কোরিয়ান-জর্মন ফিলোসফার বিং (বা বিয়ুং) চুল হানের দি বার্ন আউট সোসাইটি বইটাতে বলতেছেন যে ওয়েস্টার্ন সমাজ মানুষরে ডিপ্রেস করে দিতেছে, এবং মানসিক সমস্যায় ফালাইতেছে তাদের একটা প্রতিযোগিতায় ফালাইয়া। যেই প্রতিযোগিতারে আমরা বলি ইঁদুর দৌড়। অমুক পারছে তবে আমি কেন পারব না, এই ধারণা ঢুকাইয়া দিতেছে মানুষের মধ্যে শস্তা মটিভেশনাল বা সেলফ হেল্প ইন্ড্রাস্ট্রি। চুল হান ভাবেন, চূড়ান্ত ডিপ্রেসের যে অবস্থা “আমারে দিয়া কিছু হবে না” এইটার উৎপত্তি হয় তখনই, যখন এই ধারণা খাওয়াইতে থাকা হয় “তোমারে দিয়া যেকোন কিছু সম্ভব।”
চুল হান সোশ্যাল মিডিয়া, ইন্টারনেট ইত্যাদি কীভাবে মানুষের মেন্টাল হেলথে প্রভাব ফেলতেছে সে বিষয়ে তার মত দেন। এই ডিজিটাল কালচারে মানুষ হাইপার কানেক্টেড ও হাইপার একটিভ। প্রচুর প্রচুর তথ্য তার সামনে নিয়মিত আসতেছে, তার মনোযোগ দাবী করতেছে। সে মিস করে যাবার ভয় থেকে এগুলাতে এনগেইজ হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু গভীর কোন এনগেইজমেন্ট তৈরি হচ্ছে না। কারণ এতো এতো দিকের তথ্য তার মনোযোগের ক্ষতি করছে, ফলে গভীর মিনিংফুল এনগেইজমেন্ট সম্ভব হয় না।
বার্ন আউট বলতে খালি শারীরিক কোন অবস্থারে বুঝান নাই, তার কথায় এটা মানসিক এবং ইমোশনাল একটা অবস্থাও। যেখানে শূন্যতা ফিল করে, ফিল করে হতাশা, এবং কিছু করার মোটিভেশন পায় না।
এচিভমেন্টের সমাজ
চুল হান ওয়েস্টের ক্ষেত্রে এইটা এইভাবে বলেছেন যে, ‘এই সমাজ আর ফুকোর ডিসিপ্লিনারি পানিশমেন্টের সমাজ না, পাগলা গারদ, ব্যারাক বা জেলখানার। বরং এই সমাজ হইল ফিটনেস স্টুডিও, অফিস, ব্যাংক, এয়ারপোর্ট, শপিং মল ও জেনেটিক ল্যাবরেটোরির। এখন আর এইটা ডিসিপ্লিনারি সমাজ না, বরং এটা এচিভমেন্টের সমাজ। মানুষের “অবিডিয়েন্স সাবজেক্ট” না বরং “এচিভমেন্ট-সাবজেক্ট”।’
তার মতে এখনকার সমাজে মানুষ এচিভমেন্টের জন্য এতো উন্মাদ দশায় গেছে যে, নিজেরে ইম্প্রুভ করতে যাইয়া, সবার চাইতে বেশী, আরো বেশী এচিভ করতে যাইয়া নিজের উপর নিজেই প্রেশার দিচ্ছে, এবং নিজেই সেই শাস্তি ভোগ করে যাচ্ছে।
চুল হান ঘুরাইয়া বলছেন কথাটা। প্রবণতা হিশাবে এটি ঠিক। কিন্তু রুট কজ হিশাবে এভাবে দেখলে হবে না।
প্রশ্ন হলো, তার ভেতরে এই এচিভ করার ইচ্ছা, রেট রেইস এগুলা কে বা কারা প্রতিদিন ঢুকাইয়া দেয়? অবশ্যই মিডিয়া এবং প্রফিট নির্ভর সমাজ ব্যবস্থা।
