আমেরিকায় রাফলি প্রায় অর্ধেক বিয়া এখন ডিভোর্সে শেষ হয়।
ডিভোর্সের জন্য জন্য দরকার স্ট্রিক্ট মনোগ্যামি। মনোগ্যামির যে বর্তমান কনসেপ্ট তা সাম্প্রতিক সাংস্কৃতিক-সামাজিক-ধর্মীয় প্রভাবে উৎপন্ন। কৃষি সমাজের আগে, প্রায় ১০ হাজার বছর আগে সম্ভবত এমন মনোগ্যামি ছিল না। হেলেন ফিশার (১৯৯৩) জানান, সম্ভবত আমাদের এনসেস্টরেরা ছিল সিরিয়াল মনোগামিস্ট। তারা এক সঙ্গীর সাথে প্রায় ৪ বছর থাকতো, কারণ এই সময় লাগে শিশুরে বড় করতে।
যেসব ডিভোর্স হয় পশ্চিমের সমাজে তার বেশিরভাগেই শুরু করেন নারীরা। অর্থাৎ তারা ম্যারেজ থেকে বের হইয়া যাইতে চান।
গিলিয়ান পার্কার ও তার সাঙ্গরা ২০২২ সালের এক পেপারে এর কারণ খুঁজতে যান এভলুশনারি সাইকোলজির দিক থেকে। তাদের ব্যাখ্যা হইল আধুনিক শিক্ষিত পশ্চিমা সমাজে নারীরা শিক্ষিত। তাদের আয় ইনকামও বেশী। ফলে আগেকার ম্যারেজ সিস্টেম যে কারণে ছিল, স্বামীর প্রতি নির্ভরতার জায়গা, এটা আর থাকে না। ফলে, নারীদের কাছে ম্যারেজে থাকার বেনেফিট কমে যায়।
সাইকোলজিস্ট গ্যাড সাদের ডিভোর্সের একটা ব্যাখ্যা ছিল, যার এইরকম সহজ উপস্থাপন হতে হতে পারেঃ ধরা যাক এক ইয়াং ছেলে ও ইয়াং মেয়ে প্রেম করতেছে, দুইজনই কলেজে পড়ে। একজন ভালো ক্রিকেটার, মেয়েটা পড়ালেখায় এভারেজ।
ছেলেটার জাতীয় দলে খেলার ভালো সম্ভাবনা আছে।
তাদের ইয়াং বয়েসে প্রেমের কারণে বিয়া হইল।
ছেলেটা খেললো কিন্তু আশানুরূপ আগাইতে পারলো না। সে এখন লীগ পর্যায়ে খেলে, বয়স ৩৫, আর জাতীয় দলে যাবার সুযোগ নাই। অন্যদিকে, মেয়েটা কয়েকবার বিসিএস দিয়া এখন বড় সরকারী চাকরী পেয়ে গেছে।
এখন, মেয়েটার এক্সপেকটেশনের হিশাবের বইতে, এই ছেলের ভ্যালু কমে যাবে, কারণ তার এক্সপেকটেশন মিলে নাই। উলটা সে নিজে চলে গেছে উঁচা জায়গায়। এই অবস্থায় ডিভোর্সের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
এভলুশনারি দিক থেকে নারীদের সঙ্গী পছন্দের প্রধান প্রভাবক হচ্ছে, পোলার টাকা পয়সা আছে কি না। রিসোর্স যেটারে কয়, সহজ ভাবে টাকা পয়সাই আধুনিক সমাজে। এইটার স্বপক্ষে অনেক রিসার্চ আছে। লং টার্ম পার্টনার হিশাবে নারীরা তারেই লাইক করে যার অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো হবে বলে তারা মনে করে।
আধুনিক ম্যারেজে নারী নিজেই স্বাবলম্বী হইয়া গেলে তার আর পুরুষ লাগবে না অর্থনৈতিক সাপোর্টের জন্য। তখন সে কেন ছাড় দিয়া দিয়া ম্যারেজে থাকতে চাইবে?
ডিভোর্স সম্পর্ক খারাপ হইয়া গেছে এইজন্য হয় না, হয় যখন একজন ঠিক করে সে এই চুক্তিতে থাকবে না, তখন। অনেক সময় সম্পর্ক আগের মত থাকলেও ডিভোর্স হতে পারে, যদি পরিবর্তিত সময় বাস্তবতায় বিদ্যমান কোন পার্টির আশা আকাঙ্ক্ষা পরিবর্তন হয়ে যায়।
প্রেম, ইমোশন, সন্তানের স্নেহ, লোকলজ্জা ইত্যাদির নামে সম্পর্কে কোন পার্টিরে থাকতে বাধ্য করা, অন্য পার্টির এক ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলিং।
এভলুশনারি দিক থেকে কাউরে মানুষের সঙ্গী হিশাবে ভালো লাগে, প্রেমে পড়ে ইত্যাদি, কারণ সে মনে করে এ ভালো বাপ বা মা হবে তার সন্তানের জন্য। এবং ম্যারেজের মূল কারণ ছিল সন্তান জন্মদান, ও প্রতিপালন। এইজন্য পুরুষদের জন্য দেখবেন দ্বিতীয় বিয়ে করার সবচাইতে ভ্যালিড কজ হয়, যখন স্ত্রী সন্তান জন্ম দিতে পারেন না। তখন বংশের বাত্তি জ্বালাইতে তারে দ্বিতীয় বিয়া দেয়া হয়।
বিবাহ বিচ্ছেদ বিবাহের মতোই কমন ঘটনা, এবং এইটা আরো কমন হতে থাকবে। পরিবর্তিত আধুনিক সমাজের ম্যারেজের উদ্দেশ্য বদলাইছে। নারীরা শিক্ষিত হওয়ায়, এবং ওয়ার্কফোর্সে আসায় তাদের নেগোসিয়েশনের ক্ষমতা বাড়ছে, চাহিদাও বদলাইছে।
বিবাহ বিচ্ছেদ সহজ ও স্বাভাবিক হওয়া সমাজের জন্য ভালো। হিচকক ও ওয়ারহলের এক স্বাক্ষাতকার আছে, যেখানে মার্ডার কেন হইত এই বিষয়ে জিজ্ঞাস করছিলেন ওয়ারহল, তখন হিচকক বলেন, বিবাহ বিচ্ছেদ কঠিন ছিল তখন নানা সামাজিক আইনি কারণে, মুক্তির জন্য তাদের কাছে উপায় ছিল একটাই।