নিউরোসেন্ট্রিক ভিউ হলো ব্রেইন বা মস্তিষ্কের কিছু ক্রিয়া প্রতিক্রিয়াই আমাদের সকল কিছু নিয়ন্ত্রণ করে। আধুনিক বিজ্ঞানের রিসার্চ এর পক্ষে যায়। সুতরাং, মানুষের মস্তিষ্কের ক্ষমতা সম্পর্কে কোনরূপ অস্বীকারের অবকাশ নেই।
কিন্তু কিছু সমস্যা আছে। সেই জন্য মাইন্ড নিয়ে কিছু কথা তোলা যায়। যেমন, মাইন্ড কি? এর কোন যথার্থ উত্তর ফিলোসফারদের কাছে নেই। দার্শনিকেরা এর কোন নির্দিষ্ট সংজ্ঞা দান করেন নি, কিন্তু ব্যবহার করে এসেছেন।
দু’জন এনালিটিকাল দার্শনিক তাদের ডিসিপ্লিনের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ন জিনিসটির ব্যাপারেই একমত নন।
মাইন্ড কী তারই ঠিক নেই, এর মধ্যে মাইন্ড-ব্রেইন সমস্যা নিয়ে তারা কথা বলছেন। এটা অর্থহীন। আমার মতে এটা একটা স্যুডো তথা মেকি সমস্যা।
ধরা যাক, মেসি একটা গোল করল। এখন আপনি কি বলবেন মেসি গোল করে নি, তার পা গোল করেছে?
মেসি তার পা ছাড়া গোলটি করতে পারতো না তা সত্য, কিন্তু মেসির পা গোল করেনি, পুরা ব্যক্তি মেসিই গোলটা করেছে।
একইভাবে সচেতনতার যে মানসিক অবস্থা তা একক কোন অংশের হয় না। কেবল মস্তিষ্কের হয় না। পুরো প্রাণিটির হয়।
এটা ঠিক মস্তিষ্ক ছাড়া আপনি সচেতন হতে পারবেন না, কিন্তু তাই বলে সচেতনতা আর মস্তিষ্ক সমার্থক হয়ে ওঠে না।
এখন আপনি যদি বলেন মস্তিষ্ক কেন্দ্রিয় স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে সব নিয়ন্ত্রণ করে। সেখান থেকেই নির্দেশ এসেছে বলেই না মেসি শট দিল ও গোল হলো।
আপনার এই মস্তিষ্ককে কেন্দ্রে রেখে চিন্তাটি আপনার একটি ধারণা।
দেখুন যে, আপনি প্রশ্নটি করছেন, এর ফলেই আমার উত্তর দিতে হচ্ছে। আপনি প্রশ্নটি না করলে আমি উত্তর দিতাম না। উত্তর নিয়ে ভাবতাম না। কিন্তু আপনি কি আমার অংশ? অবশ্যই আমার অংশ নন। কিন্তু তাও আপনি আমার মানসিক অবস্থার সাথে জড়িত।
এই লেখাটি এখানে প্রকাশিত হয়েছে। আপনি তা পড়ছেন। এই পড়ার ফলে আপনার মধ্যে তৈরী হচ্ছে প্রতিক্রিয়া। এই লেখাটি আপনার ভিতরে নয় বাইরে। কিন্তু তাও এটি আপনার মানসিক অবস্থার অংশ। সচেতনতা কেবল মাথায় নয়, মাথার বাইরেও থাকে।
মেন্টাল স্টেইট বা মানসিক অবস্থা কেবল মস্তিষ্ক বহন করতে পারে না। জার্মান ভাষায় একটা শব্দ আছে জেইস্ট নামে, এটা হলো মানসিক অবস্থার বাহক।
যদিও জেইস্ট সাধারণত কালচার বা সংস্কৃতির কাছাকাছি শব্দ, কিন্তু আমি বলব এর অর্থ হলো, অর্থ ভাগাভাগি করা বা শেয়ারড মিনিং।
আপনি একদিন সন্ধ্যায় বের হয়ে একটি রেস্টুরেন্টে গেলেন, সেখানকার অবস্থা আপনার শেয়ারড মিনিং তৈরী করে। অর্থাৎ, কী ধরণের খাবার প্রত্যাশা করেন সেখানে, ওয়াইনের দাম কতো, কতো টিপস দিবেন ইত্যাকার বিষয়াদি।
মাইন্ডের সবচাইতে বর্ধিত অংশ হচ্ছে বই। সবচাইতে সেরা ইন্টেলেকচুয়াল ডিভাইস হচ্ছে লেখা। এক্সটেন্ডেড মাইন্ড বা মাইন্ডের বর্ধন বিষয়ক যে ধারণা আছে সে বিষয়ে আমি একমত, কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এটি বাড়াচ্ছে বলে আমি মনে করি না। যেমন, ইন্টারনেট বইয়ের ধারেকাছেও নেই। স্মার্টফোন এলো পাঁচ বছর মাত্র। আর এদিকে প্লেটোর বই টিকে আছে ২৫০০ বছর ধরে। তো সত্যিকার অর্থে আধুনিক প্রযুক্তিগত উন্নয়ন আমাদের মাইন্ডকে বর্ধিত হতে দিচ্ছে না, সীমিত করছে বরং, আর আমাদের চিন্তা ক্ষমতা কমাচ্ছে।
আর আমি মনে করি বুদ্ধরা যে “কোন আমি নেই” বলে এটা ভুল চিন্তা। কারণ আমি তো আছেই, আইডেন্টিটি আছে, কিন্তু আমি একে পুরো দেখতে পাচ্ছি না কারণ আমি এখনো সম্পূর্ন নই।
আমার যে দেহ, হাত পা ইত্যাদি, আমার নাম আর আমি একসময় মারা যাব এগুলা নিয়েই তো আমি। আবার আমি এখনো যেহেতু শেষ হয়ে যাই নি, তাই আপনি আমাকে পুরো দেখতে পাবেন না। আমি পরিবর্তিত হতে পারি। আমি সম্পূর্ন নই কিন্তু এর মানে নয় যে আমি নেই।
আমি আয়নায় নিজেকে দেখলে পুরো দেখি না। একটা অংশ দেখি। এর মানে বলা যায় না আমি নেই। এখানেই বুদ্ধরা ভুল করেছে। তারা এই আংশিক দেখাকে বিস্তারিত করতে করতে গিয়ে বলেছে আমি নেই।
জার্মান নিও-একজিজস্টেনশিয়ালিস্ট দার্শনিক মার্কাস গ্যাব্রিয়েলের আইডিয়ার ভাবানুবাদ।
The post মস্তিষ্ক, মাইন্ড ও মানুষ appeared first on মুরাদুল ইসলাম.