নিজের ডেজায়ার সিস্টেমে কন্ট্রোল নেয়া
আমি যেই জিনিশে গুরুত্ব দেই মানুষের নিজের জিন্দেগী যাপনের জন্য সেটা হচ্ছে নিজের ডেজায়ার সিস্টেম বুঝা ও তার কন্ট্রোল নেয়া।
এই ক্ষেত্রে ডেজায়ার বিষয়ে আমি দার্শনিক রেনে জিরার্দের ডেজায়ার বিষয়ক তত্ত্বকে ঠিক মনে করি। মানুষের ডেজায়ারের জন্ম হয় অন্যদের ডেজায়ার দেখে। ফলে, ব্যক্তি যদি বুঝতে না পারে কার ডেজায়ার দেখে তার ডেজায়ার তৈরি হচ্ছে, এবং এটি তার জন্য ঠিক কী না, তখন তার পক্ষে নিজের জিন্দেগী যাপন সম্ভব না।
বিজ্ঞানী ডেভিড বাস দ্য এভলুশন অব ডেজায়ার বইতে চার্লস ডারউইনের সেক্সুয়াল সিলেকশন নীতির উপর ভিত্তি করে মানুষের সেক্সের জন্য প্রতিযোগীতা এবং এর ফলে “ডেজায়ার” বা “সেক্সুয়াল ডেজায়ারের” উৎপত্তি, প্রাণী হিসাবে মানুষের মেটিং স্ট্র্যাটেজি এগুলা নিয়া আলাপ করছেন। মিন জিনস বইটাতে যেসব জিনিস ছিল, এই বইটাতে প্রায় একই জিনিস, একটু বেশি ব্যাখ্যায়।
এভলুশনারি সাইকোলজিতে, পুরুষ সম্পদ কিনে, বাড়ি গাড়ি ইত্যাদি আর কি, বিপরীত লিঙ্গরে আকর্ষণের জন্য। এগুলা তার স্বক্ষমতার সিগনাল দেয়, যে আমি নিরাপত্তা দিতে পারব ভবিষ্যত সন্তানদের।
আর এই যে, দেখানো সম্পদ কেনা, এটা সোশ্যাল স্ট্যাটাস বাড়ানো। এই জায়গায় আমরা কেন মানুষ সোশ্যাল স্ট্যাটাসের পেছনে ছুটে তা বুঝতে পারি। সমাজের হায়ারার্কিতে তার অবস্থান যত ভালো হবে ততো ভালো সঙ্গী সে পাবে। ফলত, তার উত্তরসুরীরা বেটার হবে।
এই কথা বুঝতে অসুবিধা হইলে আপনে গ্রামের বংশ মর্যাদা কনসেপ্টের কথা ভাবেন। ভালো বংশের ছেলে ভালো বংশের মেয়েই বিয়ে করে, এরেঞ্জড ম্যারেজের কনসেপ্টে। এই বংশ মর্যাদার কনসেপ্ট একটা সোশ্যাল স্ট্যাটাস।
মানুষের সোসাইটির যে রেট রেইস, তা বহুলাংশে এই সোশ্যাল স্ট্যাটাস গেইনের জন্য। এই প্রতিযোগিতারে আরো বাড়াইছে ইনস্টাগ্রাম, ফেইসবুক জাতীয় সোশ্যাল মিডিয়া। বন্ধু বা পরিচিতরা গাড়ি কিনছে বাড়ি কিনছে তা ব্যক্তি দেখতে পাইতেছে বা সে গাড়ি বাড়ি কিনলেও দেখাইতে পারতেছে।
খেয়াল করবেন, এখানে দেখানোটাই মূল কাজ। এচিভমেন্ট হইলেই মানুষ ফেসবুকে এড করার এক অদৃশ্য চাপ অনুভব করে, সবাইরে দেখাইয়া দেয়ার চাপ। ব্যঙ্গ রসের দিকে যাইয়া, বার্কলে উত্থাপিত সেই অভজার্ভেশনের ফিলোসফিক্যাল সমস্যার মত ধরা যায়, গহীন জঙ্গলে একটা গাছ মাটিতে পড়লেন, ওইখানে শোনার জন্য কেউ ছিল না, তাইলে শব্দ হইল কি?
