর্থক আরাভ ভাইয়ের দ্বিতীয়টাই করা বেটার হবে।
এই লেখা মার্চ ১৭, ২০২৩ সালে লেখি। এইখানে আমার প্রেডিকশন ছিল আরাভ খান হারাইয়া যাবেন না। ফিরে আসবেন, কারণ তিনি যে মার্কেটিং করছেন, পরিচিতি বাড়াচ্ছেন, এর লাভ তারে তুলতে হবে।
আরাভ এখন আবার ফিরে এসেছেন কিছুদিন নিরব থেকে। এখন তিনি ট্রাভেলসের ব্যবসা খুলেছেন।