এক- মেন্টরের দিক থেকে সমস্যা
জিউস, মাউন্ট অলিম্পাসের দেবতাকূলের রাজা, মহাশক্তিধর। একবার তিনি দুনিয়াতে ঘুরছিলেন এবং তথায় গ্যানিমেড নামক এক সুন্দর বালককে দেখতে পান। তার সৌন্দর্যে তিনি মুগ্ধ হয়ে পড়েন এবং ঈগলের রূপ ধারণ করে তাকে ধরে নিয়ে যান মাউন্ট অলিম্পাসে। সেখানে বালকটি জিউসের সেবা ও পাত্র বহনকারীর কাজ করত। জিউস তাকে সেই বয়সেই আটকে রাখেন। তাকে অমরত্ব দান করেন।
এই গল্পটি গুরু-শিষ্যের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়। গুরু ব্যক্তিটি কোন তরুণের মধ্যে নিজের তরুণকালের ছায়া দেখতে পেয়ে তার প্রতি আকৃষ্ট হন। নিজের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান থেকে তাকে শেখাতে যান, এবং এর মাধ্যমে তিনি যেন নিজেকেই আবার আরেকটু ভালোভাবে নির্মাণের আনন্দ পান। কিন্তু জিউসের মত গুরুরা অন্যরকম, তারা শিষ্যকে আর বাড়তে দেন না। নিজেদের আনন্দের জন্য তারা শিষ্যকে ঐ অবস্থাতেই আটকে রাখেন। এবং শিষ্য তখন আর গুরুর ছায়া থেকে বের হতে পারেন না।
দুই – শিষ্যের মিমেটিক ডেজায়ার জনিত ঈর্ষা
শিষ্য মেন্টরের প্রতি আকৃষ্ট হয় কারণ সে অনেকটা তার মতো হতে চায়। কিন্তু এক পর্যায়ে গিয়ে শিষ্য গুরুর প্রতি ঈর্ষা অনুভব করতে পারে।
রেনে জিরার্দের কথা হলো, মানুষের নিজের কোন ডেজায়ার নেই। সে অন্যের ডেজায়ার কপি করে। এই অনুকরণ দুইটা ধরণে হতে পারে। প্রথম ধরণে যার ব্যবহার বা আচার অনুকরণ করা হচ্ছে তার সাথে প্রতিযোগীতামূলক দ্বন্দ্বের তেমন কোন সম্ভাবনা নাই। দুইজন দুই সময় বাস্তবতার ভূমিতে অবস্থান করেন। যেমন, কীয়ের্কেগার্ড সক্রেটিসকে দেখে তার মতো হতে চেয়েছিলেন। কীয়ের্কেগার্ডের সারা জীবনই গেছে সক্রেটিস হতে হতে। স্কুল অব সিভিক ভার্চ্যুতে পড়ার সময় তিনি সক্রেটিসের মত সহপাঠীদের সাথে কথোপকথন চালাতে গিয়ে ঝগড়া করেছেন পর্যন্ত। তার সক্রেটিক পদ্বতির তর্কের সাথে না পেরে অনেক ছেলেই ঝগড়ার পথে হাঁটত।
এই সক্রেটিসকে যে তিনি মডেল ধরে এগিয়ে গেলেন, তাতে সক্রেটিসের সাথে তার দ্বন্দ্বের কোন সম্ভাবনা ছিল না।
আর দ্বিতীয় ক্ষেত্রে, অনুকরণ ক্ষতিকর দ্বন্দ্বের তৈরী করতে পারে, যখন মডেল ও অনুকরণকারীর লক্ষ্য হয়ে যায় একই বস্তু। যেমন, একজন পিএইচডি ছাত্র, তার সুপারভাইজরকে মডেল ধরে এগিয়ে একই কাজের ক্ষেত্রগুলোতে হানা দিয়ে ফেইম, চাকরির সুবিধা, ফান্ড ইত্যাদিতে ভাগ বসাতে চাইছেন। তখন তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সম্ভাবনা থাকে।
এই দ্বিতীয় প্রকারের দ্বন্দ্ব ঘটার সম্ভাবনা থাকে মেন্টরের সাথে শিষ্যের, যেহেতু তারা দুইজন বাস্তব জীবনে একি সময়ে ও স্থানে অবস্থান করেন। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্যই প্রাচীন শাস্ত্রে গুরুভক্তির কথাটি এসেছে গুরুতরভাবে।
এই দুইটি সমস্যাই কম বুঝা থেকে উদ্ভূত, আর অধিকাংশ মানুষই এই ট্র্যাপে পড়তে পারে। তাই গুরু ধরার কালে বা শিষ্য নির্বাচনের কালে, বা শিষ্য হয়ে গেলে, সতর্ক থাকুন।
The post মেন্টরিং এর দুই প্রধান সমস্যা appeared first on মুরাদুল ইসলাম.