আপনে কোহীনূর হীরার মালিক হইয়া বসে থাকলেন, কিন্তু কাউরে দেখাইলেন না, তখন কিন্তু আর ওইটা সামাজিক স্ট্যাটাস বাড়াইতে কাজ করলো না।
কিন্তু এই দেখানি ব্যক্তিরে স্যাটিস্ফেকশন দিতে পারে না কারণ তার চাইতে আরেকজন বেশী দেখাইতেছে।
আবার দেইখা যাদের ডেজায়ার তৈরি হইতেছে, তাদের অবস্থাও হাহাকারময়, কারণ সে জিনিশটা নিজের জন্যও চাইতেছে।
উভয় পক্ষেই বাইরের জিনিশের উপর নিজের হ্যাপিনেস, সন্তুষ্ঠিরে বাইন্ধা রাখছে। এমতাবস্থায় তার হ্যাপিনেসে তার নিজের নিয়ন্ত্রণ থাকে না।
বাংলাদেশে হতাশার কারণ
চুল হান ওয়েস্টার্ন সমাজের যে বার্ন আউটের কারণ দেখাইছেন, বাংলাদেশের সমাজের জন্য তা পুরাপুরি প্রযুক্ত হবে না।
কারণ, আমাদের হতাশা কাজ করতে করতে না, কাজ না পাইয়া।
আমাদের হতাশার কারণ দারিদ্র।
যেসব মানুষরে সরকার পড়ালেখা করাইতেছে ভার্সিটিতে, তাদের ভালো কাজই দেয়া যাইতেছে না।
ওয়েস্টার্ন সমাজের এক লেভেলে সেলফ-ইম্প্রুভমেন্টের জন্য অতি আকাঙ্খা যদি হতাশা ডাইকা আনে, আমাদের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এইটা হইল, নিজের ইম্প্রুভমেন্ট দরকার কি না, কী ইম্প্রুভ করতে হবে, কী করলে কাজ পাবে এবং ইম্প্রুভ না করার ইচ্ছাই সামগ্রিক হতাশা বাড়ায়।
কারণ, স্কিলের দিক থেকে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঐ জিনিস দিতে পারতেছে না ছাত্র ছাত্রীদের, যেইটা আজকের দিনে দরকার বা ভবিষ্যতের দিনে দরকার হবে। আমাদের সরকার যোগ্যদের জন্যও কাজের ব্যবস্থা করতে পারতেছে না।
আমেরিকা দুনিয়ার সুপার পাওয়ার। টাকা পয়সার দিক থেকে আগাইয়া, উন্নতি এই সেই। কিন্তু আমেরিকাতেও মানুষ কতো ডিপ্রেসড, সুইসাইডাল টেন্ডেন্সি অনেক। এই প্রবলেমটা সলভ করতে পারতেছে না তারা।
তুলনা যদি করেন, ইউরোপ-আমেরিকার তুলনায় বাংলাদেশের সমাজ বহুগুণে খারাপ আর্থ-সামাজিক-প্রাতিষ্ঠানিক দিক থেকে, তুলনায় আসার মতোও না। এভ্রি সেক্টরে করাপশন, মরাল ব্যাংক্রাপ্টসি, এবং টোটাল বাসডারডাইজেশন এর অভিনব মিশ্রণ হচ্ছে বাংলাদেশের সমাজ। এখানে একজন প্রতিভাবান সুস্থ মানুষরে প্রায় সকল দিক থেকেই ডিপ্রেস করার চেষ্টা থাকে।
এর সাথে যুক্ত হইছে সোশ্যাল মিডিয়ার হাইপার কানেক্টিভিটি। মানুষ অন্যান্য সফল লোকদের সফলতা দেখতেছে। লোকেরা খালি সফলতাই দেখাইতেছে।
যারা দেখতেছে, এবং যারা ফেইক বা আসল সফলতা দেখাইতেছে উভয়ই হতাশ হইতেছে দিনশেষে।
যেন তাদের জিন্দেগীটা দেখানোর।
সকল কিছুই দেখাইতে হবে, নিজের অর্জন, কেনা বস্তু, পারিবারিক সম্পর্ক, রোমান্টিক সম্পর্ক। না দেখাইতে পারলে তারা ফিল করতেছে এর কোন অস্তিত্ব নাই।
বাস্তবতা বিযুক্ত, কর্মবিমুখ, এবং ফ্যান্টাসিময় একটা অবস্থা মানুষেরা, তথা ইয়াং জেনারেশন তৈরি করতেছে নিজেদের জন্য।
যারা কম চিন্তাশীল তারা স্রোত যেদিকে নিয়া যায় ওইদিকে গিয়া হয়ত একরকম টিকে থাকবে।
কিন্তু যারা চিন্তাশীল, যাদের সম্ভাবনা ছিলো, মূল হতাশার বিপদ এদের জন্য। এরা একসময় আবিষ্কার করবে এমনিতেই আর্থ-সামাজিক কারণে তাদের অবস্থা ছিল খারাপ, এর মধ্যে নিজে ও আশপাশ মিলে যে কাল্পনিক কর্মবিমুখ বাস্তবতায় আটকে ছিলো, এটা বাকি সম্ভাবনাও নষ্ট করে দিছে। আমি ভয় পাই এই রিয়ালাইজেশনরে তারা সামলাবে কী ভাবে?
ইনফরমেশন এইজে ফাউস্টিয়ান বার্গেইন
জর্মন ফোকলোরের পুরনো গল্পে ডক্টর ফস্টাস গুপ্ত বিদ্যা ও জাদু শেখার বিণিময়ে মেফিস্টফিলিসকে দিয়ে দিয়েছিল তার আত্মা।
ফাউস্টিয়ান বার্গেইন এমন যে, যেখানে ব্যক্তির খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা জিনিশ হারাইতে হয়।
এই কালের ইন্টারনেট সোশ্যাল মিডিয়া, ডিজিটাল কানেক্টিভিটির সময়ে মানুষদের কাছে, শয়তানরাজ মেফিস্টোফিলিস এসে বলছে, তোমারে নিত্য নতুন তথ্য দিব। তুমি জ্ঞানী হইয়া যাইবা, অনেক জানবা। প্রতিদিন, একেক দিন একেক বিষয়। একদিন তুমি জ্যোতির্বিদ, অন্যদিন গোয়েন্দা। ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ের নতুন তথ্য, অফুরন্ত, পাইতে থাকবা। কাউরেই আর জ্ঞানী লাগবে না তোমার, তোমার ইগোর সর্বোচ্চ তৃপ্তি হবে। বিণিময়ে, তুমি আমারে দিবা তোমার লাইফ।
এই কালের ফস্টাস, মানুষেরা শয়তানের সাথে এই চুক্তিতে সম্মত হইয়া গেছে।
এটা এখনকার ফাউস্টিয়ান বাস্তবতা।
এখন মানুষের কাছে গিয়ান বা গিয়ানের ভাব আছে, তথ্য আছে, ফিয়ার অব মিসিং আউট আছে, শর্ট টার্ম মেমোরি আছে কিন্তু তাদের লাইফ নাই, কারণ তাদের “এক্ট” নাই।
একশন না থাকলে লাইফ থাকে না।
নিজে হইয়া বাস
নিজে হইয়া বাস একটা কঠিন কাজ। এর জন্য মিমেসিসের বিরুদ্ধে থাকতে হয়। নিজের ডেজায়ার সিস্টেমরে বুঝতে হয়, এর নিয়ন্ত্রণ নিতে হয়। নিজের হ্যাপিনেসের কেন্দ্র নিজের ভেতরেই রাখতে হয়, বাইরের লোকদের কাছে, সমাজের কাছে দিয়া দিলে হয় না।
আহমদ ছফা হুমায়ূন আহমেদের লেখার সম্পর্কে বলতে গিয়া একটা কথা বলছিলেন, যেটা তার নির্বাচিত স্বাক্ষাতকারের বইয়ে আছে।
কিন্তু মানসিক শুদ্ধতার একটা প্রশ্ন আছে না, অর্থাৎ বাইরের রাস্তার লোক কী চায় সেই জন্যে আমি লিখব, নাকী আমার প্রাণ কী চায় সেই জন্য লিখব? এখন এই জিনিসগুলো একটা বড় ফ্যাকটর, এবং এগুলো নিয়ে ক্রমাগত আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। – আহমদ ছফা।
ছফা যে জিনিসটা বুঝাইতে চান , একটা ব্যক্তি যখন নিজেরে হারাইয়া ফেলে রাস্তার লোকদের জন্য, সাহিত্যিক সেন্সে এইটা খারাপ হবে।
নিজেরে হারাইয়া ফেলা এর চাইতে বেশী প্রভাব ফেলে ব্যক্তির উপর সাইকোলজিক্যালি।
দার্শনিক কীয়ের্কেগার্ড বলছিলেন যে মানুষ নিজেরে হারায় এতো ধীরে যে নিজেই টের পায় না।
মডার্নিটির যে ক্রাইসিস, এই ক্রাইসিসের মূলে হইল এই নিজেরে হারানোর ব্যাপারটা। যেটা বিং চুল হান নিও লিবারাল ক্যাপিটালিস্টিক সমাজের সমালোচনা করতে করতে বলতে চাইছেন, ছফা আরো সহজে বলছেন লেখকদের সমালোচনা করতে আর এরো অনেক আগে সোরেন কীয়ের্কেগার্ড, ফ্রেডরিখ নীতশে অনেক লেখে গেছেন এটা নিয়া।
ডিপ্রেশনের একটা প্রধান রুট কজ , বাংলাদেশের সমাজ বলেন বা দুনিয়ার, হইল নিজেরে হারানো রাস্তার লোকের চাওয়ার কাছে। বাইরের সমাজের লোকদের হ্যাপি করতে চাইয়া।
এর কিওর কী? সেলফ-ইম্প্রুভমেন্ট নয়, বরং আগে সেলফ-আন্ডারস্টেন্ডিং। নিজেরে বুঝা। নিজের কর্মকান্ডগুলিরে বুঝা। কেন আমি এই জিনিস করতেছি, কেন এই জিনিস ভাবতেছি। বা ছফার মতে, আমার প্রাণ কী চায়। আমার দায়িত্ব কী, আর আমি কি প্রতিযোগিতা করতেছি যেইটা আসলে সামাজিক স্ট্যাটাসের জন্য? যেই সামাজিক স্ট্যাটাস আসলে সমাজ বিষয়ে "কাল্পনিক" হায়ারার্কিতে আমার অবস্থান মাত্র, আমার কল্পণায়! আমি কি লোকদের দেখানোর জন্য করতেছি? বাইরের ভ্যালিডেশনের কেন এত দরকার আমার?
এক্সট্রিম ফর্মে একটা লাইফের জন্য মটো হইতে পারে, এন আন একজামিনড লাইফ ইজ নট উয়র্থ লিভিং। যেইটা সক্রেটিসের শিক্ষা, এবং এরিস্টটলের শিক্ষক প্লেটো তারে শিখাইছিলেন। কিন্তু এরিস্টটল এই জিনিসরে সাধারণ মানুষের জন্য ঠিক মনে করতে পারেন নাই।
কারণ এই হার্শ এক্সপেরিমেন্টাল লাইফ একজন দার্শনিকের জন্য হইতে পারে, কিন্তু নর্মাল মানুষ অত চিন্তা করে জীবন যাপন করে না।
এই বাস্তবতা হিসাবে নিছেন এরিস্টটল। তাই সাধারণ মানুষের জন্য তিনি ডে টু ডে কর্মরে প্রাধান্য দিছেন।
ব্যক্তি সেলফ নলেজ গ্যাদার করবে, নিজের সীমাবদ্বতাগুলি বুঝার ট্রাই করবে, ও ডেইলি কিছু একটিভিটির মাধ্যমে তার লাইফরে নিজের কন্ট্রোলে রাখবে। যা তারে হ্যাপিনেস অব দ্য সউল বা ইউদাইমোনিয়ার দিকে নিয়ে যাবে।
নিজেরে না হারানো, নিজের সউলের চাওয়ারে গুরুত্ব দেয়া একটা কারেজের ব্যাপার। এইজন্য কারেজ এরিস্টটটলের নিওম্যাকিয়ান এথিকসের একটা মেজর জিনিস।
এবং এই নিজেরে না হারানো বা অন্যভাবে বলতে গেলে নিজেরে অক্ষুন্ন রাইখা জীবন যাপনই হইল ইউদাইমোনিয়ার প্রথম শর্ত বলতে পারি, যেইটা হইল আত্মার হ্যাপিনেস, যেই আত্মার হ্যাপিনেসই আসল হ্যাপিনেস বলছিলেন এরিস্টটলেরও শতবছর আগে, ডেমোক্রিটাস।
বিং চুল হানের যে ক্রিটিক, সমাজ ব্যক্তিরে “সাবজেক্ট” এ পরিণত করতেছে, এই সাবজেক্ট আসলে কী? চিন্তা করলে দেখা যায়, যখন আপনে বা আমি জাস্ট একটা বডি হিসাবে বিবেচ্য হই, এবং আমাদের সউলরে ডিনাই করা হয় বা আমরা যখন ডিনাই করি, তখন কি আসলে আমি আর আমি থাকি বা আপনি আর আপনি থাকেন?
আপনে আমি তখন একটা বডিতে, একটা সাবজেক্টে অধোঃপতিত হই।
এচিভ করতে যাইয়া অবিডিয়েন্ট দাসে বা বাইরের রাস্তার লোকরে হ্যাপি করতে যাইয়া পপুলার হইতে বা সমাজরে হ্যাপি করতে গিয়া গাড়ি করতে বাড়ি করতে বা কারে বিয়া করতে হবে, কখন করতে হবে, কখন বাচ্চা নিতে হবে, বাচ্চারে কেমনে মানুষ করতে হবে, বা কোন একটা স্টাইলে কথাবার্তা বলতেই হবে বা লেখতেই হবে, নতুন এচিভমেন্টের খবর ফেইসবুকে জানাইতেই হবে, সম্পর্কের-জীবনের হ্যাপিনেস দেখাইতেই হবে - এই সব কাজ করতে করতেই আমরা আমাদের সউলরে হত্যা করি।
ফলে একটা সউললেস বডি হয়, ওইটাই “সাবজেক্ট” একটা কেবল। এবং এইসব “সাবজেক্ট” এর যে ডিপ্রেশন, সউললেস বডিদের যে ডিপ্রেশন ও মানসিক সমস্যা তা পুরা সোসাইটিরে কালেক্টিভ ভাবে প্রভাবিত করে।
ডিপ্রেশন ও সুইসাইড
যারা ডিপ্রেশন তাদের সবাই সুইসাইড করেন না অবশ্যই। কিন্তু যারা সুইসাইড করেছেন, তাদের ডেটা থেকে দেখা যায়, এদের বেশিরভাগেই ডিপ্রেশনে ছিলেন।
সুইসাইডের মত এক্সট্রিম কেইস সব সময় না হলেও ডিপ্রেশন ব্যক্তির ক্ষতি করে নানাভাবে।
উপরে যে হতাশা নিয়ে লেখলাম, এগুলি দার্শনিক দিক থেকে, এবং বলা যায় এনভায়রনমেন্টাল-সাইকোলজিক্যাল সাইড ফোকাস পেয়েছে।
ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশন নিয়ে সাইন্টিফিক লিটারেচার বলে, ডিপ্রেশনের বায়োলজিক্যাল (নিউরোট্রান্সমিটারে ভারসাম্যহীনতা, জেনেটিক কারণ ইত্যাদি), সাইকোলজিক্যাল (ট্রমা, কোন ঘটনা, নেগেটিভ প্রভাব ইত্যাদি), মেডিকেল (কোন রোগের কারণে, মেডিকেশনের প্রভাব ইত্যাদি) এবং পরিবেশগত (বিভিন্ন কারণে দুশ্চিন্তা, সম্পর্কে সমস্যা, অর্থনৈতিক, আর্থ-সামাজিক কারণ ইত্যাদি) কারণ থাকতে পারে।
এইগুলার ভেতরে আবার পারস্পারিক সম্পর্ক আছে। যেমন করাপটেড সিস্টেমের কারণে কিছু শিক্ষিত লোক জনগণের টাকা মেরে খাচ্ছে। ফলে দেশের লোকদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে বরাদ্দ রাখা যাচ্ছে না। বাংলাদেশে যারা মানসিক সমস্যায় আছেন, তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা খুবই বাজে। যদি দেশে সিস্টেম ভালো হইত, তাহলে এর চাইতে কিছুটা হইলেও বেটার করা যাইত স্বাস্থ্যসেবা।
এবং, উপসংহার
ডিপ্রেশন নিয়ে কথা উঠলে আমার ৮৫০ সালে পারস্যে জন্ম নেয়া পলিম্যাথ আবু জাঈদ আল বলখীর ব্যাখ্যার কথা মনে হয়।
তিনি ডিপ্রেশনরে তিন ভাগে ভাগ করছিলেন।
এক - প্রতিদিনের সাধারণ ডিপ্রেশন, হুজন।
দুই - এই ধরণের ডিপ্রেশন শরীরে তৈরি হয় তিনি বলছিলেন, যেটারে এখন আমরা জানি জেনেটিক বা শারীরিক বিভিন্ন নিউরোট্রান্সমিটারের প্রতিক্রিয়া হিসেবে।
তিন - এই ধরণের ডিপ্রেশন তিনি বলছেন, বাইরে থেকে আসে। যেইটা কোন ঘটনার প্রতিক্রিয়া হিসেবে। যেমন নানা খারাপ ইস্যুতে, ঘটনায় যে ডিপ্রেশন হয় মানুষের। বা অন্যদের বাজে প্রভাবে।
তিনি বলছিলেন, যেমনে মানুষেরা প্রাথমিক চিকিৎসার, প্রয়োজনীয় ওষুধ জিনিসপত্র হাতের কাছে রাখেন ইমারজেন্সির জন্য, তেমনি যেন ভালো চিন্তা, অনুভূতিও মাইন্ডে জমাইয়া রাখেন, যাতে অনাকাঙ্ক্ষিত মেন্টাল ব্রেকডাউনরে কাউন্টার দেয়া যায়।
প্রতিদিনের ডিপ্রেশনের অনেক কারণ থাকে। কিছু লোক রাস্তায় ঘুমাইতেছে, না খাইয়া থাকতেছে, এই চিন্তাটাই হতাশা আইনা দেয়ার জন্য এনাফ। যে সিস্টেমটা এইরকম কেন! আমরা এইসব ভুলে থাকি। কিন্তু সকল সময়ে এই ভুলে থাকা সম্ভব হয় না। কিছু জিনিশ সামনে চলে আসে।
তাই, টোটালি ডিপ্রেশন/হুজন মুক্ত থাকা একটা সোশিওপ্যাথিক ব্যাপার।
আবার, এইটা যাতে এত বেশি না হয় যে নিজের লাইফেই বিঘ্ন ঘটায়।
এবং, অভারল, কাজ করতে হবে মানুষের ডিপ্রেশন কমাইতে, বাড়াইতে না। ডিপ্রেশনের কারণগুলা দূর করার জন্যে কাজ করতে হবে, যদি সম্ভব হয়।
I keep coming back to this post. Love it!
ওয়াও! আপনার বোঝার ক্ষমতা এবং এনালাইসিস ভীষণ ভাল। সামটাইমস আই সাফার টু রিয়েলাইজ দ্যাট ইন আওয়ার সোশাইটি হোয়াই পিপল ডোন্ট আন্ডার্স্ট্যান্ড দ্য ক্রাইসিস উই আর গোয়িং থ্রু। ইউ আর দ্য ওয়ান হু রিকগনাইজড দ্য ক্রাইসিস। থ্যাংক ইউ!